হাসনাত আবদুল হাই : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’
মলয় রায়চৌধুরীর লেখক হিসাবে যে খ্যাতি- অখ্যাতি,তার প্রায় সবটাই কবিতা লেখা নিয়ে। প্রথাবিরোধী কবিতা লেখার জন্য তাকে আসামী হয়ে জেলে যেতে হয়েছে,অশ্লীলতার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে মামলা লড়তে হয়েছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু বৈরি পরিবেশ তাঁকে স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে প্রচলিত পথে যেতে বাধ্য করতে পারে নি,যা সঠিক মনে করেছেন সেই ভাবেই লিখে গিয়েছেন আজীবন।
মলয় রায়চৌধুরীর লেখার যা আমাকে আকৃষ্ট করে তা হল তাঁর গদ্য,বিশেষ করে গল্প ও উপন্যাস।কথা- সাহিত্যে তিনি নিম্নবর্গের মানুষদের কথা বলিয়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্তের জবানীতে।এটা করতে গিয়ে যে ভাষা তিনি ব্যবহার করেছেন তা জীবন- ঘনিষ্ট এবং তাঁর স্বকীয়তায় বিশিষ্ট। এমন গদ্য শুধু কাহিনীকে সহজে বিশ্বাস্যোগ্য করে তোলে না, একই সঙ্গে ভাষার অমিত শক্তির কথা বলে।শুধু গদ্যের জন্যই তাঁর গল্প- উপন্যাস পড়ে মনে হয় একটা অনাস্বাদিত আনন্দ লাভ হল।
'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস' এমনই একটি উপন্যাস,যা একবার পড়ার পর আবার পড়তে ইচ্ছে করবে,বিশেষ করে লেখকদের । তাঁর কবিতা সম্বন্ধে বলতে পারব না,কিন্তু গদ্য পড়ার পর মনে হয়েছে তিনি 'লেখকদের লেখক'।
হাংরি
এর মধ্যে লুকিয়ে আছে হাঙ্গরি আর এঙ্গরি। রাগ এবং ক্ষুধা। মধ্যবিত্তের
জীবন বোধকে ছিঁড়ে খুঁড়ে উঠে আসা এক বিদ্রোহ। এ এক আন্দোলন। তার মুখপাত্র
ছিল সাহিত্য। নতুন এক সাহিত্য। তার ভাষা চলন গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে। তার
ভাষা, শব্দচয়ন, প্রকাশ ভঙ্গি শালীনতা আর অশালীনতার
মাঝের বেড়া ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। কাঁপন ধরিয়েছিল গতানুগতিকতার
চিরস্থায়ী অবস্থানে। কেউ একধাপ এগিয়ে একে উগ্ৰপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে
মিলিয়ে দিতে চেয়েছেন এর বিরোধিতা করতে গিয়ে। কেউ বা একে আখ্যায়িত
করেছেন ব্যাভিচারী সাহিত্য বলে। কিন্তু এ আন্দোলন বোঝাতে পেরেছে সে ফুলিয়ে
তোলা ফানুস নয়। একটা শক্ত ভিতের উপর সে দাঁড়িয়ে। আবার কালের নিয়মে
এদের মধ্যে ভাঙ্গন এসেছে। তৈরি হয়েছে নতুন সঙ্ঘের। কিন্তু এর প্রভাব বাংলা
সাহিত্যে মুছে যায়নি। যেমন যায়নি নকশাল আন্দোলনের প্রভাব। দুটোই সমাজ,
পরিবার, সাহিত্য এমন কি ব্যক্তি জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। সুতরাং এদের অবদান
ছিল, আছে, থাকবে। একে অস্বীকার করলে প্রকৃতিকেই অস্বীকার করা হয়। কালের
নিয়মে অনেককিছুই স্তিমিত হয় কিন্তু মুছে যায় না। একটা ক্ষীণ ধারা থেকেই
যায় মূল ধারায় নিজস্ব ছাপ ফেলে। তাকে কিভাবে অস্বীকার করবে। কিন্তু লিখতে গেলে সে তো মহাভারত হয়ে
যাবে। সে পরিসর এখানে নেই। শুধু বলব কেউ মানুক আর না মানুক এর প্রভাব ছিল,
আছে, থাকবে।
(ইউটিউবের জন্মও হয়নি সেদিন। সেই ষাটের দশকেই অশ্লীলতার অভিযোগে গ্রেফতার, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের হাংরি জেনারেশনের কবি সাহিত্যিকদের। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি কবিতা, ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’। লিখেছেন অপূর্ব সাহা।)
রোম্যান্টিক বাংলা সাহিত্যের ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাতে নরম মাটিকে চড়া রোদ্দুরের তাপ ঝলসে দিয়েছিল সেই ষাটের দশকেই। ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সমান্তরালে দানা বেঁধে উঠেছিল হাংরি জেনারেশন আন্দোলন। মধ্যবিত্ত ভন্ডামিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমাজ তথা প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া শিল্প সাহিত্য প্রকরণ তছনছ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ক্ষুধার্ত প্রজন্মের কবি-লেখকেরা। খানিকটা বিচ্ছিন্ন ভাবেই পাটনা, ত্রিপুরা, বাঁকুড়া, কলকাতার সম-মানসিকতা সম্পন্ন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, ফাল্গুনী রায়, হারাধন ধাড়া, সুবিমল বসাক প্রমুখ জড়ো হয়েছিলেন ক্ষুধিত প্রজন্মের ছাতার তলায়। নিকটবর্তী ছিলেন বিনয় মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সতীন্দ্র ভৌমিকেরা।
বুলেটিন, ইস্তাহার বিলি বিতরণের পাশাপাশি আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে সমালোচনার জন্য জুতোর বাক্স পাঠাতেন তাঁরা। ডাকযোগে সমাজের তাবড় ‘প্রতিভাশালী’দের মুখোশ পাঠিয়ে সেখানে লিখে দিতেন— মুখোশ খুলে ফেলুন। নোবেলজয়ী কবি অ্যালেন গিনসবার্গ ও তাঁর পুরুষ বন্ধু পিটার অরলোভস্কি ভারতে এসে হাংরিদের সঙ্গে রাত কাটিয়ে গিয়েছেন শ্মশানে, সোনাগাছিতে। অন্ত্যজ জীবনযাপন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক শব্দ ব্যবহারে তোলপাড় হয়েছিল তৎকালীন প্রসাধন-শোভিত বাঙালি বুদ্ধিজীবি, পাঠক, সিংহভাগ লেখকেরা। স্বভাবতই সাজানো বুলিতে বিরাশি সিক্কার এই হাংরি-থাপ্পড় আলোড়িত করেছিল প্রতিষ্ঠানের রাজাগজাদের। অচিরেই প্রয়োজন হয়েছিল বাপের অবাধ্য ছেলেদের একটু কড়কে দেওয়ার।
ষাটের দশকে অশ্লীলতার দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল কয়েকজন হাংরি কবি-লেখকের বিরুদ্ধে। কবি শৈলেশ্বর ঘোষ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪, সকাল ৭.৩০ মিনিট। সুভাষ এবং আমি সবে ঘুম থেকে উঠেছি, বাইরে গিয়ে চা খাবো, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খোলামাত্র ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল ৮-১০ জন লোক। মেঝেয় বিছানায় জুতো-সহ দাঁড়িয়ে গেল ওরা। টেনে হিঁচড়ে ফেলতে লাগল জিনিসপত্র, বইপত্র। হাতে সার্চ ওয়ারেন্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, তারা লালবাজার থেকে আসছে।…৯.৩০-এ জানানো হল যে আমাদের ওরা গ্রেফতার করছে।…পরের দু-তিন দিনের মধ্যে কলকাতায় দেবী রায়, পাটনায় মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরী গ্রেফতার হয়। মলয় ও সমীরকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ত্রিপুরায় প্রদীপ চৌধুরী গ্রেফতার এড়িয়ে কিছুকাল কাটায় বটে, কিন্তু তাকেও গ্রেফতার করে কলকাতা আনা হয়।’’ মলয় লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সাহিত্যে অশ্লীলতার অভিযোগে’ তাঁদের গ্রেফতার করা হলেও ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছিল উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুবো আচার্য এবং রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। যদিও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে নানা সময়ে বিভিন্ন বই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগে বাড়ি থেকে থানা, থানা থেকে আদালত কোমরে দড়ি দিয়ে শিল্পী-সাহিত্যিকদের টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে বাংলার মাটিতে কখনও ঘটেনি। কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মামলা চলেছিল ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মে পর্যন্ত, মোট নয় মাস। অভিযুক্তদের কেউ কেউ রাজসাক্ষীও হয়ে যান। এই মামলায় শক্তি-সুনীল-সন্দীপন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। মূল অভিযোগের কেন্দ্রে ছিল মলয় রায়চৌধুরী লিখিত ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটি। মলয়ের কবিতাটি ‘অবসিন’ কি না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে সরকারি উকিল জানতে চান। প্রশ্ন করেন, কবিতাটা পড়ে কি আপনার অশ্লীল মনে হচ্ছে? সুনীল বলেন, ‘‘কই না-তো! আমার তো বেশ ভাল লাগছে পড়ে।’’ শক্তি বলেছিলেন, কবিতাটি তাঁর ভাল লাগেনি। মলয় সেকথা জানিয়েছেন তাঁর নিজের লেখাতেই।
এই মামলা হাংরি জেনারেশনকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। যুগান্তর-আনন্দবাজার- দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় সংবাদ, সম্পাদকীয়, কার্টুন ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। আমেরিকার ‘টাইম’ ম্যাগাজিন, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এয়ার্সের ‘প্যানোরমা’ পত্রিকা-সহ মেক্সিকো, জার্মানির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় হাংরি আন্দোলনকারীদের লেখালেখি ও সেই সংক্রান্ত মামলার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমেরিকান কবি ক্যারল বার্জ ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির ইংরাজি অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেন।
বিচারক অমলকুমার মিত্র মোকদ্দমার রায় ঘোষণা করেছিলেন ১৯৬৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। রায়ে বলা হয়েছিল, ‘‘অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯২ ধারায় দণ্ডিত এবং সেই ধারা বলে তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হল। অন্যথায় একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আলোচ্য প্রকাশনার যে কপিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেগুলি নষ্ট করে ফেলার আদেশ দেওয়া হল।’’ পরে হাইকোর্ট অবশ্য মলয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে। এবং নিম্ন আদালতের জরিমানার রায় প্রত্যাহার করে।
From Krishnagar, West Bengal, she, Sonali Chakraborty, crossed two rivers on boats, took a taxi and reached Dumdum airport for a flight to Mumbai and met Malay Roychoudhury just for a day. She collected more than twenty books written by Malay and went back the same day.
…………………………………………………………………………………………
যেমত নেশাতুর হরিণীর তারারন্ধ্র স্থির ও উদাস থাকে বিশালতায়
প্রায় বছর আড়াই পর আবার উঠোন ভাঙতে গিয়ে প্রথম জানা গেলো কখন গালিব বলেছিলেন "কিতনি খউফ হোতে হ্যায় শাম কে অন্ধেরো মে, পুছ উন পরিন্দো সে জিনকে ঘর নেহি হোতে"। নিজের হাজার ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে প্যাকিং, বোর্ডিং পাস, কার্ড ব্যালেন্স চেক করে মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার আগে "জাস্ট ঘুমোতে যাওয়ার সময় gdn8 টা লিখে ঘুমোবে যদি ঘুমোতে মনে থাকে" বলে আর একবারও পিছনে না তাকিয়ে সোজা নিজের দুর্গে ফিরে যাওয়ার প্রবল পুরুষটি আর দাঁড়িয়ে থাকবে না ব্যালকনিতে যখন আমি ফিরবো...
খুব সহজ ছিলো না তাই এই সফর অথচ যেতে আমায় হতোই। ভাঙা বাতিঘর থেকে নাড়ি কাটা সূর্যকে দেখার জন্য যে নশ্বরতা, তার দায় থাকে। রামধনু দিয়ে কাজল পরে যে ফ্লাইটে উঠেছিলাম বৃষ্টি আর বিদ্যুত তাকে ধুয়ে কিছু অতিরিক্ত ক্লান্তি আঁকতে পেরেছিলো মাত্র। যে কোনো ডানার উড়াল আকাশের ব্যক্তিগত ভালো লাগার তালিকায় আছে, ঝড়ে যে উড়োজাহাজ আটকে না থেকেছে, তার যাত্রী না হলে এই প্রসঙ্গে সম্যক জ্ঞান জন্মায় না।
কিংবদন্তী যে প্রেমিক তাঁর মাথা কেটে আমায় পাঠিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে একবার হাত না রাখলে অপরাধ হয় অথচ তিনি যেহেতু বললেন "আর তো দেখা হবে না", বরাবরের উন্মাদিনী আমার ভিতরে জিহাদ এলো তাঁকে ভুল প্রমাণের, সুতরাং প্রণাম করিনি, আবার দেখা হবে এই বিশ্বাসে।
প্রেমে পড়ার মতো ভয়ঙ্কর সুন্দরী দুই বিদুষী একত্রে ছিলেন, শীলা দি ও নূপুর দি, আমার ভিতরের তরঙ্গে "ইন্দুবালা গো, তুমি কার আকাশে থাকো, জোছনা কার মাখো" বাজছিলো, সামনে মলয় আর অর্ঘ্য দা ছিলেন বলে প্রকাশ করা গেলো না সেভাবে, কপাল। ও হ্যাঁ, আমি জাতিস্মর নই, নিয়তি নিজে লিখি তাই প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অর্ঘ্য দা ও নূপুর দির সঙ্গে পরবর্তী জন্মের মৌ সই করা আছে।
এতো বই পাওয়া হলো আদর টইটই চকোলেট (আমি বৃদ্ধা হইলেও কিছু কিউটস্য বন্ধু আমার আছে) সহ, দেবদূত বিরাট একটি ব্যাগ কিনে দিলেন ছত্রপতি থেকে আমার করুণ অবস্থা দেখে, সেও উপহারই। জানলাম এখন আর আমরা ভারতীয় এয়ারপোর্টে বসি না, 'আদানী লাউঞ্জ' এ রেস্ট করি, এও জানা হলো ভিস্তারা দীর্ঘ যাত্রায় খেতে দেয় না, 'হিন্দু মিল' সার্ভ করে। এই দেশ বিচিত্র ছিলোই কিন্তু দিনে দিনে আমার বড় অপরিচিত হয়ে উঠছে সেলুকাস, কোথা যাই বলো তো?
যেমত নেশাতুর হরিণীর তারারন্ধ্র স্থির ও উদাস থাকে বিশালতায়
প্রায় বছর আড়াই পর আবার উঠোন ভাঙতে গিয়ে প্রথম জানা গেলো কখন গালিব বলেছিলেন "কিতনি খউফ হোতে হ্যায় শাম কে অন্ধেরো মে, পুছ উন পরিন্দো সে জিনকে ঘর নেহি হোতে"। নিজের হাজার ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে প্যাকিং, বোর্ডিং পাস, কার্ড ব্যালেন্স চেক করে মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার আগে "জাস্ট ঘুমোতে যাওয়ার সময় gdn8 টা লিখে ঘুমোবে যদি ঘুমোতে মনে থাকে" বলে আর একবারও পিছনে না তাকিয়ে সোজা নিজের দুর্গে ফিরে যাওয়ার প্রবল পুরুষটি আর দাঁড়িয়ে থাকবে না ব্যালকনিতে যখন আমি ফিরবো…
খুব সহজ ছিলো না তাই এই সফর অথচ যেতে আমায় হতোই। ভাঙা বাতিঘর থেকে নাড়ি কাটা সূর্যকে দেখার জন্য যে নশ্বরতা, তার দায় থাকে। রামধনু দিয়ে কাজল পরে যে ফ্লাইটে উঠেছিলাম বৃষ্টি আর বিদ্যুত তাকে ধুয়ে কিছু অতিরিক্ত ক্লান্তি আঁকতে পেরেছিলো মাত্র। যে কোনো ডানার উড়াল আকাশের ব্যক্তিগত ভালো লাগার তালিকায় আছে, ঝড়ে যে উড়োজাহাজ আটকে না থেকেছে, তার যাত্রী না হলে এই প্রসঙ্গে সম্যক জ্ঞান জন্মায় না।
কিংবদন্তী যে প্রেমিক তাঁর মাথা কেটে আমায় পাঠিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে একবার হাত না রাখলে অপরাধ হয় অথচ তিনি যেহেতু বললেন "আর তো দেখা হবে না", বরাবরের উন্মাদিনী আমার ভিতরে জিহাদ এলো তাঁকে ভুল প্রমাণের, সুতরাং প্রণাম করিনি, আবার দেখা হবে এই বিশ্বাসে।
প্রেমে পড়ার মতো ভয়ঙ্কর সুন্দরী দুই বিদুষী একত্রে ছিলেন, সলিলা দি ও নূপুর দি, আমার ভিতরের তরঙ্গে "ইন্দুবালা গো, তুমি কার আকাশে থাকো, জোছনা কার মাখো" বাজছিলো, সামনে মলয় আর অর্ঘ্য দা ছিলেন বলে প্রকাশ করা গেলো না সেভাবে, কপাল। ও হ্যাঁ, আমি জাতিস্মর নই, নিয়তি নিজে লিখি তাই প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অর্ঘ্য দা ও নূপুর দির সঙ্গে পরবর্তী জন্মের মৌ সই করা আছে।
এতো বই পাওয়া হলো আদর টইটই চকোলেট (আমি বৃদ্ধা হইলেও কিছু কিউটস্য বন্ধু আমার আছে) সহ, দেবদূত বিরাট একটি ব্যাগ কিনে দিলেন ছত্রপতি থেকে আমার করুণ অবস্থা দেখে, সেও উপহারই। জানলাম এখন আর আমরা ভারতীয় এয়ারপোর্টে বসি না, 'আদানী লাউঞ্জ' এ রেস্ট করি, এও জানা হলো ভিস্তারা দীর্ঘ যাত্রায় খেতে দেয় না, 'হিন্দু মিল' সার্ভ করে। এই দেশ বিচিত্র ছিলোই কিন্তু দিনে দিনে আমার বড় অপরিচিত হয়ে উঠছে সেলুকাস, কোথা যাই বলো তো?