·
অ্যালেন গিন্সবার্গ : বিখ্যাত মার্কিন কবি ও গীতিকার।
আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গ ছিলেন মার্কিন কবি, লেখক, গীতিকার যিনি ১৯৫০-এর দশকের বিট প্রজন্ম এবং বিপরীত সংস্কৃতিআন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তিনি সামরিকতন্ত্র, অর্থনৈতিক বস্তুবাদ এবং যৌন নিপীড়ন বিষয়ের জোরালোভাবে বিরোধিতা করেন।
শুরুতে গিন্সবার্গ তার "হাউল" মহাকাব্যের জন্য সর্বাধিক পরিচিত হন; যেখানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে নিন্দা করেন।এই কবিতাটি লিখেছিলেন তার বিট প্রজন্মের বন্ধুদের বরণ করে নিয়ে এবং বস্তুবাদের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে আক্রমণ করে।
এলেন গিন্সবার্গ একটি ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি নিউ জার্সির প্যাটারসন এলাকায় বেড়ে ওঠেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ইস্টসাইড হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
পরবতীর্তে মন্টক্লেয়ার কলেজে কিছুদিন অধ্যয়নের পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি পড়ালেখার খরচ যোগাবার জন্য একটি চাকুরীতে যোগদান করেন।
তিনি সে সময় কলম্বিয়া থেকে প্রকাশিত জেস্টার হিউমার ম্যাগাজিনে কিছুদিন কাজ করেন এবং ফিলোলেক্সান সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
এলেন গিন্সবার্গ ভারতবর্ষে থাকাকালীন সর্বাধিক সময় কাটিয়েছিলেন কলকাতায়, ১৯৬২-১৯৬৩ সালে এবং তিকি পশ্চিমবাংলার কবিদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ।
তাঁর সঙ্গে হাংরি আন্দোলন এর কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মলয় রায়চৌধুরীর হৃদ্যটা গড়ে ওঠে এবং তিনি আমেরিকায় ফিরে গিয়ে হাংরি আন্দোলন এর কবিদের রচনা সেখানকার প্রখ্যাত পত্রিকাগুকিতে প্রকাশের ব্যবস্হা করেছিলেন।
এলেন গিন্সবার্গের বিখ্যাত কবিতা ‘হাউল’ এবং ‘ক্যাডিশ’ বাংলায় অনুবাদ করেছেন মলয় রায়চৌধুরী ।
সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড - বিখ্যাত মার্কিন কবি এলেন গিন্সবার্গ রচিত একটি কবিতা যা থেকে পরে গান করা হয়েছিল। এলেন গিন্সবার্গ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতের কলকাতায় এসেছিলেন।
কলকাতার বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল যার মধ্যে একজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সুনীলের বাড়িতেই উঠেছিলেন। তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী অন্যান্য শহরে আশ্রয় নিয়েছিল।
ব্রিটিশ রাজের সময় পূর্ব বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের সংযোগকারী সড়ক হিসেবে কাজ করতো “যশোর রোড”। অনেক বৃষ্টি হওয়ায় তখন যশোর রোড পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
সড়ক পথে না পেরে গিন্সবার্গ অবশেষে নৌকায় করে বনগাঁ পেরিয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌঁছেন। তার সাথে সুনীলও ছিলেন। তারা যশোর সীমান্ত ও এর আশপাশের শিবিরগুলোতে বসবাসকারী শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই গিন্সবার্গ এই কবিতাটি লিখেছিলেন। এই দীর্ঘ কবিতার সাথে সুর দিয়ে এটিকে গানে রূপ দিয়েছিলেন তিনি।
আমেরিকায় ফিরে গিয়ে তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যান্য বিখ্যাত গায়কদের সহায়তায় এই গান গেয়ে কনসার্ট করেছিলেন। এভাবেই বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন গিন্সবার্গ।
এলেন গিনসবার্গ। একজন মার্কিন কবি, গীতিকার, আলোকচিত্রী এবং মঞ্চ অভিনেতা। তিনি ১৯২৬ সালে ৩ জুন নিউজার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন। ‘BeatGeneration৩’-এর একজন নেতৃস্থানীয় প্রচারক হিসেবেই তিনি সুপরিচিত।
গিন্সবার্গ ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মার্কিন সরকার যেখানে পাকিস্তানকে সমর্থন যুগিয়েছিল সেখানে এলেন গিন্সবার্গ বাংলাদেশের পক্ষে সরব ছিলেন।
কোলকাতায় তার সাহিত্যিক বন্ধুদের সাথে নিয়ে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রামে নেমেছিলেন।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে রোলিং স্টোনের কিথ রিচার্ডস কিছু টাকা তুলে দিয়েছিলেন গিন্সবার্গের হাতে; পূর্ব বঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে, হাজার হাজার বাঙালি শরণার্থী বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার তারা সেখানে— গিন্সবার্গের কাজ হবে সরেজমিন ঘুরে ওই যুদ্ধের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন লেখা।
কলকাতায় গিনসবার্গের সঙ্গী হয়েছিলেন তখন বিবিসি’র হয়ে রিপোর্ট করতে আসা গীতা মেহতা। কলকাতার কয়েকজন শিল্পী-সাহিত্যিকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রেই তিনি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ওঠেছিলেন ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অন্যদেরসহ গিনসবার্গকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী অন্যান্য শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় পূর্ব বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের সংযোগকারী সড়ক হিসেবে কাজ করতো যশোর রোড।
অনেক বৃষ্টি হওয়ায় তখন যশোর রোড পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সড়ক পথে না পেরে গিন্সবার্গ অবশেষে নৌকায় করে বনগাঁ পেরিয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌঁছেন। তার সাথে সুনীলও ছিলেন।
তারা যশোর সীমান্ত ও এর আশপাশের শিবিরগুলোতে বসবাসকারী শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন।
যশোর রোডের পাশে গড়ে ওঠা শরনার্থী শিবির এবং এপার থেকে ওপারে যাত্রা করা হাজার হাজার নীরিহ মানুষের নির্মম হাহাকারের প্রতিধ্বনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতায়।”
যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যদের সহায়তায় এই কবিতাটিকে তিনি গানে রূপ দিয়েছিলেন। কনসার্টে এই গান গেয়ে তারা বাংলাদেশী শরণার্থীদের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
‘দ্য ফল অব আমেরিকা’ বইয়ের সেরা কবিতাটি নিঃসন্দেহে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’।
“Allen Ginsberg/Mondriaan String Quartet - September on Jessore Road”১৯৭১ ডেট্রয়েটে জন লেনন এবং ইয়োকো ওনো ‘Free John Sinclair’ শোভাযাত্রার আয়োজন করেন।
গিন্সবার্গ সেখানে গীটারিস্টগ্যারী গেযকে সাথে নিয়ে ‘Jessore Road’ আবৃত্তি করেন। লেনন পরে গিন্সবার্গকে The Beatles-এর Eleanor Rigby-এর আদলে String Quartet (a musical ensemble of four string players– usually two violin players, a violist and a cellist) নিয়ে ‘Jessore Road’ আবৃত্তি করতে বলেন।
১৯৮২ সালে ডাইরেক্টর বেন পসেট, আমস্টারডামের One World Poetry-তে স্টিভেনটেইলর এবং গিন্সবার্গকে প্রয়োজনীয় শিল্পী এবং রেকর্ডিং সুবিধা দেন। রেকর্ডিং-এরজন্য স্বরলিপি লিখেছেন স্টিভেন
সব আয়োজন শেষে Milky Way Theater রেকর্ড করা হয় String Quartet - September on Jessore Road ১৯৮৩তে। শিল্পী ছিলেন গিন্সবার্গ নিজেই।
এই কবিতার মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি তাঁর একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং আমেরিকায় ফিরে গিয়ে ১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট নিউ ইয়র্কের মডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘পন্ডিত রবি শংকর’ ও জর্জ হ্যারিসন আয়োজিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’এ অংশগ্রহণ করেন।
উলেখ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করা হয়েছিল ৭১এর বাঙলাদেশী শরনার্থিদের সাহায্যার্থে।
এই কনসার্টে জর্জ হ্যরিসন, বব ডিলান, জোয়ান বায়েজ সহ আমেরিকার আরও অনেক জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী-ই সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
পন্ডিত রবি শংকর ও অপর ভারতীয় কিংবদন্তী গায়ক আলি আকবর খানও গান পরিবেশন করেন এই কনসার্টে এবং এখান থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার সংগৃহীত হয়।
এই টাকার থেকেও বড়ো ব্যাপার ছিলো এই কনসার্ট সারাবিশ্বকে একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিলো। সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কথা এবং আমাদের গৌরবান্বিত স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা। এর পর থেকে জনমত গড়তে থাকে এবং বিশ্ব অপেক্ষা করে বাঙলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের জন্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অর্থ সংগ্রহের জন্য “কনসার্ট ফর বাঙলাদেশ” ছাড়াও গিন্সবার্গ ওরাশিয়ার ইয়েভগেনি ইয়েভ তুসোস্কোর মিলে কবিতা পাঠের আসরও আয়োজন করেছিলেন।
তিনি ১৯৯৭ সালের ৫ই এপ্রিল দেহত্যাগ করেন।
আজ খ্যাতিমান মার্কিন কবি ও গীতিকার এলেন গইন্সবার্গ এর জন্মদিন। আজকের এই দিনে উনাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন