বিট জেনারেশনের কবি পিটার অরলভস্কির কবিতা ( ১৯৩৩ - ২০১০ )
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
শামুক কবিতা
আমার কবরকে হৃদয়ের আকারের কোরো যাতে ফুলের মতন স্বাধীন হয়
আর সুন্দরের অনুভূতি পাওয়া যায়
কবরের শিকড় বালিশ, কবর থেকে তোলা আর উড়িয়ে দেয়া মেঘের ফাঁকে
কান বদলে হয়ে যাবে সবুজ শ্যাওলার কাছাকাছি আর বৃষ্টির শব্দ
ফোঁটা ফোঁটা পড়বে পরতের ভেতর
শিকড় পর্যন্ত যা আমার কানে সুড়সুড়ি দেবে।
ওহে কবর, আমার পায়ের বুড়ো আঙুল কেটে ফেলতে হবে তার
শব্দের বাঁকা রেখায় ঘষে দিও
জঞ্জাল কবর, আমার মাধার অনেক ওপরে, তাড়াতাড়ি রক্ত গড়িয়ে আসবে
আমার কানে--
কোনো বাদবিচার নেই কবর ছাড়া, তাই বিড়াল আর ভেড়া ডেইজি
ফুলে পালটে গেছে ।
ট্রেন আমার কবর টেনে নিয়ে যাবে, আমার শ্বাস থেকে মৃদু বাষ্পের গন্ধ
বেরোবে চাকা আর রেল-লাইনের মাঝে।
তাই বিড়াল-বাচ্চার দড়ি আর বল, এই ঢিবির ওপর লাফায়
আলতো আর মিষ্টি
তাই আমার বুড়ো আঙুল বেঁকে যেতে পারে আর হয়ে যেতে পারে
একটা শামুক আর কৌতূহলে নিজের পথে যেতে পারে।
প্রথম কবিতা ( Frist Poem )
একটা রামধনু আমার জানালায় এসে ঝরতে থাকে, আমি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হই।
আমার বুক থেকে গান ফেটে বেরোয়, আমার সব কান্না থেমে যায়,
বাতাস রহস্যে ভরে যায় ।
বিছানার তলায় আমার জুতো খুঁজি ।
একজন কালো মহিলা আমার মা হয়ে যান ।
আমার এখনও নকল দাঁত নেই । হঠাৎ দশটা বাচ্চা আমার কোলে বসে পড়ে।
আমি এক দিনে দাড়ি গজিয়ে ফেলি।
চোখ বন্ধ করে পুরো বোতল মদ খেয়ে নিই।
আমি কাগজে আঁকি আর অনুভব করি আবার দুজন হয়ে গেছি।
আমি চাই প্রত্যেকে আমার সঙ্গে কথা বলুক।
আমি টেবিলের ওপরে জঞ্জাল উপুড় করি।
আমি হাজার বোতলকে আমার ঘরে নেমন্তন্ন করি,
আমি ওদের বলি জুন মাসের ছারপোকা।
আমি টাইপরাইটারকে বালিশের মতন ব্যবহার করি ।
আমার চোখের সামনে একটা চামচ কাঁটাচামচ হয়ে যায়।
বন্ধুরা ওদের সব টাকাকড়ি আমায় দিয়ে দেয় ।
বাকি জীবনের জন্যে আমার একটা আয়না দরকার।
আমার প্রথম পাঁচ বছর মুর্গির ঝোল খেয়ে ছিলুম যথেষ্ট শুয়োর-মাংস ছাড়াই।
আমার মা রাতের বেলায় ওনার ডাইনি-মুখ দেখালেন
আর নীল দাড়ির গল্প বললেন ।
আমার স্বপ্নগুলো আমাকে বিছানা থেকে সরাসরি তুলে নিলো।
আমি স্বপ্ন দেখলুম বন্দুকের নলের ভেতরে লাফিয়ে পড়েছি
বুলেটের সঙ্গে লড়াই করব বলে।
আমি কাফকার সঙ্গে দেখা করলুম আর উনি আমার কাছ থেকে পালাবার জন্যে
একটা বাড়ির ওপর দিয়ে ডিঙোলেন ।
আমার দেহ চিনিতে পালটে গেল, চায়ের ভেতরে পড়ল
আমি জীবনের মানে খুঁজে পেলুম ।
যা আমি চেয়েছি তা হল কালি কালো ছেলে হবার জন্য ।
আমি রাস্তায় ঘুরে বেড়াই চোখের খোঁজে যা আমার মুখকে আদর করবে।
আমি এলিভেটরদের গান শোনালুম এই বিশ্বাসে যে স্বর্গে যাচ্ছি।
আমি ৮৬তলা থেকে নামলুম, করিডরে হাঁটলুম তাজা পাছার খোঁজে।
আমার চিরুনি বিছানায় রুপোর ডলারে পালটে যায়।
আমি জানালার বাইরে দেখি কাউকে দেখতে পাই না, আমি রাস্তায় বেরোই,
আমার জানালার দিকে তাকাই আর কাউকে দেখতে পাই না ।
তাই আমি জলের হাইড্র্যান্টের সঙ্গে কথা বলি, জিগ্যেস করি,
“তোমার কাছে কি আমার চেয়ে বড়ো অশ্রুফোঁটা আছে ?”
আশেপাশে কেউ নেই, আমি যেখানে-সেখানে পেচ্ছাপ করি ।
আমার দেবদূতের শিঙ, আমার দেবদূতের শিঙ : হাসিঠাট্টাকে মেলে ধরো,
আমার সমকামী হইচই।
প্যারিস, ২৪ নভেম্বর, ১৯৫৭
দ্বিতীয় কবিতা
আবার সকাল, কিছুই করার নেই, হয়তো মাউথঅর্গান কিনবো কিংবা
আইসক্রিম বানাবো।
অন্তত ঘর পরিষ্কার করব আর নিশ্চয়ই আমার বাবার মতন আমি ছাই ঝেড়েছি
আর সিগারেটের টুকরো বিছানার পাশে মেঝেয় ফেলেছি।
কিন্তু সবচেয়ে প্রথমে গেলাস ধুতে হবে আর
দুর্গন্ধ মুখ পরিষ্কারের জন্য জল খেতে হবে।
দরোজায় টোকা পড়ে, একটা বিড়াল ভেতরে ঢোকে,
তার পেছনে চিড়িয়াখানার বাচ্চা হাতি টাটকা প্যানকেক চায়---
আমি এই সব বিভ্রম আর সহ্য করতে পারি না ।
আরেকটা সিগারেটের সময় আর তারপর পর্দাগুলো উঠতে দাও,
তখন আমিই লক্ষ করি ধুলোর পথ তৈরি হয়েছে জঞ্জালের বিন পর্যন্ত।
বরফ নেই তাই এক শুকনো কমলালেবু।
সন্তের মতন কোনো একটা কাজ আছে কি যা আমার ঘরে করতে পারি,
গোলাপি রঙ করি হয়তো কিংবা বিছানা থেকে মেঝে পর্যন্ত
একটা এলিভেটর বসাই ?
বেঁচে থাকার কিই বা মানে যদি না আমি আমার ঘরভূমিকে
স্বর্গোদ্যান করতে পারি?
আমার চোখে সময়ের এই ফোঁটার জন্য
সিগারেটে লাল তারকার সহ্যশক্তির মতন
মনে হয় জীবন কাঁচির চেয়ে তাড়াতাড়ি আলাদা হয় ।
আমি জানি আমি নিজেই কামিয়ে ফেলতে পারি
আমার মুখের চারিপাশের ছারপোকা চিরকালের জন্য চলে যাবে।
আমার জুতোর ছ্যাঁদাগুলো সাময়িক, আমি তা বুঝি ।
আমার তোশোক নোংরা কিন্তু কারই বা নয় ?
জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন সবাই একবার মুখ ধোবার বেসিনে
পেচ্ছাপ করে --
এখন এক মিনিটের জন্য আমার জানালাকে কালো রঙ করতে দাও।
একটা প্লেট ছোঁড়ো আর দুরন্তপনায় ভাঙো --- কিংবা হয়তো কেবল
অজান্তে দুর্ঘটনায় মেঝেতে ফেলে দাও যখন তুমি টেবিলের
চারপাশে ঘুরছ।
আয়নার সামনে আমাকে সাহারা মরুভূমির ভুতের মতন দেখায়,
কিংবা বিছানার ওপরে আমাকে বাতাসের জন্য কাঁদুনে মমির মতন দেখায়
কিংবা টেবিলের ওপরে আমি নিজেকে নেপোলিয়ানের মতন মনে করি ।
কিন্তু এখন দিনের জরুরি কাজ -- জাঙিয়ে ধুতে হবে -- দুই মাস ধোয়া হয়নি--
পিঁপড়েগুলো এই বিষয়ে কি বলবে ?
কেমন করেই বা আমার জামাকাপড় ধুতে পারি--
কেননা আমি, আমি, আমি তা করলে মেয়েমানুষ হয়ে যাবো ।
না বরং আমি আমার জুতো পালিশ করব আর মেঝের ব্যাপারে
তা পরিষ্কার করার বদলে রঙ করা বেশি সৃষ্টিশীল।
আর ডিশগুলোর ব্যাপারে আমি তা করতে পারি কেননা আমি ভাবছি
আমি একটা রেস্তরাঁয় চাকরি পেতে পারি ।
আমার জীবন আর আমার ঘর দুটো বিশাল ছারপোকার মতন
আমাকে সারা বিশ্ব অনুসরণ করে চলেছে।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ প্রকৃতির জন্য আমার নিষ্পাপ চোখ আছে।
আমি জন্মেছিলুম ভালোবাসার একটা গান মনে রাখার জন্য--
এক পাহাড়ের ওপরে এক প্রজাপতি পেয়ালা তৈরি করে
যা থেকে পান করি, ফুলের সেতুর ওপর দিয়ে যেতে যেতে।
প্যারিস, ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৫৭
আমার বিছানা হলুদ রঙে ঢাকা
আমার বিছানা হলুদ রঙে ঢাকা -- হে সূর্য, আমি তোমার ওপরে বসি
ওহ সোনালি ক্ষেত তোমার ওপরে শুই
ওহ টাকাকড়ি তোমাব স্বপ্নে দেখি
আরও, আরও, কেঁদে ওঠে বিছানা -- আমার সঙ্গে বেশি কথা বলো--
ওহ বিছানা পৃথিবীর ভার নিয়েছে
তোমার ওপরে রাখা সব হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন
ওহ বিছানা যার চুল গজায় না, যার সঙ্গে সঙ্গম করা যায় না
কিংবা যে সঙ্গম করতে পারে না
ওহ বিছানা সব যুগের খাবারের গুঁড়ো তোমার ওপরে জড়ো করা
হে হলুদ রঙের বিছানা সূর্যের দিকে কুচকাওয়াজ করে যাও
যেখানে তোমার যাত্রা ফুরোবে
ওহ ৫০ পাউণ্ডের বিছানা যে ৪০০ পাউণ্ডের বেশি নিতে পারে
কতো শক্তিমান তুমি
হে বিছানা, কেবল মানুষের জন্য আর জান্তুদের জন্য নয়
হল;উদ বিছানা কবে জন্তুরা সমান অধিকার পাবে ?
ওহ চারপেয়ে বিছানা মেঝের ওপরে চিরকালের জন্য তৈরি
ওহে হলুদ বিছানা জগতের সমস্ত খবর
তোমার ওপরে কখনও না কখনও শোয়
১৯৫৭, প্যারিস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন