বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

গলগণ্ডপুরম : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস

 

গলগণ্ডপুরম : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস

প্রথম পর্ব

মনে পড়ছে, বাস কন্ডাক্টর বলেছিল, স্যার, আপনার পাশে যে লোকটা বসেছিল, সে তো নেমে চলে গেল, কিন্তু তার মাথাটা আপনার কাঁধে রয়ে গেছে ।

এই বাসে যারা চেপেছে তারা সবাই ল্যাংটো ; তা নাহলে চাপতে দেয়া হয় না । যাত্রীরা কে কোথায় যাচ্ছে বা ফিরছে বা আসছে তা চালক জানে না । চালকও ল্যাংটো ।

যে লোকটা নেমে গেল সে জানে প্রতারণার বিষয়বস্তু সর্বদাই একটি আকর্ষণীয় বিষয়, আর যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের স্বভাবে যা আছে তা বহাল থাকে আর সমাজ যখন নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখন এক বা অন্য আকারে প্রতারকদের বিকাশ লাভের সম্ভাবনা থাকে। এই গলগণ্ডপুরমে প্রতারণার বিখ্যাত নায়ক নায়িকাদের ইতিহাসগুলোকে একত্রিত করা হবে যাতে দেখা যায় যে এই শিল্পটি অনেক রাজ্যপুরমে চর্চা করা হয়েছে। এদিকে গলগণ্ডপুরম নামের রাষ্ট্রপুরমে রূপগুলো– ছদ্মবেশী, ভানকারী, প্রতারক, আর সব ধরণের জোচ্চোর; যারা সম্পদ, পদ, বা অর্জনের জন্য খ্যাতির মুখোশ পরেছে আর যারা নিছক শিল্পের উন্নতির জন্য এটি করেছেন।যেমন একজন লোক কেবল নানা রকমের কাক আঁকে তো আরেকজন আঁকে বউদের নেতিয়ে পড়া মাই ।

গলগণ্ডপুরমের নাগরিকদের সাথে নৈতিকভাবে আচরণ করার কোন চেষ্টা একে আরেকের সঙ্গে করে  না : তবুও রাষ্ট্রপুরমের প্রতারকদের উপর এই যে নথি লেখা হচ্ছে তার জন্ম একটি গবেষণা থেকে, তা এই যে, একদল চোর-চোট্টা যায়, আরেকদল আসে । মসনদে পোঁদ ঠেকলেই হাল আমলের রাষ্ট্রপুরমে কর্ণধাররা জোচ্চর হয়ে যায় । 

কন্ডাক্টারের কথায় গদাধরের হুঁশ ফিরে এলো আর ওর ঘাড়ে বসে থাকা মুণ্ডুটাকে বলল, এই বাঞ্চোৎ, মাথা নামা। কিন্তু কথাগুলো ওর মুখ দিয়ে না বেরিয়ে কাঁধে বসে থাকা মাথাটার মুখ দিয়ে বেরোলো ।

গদাধর মুণ্ডুটাকে কষে একটা ঘুষি মারল আর ওর নিজের নাক ফেটে রক্ত বেরোতে লাগলো । 

কন্ডাক্টার বলল, এই ঘটনা আখছার হচ্ছে । এই কাঁধে মুণ্ডু ফেলে পালিয়ে যাওয়া আর সেই মুণ্ডু আসল মুণ্ডুর জায়গা নেয়া । আসল লোকটা নিজেরই ডুপলিকেট হয়ে যায় । 

বাস চালক বাস থামিয়ে পেছন ফিরে বলল, সেই কারণেই রাষ্ট্রপুরম নিয়ম করে দিয়েছে যে সমস্ত নাগরিককে ল্যাংটো থাকতে হবে । ল্যাংটো থাকলে নাকি প্রতারণা আর দূর্নীতি থাকবে না ।

গদাধরের ঘাড়ের মুণ্ডুটা বলল, ল্যাংটো থাকা আসলে কি? এটা হল কোন কাপড় না থাকার অবস্থা । যে নেমে গেল তার জীবনের যৌন প্রসঙ্গে নাও থাকতে পারে। হয়তো সে নাগা সন্যাসী যার লিঙ্গ অকেজো করে দেয়া হয়েছে যাতে মেয়েমানুষ দেখে কোনো দমকা চাগাড় না দেয় । মানব সভ্যতা এগোনোর ফলে ল্যাংটো থাকার ব্যাপারে আমাদের  দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে থেকেছে কারণ মানুষ একটি লম্পট শ্রেণির প্রাণী । নৃতাত্ত্বিকরা আগেই ফতোয়া দিয়েছেন  যে মানুষ মূলত নগ্ন অবস্থায়, পোশাক ছাড়াই, তাদের প্রাকৃতিক অবস্থা হিসাবে আরামে থাকতো । অ্যাডাম আর ইভ নামে যাদের গপপো শোনানো হয় তারা ল্যাংটো থাকতো ; বইতে তার প্রমাণ আছে । সে বই কিন্তু আমি লিখিনি । কেউ জানে না কার লেখা। 

বাসচালক গাড়ি থামিয়ে রেখেছিল । বলল, গলগণ্ডপুরমের পৌরাণিক যুগ ছিল ল্যাংটো ঋষি, মুনি, সাধু, সন্তে ঠাশা । এই যেমন জৈনদের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর, সমস্ত জাগতিক জিনিসপত্র ত্যাগ করার ব্রত হিসাবে ভিক্ষুদের জন্য সম্পূর্ণ নগ্নতার উপর জোর দিয়েছিলেন। সাকা, ভারতের এক হিন্দু সম্প্রদায়, খাজুরাহো শহরের দেয়ালে থাকা হাজার হাজার সুস্পষ্ট ভাস্কর্যের মাধ্যমে তাদের নগ্নতার ঐতিহ্যকে আধুনিক ভারতে স্হায়ি করে রেখেছে। প্রায় ১০০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি, খাজুরাহোর  মন্দিরগুলো আধুনিক দর্শনার্থীদের কাছে তার মূল্যবোধকে এমন প্রত্যক্ষতার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয় যে কল্পনার জন্য কিছুই বাকি রাখে না। ওই মন্দিরগুলোর সামনে দিকের আর চারপাশে হাজার হাজার মানুষ আর প্রাণীর মূর্তি আনন্দের সাথে নাচছে । রাজা আর সাধারণ মানুষদের আনন্দময় যৌন মিলনে চিত্রিত করা হয়েছে, পুঁতি, চুড়ি আরে সাজসজ্জা ছাড়া একেবারে ল্যাংটো । মানুষকে ল্যাংটো করে দিলে তার শ্রেণিচেতনা লোপ পায় ।

কন্ডাক্টার বলল, হাই তুলে, যারা মনে করেন ভারতীয় নারীরা পোশাকে পশ্চিমাদের নকল করছেন তারা ইতিহাস সম্পর্কে কীই বা জানে ? সব তো ঘুষ দিয়ে মাস্টার হয়েছে ।  প্রাচীন আর মধ্যযুগে ভারতে যারা বেড়াতে আসতো তারা এই ব্যাপারটা  দেখে বোমকে যেতো  যে পুরুষ আর নারী,  উভয়েই তাদের দেহের নীচের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো ছাড়া খুব কমই ঢেকে রাখতেন। ধড়ের চারপাশে আলগাভাবে পরা একটা উত্তরিয় ছাড়া পুরুষ আর মহিলা উভয়েই প্রায় খালি স্তনে যেতেন। এছাড়াও, মহিলারা কখনও কখনও তাদের স্তনের চারপাশে শক্তভাবে অন্য কাপড় বেঁধে রাখতেন বটে কিন্তু তাঁরা নিজেদের বডিকে বোরখা দিয়ে ঢাকতেন না।

ড্রাইভার বলল, তখনকার দিনে মেয়েমানুষ দেখলেও বাঁড়া ছিল পুরুষের আজ্ঞাবহ । ওই তো অ্যাডাম নামের লোকটা কতোদিন ইভের সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালো কিন্তু ওর বাঁড়া দাঁড়ায়নি, যদ্দিন ও ল্যাংটো ছিল । 

দ্বিতীয় পর্ব

আমার নাম মিনহাজ আল-সিরাজ জুজজানি, গদাধরের কাঁধের মুণ্ডুটা ওর দিকে তাকিয়ে বলল : তারপর যোগ করল, শুনে থাকবেন আমার নাম । আমিই তো আপনাদের দেশে এসে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তাদের ইতিহাস লিখেছি, নয়তো আপনারা জানতে পারতেন না । আপনাদের দেশে তো ইতিহাস লেখার চল ছিল না । ইতিহাসের ঘটনাগুলোকে মহাকাব্য বানিয়ে মহাকবিরা মহা গোলমাল বাধিয়ে গেছেন ।

—আমি ঠিক বুঝেছি। তুই-তোকারি করে ফেলেছি বলে মাফ করবেন । একজন লোক আমার কাঁধে মুণ্ডু রেখে সটকে পড়বে, সেটা আমি সহ্য করতে পারিনি । 

— জানেন তো ?  ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি মুসলমান আক্রমণকারী বখতিয়ার খিলজি নালন্দা মহাবিহার লুঠ আর  ধ্বংস করে। এই ঘটনা ভারতে বৌদ্ধধর্মের পতনের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হয়। শত শত বছর ধরে অবদান রেখে আসা একটা সভ্য, উন্নত জাতি তৈরী ও জ্ঞান উৎপাদনকারী নিরীহ এই প্রতিষ্ঠানটা ১১৯৩ খ্রষ্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী আক্রমন করে ধ্বংস করে ফেলে। তার আক্রমনের বর্বরতা এত ভয়াবহ আকারে ছিল এ সম্পর্কে আমি আমার “তাবাকাতে নাসিরি” বইতে লিখেছি যে “হাজার হাজার হিন্দু, বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আগুনে পুড়িয়ে আর গলা কেটে হত্যা করে সেখানে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা করে খিলজী” এরপর আগুন লাগিয়ে দেয় লাইব্রেরীর বিলডিঙে। লাইব্রেরীতে  এত বেশী বই ছিল যে কয়েক মাস সময় লেগেছিল সেই মহা মূল্যবান বই গুলো পুড়ে ছাই ভষ্ম হতে।  খিলজী শুধু নালন্দাকে পুড়িয়ে ছাই করে নি, একই সাথে পুড়িয়ে ছাই করেছে একটি জাতির সভ্যতা, ইতিহাস, প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞানের অমূল্য বই যা থেকে আপনারা জানতে পারতেন সে যুগের ভারতবর্ষের শিক্ষার অবকাঠামো, তৎকালীন সামাজিক-সাংষ্কৃতিক অবস্থা ও প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে। জাতি হিসাবেও আপনাদের পিছিয়ে দিয়েছে কয়েক হাজার বছর। 

—একদিক থেকে উনি ভালো কাজ করেছিলেন, বলুন । ওনার জন্যই বাংলা ভাগ হতে পারলো, এতো লোক উদ্বাস্তু হয়ে ঘরছাড়া হলো । এই যে ওই পারে গোরু পাচার চলছে, বেচারা নেতারা একটু টাকাকড়ি করে জেলে যাচ্ছে, উনি যদি না আসতেন তো কিছুই হতো না । বেওয়ারিশ গোরু আর বলদগুলোর তবু হিল্লে হচ্ছে ।

—কিন্তু ওনার কারণেই পাকিস্তানিরা কতো কাণ্ড করতে পারলো একাত্তর সালে, ভেবে দেখেছেন ।

—তা ঠিক । কত্তো বাঙালি এই পারে পালিয়ে এসেছিল । সেসব দেখে বিদেশি কবিরা কবিতা লিখেছিল।

—আর মরিচঝাঁপি ? তার জন্য সবাই জ্যোতি বসুকে দায়ি করে । আসল কালপ্রিট তো বখতিয়ার খিলজি । ভেবে দেখুন আপনি । খিলজি না এলে দেশভাগ হতো না । নন-খিলজি বাঙালিরা আপনাদের দিকে পালিয়ে আসতো না । পালিয়ে এসে মরিচঝাঁপিতে বসত গড়ত না ।

–কিন্তু নন-খিলজিদের জ্যোতি বসুই তো বলেছিলেন, ওদের মেরে তাড়াও ।

–জ্যোতিবাবুর দোষ নেই । খিলজি আর নন-খিলজির ভাগাভাগির জন্য দায়ি বখতিয়ার খিলজি । তাই তো আল মাহমুদ নামে একজন কবি বখতিয়ার খিলজির গুণ গেয়ে মহাকাব্য লিখেছেন ।

নিউটাউনের চোট্টাভরম আবাসনের এগারো তলার ফ্ল্যাটে নিজের পনেরো বাই পঁচিশ বেডরুমে আঠারো ডিগ্রিতে এসি চালিয়ে একুশ ইঞ্চি পুরু বিছানায় শুয়ে, পালবালিশ জড়িয়ে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে, স্বপ্নের মধ্যে বাসের ঘটনাগুলো দেখছিল গদাধর, দুজন প্রেমিকার লাৎ খাওয়া গদাধর, যাদের একজন ওর সমবয়সী অন্যজন বয়সে পাঁচ বছর বড়ো ছিল, স্বপ্নের মধ্যে দেখা দিল আরেকটা ঘটনা, বাসটা অন্ধকারে উধাও, সেই ঘটনা ঘটেছিল বিখ্যাত সঙ্গমতীর্থ সোনাগাছির লাল-নীল-সবুজ টুনি বালব ঝলমলে সন্ধ্যায় আগ্রা রাজস্থানী গার্লস আর উত্তর ভারতীয় দিল্লিটাইপ যুবতীদের জমঘট বাজার নীলকমল, প্রেমকমল, গঙ্গাযমুনা, রাত্রিপ্রেমিক, স্বপ্নেরঘর ঢুঁ মেরে, এক ব্যাটা লাল টিশার্ট আর চোঙা ফেডেদ জিন্সপরা পিম্পের সঙ্গে দেখেছিল ঘুরে-ঘুরে ;  সে নিয়ে গিয়েছিল সস্তার  বাঙালি সুন্দরীদের বাড়িউলি নন্দ রানীর আড্ডাতেয় । পিম্পটা জ্ঞান দিয়েছিল, যেন পাহাড়ের ওপর থেকে কোনো ধর্মপুরুষের বাণী, ডলবি ডিজিটালে, যে এই এলাকাটা চালায় পিম্প, পুলিশ, পলিটিশিয়ান আর পয়সা ; এই চারটে পি সেবা করে আরেকটা পি যাকে লোকে বলে পেনিস। গদাধর বলল, আরে মিস্টার, আসল পি তো বাদ দিলে, প্রস্টিটিউট । 

–চুপ, চুপ, স্যার, ওই শব্দটা মুখ থেকে বের করবেন না । 

গদাধর বেছে নিয়েছিল সবচেয়ে সুন্দরী আর দামি নন্দিনী কৌর নামের এক দিল্লিওয়ালিকে, যে, কাজ শুরু হবার আগেই, বেঁজি যেমন কেউটের ছোবল এড়াবার জন্যে স্প্রিঙের মতন লাফিয়ে পেছনে সরে গিয়ে ফিরে আক্রমণ করে , বলে উঠেছিল, আবে, তু সালে মুসলমান হ্যায়, বাংলাদেশি ভগোড়া ? 

—না গো চুলবুলেশ্বরী, আমার জন্মের পর পেচ্ছাপ বেরোচ্ছিল না, খোসার মুখটা বন্ধ ছিল, পেট ফুলে যাচ্ছিল, তাই পেডিয়াট্রিক সার্জেন ফোরস্কিন বাদ দিয়ে  রিমুভ করা জায়গায় পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে তা গজ দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন । আমার বাপকে তার জন্য দশ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল, যা তুমি নিচ্ছ আজকে রাতটা তোমার সঙ্গে শোবার জন্য ।  তুমি যেমন দিল্লি থেকে এসে এই শহরে ব্যবসা ফেঁদেছ আমার গ্র্যাণ্ডফাদার বিদ্যাধর সেন কৃষ্ণনগর থেকে এই শহরে এসে ব্যবসা ফেঁদেছিল, কাপড়ের, সেই ব্যবসাই চালায় আমার বাপ আর আমার দাদা ।

—-আমি মুসলমান কাস্টমার নিই না, আমার এজেন্টকে বলা আছে । 

—-মুসলমানরা ওটা শুরু করেনি চুলবুলিদেবী, ওটা অনেক আগের, ইহুদিদের জেনেসিস বইতে লেখা আছে,  ইয়াহওয়েহ আব্রাহামকে বললেন, এবার থেকে তুমি  আমার চুক্তি পালন করবে, তুমি আর তোমার পরে তোমার বংশধরেরা আর  বংশ পরম্পরায় মানতে হবে এই চুক্তি। তোমাদের প্রত্যেক পুরুষকে সুন্নত করা হবে। তোমাদের নুনুর ডগার  মাংসে সুন্নত করানো হবে, আর এটা আমার আর তোমাদের মধ্যে  মাংসল চুক্তি ৷ তোমাদের মধ্যে যার বয়স আট দিন হবে তার সুন্নত করা হবে৷ তোমাদের বংশ পরম্পরায় প্রত্যেক পুরুষ, তা তোমাদের ঘরে জন্মগ্রহণ করুক বা কেনা গোলাম হোক৷ তোমার কোঁচড়ে আমার চুক্তি হবে চিরস্থায়ী চুক্তি। যে কোন খৎনা না করা পুরুষকে  তার লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে; কেননা  সে আমার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। 

–জানি, সব মানুষ কোনো না কোনো বই থেকে জন্মেছে । ওই তুমি যে বললে, ইহুদিরা একটা বই থেকে জন্মেছে। 

—আরও অনেক দেশের লোকেরা করে । আসলে যে দেশে বালির ঝড় হয় সেখানকার পুরুষদের চামড়ার ভেতরে বালুকণা ঢুকে কষ্ট দিতো, ঘা হয়ে যেতো, তাই খোসা ছাড়াবার প্রথা । যারা ইহুদিদের বইটাকে মেনে নিজেদের বই থেকে জন্মায়, তারাও মেনে নিয়েছে । জলের অভাব বলে ধোয়াধুয়ি ওদের শুচিব্যামো। হিসি করার পর ধোয়, ঈশ্বরের বাড়িতে যাবার আগে ধোয়, মরবার পর কবরে যাবার আগে ধোয় ।

— কিন্তু ভক্ত কবীর দাস বারণ করে গেছেন আর তা গুরুগ্রন্হে লেখা আছে । 

—তাই বুঝি ? জানতুম না । তবে এটা জানি, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বিজয়ের পরে,  খতনাকে গ্রীকরা অপছন্দ করতো । ওরা মনে করতো খতনার ফলে পুরুষ অসম্পূর্ণ হয়ে যায় । এর ফলে গ্রিকদের  মধ্যে এর প্রবণতা হ্রাস পায় আর গ্রিক জিমনাশিয়ামে সবাইকে ল্যাংটো হয়ে ব্যায়াম করতে হতো বলে কেউ আর নুনুর খোসা ছাড়াবার প্রথা অনুসরণ করতে চাইতো না । গ্রিক জিমনাশিয়ামে  ল্যাংটো থাকাই ছিল আদর্শ। ভ্যাটিকান সিটির বাইরে অ্যাপোলোর একটা ল্যাংটো মূর্তি আছে, খোসাসুদ্ধ, কিন্তু বড্ডো ছোটো । গ্রিক আর রোমানরা বড়ো মাপের নুনু শুধু অসুর-দানবদের মূর্তিতে দিতো । দেবতাদের বেলায় ছোট্টো, খোকাদের মতন ।

—তুমি তো তাহলে অসুর বা দানব । আচ্ছা, তুমি যে কাজের জন্যে এসেছো তা শুরু করছ না কেন। তখন থেকে আমার শরীরে নানা জায়গায় গুপ্তধন খুঁজে বেড়াচ্ছ আর গল্প শুনিয়ে নিজের শরীর-মনকে উত্তেজনার বাইরে রেখেছ ?

—আমার এই খোসা ছাড়ানো ব্যাপারটার কারণে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ আমাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাঠিয়েছিল । আমি ন্যাশানাল ক্যাডেট কোরে ছিলুম আর রাইফেল, পিস্তল চালাতে ভালো লাগতো। একেবারে অব্যার্থ হয়ে গিয়েছিল আমার টিপ । সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গিয়েছিলুম, ছাতির মাপ সেসময়ে কম ছিল বলে নেয়নি । ওদের কাছে আমার রেকর্ড ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের কচুকাটা করার জন্যে তৈরি হচ্ছে জানতে পেরে আমাদের দেশেও রেডি হবার তোড়জোড় আরম্ভ হয়ে যায় । 

গদাধর আবার পুরোনো স্বপ্নের দ্বিতীয় পর্বে ফিরে গেল, অন্ধকার বাসযাত্রায় । গদাধর পেছন ফিরে দেখলো বেশ কয়েকজন তরুণীর দেহটা মেয়ে মানুষের আর তার কাঁধে একজন পুরুষ মাথা রেখে পালিয়েছে । এই ডুপলিকেটটা আমার কাঁধে মাথা না রাখলে আমি পেছনে গিয়ে কোনো যুবতীর কাঁধে মাথা রাখতুম ।

ড্রাইভার বাস চালানো আরম্ভ করে দিয়েছিল । বলল, সব মানুষ কোনও না কোনও বই থেকে জন্মেছে । আপনি ঘাবড়াবেন না, আপনার কাঁধ থেকে মাথাটা সটকে পড়লেই কোনো যুবতীর কাঁধে মাথা রাখবেন, বাসে রাখুন বা রাস্তায় হাঁটার সময়ে রাখুন । আমরা সবাই কোনো না কোনো বই থেকে জন্মেছি । অ্যাডাম আর ইভ জন্মেছিল জেনেসিস বা আদিপুস্তক থেকে। 

বইয়ের ঈশ্বর বললেন, ঘ্যাচাঙ ফুঃ, এখন এসো, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমার আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমার মতন। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখির ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।” ঈশ্বর মাটি থেকে ধুলো তুলে নিয়ে একজন মানুষ তৈরি করলেন এবং সেই মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবাযু প্রবেশ করালেন আর মানুষটা জীবন্ত হয়ে উঠল। ঈশ্বর সেই মানুষটাকে  গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করলেন। মানুষটা যখন ঘুমোচ্ছিল তখন  ঈশ্বর তার পাঁজরের একটা হাড় বের করে নিলেন।  ঈশ্বর মানুষটার পাঁজরের সেই হাড় দিয়ে তৈরি করলেন একজন নারী । নারীকে ঈশ্বর মানুষটার সামনে নিয়ে এলেন।  মানুষটা বলল,“যাক অ্যাদ্দিনে আমার মতন একজনকে পেলুম । আমার পাঁজরা থেকে তার হাড়, আর আমার শরীর থেকে তার দেহ তৈরী হয়েছে।  নর থেকে তার সৃষ্টি হয়েছে বলে তাকে ‘নারী’ বলে  পরিচয় দেয়া হবে।” সেসময়ে নরনারী ল্যাংটো থাকতো, কিন্তু সেজন্যে তাদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না।পরের বইটার নাম নিউ টেস্টামেন্ট । সেই বই থেকে আরেকদল মানুষ জন্মেছে । ঈশ্বর তাঁর পবিত্র, নির্দোষ এবং প্রেমময় লোক হবার জন্য আমাদের খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে বেছে নিলেন।ঈশ্বর  যাকে ভালবাসেন সেই খ্রীষ্টের মাধ্যমেই  ঈশ্বর নতুন বই থেকে খ্রিস্টান সৃষ্টি করলেন । 

বাসচালক স্টিয়ারিঙ ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, আমরা কিন্তু বাঙালি, আমরা একটা বই থেকে জন্মাইনি, অনেকগুলো বই থেকে জন্মেছি, তা লোকে নিজেকে বাঙালি বলে মানুক বা না মানুক ।

পেছনের কোনো সিটে পুরুষের কাঁধে মাথা রেখে যে নারীদেহ পালিয়েছে, সেই নারীমুখ বলল, আমি এই বিষয়ে পিএইচডি করেছি ।  বাঙালি জাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে হরিবংশে যে কাহিনি আছে, সেই কাহিনি থেকে আমরা জানতে পারি যে পুরু  বংশে বলি নামে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজার পাঁচ ছেলে ছিল, তাদের নাম  অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুহ্ম ও পুশু। মহাভারতের আদিপর্বেও অসুর-রাজ বলির এই পাঁচ ছেলের উল্লেখ আছে। বলিরাজার এই পাঁচ ছেলে যে পাঁচটা রাজ্য শাসন করতে, তাদের নাম থেকেই এই পাঁচটি রাজ্যের নামকরণ হয়েছিল। বলিরাজার এই পাঁচটি ছেলে বালেয় ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত, এবং তাঁরাই চারি বর্ণের সৃস্টি করেছেন। মৎস্য আর বায়ু পুরাণেও বলা হয়েছে যে, বলিরাজার ছেলেরাই জগতে চারি বর্ণের সৃষ্টি করেছেন। ‘মুঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ নামের একটা বইতে বলা হয়েছে যে, বাঙলাদেশের  লোকেরা ‘অসুর’ জাতিভুক্ত। এটা মহাভারতের এক উক্তি থেকেও সমর্থিত । সেখানে বলা হয়েছে যে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড ও সুহ্মদেশের লোকেরা দীর্ঘতমা ঋষির ঔরসে, মহিষী সুদেষ্ণার গর্ভে অসুর-রাজ বলির ক্ষেত্রজ সন্তান। 

বাস কন্ডক্টর জিগ্যেস করল, আমরা অসুর ?  তাই বলি । এতো এতো টাকা নিয়ে মুকখুগুলোকে টিচার করেছে, তা অসুররা ছাড়া কেই বা করবে । কত্তো টাকা ! বাপরে বাপ । তার ওপর আবার স্যাঙাৎসুন্দুরীর দল । চোখ জুড়িয়ে যায় ।

পেছনের কোনো সিট থেকে যুবকের কাঁধে মাথা রেখে পালানো যুবতীর কন্ঠে কেউ বলল, এখন কথা হচ্ছে এই অসুর জাতির লোকেরা কারা, এবং তারা কোথা থেকেই বা বাঙলাদেশে এসেছিল। বৈদিক ও বেদোত্তর সংস্কৃত সাহিত্যে ‘অসুর’ শব্দটির খুব ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় দেবগণের বিরোধী হিসাবে। ঋগ্বেদে শব্দটির বহু উল্লেখ আছে। ঋগ্বেদের বিভিন্ন মণ্ডলের যে সকল সূক্ত ও ঋকে ‘অসুর’ শব্দটির উল্লেখ আছে সেগুলো যথাক্রমে ১।২৪।১৪, ১৫৪।৩, ২।১।৬, ৩।৩।৪, ৪।২।৫, ৫।১২।১, ৬।২২।২, ৭।২।৩, ৭। ৬।২, ৭।৬।২, ৭।১৩।১, ৭।১৩।১, ৭।৩০।৩, ৭।৩৬ ২, ৭।৫৬।২৪, ৭।৬৫।২৪, ৬০।৬৫।২, ৭।৯৯।৫, ৮।৯।২৩, ৯।৭৩।১ ও ১০/১০/২। সিন্ধুর অসুর-রাজ ও অন্যান্য অসুর-রাজগণের উল্লেখও ঋগ্বেদে আছে। আমরা অনুমান করেছি যে, অসুররা বিস্তৃত-শিরস্ক জাতি ছিল। প্রথম অধ্যায়ে আমরা প্রাচীন নরকঙ্কাল সম্বন্ধে যে আলোচনা করেছি তা থেকেও, জানতে পারি যে, হরপ্পা যুগে গুজরাট ও সিন্ধুপ্রদেশে বিস্তৃত- শিরস্ক জাতি বিদ্যমান ছিল। ভারতের মেগালিথ নির্মাণকারীরাও বিস্তৃত- শিরস্ক জাতি ছিল। মেগালিথে অনুরূপ প্রোথিত শিরাখণ্ড বাঙলার মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় পাওয়া গিয়েছে।

গদাধরের কাঁধে মাথা রাখা মিনহাজ বলল, অনেকে মনে করেন যে ‘অসুর’ বলতে আর্যপূর্ব-যুগের ভারতের এক দেশজ জাতি বুঝাত। যদি অসুররা বৈদিক আর্যগণের আগমনের পূর্বেই ভারতে এসে থাকে, তা হলে তারা যে দেশজ এই মতবাদ গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি নেই। বৈদিক সাহিত্যে আমরা ‘দাস’, ‘দস্যু’, ‘নিষাদ’ প্রভৃতি আরও অনেক দেশজ জাতির নাম পাই। সুতরাং বৈদিক আর্যগণের ভারতে আগমনের পূর্বে এদেশে যে একাধিক জাতি বাস করত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এদের অনেককেই অনার্য-ভাষাভাষী বলা হয়েছে। 

গদাধর চটে গিয়ে মুণ্ডুটাকে ঘুষি মারতেই সেটা গদাধরের নাকে লেগে নাকমুখ থেকে রক্ত বেরোতে লাগল । রক্তাক্ত মুখেই গদাধর বলল, শালা, আর্য-অনার্য থিয়োরি চাপিয়ে গেছে ইংরেজগুলো, তাই নিয়ে লোকে এখনও কপচে চলেছে । আর্য এবং অনার্য তত্ত্ব হলো ১৮ শতকের মিথ্যা ইউরোপীয় প্রচার তত্ত্ব যা ১৮ শতকে ব্রিটিশ-রা তৈরি করেছিল ভারতীয় মানুষদের ছোট দেখানোর জন্য এবং তাদের ইউরোপীয়ান মানুষদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য। আর্য এবং অনার্য তত্ত্ব সম্পুর্ন একটা মিথ্যা এবং ভুল ধারণা, আর্য এবং অনার্য তত্ত্ব কথা থেকে এসেছে? ব্রিটিশ-রা প্রথম যখন ভারতবর্ষে আসল তখন তারা ভারতবর্ষের মধ্যে থাকা অসীম গৌরব এবং বৈভব দেখে তাদের মনে হিংসা জাগে, তখন তারা ভারতবর্ষের সকল জিনিসের কৃতিত্ব তাদের নিজের নামে করার জন্য একটা ফন্দি আঁটে, এবং এই ফন্দিটার নামই হচ্ছে, “আর্য অনার্য তত্ত্ব” আর্য অনার্য তত্ত্বের মুল ভিত্তি হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ বছর আগে নাকি একদল ইউরোপীয়ান মানুষ ইউরোপ থেকে এসে ভারতবর্ষে আক্রমণ করে , এবং তারা স্থানীয় ভারতীয় মানুষদের নাকি পিছনে তাড়িয়ে দেয়, তারা নাকি ঘোড়া এবং রথে চড়ে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল, এবং তারা নাকি সঙ্গে করে বেদ নিয়ে এসেছিল এগুলো সিব মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ব্রিটিশদের দ্যারা ভারতীয় মানুষদের ছোট দেখানোর জন্য ১৮০০ শতকে তৈরি করা হয়েছিল।এবং বিড়ম্বনা হলো, ১৮০০ শতকের পুরনো ব্রিটিশদের তৈরি মিথ্যা তথ্য গুলো আজও ভারতবর্ষের বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে বাচ্চাদের পড়ানো হয়,

প্রচলিত ধারণায়, ‘ইন্দো-ইউরোপীয়’ ভাষাভাষীদেরই আর্য বলা হয়ে থাকে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, দীর্ঘকায়, গৌডরবর্ণ এবং দেখতে সুদর্শন আর্যরা ছিল ভারতের বহিরাগত এক জাতি — যাদের আদি বাসস্থান ছিল মধ্য-এশিয়া অথবা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল অর্থ কিংবা ইউরোপের অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী অথবা চেকোশ্লোভাকিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ঋকবেদের রচনাকালের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিকরা খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দকেই ভারতে আর্যদের সম্ভাব্য আগমনকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রথম দিকে আর্যরা আক্রমণকারী হিসেবে ভারতে প্রবেশ করেনি; শান্তিপূর্ণভাবেই নিজেদের গৃহপালিত পশু, জীবনযাত্রার উপকরণ ও দেবদেবী সঙ্গে নিয়ে তারা ভারতে আসে, কিন্তু পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করার পর থেকে ক্রমেই আর্যরা আক্রমণকারীর রূপ ধারণ করতে থাকে। ঋকবেদের যুগের প্রথম পর্যায়ে, ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, আফগানিস্তানের সীমান্ত থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভারত-ভূখণ্ডে আর্যরা বসতি স্থাপন করলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে আর্যরা ভারতের আরও পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে গঙ্গা ও যমুনা নদীর অববাহিকা অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। পরবর্তী বৈদিক যুগ অর্থাৎ ‘ব্রাক্ষ্মণ’ রচনার যুগে সরস্বতী নদী থেকে গাঙ্গেয় উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের কোশল (অযোধ্যা), কাশী, বিদেহ মানে উত্তর বিহার, মগধ মানে দক্ষিণ বিহার, অঙ্গ মানে পূর্ব বিহার অঞ্চলে আর্য-সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছিল। দক্ষিণ ভারত ও বাংলায় আর্য-সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছিল অনেক দেরিতে।

—বুঝলেন তো আপনারা ! বলল বাসচালক, অন্ধকারে গাড়ি থামিয়ে । তারপর যোগ করল, আমরা যে বইটা থেকে জন্মেছি তার নাম ঋগ্বেদ । ঋগ্বেদে বিশ্বজগত সৃষ্টি সম্পর্কে বহু তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে। ঋগ্বেদের পুরুষসূক্ত অনুযায়ী, সৃষ্টির প্রকাশ হয়েছিল হিরণ্যগর্ভ নামক এক মহাজাগতিক অণ্ড তথা ডিম থেকে যার মাঝে সমস্ত কিছু সুপ্ত অবস্থায় ছিল। এ সূক্তে বর্ণনা করা হয়েছে, পুরুষের বিরাট নামক বিশ্বরূপ হল সৃষ্টির উৎস। বিরাটের মধ্যে সর্বব্যাপী জ্ঞানের আবির্ভাব ঘটে এবং বিরাট থেকে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। শেষের দিকের মন্ত্রগুলোতে বলা হয়েছে, পুরুষ নিজেকে আহুতি দিয়ে পক্ষী, বন্য ও গবাদি পশু, চার বেদ, মন্ত্রের ছন্দ সৃষ্টি করেন। তার মুখ, বাহু, জঙ্ঘা ও পা থেকে চার বর্ণের জন্ম হয়। পুরুষের মন থেকে চন্দ্র ও চোখ থেকে সূর্যের জন্ম হয়। তার মুখ ও নিঃশ্বাস থেকে ইন্দ্র ও অগ্নির জন্ম হয়। তার নাভি থেকে আকাশ, মাথা থেকে স্বর্গ, পা থেকে পৃথিবী ও কান থেকে অন্তরীক্ষের জন্ম হয়।এই সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষ, জাগতিক ও মহাজাগতিক সকল সত্ত্বার মধ্যে একত্ব স্থাপিত হয়। কারণ, সবই সেই একক সত্ত্বা পুরুষের অংশসম্ভূত। পুরুষসূক্তে আরো বলা হয়েছে, পুরুষের কৃত যজ্ঞের মাধ্যমে এবং যজ্ঞ থেকে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এই আদি যজ্ঞ থেকেই যাবতীয় সৃষ্টি রূপ ধারণ করেছে। সপ্তদশ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই আদি যজ্ঞ থেকেই যজ্ঞের ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। শেষ মন্ত্রগুলোতে সকল সৃষ্টির আদিশক্তি রূপে যজ্ঞের গৌরব ঘোষিত হয়েছে। নাসদীয় সূক্তও বিশ্বতত্ত্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ধারণার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বসৃষ্টির বিষয়ে সূক্তটি ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দার্শনিক মহলে প্রসিদ্ধ। ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্তে সৃষ্টিতত্ত্ব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন পুরাণেও বিশ্বজগৎ ও মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনার পাশাপাশি অসংখ্য মহাবিশ্বের ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়াও শতপথ ব্রাহ্মণে, মনুসংহিতায়, ঐতয়ের উপনিষদে, সাংখ্য-দর্শনেও বিশ্বজগৎ ও মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

কন্ডাক্টার বলল, আরেকদল মানুষ যে বইটা থেকে জন্মেছে তার নাম আবেস্তা বা জেন্দ আবেস্তা হল জরাথুস্ট্রবাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এটি আবেস্তা ভাষায় রচিত। আবেস্তাকে ফারসি ও ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়েছে। এর প্রাচীনতম অংশ হল গাঁথাসমূহ, যেগুলো স্বয়ং জরাথ্রুস্ট্র দ্বারা রচিত ধর্মীয় স্তবজ্ঞান। জরাথুস্ট্রবাদে আরও দুটি ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে দেনকার্দ এবং আরদাভিরাফ নমক। আবেস্তা বা জেন্দ আবেস্তা নামটি দ্বারা ধর্মীয় ভাষা এবং ধর্মীয় গ্রন্থ উভয়কেই বোঝায়। জারথুস্ট্র ধর্মের বিশাল সাহিত্য (পারস্য/ইরানে আরব মুসলিমদের বিজয়ের আগে মূল ধর্ম) যে ভাষার আশ্রয় নিয়ে তৈরি হয়েছিল, তাকে ‘আবেস্তা’ বা ‘আভস্তাই ভাষা’ বলা হয়। উক্ত সাহিত্যে নবী জরাথুস্ট্র বা তাঁর সমসাময়িক অনুসারীদের ভাষার নাম কি ছিল বা কথ্য ভাষা কি ছিল তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে ঐতিহ্য অনুসারে প্রমাণিত হয় যে সেই ভাষা ও সাহিত্যের নামটিও ছিল “অবিস্তক”। অনুমান করা হয় যে “বিদ” ,জানা, এই শব্দের মূলধাতু, যার অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘প্রজ্ঞা’।

দিল্লিওয়ালি চুলবুলেশ্বরী সুযোগ বুঝে গদাধরের স্বপ্নে ঢুকে পড়েছিল, উলঙ্গ, তাই কেউ টের পায়নি । গদাধরের কাঁধ থেকে পুরুষের ফেলে যাওয়া মাথাটা দুহাত দিয়ে উপড়ে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবার পর গধাধরের পাশে বসে বলল, তুই সত্যিই অসুর, অনার্য, আর আমি আর্য, দ্যাখ আমার কাঁচা সোনার মতন গায়ের রঙ আর তোর কালচে গায়ের রঙ ।  তুই যা বলিসনি, তা হলো, যারা পড়াশুনা করেছে তারা জন্মেছে চার্লস ডারউইনের বই থেকে । ডারউইন ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত তাঁর অন দ্যা অরিজিন অব স্পিসিজ গ্রন্থে তাঁর প্রমাণ ও সিদ্ধান্ত আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৮৬১ সালে প্রকাশিত বইটির তৃতীয় সংস্করণে ডারউইন স্বীকার করেছিলেন যে উইলিয়াম চার্লস ওয়েলস ১৮১৩ সালে এবং প্যাট্রিক ম্যাথিউ ১৮৩১ সালে একইরকম মত প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কেউই সেগুলোকে বিস্তৃত করেননি কিংবা কোন খ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় উপস্থাপন করেননি।[৩২]

গদাধর বাসের বাঁদিকের সারিতে প্রথম সিটে বসেছিল, কাঁধে অন্য লোকের মাথা থাকায় দেখতে পেলো না মেয়েটিকে, যদিও তার কন্ঠস্বর শুনে গদাধর আঁচ করতে পারছিল মেয়েটির কাঁধের বদলে বুকে মাথা রেখে বডি ফেলে পালিয়েছে দুজন লোক । 

মেয়েটি বলছিল,  কর্মক্ষেত্রে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বলি । বাংলায় সবচেয়ে ঢপবাজ পত্রিকায় এক কমবয়সী মেয়ের যোগ দেওয়া, সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করা, সিনিয়রদের অন্ধের মতো বিশ্বাস করা হয়ে দাঁড়াল ভয়ঙ্কর। একজন আদ্দামড়া সিনিয়ার পুরুষ সহকর্মীর অভব্য আচরণ, যৌন হেনস্থা, যা থেকে বাঁচতে আমাকে বাধ্য হয় অভিযোগ জানাতে হয়েছিল। আমি সদ্য বিবাহিতা, সবে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেছি । ঢপবাজ পত্রিকার জেলা ডেস্কে কাজ করার সেই সময় আমার সঙ্গে এই নোংরামি করেছিল লোকটা । ঢপবাজ পত্রিকার জেলা ডেস্কেই আমাকে যৌন হেনস্হা করা শুরু হয় । জেলা ডেস্কের তখনকার চিফ মিস্টার গাধাবাহন বর্মণ নানা অছিলায় আমার কাঁধে, গায়ে হাত দিতো, আমার স্যানিটারি প্যাড, পোশাক, অন্তর্বাস, যৌন জীবন নিয়ে আলোচনা করতে চাইতো । শেষ পর্যন্ত এই অভিযোগ গিয়ে পৌঁছোয় বাঁজারাম শিকদারের চেম্বারে, যা প্রতিপন্ন হয় চূড়ান্ত এক সামন্ততান্ত্রিক, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আঁতুড়ঘরে।

ড্রাইভার : আরে ! হাইহিল জুতো পায়ে পোঁদে একটা লাৎ কষাতে পারতে তো ?

মেয়েটি বলা বজায় রাখলো । একদিন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে, আমি জেলা ডেস্কের প্রধানের বিরুদ্ধে এই লাগাতার যৌন হেনস্থা আর নোংরা আচরণ নিয়ে অভিযোগ জানাই পত্রিকার বার্তা সম্পাদক চামচাচরণকে । উনি পরামর্শ দেন, গাধাবাহন বর্মণের বিরুদ্ধে অফিসের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে অভিযোগ জানাতে। যদিও তিনি ভালোই জানতেন, এই সেলের মাথায় রয়েছেন সংস্থার এইচ আর ডিপার্টমেন্টের প্রধান চিকনি চামেলি, যাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত গাধাবাহন বর্মণের মাখামাখি সম্পর্ক। অভিযোগ জানানোর পরই আমি বুঝতে পারি যে এই ঢপবাজ পত্রিকার দাবার ছকে আমাকে বোড়ের মতন খেলাচ্ছে পুরুষের দল । সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলের কিছু লোক দেখানো মিটিং হয়, কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না। বরং আমার কাছে অফিসের পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।

এরপর একদিন হঠাৎই মালিক বাঁজারাম শিকদারের  ঘর থেকে ডাক আসে । সাংবাদিকের। সেটিই ওই ঢপবাজবাবুর সঙ্গে আমারর প্রথম আর অবশ্যই শেষ সাক্ষাত। 

ঢপবাজবাবুঃ  আমি শুনেছি, তোমার কাছে এই অভিযোগের কোনও প্রমাণ নেই।

আমি : স্যর, যৌন হেনস্থার কী প্রমাণ থাকতে পারে?

ঢপবাজবাবুঃ (সামান্য হেসে), তবে তুমি কীভাবে এই অভিযোগের বিচার বা সমাধান পাবে আশা করতে পারো?

আমি : (বিস্ময় এবং কান্না চেপে), তবে এই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল কেন রয়েছে স্যর?

ঢপবাজবাবুঃ কারণ, এটা এখনকার দিনে কর্পোরেট বাধ্যবাধকতা। ঠিক যেভাবে আমাদের দেশে ইউজলেস বিচার ব্যবস্থা আছে, সেরকম। আমাদের আইন আছে, আইনজীবী আছে, বিচারক আছে, কিন্তু কতজন মানুষ বিচার পায়? কর্পোরেট সংস্থায় সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলও অনেকটা তাই। আজকের কর্পোরেট দুনিয়ার এটাই নিয়ম, তাই এই সেল করা হয়েছে, মাই ডিয়ার। যদি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে মারপিট হয়, বাবা তোমাকে চড় মারে, তুমি কি থানায় যাও অভিযোগ জানাতে? নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তো মিটিয়ে নাও। তবে এখানে অভিযোগ জানাতে গেলে কেন? এটা কি তোমার পরিবার নয়? অভিযোগ তুলে নাও। এবং তাড়াতাড়ি। লিখে দাও, ভুল বোঝাবুঝি একটা হয়ে গিয়েছিল এবং তুমি তা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও না। চাইলে আমি তোমাকে অন্য ডিপার্টমেন্টে বদলি করতে পারি।

আমি আর কথা বাড়াইনি । সিটে ফিরে পদত্যাগপত্র টাইপ করে ঢপবাজবাবুর মুখে ছুঁড়ে মেরে চলে এসেছি ।

বাসের সব যাত্রীরা একসঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকে, বাস ঘোরাও, বাস ঘোরাও, চলো ওই ব্যাটা ঢপবাজকে ধরে আমরা সবাই মিলে প্যাঁদাবো ।

বাসচালক বলল, ঘোরানো যাবে না, কেননা ওই ঢপবাজ হলো একটা গল্প বলার সংস্হা । গল্প যখন আখ্যানের কারাগার থেকে মুক্তি পায়, আমরা টের পাই গল্পের জটিলতা আসলে বিস্ময়কর। ন্যারেটিভিস্টরা গল্পকে রৈখিক-প্লট সহ একটি কালানুক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন, শুরু, মধ্য এবং শেষের সাথে একটি সমন্বিত কথকতা। যদি আমরা আখ্যানের কারাগার থেকে গল্পকে মুক্ত করি, তবে, বিশেষত পুঁজিবাদী বিশ্বের সংস্থাগুলিতে, জটিল গল্প বলার বিক্রয়যোগ্য পদ্ধতি খুঁজে পাই,  যাকে বলা যায় “গল্প বলার সংস্থা” ।   গল্প বলার সংস্থাগুলো গল্পগুলোকে  পাবলিকের মাথায় লেলিয়ে দিয়েছে । গল্প সাপ্লাই কোম্পানির অবদান হল গল্পের একটা তত্ত্ব যা কৌশল, নেতৃত্ব আর সংস্থাগুলোর ভার কমিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবার জন্য আখ্যানের জটিলতা এড়িয়ে   কাজ করে। এখনকার অধিকাংশ ঔপন্যাসিক, যাঁরা বাজার ধরতে চান, তাঁরা নানা কোম্পানিরা যে কাজ করছে সেই কাজই তাঁদের পাল্প ফিকশানে করেন।”

তৃতীয় পর্ব

বাসের উড়ন্ত যাত্রাপথ ছিল সস্তা নেশা, হুইস্কি-হেডস, হোঁচট খাওয়া,  মাস্তানদের পাড়া; বেশ্যাদের  লাইন, গরিব সৎ শ্রমিকদের হাইতোলার পরিসর আর অপরাধের  প্রজনন ক্ষেত্র। উদাস চোখের বেশ্যারা রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে অশ্লীলতা অদলবদল করছে  নোংরাদের সাথে। ছিনতাইকারী আর চোর অন্ধকারের খোঁজে বেরিয়েছে । ডাকাতি করার জন্য অপেক্ষা করছে ছোকরার দল। একে অপরকে ছাড়া এরা কেউ টেকে না। 

গদাধরের মনে পড়ল, গত বছর শরতের এক নিস্তেজ, অন্ধকার আর ঘড়ঘড়ে শব্দহীন দিনে, যখন মেঘ আকাশে নিপীড়নমূলকভাবে ঝুলছিল, তখন আমি দূরপাল্লার এক লজঝড় সরকারি বাসে । দেশের একক নিরানন্দ মাঠ-ময়দানের মধ্য দিয়ে বেঘোরে ছুটছিল বাসটা, কখনও নীল রঙের পোঁচ ; সন্ধ্যার ছায়া ঘনিয়ে আসার সাথে বুঝতে পারলুম পাশের লোকটা আমার কাঁধে মাথা রেখে নাক ডাকছে ।  বিষণ্ণ ধানখেতের দৃশ্য মাখতে চাইছিল না বাসটা। আমি জানি না নাক ডাকা লোকটা যখন পাশে এসে বসেছিল তখন কেমন দেখতে  ছিল — কিন্তু, পোশাকের বিটকেল গন্ধের আভাস দিয়ে, অসহনীয় গ্লানির অনুভূতি আমার চারিদিক ঘিরে ধরেছিল।

—স্যার, আপনার কাঁধে মাথা রেখে যে লোকটা ঘুমোচ্ছিল, সে এই স্টপেজে নেমে গেল, কিন্তু ওর মাথাটা আপনার কাঁধেই রয়েছে । দূরপাল্লার বাসের কন্ডাক্টার গদাধরের ঘুমন্ত কাঁধে নাড়া দিয়ে বলল।

ড্রাইভার বলল, তাহলে ঠিক আছে, আমি বাসটাকে ফ্লাইট মোডে নিচ্ছি, অটো পাইলট সেট করে । আপনারা এবার নক্ষত্রর গুঁড়ো হাত বাড়িয়ে তুলতে পারবেন, মুখে মেখে নিলে অন্ধকারে একে আরেকজনকে দেখতে পাবেন।

—–মৌলবাদ আর  শিল্প পরস্পরবিরোধী। মৌলবাদী শিল্প বলে কিছু হয় না। তার মানে এই নয় যে মৌলবাদী সৃজনশীল নয়। বরং তার সৃজনশীলতা হলো ডিগবাজির । মৌলবাদী ঘৃণার আর ধ্বংসের সৃষ্টি করে। কাঁধের মাথাটা বলল গদাধরকে ।

একজনের কাঁধে আরেকজন মাথা রাখছে আর দুজনের একজন বাস থেকে নেমে চলে যাচ্ছে, মাথাটা অন্যের কাঁধে পড়ে থাকছে, এরকম ঘটনা ঘটেই চলেছে, শুধু এইরুটে নয়, গলগণ্ডপুরমের সব রুটে , দুজনের একজন নাকি শহীদ হয়ে যাচ্ছে । বলল ড্রাইভার।

কন্ডাক্টারকে একজন দুই-মাথা কাঁধে হেলান দিয়ে বলল, এখন  শুনুন। আসলে ফ্যারাওরা যখন মিশর থেকে যে লোকজনদের তাড়িয়ে দিয়েছিল, তারাই প্রথম একটা বই পেয়েছিল যেটা মানুষের লেখা নয় । মানুষের লেখা বই থেকে মানুষ কেমন করে জন্মাবে, বলুন ড্রাইভার সাহেব । আমাদের ঋগ্বেদ ছাড়া গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, মেঘনাধবধ কাব্য, সুবিমলমিশ্রর বইসমগ্র আছে, একটা বইই নয় । যাদের একটাই বই আছে আর তা মানুষের লেখা নয়, তাদের বই থেকে সবকিছু জন্মেছে । আমরা আর আফরিকার কিছু বুনো মানুষ বই থেকে জন্মাইনি। 

—আপনি কি বাঙালি ? এই পারের বাঙালিরা বলে যে ওরা বই থেকে জন্মায়নি অথচ ওই পারের বাঙালিরা বই থেকে জন্মেছে ! এটা কি অক্সিমোরোন ? তাও আবার বাংলা বই থেকে নয় । আরবি বই থেকে।

—আরবি বই থেকে জন্মাতেই পারে । আমি সত্যিই যা চাই তা হল ছোটো-ছোটো হরফ, দুর্বোধ্য শব্দে ঠাসা কঠিন বাক্য, অনেক অক্ষরের শব্দ আর লম্বাই-চওড়াই মার্কা ধারণা, বেশ মোটা হাজার পাতার বই, এমন লেখখের  লেখা বই যে কিনা হাওয়া দিয়ে গড়া । 

—আজকাল শতকরা আশিভাগ যুবতীরা বিয়ের বিরুদ্ধে। কেন জানেন ? কারণ যুবতীরা বুঝতে পেরে গেছেন যে সামান্য সসেজ পাওয়ার জন্য একটা পুরো শুয়োর  কেনার কোনো মানে হয় না! পেছনের সারিতে বসে ছিলেন এক বুড়ির কাঁধে মাথা রেখে দেহহীন যুবতী, তিনি বললেন কথাগুলো।

বুড়ি বলল, এই ছুঁড়ি, তোর তো বডি নেই, সসেজ নিয়ে করবিটা কী ?

যুবতী বলল, যে কোন প্রাণী চোদাতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র মানুষই যৌন আবেগ অনুভব করতে পারে, যা সঙ্গমের জৈবিক তাগিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আর যৌন আবেগ সহস্রাব্দ ধরে মানব জীবনের একটা অত্যাবশ্যক মানসিক শক্তি হিসাবে মনে করা হয় । সাধারণ পুরানো সহবাস শুধুমাত্র সেইসব পয়েন্টে ইরোটিকভাবে ঠাটিয়ে ওঠে আর আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে যেখানে প্রতিবন্ধকতা, দ্বন্দ্ব, নিষেধাজ্ঞা এবং পরিণতি এটিকে একটি দ্বি-ধারী চরিত্র ধার দেয় – অর্থপূর্ণ যৌনতা  পরাজিত  আত্মসমর্পণ, একটা অতিক্রম আর লঙ্ঘন, বিজয়ী আর ভয়ঙ্কর এবং আনন্দিত এবং দুঃখজনক।  শুধুমাত্র মানুষই ইচ্ছা হলে করে নয়তো করে না। সীমালঙ্ঘন করতে পারে, পরাস্ত করতে পারে, ভালোবাসতে পারে: বেছে নিতে পারে।

—যাঁরা হাত বাড়িয়ে নক্ষত্রের গুঁড়ো গায়ে মাখলেন, তাঁরা কিন্তু, এই যাত্রার আইনভঙ্গ করলেন, কেননা, বাসের যাত্রীদের সবাই ল্যাংটো বা নগ্ন থাকবেন এই শর্তে তোলা হয়েছিল । বলল কন্ডাক্টার ।

—কেন ? জানতে চাইল গদাধর ।

ড্রাইভার বলল, ঈশ্বর প্রথম যুবক আর প্রথম যুবতীকে  বললেন, ফলবান হও আর সংখ্যাবৃদ্ধি কর, তাই আমি তোমাদের গায়ে পোশাক দিইনি। একে অপরের সাথে যৌনমিলন করো বা  গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে যৌনমিলন করো, বা কামসূত্র থেকে কিছু আকর্ষণীয় জিমন্যাস্টিক নিয়ে এসো ।

—দেখুন, আপনারা যাকে ঈশ্বর ভাবছেন, তা হলো রাষ্ট্র । অনেকগুলো রাষ্ট্র হবার পর ঈশ্বরদের সংখ্যা বেড়ে গেছে ।

চতুর্থ পর্ব

গায়ে নক্ষত্রের রুপোলি গুঁড়ো মাখার পর যাত্রীরা টের পেলো তাদের অকুস্হলে যৌন অঙ্গ নেই । তাদের বিদেশী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, তাদের ব্যঙ্গগত এবং ভাষাগত পরিবর্তনের কারণে, তারা প্রভাবশালী মূল্য ব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসাবে দেখা দেয়, প্রগতিশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল দুই পক্ষেই ।

এখন কী করবে ওরা সবাই ?

বাস কন্ডাক্টার বলল, তখন ১৯৭৯ সাল । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে সরকারি টাকায় একটা টুকিটাকির দোকান খুলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলুম। টিভিতে দেখলুম চৌঠা এপ্রিল পাকিস্তানের লোভি নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে রাওয়ালপিন্ডির জেলখানায়, আজেবাজে দোষ লোকটার ঘাড়ে চাপিয়ে। কোনো মানে হয় না । লোকটার আসল দোষ ছিল ওদেরই পাবলিক পাকিস্তানি সেনাদের থুথু করছিল ভুট্টোর দোষে আর পাঞ্জাবি সেনারা  ওদের দেশের বাঙালিদের লোপাট করে দিচ্ছিল । মজার ব্যাপার হলো যে পাকিস্তানের সেনা প্রশাসন ওর প্রাণদণ্ডাদেশ দিয়েছে। শালা নব্বই হাজার পাকিস্তানি সেনা নিজেরা ধরা দিয়েছিল, নানা কুকীর্তি করার পর। ভুট্টো কড়া ঘুমের ওষুধে ন্যালব্যাল করছিল বলে ওকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাতে হয় ।ওর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর ওর বউ নুসরাত আর মেয়ে বেনজির  প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিল ওদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হকের কাছে। তা জিয়াউল হক শুনবে কেন ? ওই তো ভুট্টোকে রাত দুটোয় ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল আর জেলের পেছনের দরোজা দিয়ে লাশ নিয়ে গিয়ে কবর দেবার ব্যবস্হা করেছিল।

ড্রাইভার বলল, আমরা তো আল বদর, আল শামস আর রাজাকরদের ধরেধরে প্যাণ্ট খুলে পোঁদে এতো লাথি মেরেছিলুম যে নিজেদেরই পা ব্যথা করছিল । পাকিস্তানি সেনাদের অমন অপমান করার হুকুম ছিল না কেননা ওরা প্রিজনার অফ ওয়ার । তবু, যেকটা এদিক সেদিকে একা ধরা পড়েছিল সেগুলোকে শহর গাঁয়ের পাবলিকই শায়েস্তা করেছে । 

গদাধর বলল, সেনাবাহিনীতে ভর্তি হবার ইচ্ছে আমার ছোটোবেলা থেকেই ছিল। তাই কলেজে পড়ার সময়ে ন্যাশানাল ক্যাডেট কোরের ইনফ্যান্ট্রিতে যোগ দিয়ে থ্রি নট থ্রি, বাইশ বোরের রাইফেল, স্টেনগান আর পিস্তল চালাতে শিখেছিলুম । তা সত্বেও সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারলুম না তার কারণ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করার এই পরীক্ষাগুলোয় অন্যদের থেকে ভালো ফল করতে পারলুম না, বা বলা যায় ফেল করলুম: ছয় কিলোমিটার দৌড়, বিমের ওপর পুশ-আপ, নয় ফুট গর্তের মধ্যে দিয়ে যাওয়া আর জিগজ্যাগ ব্যালেন্স। আসলে প্রতি বছর তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লক্ষ ছাত্রছাত্রী সেনায় যোগ দেওয়ার আবেদন করে। তার কারণ এই কেরিয়ারে রয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা, দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ, আকর্ষণীয় বেতন, অ্যাডভেঞ্চার, আত্মত্যাগের হাতছানি। 

আপনি পাকিস্তানিদের প্যাঁদাতে যাননি ? গদাধরের কাঁধের মুণ্ডুটা জিগ্যেস করল ।

—-দিয়েছিলুম তো, বলল গদাধর, তারপর যোগ করল, সেনায় যোগ দেবার আশা যখন ছেড়ে দিয়েছি, ১৯৭১ সালের এপ্রিলে একজন লোক এসে জানতে চাইল আমি সেনার হয়ে কাজ করতে চাই কিনা, আর একটা কাগজ দিয়ে বলল, রাজি থাকলে এই ঠিকানায় কালকে সকাল ছয়টায় হাজিরা দিতে । পরের দিন পৌঁছে দেখলুম, আমার বয়সী অনেকে এসেছে । আমাদের শপথ করিয়ে বলা হলো যে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ লাগবে আর তার জন্য সেনার দরকার বেসরকারি যোদ্ধা আর গুপ্তচর । আমরা কুড়িজন, সবাই বাঙালি, একদিন বাসে চেপে হাজির হলুম একটা ক্যাম্পে। বাসটা সেনার ছিল না আর ক্যাম্প দেখেও টের পাবার উপায় নেই যে ওখানে ভবিষ্যতের কোনো লড়াইয়ের জন্য ট্রেনিঙ দেয়া হচ্ছে ।

একজন বুড়ির কন্ঠস্বর শোনা গেল বাসের পেছন দিকের সিট থেকে। বলল, পৃথিবীতে মানুষের জীবন যাপনের দিক নির্দেশনা এবং সাম্য-মৈত্রীর বাণী নিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের আগমন ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতবর্ষ হচ্ছে ধর্মের আদিভূমি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধর্মের নামে মানুষ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে আবার এই ধর্মই মানুষকে করেছে সুসংহত, মানবতাবাদী। এছাড়া মানবধর্ম রয়েছে যেটা নাস্তিকরা পালন করে। তারা কোন ধর্মকেই বিশ্বাস করে না,তাদের মতে বিজ্ঞান ও আধুনিক পৃথিবী,তাদের জন্ম হয়েছে বির্বতনের মাধ্যমে এটাই তাদের বিশ্বাস। আর এখন এই উড়ন্ত বাসে আমরা সবাই লিঙ্গহীন হবার পর ধর্মের বা মানুষের উৎপত্তির ইতিহাস জানার দরকার নেই ।

—এই তো ! কিছুক্ষণে একটা গ্রহে গিয়ে উড়ন্ত বাসটা নামাবো আর আপনারা যে যার যৌন অঙ্গ ফিরে পাবেন । তখন নতুন বসতি গড়তে পারবেন সেখানে ।

বাসটা নতুন একটা গ্রহে নামার পর সবাই দেখল গেটের কাছে একজন লোক রবিঠাকুরের আলখাল্লা পরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে । লোকটা বলল, আমি একা এই গ্রহে থাকি । আপনাদের জন্য একটা বুলেটিন লিখে রেখেছি । এর নাম হাংরি বুলেটিন । এই গ্রহে সংসার পাতুন আর এই বুলেটিনের কমাণ্ডমেন্টসকে প্রতিষ্ঠা করুন।

গদাধর বুলেটিন হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সবাইকে পড়ে শোনালো 

১. বস্তুসমুহের গুণরাজি মনেরই আরোপিত, মনেই তাদের অবস্থিতি, মন দিয়েই তারা নির্মিত। আমরা যেমন ভাবি, ঠিক তেমনি রুপান্তরিত হই। তাই দূষিত মনে কেউ কিছু বললে বা করলে দুঃখ তার অনুগমন করে, যেমন গাড়ির চাকা বাহক বলদের অনুসরণ করে।
২. বস্তুসমূহের গুণরাজি মনেরই আরোপিত, মনেই তাদের অবস্থিতি, মন দিয়েই তারা নির্মিত। প্রসন্ন মনে যিনি কতাহ বলেন বা কাজ করেন সুখ তাকে নিরবচ্ছিন্ন ছায়ার মত অনুসরণ করে।
৩-৪. আমার প্রতি আক্রোশ করল, আমায় মেরে ফেলল, আমাকে অন্যায়ভাবে হারাল, আমারটা ছিনিয়ে নিল; সবসময় যাদের এই চিন্তা, তাদের মন থেকে বৈর-ভাব কখনো দূর হয় না। আমার সঙ্গে শ্ত্রুতা করল, আমায় মারল, আমারটা হারাল, আমারটা নিল; এই সব চিন্তা যারা মনে স্থান দেন না, তাদের বৈরভাব দূর হয়ে যায়।
৫. শত্রুতা দিয়ে কখনো শত্রুতার মীমাংসা হয় না। শত্রুহীনতা দিয়েই এর প্রশমন সম্ভব; এই হল সনাতন ধর্ম।
৬. মূর্খরা জানে না যে তারা চিরকাল এই সংসারে থাকবে না। যারা জানেন তাদের সব কলহের শান্ত হয়।
৭-৮. যে কেবল বাইরের সৌন্দর্য খুজে বেড়ায়, যার ইন্দ্রিয় সংযত নয়, অতিভোজনকারী, অলস আর হীনবীর্য, সে বাতাহত দুর্বল গাছের মত মারের কাছে পরাজিত হয়। দেহের মলিনতার কথা জেনে যে বাইরের শোভা খোজে না, যে ইন্দ্রিয় জনযত রাখে, পরিমিত আহার করে, সেই শ্রদ্ধাবান ও বীর্যবান ব্যক্তিকে রসবিত করতে পারে না-বাতাস যেমন শিলময় পর্বতকে নাড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি।
৯-১০. যৌন আসক্তিতে যে আসক্ত, সে কাষায বস্ত্র পরিধান করা, তথা ভিক্ষু হয়ার যোগ্য নন। যিনি কাম, রাগ ইত্যাদি দোষ মুক্ত, শোলসমূহে সুপ্রতিষ্ঠিত, সংযমী, সত্যনিষ্ঠ তিনিই কাষায় বস্ত্র তথা নাগরিক হয়ার যোগ্য।
১১-১২. যা অসার বা অসত্য তাকে যারা সার বা সত্য মনে করে, আর সারকে অসার মনে করে, মিথ্যা সংকল্পের সেই আশ্রয়দাতারা কখনো সত্যকে লাভ করতে পারে না। অন্যদিকে যারা ঐ অসত্যকে অসত্য বলেন আর শীল প্রভৃতি সার বস্তুকে সার বলে জানেন তারাই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুক্তিপথ লাভ করেন।
১৩-১৪. যে ঘর ভালভাবে আচ্ছাদিত নয়, তার মধ্যে যেমন বৃষতি ঢুকে পড়ে, তেমনি যে চিত্ত ধ্যানপরায়ণ নয় তাতেও রাগ (আসক্তি) প্রবেশ করে। ভালভাবে আচ্ছাদিত ঘরে যেমন বৃষ্টি ঢুকতে পারে না, ভাবনামুক্ত চিত্তে চেমনি আসক্তি প্রবেশ করতে পারে না।
১৫. যে পাপ করে, সে ইহলোকে ও পরলোক, দুই জায়গাতেই অনুশোচনা করে। নিজের দুষ্কর্ম দেখে সে শোক করে আর কষ্ট পায়।
১৬. যিনি কৃতপুণ্য, তিনি ইহলোক ও পরলোক, উভয় স্থানেই আনন্দ লাভ করেন। তিনি নিজের সুকৃতি দেখে পরম আনন্দ পান।
১৭. পাপী ইহলোক ও পরলোক, উভয় স্থানেই অনুতাপ ভোগ করে। আমি পাপ করেছি – এই চিন্তা তাঁকে যেমন দগ্ধ করতে থাকে, তেমনি পাপেরর ফলে দুর্গতি লাভ করে সে আরো দুঃখ পায়।
১৮. যিনি পুণ্য কাজ করেছেন, তিনি ইহলোক ও পরলোক, দুই জায়গাতেই আনন্দিত হন। আমি সৎ কাজ করেছি – এই চিন্তায় যেমন তাঁর আনন্দ হয়, তামনি সুগতি লাভ করে তিনি আরো আনন্দ পান।
১৯-২০. যে বহু বই-গ্রন্থ-শাস্ত্র পড়ে কিন্ত সেই জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করে না, সে ঠিক সেই রাখালের মত, যে অন্যের কয়টা গরু মরল তা নিয়েই পড়ে থাকে, বৈরাগ্য/শ্রামণ্য তাঁর জন্য নয়। শাস্ত্র অল্পমাত্র উচ্চারণ করলেও যিনি জীবণে তা ধারণ করে রাগ, দ্বেষ ও মোহ থেকে মুক্ত হন, সম্যক জ্ঞানের অধিকারী, বিমুক্তচিত্ত এবং ইহলোক ও পরলোকে উপাদান-রহিত তথা কামশূন্য হন, তিনিই শ্রামণ্যের ফল ভোগ করেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন