বাবি ইয়ারের ওপরে কোনো স্মৃতিফলক বসানো হয়নি
গভীরে নেমে গেছে গিরিখাত
মামুলি মানুষের স্মৃতিচিহ্ণের মতন ।
আমি ভয়ে আক্রান্ত ।
আজকে আমার নিজের বয়স
জগতের সব ইহুদিদের বয়সের যোগফলের সমান ।
এখন আমার সত্যিই মনে হয়
যে আমি আদপে একজন ইহুদি
এখানে আমি প্রাচীন মিশরে ঘুরেফিরে বেড়াই ।
ক্রুশকাঠে ঝুলে এখানেই হয়েছিল আমার সমাপ্তি
আর আজও আমার সারা শরীর জুড়ে পেরেকের ঘা ।
আমি নিজেকে মনে করি সেই দ্রেফিস ।
যে একাধরে প্যালেস্টাইনের
গুপ্তচর আর বিচারক ।
আমি জেলখানায় বন্দি ।
চারিদিকে বাধার পাঁচিল ।
ওরা কুকুর লেলিয়ে দ্যায়
গায়ে থুতু ফ্যালে
নোংরা গালাগাল দ্যায় ।
বাচাল আর সুন্দরী ধনী যুবতীরা
দামি লেসবসানো ফ্রক পরে
আমার মুখের ওপর রঙিন ছাতা উড়িয়ে চলে যায় ।
আমি যেন তখন
বাইলোস্তকের সেই যুবক
যার রক্ত ঝরে মাটিতে বইতে থাকে ।
ভাটিখানায় জড়ো-হওয়া নেতাদের গা থেকে
ভোদকা আর পেঁয়াজের দুর্গন্ধ বেরোয় ।
আমি অসহায়, মুখবুজে বুটের লাথি খাই ।
জাতিবিদ্বেষী খুনীরা উত্তেজনায় চেল্লায়
“ইহুদিদের মারো, রাশিয়াকে বাঁচাও”।
আমার অনুনয়-বিনয়ে কেউ কান দ্যায় না ।
চাল-গমের একজন দোকানদার
আমার মাকে ধরে পেটায়
হে আমার রুশি ভাইবোনেরা !
তোমাদের তো
আমি চিনি
হাড়ে-হাড়ে তোমরা আন্তর্জাতিক ।
কিন্তু যাদের হাতে নরকের পাঁক লেগে আছে
তারা অনেক সময়ে বিশুদ্ধতার গুণগানে মেতে ওঠে ।
আমি আমার দেশের লোকেদের ধার্মিকতা বুঝি ।
কী নারকীয় ওই ইহুদিবিদ্বেষীরা
বিবেকের ছিটেফোঁটা চাপ ছাড়াই
তারা বুক ফুলিয়ে নিজেদের বলে
‘রুশ জনগণের সংঘবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র’।
আমি হতে চাই
অ্যানে ফ্র্যাংক
জীবন্ত, স্বচ্ছন্দ,
বসন্তঋতুর গাছের ডালের মতন ।
আমি ভালোবাসতে চাই ।
তার জন্য গালভরা তোষামোদের দরকার নেই ।
আমার বড়োই দরকার
একে অন্যের চোখে চোখ মেলে তাকানোর।
কতটুকু চোখে দেখার
বা গন্ধ নেবার ক্ষমতা আমাদের আছে !
গাছের পাতাগুলো আমাদের নাগালের বাইরে
আকাশ দেখার অনুমতি আমাদের নেই ।
তবু আমরা অনেক কাজ করতে পারি ।
কোমল
একে আরেকজনকে জড়িয়ে ধরি অন্ধকার ঘরে ।
কারা আসছে এদিকে ?
ভয় নেই । দূর থেকে আসা আওয়াজগুলো
বসন্তঋতুর বজ্রনির্ঘোষ :
বসন্তঋতু আসছে আমাদের দেশে
তাহলে তোমরা আমার কাছে এসো
মেলে ধরো তোমাদের ঠোঁট ।
ওরা কি দরোজা ভেঙে ফেলছে ?
না, না, বরফের চাঙড় ভাঙার আওয়াজ….
বাবি ইয়ারের বুনো ঘাসে উঠেছে বাতাসের ইশারা ।
গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে বিচারকদের মতন,
তাদের ডালপালায় রয়েছে খারাপ ইঙ্গিত ।
চারিদিক থেকে শুনতে পাচ্ছি মুখবোজা চিৎকার,
আর আমি মাথার টুপি খুলে
ক্রমশ অনুভব করছি
মাথার চুলগুলো পেকে যাচ্ছে ।
এখানে কবরে শোয়া শতসহস্র মানুষের মতন
এক খাঁ-খাঁ নিঃশব্দ হাহাকার ।
এখানে রাইফেলের গুলিতে মারা গেছেন
অজস্র বুড়ো-বুড়ি
আমিও ।
এখানে রাইফেলের গুলিতে মারা গেছে
সব কয়টি খোকা-খুকু
আমিও ।
আমার প্রতিটি জীবনকণা
কোনোদিন ভুলবে না
ওই ‘ইনটারন্যাশানাল’ গান
আমরা প্রাণভরে গাইবো
যখন পৃথিবীর শেষ ইহুদিবিদ্বেষীকে
চিরকালের জন্য সমাহিত করা হবে ।
আমার গায়ে কোনো ইহুদির রক্ত লেগে থাকবে না ।
তাদের যুক্তিহীন ক্রোধে
প্রত্যেক ইহুদিবিদ্বেষী
আমি ইহুদি বলে আমায় ঘেন্না করে ।
তাই মনেপ্রাণে
আমি একজন খাঁটি রুশ নাগরিক ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন