বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯

মিজোরাম-এর কবি মোনা জোটে-র কবিতা । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

মিজোরাম-এর কবি মোনা জোটে-এর কবিতা
অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী

বেঁচে থাকার প্রতীতি
সারাদিন আমরা দেখেছি পথটাকে সরে যেতে
এক পাশে কাত হয়ে, খোলোস ছেড়ে,নিজেকে ভরে নিয়ে, এঁকেবেঁকে
শীর্ষে পৌঁছে লেবু খাবার স্বাদ বদলে দিয়েছে
অন্য জায়গার অন্য জায়গাকার হাত দিয়ে বাক্সে-ভরা, কিনতে হয়েছে
গ্রীষ্মের অভিজ্ঞান আর আগামী আনন্দ দিয়ে--
আমরা কোরিয় প্রেমকাহিনিতে থামলুম : এক রাজকুমারের গল্প,

ইন্দ্রধনুর ওপরে, স্বর্গের গাছ ।  আর কর্পোরেট ধাঁচের
যে মেয়েটার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল ।
এক টুকরো ফ্যাক্সের সংবাদ নিয়ে কোনো রাজকুমারই এলো না ।
তুমি সাদামাটা বললে, সবকিছুই টাকার খেলা আর অবৈধ
যৌন-সঙ্গম, আর সব ব্যাপারের মতন । আমরা হাসলুম
চাঁদের মাটিতে ঘাঁটিপাতার কথায় আর গুনগুন করে একটা সুর ভাঁজলুম
একটা ফিল্ম থেকে যাতে 
মনে হলো আমরা বসবাস করছি ।

সারাটা দিন সূর্য ডিগবাজি আর জটপাকানো বজায় রাখলো
খোলা উজ্বল জানালাগুলোয় তখন দোকানের মেয়েরা হাসিখুশিতে মশগুল,
আর ফুটপাতের গায়করা, আর ওই মহিলারা
বিদেশি গলিতে কালো লেসে আঙুল ঢোকানো বজায় রাখলেন
আর আমরা রেস্তরাঁয় ঢোকা ও বেরোনোয় জীবন কাটালুম, অবিরাম ধোঁয়া ফুঁকে,

থালার পর থালায় মাংসের পাতলা ঝোল
ভাবনাচিন্তা আর কথাবার্তা বন্ধ রেখে, আমাদের স্নায়ুগুলো
বিদায় নেবার আগ্রহে বেসামাল । সারাটা দিন
আমরা অপেক্ষা করলুম অপেক্ষা করলুম
স্বর্গের চওড়া আর সুদৃশ্য গাছের তলায়
রাজকুমার, পরামর্শদাতাদের জন্যে,
এমনকি কোনো পশমি ডাকপিওন আসবে আর বলবে
যে জাহাজ চলে গেছে, বাস
চলে গেছে, সব পরিবার আমাদের খোঁজ করছে ।
আমরা কি অনেক কথা বলেছি ? নাকি বিশেষ কিছু নয়--

আর আমরা কিনা এখানে, দিন শেষ হয়ে চলে গেছে
তার প্রতিদিনের মনোরম ঘুমোবার সময়ে, নভোচারীরা চলে গেছে, বৃষ্টি
এখন আমাদের মাথার ওপরে সুরের মুর্ছনা দিচ্ছে । রেস্তরাঁ বন্ধ হবে নিশ্চিত।
আমরা কিছুই শিখিনি । তুমি জ্ঞানীর মতন বললে : ঠিক তাই,
শেখার মতন কিছুই ছিল না ।

নৌকো তৈরি   
যে প্রশ্ন ডোবানো হচ্ছে বা ভাসানো
তাতে কিছুই আসে-যায় না ।   
আজকাল তুমি একথা শুনতে পাবে
কেমন করে সবাই নৌকো তৈরি করছে
কেমন করে তুমি ভিড়ে-ঠাশা রাস্তায় হাঁটতে পারবে
আর প্রতিদিনকার ঘটনার বাইরে শুনতে পাবে
কেই একজন হাতুড়ি ব্যবহার করছে   
মেয়েটি চলল ধীরেসুস্তে   
সবকিছু ছাপিয়ে স্পষ্ট উঠছে একটা আওয়াজ       
আমার মনে হয়, লোকটা একটা নৌকো তৈরি করছে   
ও চলে যেতে চায়   
ও চায় যে সবাই সুরক্ষিত থাকুক
কেননা জলস্তর ওপরে উঠছে        
হয়তো ও বাড়িতে কিছু আনতে চায়
যে জিনিস আমাদের দরকার
যে জিনিসগুলো ও মনে করে আমাদের দরকার
সম্ভবত জাহাজের চালানে শীতের জামাকাপড়
হয়তো একজন বা দুজন ভালো রাজনীতিক   
হয়তো সোনার ব্যাপার যার জন্য লোকে এমন পাগল
হয়তো অন্য পর্বতমালার সেই কমলালেবু ।   
আর অনেকসময়ে, এই লোকটার হাসি ছাপিয়ে
তুমি দেখতে পাও পাখিদের চমকে-ওঠা মেঘ
ফেটে বেরোচ্ছে ওদের নোংরা নীড় থেকে
এক সংক্ষিপ্ত অন্ধ প্রবৃত্তির মন্হনে
যে বাড়িটা ওদের সতর্ক করেছে তার চারিধারে পাক খেতে-খেতে
ভুলে যাবে দ্রুত, ওদের নিজেদের মতন করে,
যে ভয় ওরা পাচ্ছিল
কয়েক সেকেন্ড আগে
তার কারণ ওরা সহজেই ক্লেশিত হয় ।
যেমন আজ তেমন গতকাল, আমি কেনাকাটা করতে গিয়েছিলুম
আমি বেশ কিছু ব্যাপার খেয়াল করলুম :
প্রথম, দোকানদাররা কেমন চোখ তুলে চায়
এমন চাউনি মেলে যেন ওরা তোমাকে চেনে
শেষ যে বাহু তোমাকে আঁকড়ে ছিল তার চেয়েও বেশি ।
দ্বিতীয়, কেমন করে এতো তরুণী এলো
দোকান থেকে দোকানে ঘুরে বেড়াতে
দোকানের দরোজায় থমকে দাঁড়াতে
পাউডার-মাখা অস্পষ্ট মুখে ।
তৃতীয়, রোদের আলোয় 
একটা পোশাক নিয়ে গেলে কেমন হবে
পালটে দেবে রঙ আর টান
অনেকসময়ে তা বেশ অনুকূল হয়ে ওঠে।
কখনও-কখনও আমি যখন তোমার হাত ধরি
আমার মনে হয়, কেমন করেই বা তুমি ছুতোরকে উপায় বাতলাতে পারবে
ব্যাপারটা মনে হয় ছোটো আর পুরোপুরি সেখানে নেই
চামড়া পেঁয়াজখোসার মতন পাতলা
আমার মনে আছে তা বেশ শক্তপোক্ত আর স্বাস্হ্যবান ছিল, মা,
আমার আশ্বস্ত হাত ধরে থাকতেন
যতোদিন না আমার মনে পড়ল
নৌকোর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না,
নৌকো বানাবার জন্যে আমি কোনো পরামর্শ দিতে পারব না
আমি ওকে কেবল প্রশ্ন করতে পারি
হাওয়ার গতির ব্যাপারে, মাঝ-সমুদ্রে তন্দ্রার বিষয়ে, 
পাল ছিঁড়ে যাওয়া, দ্রুত তীর 
দেখার প্রয়োজনীয়তা যখন তোমার মদের পিপে ফুরিয়ে গেছে,
কংক্রিটের থামে কাৎ বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে ও ভ্রূ কোঁচকায়
আর মেঘেদের সম্পর্কে কিছু বলে
তুমি ওদের ভালোবাসলেও কেন বিশ্বাস করতে পারো না ।
অন্তত তারা সবসময়েই মেঘ।
আমি খাবার জিনিসপত্র আর নৌকোর কঠিন পথের কথা জানতে চাই
তা কি সমুদ্রের জলের স্বাদ ভালো করতে পারে ।
এখানে বাড়িগুলো বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালোবাসে,
কেউ একজন নদীর জন্যে নৌকো তৈরি করছে
কেউ একজন সমুদ্রের জন্যে জাহাজ তৈরি করছে
আমি তাকাই আর কেবল বহু নীল পাহাড় দেখতে পাই
রাস্তা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সোনা
নারীরা সুন্দরী আর পুরুষরা শক্তপোক্ত
আমি নিশ্চিত ওদের ছেলেমেয়েরা দেবদূতীয় গায়ক-গায়িকা হবে।
নৌকো তৈরি তো এক শিশুর প্রয়াস ।
                                               

                                                   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন