মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯

Poems of Cuban poet Herberto Padilla translated in Bengali by Malay Roychoudhury

কিউবার কবি হার্বাতো পাডিলা-র কবিতা ( ১৯৩২ - ২০০০ )। [ রাষ্ট্রের সমালোচনা করার জন্য তাঁকে নয় বছর জেলে পোরা হয়েছিল] অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
           

খেলার বাইরে
বেটা কবি ! লাথি মেরে বের করে দাও।
এখানে ওর কোনি কাজ নেই ।
ও খেলতে জানে না । ও কখনও উত্তেজিত হয় না
কিংবা স্পষ্ট করে কথা বলে ।
ও এমনকি অলৌকিক ব্যাপার দেখতে পায় না ।

বৃদ্ধ কবি যা বলছেন
ভুলে যেও না কবি ।
স্হান আর কাল যাইই হোক না কেন
যার মধ্যে তুমি ইতিহাস গড়ো বা যন্ত্রণা পাও,
একটা বিপজ্জনক কবিতা সব সময়ে ওৎ পেতে থাকবে 
তোমাকে আক্রমণ করার জন্য ।
প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য
তুমি ওদের কিউবার সর্বত্র দেখতে পাবে   
সবুজ বা হলুদ, জল থেকে আঁশের মতন উঠছে   
আর সূর্য, এই সময়ের যুদ্ধের সত্যকার ভূদৃশ্য।
বাতাস কোকাকোলার পোস্টার ধরে টান মারে।
ঘড়িগুলো ক্যানাডা ড্রাইয়ের দৌলতে পাওয়া, থেমে গেছে
পুরোনো সময়ে ।
নিয়নের বাতিগুলো, ভাঙা, বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে ।
এসসো বলতে অনেকটা এরকম বোঝায়: এস ও এস
আর ওপরে কয়েকটা ঘষা অক্ষর, লেখা আছে
স্বদেশ বা মৃত্যু ।
                   
প্রতিশ্রুতি
কিছুকাল আগে 
আমি তোমায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলুম অনেক প্রেমের কবিতার                                            আর -- এখন দেখতেই পাচ্ছো -- আমি সেগুলো লিখতে পারছি না ।
তুমি আমার পাশে বসেছিলে
আর কাছেই যা রয়েছে তা সম্পর্কে লেখা অসম্ভব ।   
যা কারোর কাছে থাকা তা সব সময়ে কবিতা ।
কিন্তু কয়েকটা সুস্পষ্ট ব্যাপার
আমাদের একসঙ্গে নিয়ে আসা আরম্ভ করেছে--
আমরা একই নিঃসঙ্গতা ভাগাভাগি করেছি   
আলাদা ঘরে
নিজেদের সম্পর্কে কোনোকিছু না জেনেই।
চেষ্টা করেছি, যে যার জায়গায়
আমাদের মুখের চাউনিগুলো, 
যা হঠাৎই ওদের মেলাতে চেয়েছে   

কিছুকাল আগে
আমি তোমায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলুম অনেক প্রামের কবিতার
আর -- এখন দেখতেই পাচ্ছো -- আমি সেগুলো লিখতে পারছি না
তুমি আমার পাশে বসেছিলে
আমরা ভেবেছিলুম হারিয়ে গেছি, মুছে গেছি
আমাদের প্রথম বছরগুলো থেকে ।   
দরোজার টোকাগুলো আমার মনে আছে
আর তোমার আতঙ্কিত কন্ঠস্বর,
আর তুমি, আমার চোখ তখনও ঘুমে ভরা ।
অনেক কাল যাবত
তুমি প্রশ্ন করতে ইতিহাস আসলে কী ?
আমি উত্তর দিতে পারতুম না, আমি ভাসা-ভাসা সংজ্ঞা বলতুম।
তোমাকে সত্য কথা বলার সাহস আমার হয়নি ।           
                                       
বাজিকরের গান
জেনারাল, যুদ্ধ চলছে
আপনার আদেশ আর আমার গানের মাঝে ।                       
এটা সব সময়ে চলতে থাকে
রাত, দিন   
এটা ক্লান্তি বা ঘুমের কথা জানে না--
এমন যুদ্ধ যা অনেক বছর ধরে চলছে,
এতো বেশি যে আমার চোখ কখনও সূর্যোদয় দ্যাখেনি
যার মধ্যে আপনি, আপনার আদেশ, আপনার অস্ত্র, আপনার পরিখা
কোনো স্হান পায়নি ।
এক ঘনঘোর যুদ্ধ, নান্দনিকভাবে বলতে হয়, আমার ছেঁড়া পোশাক
আর আপনার সামরিক পোশাক মুখোমুখি হয় ।
একটা নাটুকে লড়াই--   
শুধু ঝলমলে মঞ্চের অভাব
যেখানে কৌতূকাভিনেতারা যেকোনও জায়গা থেকে আসতে পারে
হুল্লোড় শুরু করতে পারে যেমনটা কার্নিভালে করে, 
প্রত্যেকেই নিজের আনুগত্য আর সাহস দেখাতে ব্যস্ত।                        জেনারাল, আমি আপনার ট্যাঙ্কবাহিনী ধ্বংস করে দিতে পারি
আর জানি না কতোকাল এই যুদ্ধ চলবে   
কিন্তু প্রতিরাতে আপনার আদেশগুলো একটা মারা যায়
তাকে মান্যতা না দিয়েই,
আর অপরাজিত, আমার গানের কোনও একটা টিকে থাকে ।

কঠিন সময়ে

ওরা লোকটাকে জিগ্যেস করল ওরা কি
ওর খানিকটা সময়ে নিয়ে ইতিহাসে জুড়ে দিতে পারে।
ওরা ওর হাত দুটো চাইলো
কেননা কঠিন সময়ে
আক জোড়া হাতের চেয়ে ভালো কিছু হয় না ।
ওরা ওর চোখ দুটো চাইলো
যাতে এককালে অশ্রুফোঁটা ছিল
যাতে ও আলোকিত দিকটা সম্পর্কে ভাবতে পারে
( বিশেষ করে জীবনের আলোকিত দিক )
কেননা আতঙ্কের জন্য একটা চোখই যথেষ্ট ।
ওরা ওর ঠোঁট দুটো চাইলো
শুকনো আর ফাটা, সমর্থনের জন্য,
দৃঢ়, প্রতিটি ইতিবাচকতার সঙ্গে, এক স্বপ্ন
( উচ্চতর জীবনের স্বপ্ন );
ওরা ওর পা দুটো চাইলো,
শক্ত আর শিরা বেরোনো,
( ওর উঁচু পা-ফেলার পা দুটো )
কেননা কঢিন সময়ে
একজোড়া পায়ের চেয়ে ভালো কিছু আছে 
ইঁট সাজাবার বা পরিখা খোঁড়ার জন্য ?
ওরা ওর কাছে সেই ক্ষেতটা চাইলো যা ওকে শৈশবে খাবার যুগিয়েছে
তার অনুগত গাছসুদ্ধ ।
ওরা ওর বুক, ওর হৃদয়, ওর কাঁধ চাইলো ।
ওরা ওকে বলল
যে ওগুলো অত্যন্ত জরুরি।
পরে ওরা ব্যাখ্যা করল
যে এই দানগুলো অর্থহীন হয়ে যাবে
যদি ও নিজের জিভটা না দেয়,
কেননা কঠিন সময়ে
ঘৃণা আর মিথ্যা থামাবার জন্য এতো উপকারী জিনিস আর নেই।
আর শেষ পর্যন্ত ওরা ওকে অনুরোধ করল
দয়া করে হাঁটতে আরম্ভ করুন
কেননা কঠিন সময়ে
নিঃসন্দেহে সেটাই নির্নায়ক পরীক্ষা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন