হাসিনার নাতির জন্মদিন
হল্যাণ্ড থেকে মেয়ে আমার দুই নাতনিকে নিয়ে কলকাতা আসছিল, নাকতলার বাড়িতে। বড় নাতনিকে নিয়ে তার আগেও এসেছিল। ছোট নাতনি জন্মেছিল হল্যাণ্ডে, ওকে আমরা তখনও দেখিনি। ছোট বাচ্চাকে কতদিন আদর করিনি। বড় নাতনি ইংরেজি শিখে ফেলায়, তাও মার্কিন স্কুলের ইংরেজি, ওর সঙ্গে কথা বলা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ও যে কী বলছে বুঝতে পারতুম না আমরা, ও-ও আমাদের ইংরেজি ঠিক মতন বুঝতো না। ছোট নাতনি মোটে এক বছরের, তখনও মার্কিনি স্কুলে ঢোকার সময় হয়নি।
মেয়ে স্কাইপে জানালো যে, বড় নাতনি আমাদের কমোড ব্যবহার করতে পারবে, ওর অসুবিধা হবে না, কেননা নাকতলার কমোড বড় নাতনি আগের বার ব্যবহার করে গেছে। কিন্তু ছোট নাতনি ওই কমোডে বসতে পারবে না, তাই ওর জন্য একটা প্লাসটিকের কমোড কিনে রাখতে, যাতে চেয়ারের মতন হাতল আছে।
নাকতলার দোকানগুলোয় পাওয়া গেল না। কয়েকজন দোকানদার বেশ অবাকও হলো শুনে। যাইহোক রাসবিহারিতে কয়েকটা দোকানে ঢুঁ মারার পর গোলপার্কের বাজারের ভেতরে একটা দোকানে পাওয়া গেল। আমরা রঙচঙে দেখে ভালো কোয়ালিটির একটা বেবি-কমোড কিনে আনলুম, যেমনটা আমার মেয়ে বলেছিল।
কয়েকদিন পরে মেয়ে জানালো যে, ওরা আসতে পারবে না, আমাদের পাসপোর্ট একজন ট্র্যাভেল এজেন্টকে পাঠিয়ে দিতে, সে আমাদের শেনজেন ভিসার ব্যবস্হা করে দেবে, আমরাই যেন হল্যাণ্ডে যাই, ওরা টিকিট পাঠিয়ে দেবে।
কমোডটার কী হবে তাহলে? ওরা তো তিন বছরে একবার আসে। এর পরে যখন আসবে তখন তো ছোট নাতনি আর বেবি কমোড ব্যবহার করতে পারবে না, আমাদের টয়লেটের কমোডই ব্যবহার করবে। কাকেই বা দেওয়া যায়? কারোর বাড়িতে এত ছোটো বাচ্চা নেই।
স্ত্রী বলল, আমাদের কাজের বউ হাসিনার নাতির কালকে একবছর পুরো হবে, বাচ্চাটার জন্য গিফ্ট হিসেবে বেবি-কমোডটাই খবরের কাগজে ভালো করে প্যাক করে দিয়ে দেওয়া যাক। সেই মতো দিয়ে দেওয়া হলো হাসিনাকে। বেবি-কমোড পেয়ে ওরও বেজায় আনন্দ।
পরের দিনটা ছুটি নিয়েছিল হাসিনা, নাতির জন্মদিনে ভালো খাওয়া দাওয়ার জন্য।
তারপরের দিন এলো। থলে থেকে বের করে দেখালো বেবি-কমোডের কয়েকটা ভাঙা টুকরো।
হাসিনা বলল, ক্যানিঙের ট্রেনে এসব শৌখিন জিনিস নিয়ে যাওয়া যায় না গো ! এত দমবন্ধ ভিড় যে কামরায় ঢোকার পরই বউদের ধাক্কাধাক্কিতে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে বেবি-কমোড।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন