মৃগাঙ্কশেখরঃ অরূপ তোমার এঁটকাঁটা পড়তে পড়তে কখনো আমার যৌনাঙ্গ শক্ত হয়েছে, নিজের ভেতরেই শিশির দত্ত হয়ে উঠেছি। শারীরিক উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎই এমন একটা লাইন এসেছে, আমাকে ওলটপালট করেছে। ধর্ম ব্যাবসা, দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের শরীরের ক্ষিদে, সঙ্গমে টিকটিকি ঘোড়ার অনুকরণ। দিনের পর দিন যৌন ক্ষিদে আর পেটের ক্ষিদে ব্যতিত জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে মানুষ কি ভাবে! আর কেকা আর শিশিরের দুটি চরিত্র - কিন্তু প্রেক্ষিতটা কতটা স্পষ্ট করে দেওয়া। সবের মধ্যে আমার মনে হল, যৌনতাকে কেন্দ্র করে ধর্ম সমাজ রাজনীতিকে ধরলে, নাকি যৌনতা পরিধী আর যা ঘিরে রেখেছে বাকি জিনিসগুলোকে ?
মলয়ঃ কেন্দ্র যৌনতা নয় । কেন্দ্র হল বেনারসের ষাটের শেষের সময়টা যখন ভিয়েৎনাম যুদ্ধবিরোধী আমেরিকানরা বেনারসে এসে জড়ো হয়েছে আর বেনারসের যুবকরা নকশাল আন্দোলনে অংশ নেয়া আরম্ভ করেছে । ভিয়েৎনাম যুদ্ধে যাতে যেতে না হয়, তাই মার্কিন বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের হিপি হতে উৎসাহিত করে বিদেশে পাঠিয়ে দিত । আমি সেই হিপি ট্রেইলের কথাও লিখেছি । যৌনতাকে কেন্দ্র করতে হলে তো কলকাতা শহরেই ঘটনাগুলো ঘটতে পারত । সেক্ষেত্রে ধর্মের পৃষ্ঠভূমি আনা কঠিন হতো । পাশাপাশি আরেকটা কাহিনিও এগিয়েছে, যেখানে শিশির দত্তকে দেবতার আসনে বসিয়েছে একটা অবাঙালি ব্যবসায়ি পরিবার, যাদের বাড়ির ছেলে অশোক তাদের তুলনায় অত্যন্ত গরিব বিধবা তরুণীর সঙ্গে প্রেমে পড়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছিল ; শিশির দত্ত পৌরাণিক দেবতার আসনে বসে সাধুত্ব ফলাবার পর আরেক রকম পৌরাণিক চরিত্রে ঢুকেছে, ম্যাডেলিন আর কেকার সঙ্গে । কেকার পরিকল্পনাও যৌনতা নয় ; অতুলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ, এমনকি সে শেষ পর্যন্ত অতুলকে মেরে ফেলতে কুন্ঠিত হল না, সে তার ডায়েরিতে লিখছেও যে শিশির দত্ত তার হাতের কাঠের পুতুল, তাকে সে ব্যবহার করছে নিজের উদ্দেশ্যপূরণের জন্য । ভিয়েৎনাম-নকশাল আন্দোলনের বেনারস পরবর্তীকালে ফিরে গেছে হিন্দু-মুসলিম মৌলবাদে, সেটাও কেকার দৃষ্টিতেই ধরা পড়েছে ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আর ম্যাডেলিনের কাছে শিশিরের যৌন শিক্ষা কি আমাদের এখানে যৌনতা ব্যাপারে যে নেকুপুসুপনা তার গালেই চড় বসিয়েছ ?
মলয়ঃ না, না, কারোর গালে চড় বসাইনি । একথা ঠিক যে ভারতীয় সমাজে সেক্সকে এনজয়েবল মনে করাকে 'ইতরানুভূতি' মনে করা হয় । তাই যুবক-যুবতীরা মিশনারি পোজিশান ছাড়া অন্য কোনো পোজিশানের কথা জানে না ; অথচ এটা ধর্ষণের পোজিশান । বিদেশিনী এসে বাৎসায়ন শিখিয়ে গেল । ষাটের দশকের তুলনায় এখন অবশ্য যুবক-যুবতীরা কিছুটা এগিয়েছে, তরুণী কবিরা মুখমেহন, স্বমেহন ইত্যাদি আনছেন কবিতায় । কিন্তু সমাজে 'সেক্সপার্ট' নামে যে বিশেষজ্ঞরা এসেছেন তা অনেকেই জানেন না, যৌনতার জ্ঞানের জন্যে তাঁরা গায়নাকের কাছে যান । গায়নাকের কাজ শিশুর মা আর বাচ্চাকে প্রসবের ব্যাপারে নির্দেশ দিতে থাকা । সেক্সপার্টরা সমস্ত ব্যাপারে গাইড করেন, কেননা যৌনজীবন সফল করতে হলে নানা বিষয়ে গাইডেন্সের দরকার । শিশির দত্তও ম্যাডেলিনের কাছে সেই গাইডেন্স পেল; কেকাকেও গাইড করতে পারল, যার জীবনে সেক্স ছিলই না ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ মলয় দা আমার প্রশ্নে ফিরছি তার আগে তোমার পাঠকদের কাছ থেকে কটা প্রশ্ন এসেছে, সেগুলো একটু করে নিঃ
"শুভা নিয়ে দুয়েক কথা বলতে পারি, আমার বিশ্লেষণ । আমার নারীত্বে লেগেছে। আমি শুভা হলে মলয়দা কে এক হাত নিতাম অথবা শুভার হয়ে। অবন্তিকার ক্ষেত্রে মলয় দা অনেক সংবেদনশীল বরং। আমি বিষয়গত বলছি।
মেল - গেজিও ও না পুরোপুরি, এক ধরণের পাওয়ার প্লে আছে, শুভার প্রতি , মলয়দা কে যেটুকু জানি, কথা বলেছি, মলয়দার মত লিবেরাল মানুষ এটা কেন এনেছিলেন, জানতে ইছছে হয়।" - অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
পরের দুটি প্রশ্ন - রুহুল মাহফুজ জয় করেছেন।
১. একুশ শতকে বাঙলা কবিতায় কতখানি বাঁক বদল হয়েছে বলে মনে করেন মলয় দা? (বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গ মিলিয়ে)
২. বাঙলা সাহিত্যে এখনো কলোনিয়াল ভাবাবেগ, মানসিকতা, আচরণ দেখা যায় কেনো?
মলয়ঃ অনামিকার সঙ্গে আমি একমত । শুভা ছিল বয়ঃসন্ধির প্রথম প্রেমিকা যে আমাকে ল্যাং মেরে চলে গিয়েছিল, একজন স্মাগলারের সঙ্গে । তখন স্কুলে পড়তুম, ক্লাস টেন-ইলেভনে । আমি ব্যাপারটা ধরার চেষ্টা করেছি "রাহুকেতু" উপন্যাসে অঞ্জলি দাশ চরিত্রের মাধ্যমে । অবন্তিকা একটি নির্মিত প্রতিস্ব, আমার জীবনে দেখা বহু নারীর চরিত্র থেকে উপাদান দিয়ে গড়া ।
বাংলা কবিতায় প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে । বস্তুত আমি তো অনেককে হিংসে করি তাদের মতন লিখতে পারি না বলে । আর ঔপনিবেশিক প্রভাব থাকেবেই, সহজে যাবার নয় । কেবল আমাদের দেশে নয়, প্রতিটি উপনিবেশেই তা রয়ে গেছে । একে বলে লিমিন্যালিটি, একটা কাগজের ওপর ডটপেন দিয়ে লিখলে তার তলার কাগজে যেমন ছাপ থেকে যায়, তেমন । ভারতবর্ষ তো সেই গ্রিকদের সময় থেকে বহিরাগতদের সংস্কৃতিতে নিজেদের সংস্কৃতিকে চুবিয়েছে । ইংরেজদের সম্পর্কে আমরা বেশি করে চিন্তা করি তার কারণ ইংরেজরা পরিকল্পনা করে আমাদের প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে বাঙালিদের । আর এখনকার ভারতীয় মধ্যবিত্তরা যেচে আমেরিকান সংস্কৃতিতে নিজেদের চুবিয়ে নিচ্ছে । সমাজ-সভ্যতা এই ভাবেই এগোয় । আমরা যে ধুতি পরি তা মারাঠা আক্রমণকারীদের সঙ্গে এসেছিল, ঘোড়ায় চাপার জন্য ধুতি জরুরি ছিল, আমরা যে পাঞ্জাবি পরি তা তুর্কিদের অবদান; অথচ পুজোয় বা জামাই ষষ্ঠীতে এই পোষাকে ডগমগ বাঙালি । ব্লাউজও রবীন্দ্রনাথের পরিবারের অবদান, পাশ্চাত্য প্রভাবে । কবিতা, উপন্যাস, গল্প সবই পাশ্চাত্য অবদান । তুই যে সাক্ষাৎকার নিচ্ছিস, তাও পশ্চিম থেকে পাওয়া আদানপ্রদানের ফর্ম । ঢাকা-চিটাগঙে যারা নিজেদের আস্তিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারা পাকিস্তানের আফগানি পোশাক পরে কুড়ুল-কাটারি-চপার নিয়ে পথে বেরোচ্ছে, তাদের কিশতি টুপিটাও বিদেশি ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আর এক পাঠকের প্রশ্ন আছে। ‘জখম’ কবিতায় বানানগুলি কি কারণে আলাদা করেছিলে ? কোর্বো চুর্মার পার্ছি - এরকম।
মলয়ঃ ওগুলো হাংরি আন্দোলনের সময়ের রচনা । তখন আমরা ফোনেটিকালি লেখার চেষ্টা করছিলুম । নিচের তলার লোকেরা ফোনেটিক্সকে গুরুত্ব দেয় । তার মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যকরণ পদ্ধতিকে আক্রমণ করে । হাংরি আন্দোলনের সময়ে আমরা সমাজের উঁচু স্তরের ভাষাকে আক্রমণ করতে চেয়েছিলুম ; এই ফোনেটিকাল নিরীক্ষা তার অঙ্গ ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ রাহুকেতু আর আত্মজীবনীর মধ্যে কতটা ফারাক?
মলয়ঃ "রাহুকেতু" ফিকশানালাইজড আত্মজীবনী । শৈশব আর স্কুল কলেজের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে "ছোটোলোক" সিরিজ লেখা ছাড়া আত্মজীবনী আর লিখিনি । অনেকে বলেছেন লিখতে । লেখা কঠিন কেননা অনেকেই জীবিত, তাঁরা সত্যি ঘটনা লিখলে অফেনডেড হবেন । ফিকশানে অফেনডেড হলেও অভিযোগের কিছু নেই । "অরণ্যের দিনরাত্রী" পড়ে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় অফেনডেড হয়ে "জঙ্গলের দিনরাত্রী" লিখেছিলেন । শৈলেশ্বর ঘোষ আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল, রাজসাক্ষী হিসাবে । সে কথা পড়ে শৈলেশ্বরের মেয়ে জীজা ঘোষ প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়কে উকিলের নোটিস পাঠাবার হুমকি দিয়েছেন ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ রাহুলের ধর্মের ভাঁড়ামির প্রতি যে বিরক্তি আছে সেটা স্পষ্ট। অথচ যে সাধুবাবা দাড়ি ঘষে দিয়ে বলেছিলেন, রাহুলের শত্রুরা রাহুলের আগেই মরবে, সে কথাটা রাহুলের বার বার মনে আসে কেন? সে কোনও না কোন ভাবে গুরুত্ব দিয়েছিল, বা কথাটা তার মনে দাগ কেটেছিল! রাহুল কি নিজেও চেয়েছিল, এরকম কিছু ?
মলয়ঃ গোরখপুরের শিব মন্দিরে, যেখানে পুজো দিতে হয় ত্রিশূল উৎসর্গ করে ( নানা মাপের ত্রিশূলে ভরা ওদের হলঘরগুলো ), সেখানের এক সাধু রাহুলকে বলেছিল ওই কথাগুলো । তার আগেও রাহুলের মামলার সময়ে, যখন রাহুলের বন্ধুরা রাজসাক্ষী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে, তখন রাহুলের পেছনে খাঁচাবন্দি দাগি কয়েকজন রাহুলকে বলেছিল, "তুমহারা জোড়িদার হ্যায় ? তুমহারে খিলাফ গবাহি দে রহা হ্যায় ? ছোড়না মত । ভুন দো সালোঁকো ।" রাহুল যেহেতু জামিনে ছাড়া ছিল সে থুতু-গয়ের-পানের পিকে নোংরা খাঁচায় পিঠ দিয়ে দাঁড়াতো, আর জামিন না পাওয়া দাগিরা জেল হাজত থেকে এসে খাঁচায় ঢুকতো । এই অংশটার সঙ্গে সাধুর বক্তব্য তুই মেলাতে পারিসনি বোধহয় । পঁয়ত্রিশ মাস ধরে আদালতের চক্কোর মেরে-মেরে, কলকাতার পথে-পথে একা ফ্যা-ফ্যা করে-করে, রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁইহীন, পকেট অধিকাংশ সময়ে ফাঁকা, পাইস হোটেলে খাওয়া, কোনঠাসা রাহুল অমন একটা মানসিকতায় পৌঁছেছিল, সেটাই ফিকশানালাজড, যাতে বোঝা যায় যে রাহুলের মানসিক অবস্হা সেসময়ে কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল । আমি নিজে অবশ্য জুতো খুলে পেটাবার কথা ভেবেছিলুম ; উকিল বললে, "আরেকটা মামলায় ফাঁসবেন।"
মৃগাঙ্কশেখরঃ ‘রাহুকেতু’ পড়তে পড়তে, আমি একটা আঁচ পাচ্ছি সুনীল সন্দীপন, হতেই পারে আমার মনের ভুল। গাঙ্গুলীর বা চাটুজ্জের চরিত্রটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে, হিংসে রাগ চাতুরতা আর খ্যাতির পাহাড়ে চড়া নিয়েই এরা মশগুল। এবং চড়েওছেন। গাঙ্গুলীর চরিত্রটা পড়তে গিয়ে আমার মনে এলো তোমার কবিতার একটা লাইন, দলছুটেই দিয়েছিলে। 'ফিসফিসে-লোকে বলে সুনীলদার প্রতিটি নখের জন্য উঠতি-কবিনী থাকে এক-একজন।' ‘রাহুকেতু’ কি সাহিত্যের নোংরামির একটা দিককেও তুলে ধরছে? আর সেটা কি শুধু মাত্র সেই সময়েরই নাকি এটা চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরা ? আর একটা প্রশ্ন। রাহুলের বয়স তখন কত, মমমমমমম, যাক গে সে যাই হোক, কি বা এসে যায় - এরকম একটা কথা বার বার এসেছে। এইটার কি কারণ?
মলয়ঃ হ্যাঁ, সাহিত্যিকদের আর প্রতিষ্ঠানের নোংরামিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবার চেষ্টা করেছি; সত্যিকারের চরিত্রদের সত্যিকারের ঘটনা। ঠিকই বলেছিস, ব্যাপারটা চলে আসছে বহুকাল যাবৎ, আর চলতেও থাকবে। মমমমমমম, এই ব্যাপারটা অ্যাড করেছি ন্যারেটিভকে সময়ের স্হতিস্হাপকতা দেবার জন্য, রাহুল সিংহ হয় সেসময়ে ভাবছে কিংবা কিছু একটা বলার ছিল, তা বলছে না । "রাহুকেতু" একটা টানা লেখা, কোথাও কোনো পর্বভাগ নেই । পর্বভাগটা ঘটিয়েছি মমমমম দিয়ে, কখনও রাহুলের বয়স এগিয়েছে আবার কখনও পেছিয়েছে । এইভাবে এর আগে কেউ লেখেননি বলেই মনে হয় ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আচ্ছা এতো নোংরামি সত্ত্বেও তো মানুষ এদের নিয়েই নাচে। এখনো তো এটাই চলছে। আমার সময়েও তো আমি তাই দেখছি। নিজেকে খ্যাতির চূড়ায় তুলতে শিল্পীরা কি করছেন! তা হলে এটাই কি সত্যি! সৎ ভাবে শিল্পটুকু করে গেলে চলবে না?
মলয়ঃ লেখালিখি এখন বাজারের আয়ত্বে চলে গেছে । দেখছিস না, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সর্বহর ‘হনুমান মালা’ বিক্রি করছেন টিভিতে, সুনীল গাঙ্গুলি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য আর সর্ষের তেল বিক্রি করতেন । বাজারে বিকোবার জন্য যা যা করা দরকার তাই করেন অনেকে । বাজারে বিকোনোটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে যশের মাপকাঠি । যারা বাজারে লড়তে পারে না তাদের কেউ-কেউ রাজনৈতিক দলের স্যাঙাত হয়ে উল্টো রাস্তায় বাজার ধরার চেষ্টা করে ; কিংবা, পাশের দুই রাষ্ট্রে যেমন, ধর্মের পালকিতে বসে বাজারে আর রাষ্ট্রের অন্দরমহলে ঢুকতে চায় । রাষ্ট্রের অন্দরমহলে ঢুকতে না পারলে বাজারে বিকোলেও পুরস্কার ইত্যাদি জোটে না । তুই যাকে শিল্প বলে ভাবছিস তা আর নেই । "ব্যবহার করো আর ফেলে দাও"-এর কালখণ্ডে শিল্প ব্যাপারটা উবে গেছে । এক বামপন্হী কবি টিভিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কতো কি আওড়াত, সে ব্যাটা ডিগবাজি খেয়ে ঢুকে গেল তৃণমূলে । কেন ? কিছু পাবার জন্য । এও ধরণের পোকামাকড়ে ভরে গেছে বঙ্গসংস্কৃতি ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ তাহলে যারা শিল্পটা সৎ ভাবে করতে চাইছে তাদের ভবিষ্যৎ কি! তাদের কি শিল্পের পাশাপাশি বাজার আর রাজনৈতিক দলের পা চাটতে হবে টিকে থাকতে গেলে?
মলয়ঃ মহামারী এড়াবার জন্য একজন লোক যা করে তা-ই করতে হবে ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আরো কটা প্রশ্ন মাথায় এলো।
কবিতাকে অপেরা বলছ কেন ?
পড়তে গিয়ে আমি কেবলই সুনীল শক্তি সন্দীপন ইত্যাদি মানুষজনের কথাই পড়ছি মনে হচ্ছে কিছুতেই উপন্যাসের চরিত্রে ঢুকতে পারছি না। রাহুল মানে তোমাকেই ভাবছি যেমন। এটা থেকে কি করে বেরবো?
‘অরূপ তোমার এঁটোকাটা’ পড়েছি। এখন ‘রাহুকেতু’ পড়তে গিয়ে দেখছি বেনারস - এর অংশটায় একই চরিত্র শুধু আলাদা ভাবে দেখানো। তোমার মনে হয় নি, রিপিটেশান পাঠক নাও নিতে পারে! আর শিশির দত্তের সাথে রাহুলের কি মিল নেই? পড়ে তো মনে হচ্ছিল রাহুলই শিশির দত্ত।
তোমার কি মনে হয় আপা সত্যি তোমায় রেপ করেছিল?
মলয়ঃ আপার সঙ্গে যৌনখেলার সময়ে রাহুল সিংহের যৌনতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না, কেবল ব্যাপারটায় তার ভালো লাগছে, এই বোধ ছাড়া । রাহুল সিংহ বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ করে, টের পেয়েছিল যে তার সঙ্গে আপা যা করেছিলেন তা রেপ । আপার সংস্রব ছেড়ে রাহুল পালিয়েছিল, তার লিঙ্গ বিশ্রীভাবে ছড়ে গিয়েছিল বলে । রাহুল সিংহ তো বেনারসে নেই, সে আছে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে, আর ভারতের নানা জায়গায় ।
শিশির দত্তের সঙ্গে রাহুল সিংহের কোনো মিল নেই । শিশির দত্ত ভিতু, ফার্স্ট মুভ করতে ভয় পায়, নিজের কোনো জীবনবোধ নেই, তার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সীমিত । রাহুল সিংহ বেপরোয়া, সাহসী, একাই যুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে, তার জীবনবোধ অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়ে উঠেছে, সে ভারতবর্ষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে, সমাজে তার অবস্হান শিশির দত্তদের বিপরীত দিকে ।
কবিতাকে 'অপেরা' বলেনি রাহুল সিংহ । সে রামায়ণ নট্য কোম্পানির কথা বলেছে, ওই নট্য কোম্পানির অধিকারীমশায় আর তার গ্যাঙের কথা বলছে । রামায়ণ লিখেছিলেন কৃত্তিবাস । রাহুল সিংহ মহাভারত নট্য কোম্পানি সম্পর্কেও বলেছে--- তুই বোধহয় ধরতে পারিসনি মহাভারত নট্য কোম্পানির অধিকারী মশায়টি ঠিক কে ।
তুই যে কবিদের কথা বলছিস তাদের পরিসর খুব একটা বেশি নেই 'রাহুকেতু' নিরুপন্যাসে । রাহুকেতুতে আরও অজস্র চরিত্র আছে । তুই মনে হচ্ছে অন্য ঘটনাগুলোয় গুরুত্ব দিসনি ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ রামায়ণটা ধরতে পেরেছিলাম। মহাভারতটা পারি নি। আমি তো এই উপন্যাস পড়তে গিয়ে কেবলই সেটা বাস্তবের কোন চরিত্র কোন প্রতিষ্ঠান সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি।
আচ্ছা এই যে এক এক টা প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। তুমি কখনো নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরী হোক চেয়েছিলে?
রাহুলের লেখার 'অশ্লীলতা' যে আসলে সরকারের একটা ভেক, আসলে মামলাতো হয়েছিল সরকারকে মুখোশ পাঠানোর জন্য?
তা রামায়ণের গাঙুলি চাটুজ্জে রা যে সোনাগাছির খদ্দের ছিল, সেটাও কি কোন রেভলিউসানারি কিছু দেখানোর জন্য নাকি অন্য কিছু? তোমার উপন্যাসে উল্লেখএর কথা বলছি না। তাদের হাবে ভাবের কথা জানতে চাইছি।
রাহুলের আন্দোলনকে টিট্কিরি মেরে কোন ফিল্ম হয়েছিল ?
রাহুল বলছে সে অঞ্জলির ক্ষেত্রে আর মন থেকে সাড়া পাচ্ছে না, যে কারণে শারীরিক মিলনেও গুটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপর আবার অপেক্ষাও করছে গড়িয়া হাটায় দিনের পর দিন। এ জায়গাটা ধরতে পারি নি।
মলয়ঃ মহাভারত নট্ট কোম্পানির অধিকারী মশায়কে বাস্তব জগতে খুঁজে পাবি ; অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র, একগাদা ছাত্র চেলায় ঘিরে থাকেন, রাহুলের বিরোধীদের প্রশ্রয় দ্যান একদা সেই অধ্যাপক ।
না, আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠান করে তুলতে চাইনি ; হাংরি আন্দোলন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক, তাও চাইনি । তোকে বোধহয় আগেই বলেছি যে হাংরি আন্দোলনের কোনো সম্পাদকীয় দপতর, হাইকমাণ্ড, পলিটব্যুরো, হেডকোয়ার্টার ধরণের ব্যাপার ছিল না । যে কেউ নিজেকে হাংরি ঘোষণা করে বুলেটিন বের করতে পারত । সেকারণেই উত্তরবঙ্গ আর ত্রিপুরাতেও হাংরি আন্দোলনকারীদের প্রসার ঘটেছিল । আমি তাদের অনেককে চিনি না । তাদের অনেকে আমার লেখালিখির সঙ্গে পরিচিত নন । আমি কলকাতা থেকে মুম্বাই পালিয়েও এসেছি প্রাতিষ্ঠানিক নোংরামি এড়াতে, পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছি প্রাতিষ্ঠানিক নোংরামি এড়াতে ।
মামলাটা আরম্ভ হয়েছিল ইনডিয়ান পিনাল কোডের তিনটে ধারার আরোপ দিয়ে । ১২০ ( বি ) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ; ২৯৪ যুবকদের বিপথগামী করা, ২৯২ অশ্লীলতা । সরকারের একটা ইনটারভিউ বোর্ড লালবাজারে আমার আর দাদার সাক্ষাৎকার নিয়ে টের পায় যে আমরা মূর্খ নই, কিছু জ্ঞানগম্যি আছে । সরকারের লিগাল রিমেমব্র্যান্সার পরামর্শ দ্যান যে বাকি দুটো অভিযোগ আদালতে টিকবে না । তখন সবাইকে রেহাই দিয়ে কেবল আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়, 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতার জন্য । কলকাতার তখনকার বেশ কয়েকজন কেউকেটারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন ; তাদের একজন আবু সৈয়দ আইয়ুব, তা পুলিশ কমিশনার নিজেই বলেছিলেন । আমার বিরুদ্ধে মামলাটা সাজানো সহজ হয় রাজসাক্ষী সুভাষ ঘোষ আর শৈলেশ্বর ঘোষের জন্য । পরে মামলায় যাতে ফাঁক না থাকে তাই শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আর উৎপলকুমার বসুকে ভয় দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে সরকারি সাক্ষী হিসাবে কাঠগড়ায় পেশ করা হয়েছিল ।
রামায়ণ নট্ট কোম্পানির সদস্যরা সত্যিই সোনাগাছির ফি শনিবারের খদ্দের ছিল ; রাহুল তার সিনিয়র উকিলের চেম্বারে বসে দেখতে পেত যে সদস্যরা দল বেঁধে গলিতে ঢুকছেন । একবার রাহুল তার পিসতুতো দাদার সঙ্গে গিয়ে তাদের পিছু নিয়েছিল । ওই অঞ্চলের সঙ্গে রাহুলের যে পরিচয় ছিল, তা রাহুল স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছে ।
হাংরি আন্দোলনকে টিটকিরি মেরে যে ফিল্ম হয়েছিল তার নাম 'বাইশে শ্রাবণ' ; পরিচালক গৌতম ঘোষ একজন হাংরি কবির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন । শুনছি ফিল্মটা নাকি হিন্দিতেও হবে !
অঞ্জলি দাশ যখন রাহুলকে সঙ্গমের জন্য আহ্বান করল তখন রাহুলের লিঙ্গ দাঁড়াতে অস্বীকার করেছিল । কিন্তু তারপরেও রাহুল বহুদিন অঞ্জলিকে দেখার আশায় গড়িয়াহাটের মোড়ে অপেক্ষা করেছে । রাহুল বয়ঃসন্ধির সেই দিনগুলো ফিরে পাবার কথা ভেবেছে, স্কুলের সেই পুরোনো অঞ্জলিকে ফিরে পাবার কথা ভেবেছে ; স্মাগলারের স্ত্রীকে নয় । রাহুল অপেক্ষা করেছে বটে, কিন্তু মনে-মনে ভেবেছে যেন দেখা না হয় ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ রাহুলের যৌনপল্লী গুলি ঘুরে দেখতে ভালো লাগা, বিভিন্ন দেশের যৌনপল্লী সে ঘুরে দেখে। কোথাও নগ্ণবুক নারী দাঁড়িয়ে থাকে শোকেসে। তার বিছানায় যেতে ভালো লাগে না। কারণ হিসেবে সে বলে কোন মেয়ের সম্পর্কে তার ধারণা ভালো না হলে তার দাঁড়ায় না। এই ভালো ধারণাটা ঠিক পরিষ্কার হল না।
মলয়ঃ হ্যাঁ, অভিজ্ঞতার জন্য রাহুল পৃথিবীর যে দেশে গেছে সেখানের যৌনপল্লী ঘুরে দেখেছে । এছাড়া তো কোনো দেশের বা সম্প্রদায় বা জাতির নারীকে নিকট থেকে দেখার বোঝার ও পরিচয়ের সম্ভাবনা নেই । কিন্তু যৌন মিলনের জন্য রাহুল নির্ভর করেছে নিজের ইন্সটিংক্টের ওপর । প্রতিটি নারীকেই ভালো লাগার নির্দেশ তার ইন্সটিংক্ট দ্যায় না । তার ইন্সটিংক্টকে নির্দেশ করার জন্য সবচেয়ে জরুরী হল নারীর আকর্ষক গন্ধ । তুই আমার বেশ কিছু কবিতায় নারীদেহের গন্ধের কথা পাবি । কলকাতায় অটোয় বসতে আমার ভালো লাগত না যখন দেখতুম কোনো যুবতী আগে থেকেই বসে রয়েছেন, আর তাঁর দেহ থেকে ভলকে ছিটকে আসছে হরমোনাল গন্ধের বিটকেল ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ মরা বাঘিনীর ঠাণ্ডা বুকের ওপর শুয়ে তার স্তনের বোঁটা মুখ নিয়ে ঘষছে রাহুল, আর মনে হচ্ছে তরুণী অফিসার রেড্ডির দেহ, বাঘিনীর শরীরটাকে। রাহুলের এই ইচ্ছা কি কামজনিত? নাকি একে মানসিক বিকার বলবে? না অন্য কিছু ?
মলয়ঃ বাঘিনীর স্তনে মুখ দেয়াটা হল রাহুলের অভিজ্ঞতার সুযোগ । তাতে কাম আর মৃত্যুবোধ দুই আছে । রাহুল যদিও অত্যধিক মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার পরিকল্পনায় ছিল যে সে বাঘিনীর সঙ্গে সঙ্গম করার চেষ্টা করবে, কেননা এই সুযোগ আর আসবে না কখনও জীবনে । দ্বিতীয়ত, বাঘিনীর বুকের ওপর শুয়ে রাহুল টের পায় যে তার মুখের নাগালে বাঘিনীর স্তনের বোঁটা ; স্তনের বোঁটায় মুখ দিয়ে রাহুলের মনে পড়ে যায় সেই মৃত যুবতীর কথা, যে রাহুলের জন্য আত্মহত্যা করেছিল । অর্থাৎ রাহুল মৃত্যু আর কামকে একই পাটাতনে এনে দেখার প্রয়াস করেছে ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ Wikipedia তে তোমার পেজে হাংরি নিয়ে সিনেমায় ২২ শে শ্রাবণের কথা আছে। কিন্তু সেখানে এই বিকৃতির উল্লেখ নেই। যারা পড়বে, তাদের কাছে এই মেসেজ টাই কি যাবে না, যে হাংরি পোয়েটটি তুমি। আর তুমি বই মেলায় আগুন ধরানোর সাথে জড়িয়ে ছিলে। যা আদপে ভিত্তিহীন। এডিট করে উড়িয়ে দেও নি কেন?
মলয়ঃ উইকিপেডিয়াতে যোগ বা সম্পাদনা করেন বাংলাদেশের কয়েকজন । কলকাতায় কারা করেন জানি না । আমি তো নিজে করতে পারি না, তাহলে পৃষ্ঠার ইতিহাসে থেকে যাবে যে আমি নাক গলিয়েছি । তাছাড়া, হাংরি আন্দোলনে তো অনেকেই ছিলেন, কেবল আমার কথাই পাঠক ভাববে কেন । 'বাইশে শ্রাবণ' ফিল্মে হাংরি কবিকে দেখানো হয়েছে পুরোনো জমিদার বাড়িতে সে থাকে, সম্ভবত পড়ন্ত জমিদার বাড়ির সন্তান । অমন বাড়িতে ফালগুনী রায় থাকতেন, ফালগুনী জমিদার বাড়ির ছেলে । তোর যদি মনে হয় ভুল রয়েছে, তাহলে তুই ওটা ঠিক করে দে । হয়তো এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর বাংলাদেশের কোনো সম্পাদক পৃষ্ঠাটার সম্পাদনা করবেন ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ গাঙ্গুলীর ব্যাপারটা ঠিক বুঝলে পারছি না। সে রাহুলের বিরুদ্ধে দুই চাটুজ্জে কে চটাচ্ছে আবার রাহুলের হয়ে সাক্ষীও দিচ্ছে। এই দ্বিচারিতা কেন ?
মলয়ঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ওই দুই চাটুজ্জেকে দুর্বলচরিত্র ও হীনমন্ন্য প্রমাণ করার জন্য । ইতিহাসে রয়ে গেল যে এনারা পুলিশের পক্ষে রাহুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । ইতিহাসে এ কথাও রয়ে গেল যে অসীম গাঙ্গুলি উদার চরিত্রের, এবং তরুণ কবিদের প্রকৃত নেতা । তিনি রাহুলের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন । পরে অসীম গাঙ্গুলী নিজের জীবনীতে লিখেওছেন যে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কবিতাটা পড়ার সময় তাঁর গা রি-রি করছিল ; গীতায় হাত রেখে তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন একজন কবিকে আইনের জাল থেকে মুক্ত করার জন্য, একথাও লিখেছেন জীবনীতে । অর্থাৎ দুই চাটুজ্জের তুলনায় তিনি মহান ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আমিই তরুণ কবিদের নেতা, কৃত্তিবাস থুড়ি রামায়ণ নট্টকে এলে বেলে করে দেওয়ার চেষ্টা, স্বঘোষিত নেতা ছিলেন এই গাঙ্গুলী নাকি সমর্থন পেতেন কারো? শক্তি চট্টোপাধ্যায় থুড়ি রক্তিম চাটুজ্জের থুতু চাটবেন কিনা প্রশ্ন করছেন! এই দুটো চরিত্র - এর মধ্যে হিংসে নামক রিপুটি আনলেন কেন লেখক ?
মলয়ঃ লেখক কিছুই আনেননি ; ওগুলো সত্য ঘটনা । অসীম গাঙ্গুলী সেসময়ে অতুল্য ঘোষের সমর্থন পেতেন ; তিনি অতুল্য ঘোষের পত্রিকা 'জনসেবক'-এর রবিবারের পৃষ্ঠার সম্পাদক ছিলেন । অতুল্য ঘোষের সুপারিশপত্রের জোরে একটি বড়ো সংবাদপত্রে চাকুরি পান ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ এই সত্যি ঘটনাগুলোর মানুষের জানা খুব প্রয়োজন তা হলে বোঝা যায়, সাহিত্যের ভেতর কি চরম নোংরামি চলে। অনেক সময় আমাদের এরকম হয়। একটা কথা যতদিন না কোথাও বলতে পারছি মনের ভেতরে একটা কষ্ট বা কোন মানসিক পরিস্থিতি থেকে বেরনো যায় না। রাহু কেতু লেখার পর তোমার মধ্যে কি সেরকম কিছু হয়েছিল ?
মলয়ঃ 'রাহুকেতু' তো কেবল সাহিত্যিকদের নিয়ে নয় ; তা রাহুল সিংহের জীবনের বহু ঘটনা নিয়ে । রাহুল সিংহের সঙ্গে কুখ্যাত ডাকাত বাবা মুস্তাকিম-এর দেখা হয়েছিল, পড়েছিস ? স্মাগলালের বউ তাকে সোনার বিস্কুট দেখিয়েছিল । সাহিত্যের নোংরামির ব্যাপারে আমি আগেও লিখেছি, এই সমস্ত নোংরামি নিয়েও লিখেছি ; তাই এই লেখাকে নিরাময় হিসাবে মনে করার কারণ নেই ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আর কটা প্রশ্ন মাথায় এলো, রক্তিম চাটুজ্জের বিবরণ পড়ে যা বুঝলাম, সে সব সময় মদের নেশায় ডুবে থাকে। এরকম এক জন লোককে কেন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল, রাহুলেরা ?
মলয়ঃ মদ খেলেই বা ; তিনি সেসময়ে অসাধারণ কবিতা লিখছিলেন । তাঁর প্রথম উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পড়িয়েছিলেন আমায় ; মনে হয়েছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃতিবর্ণনা আর বালক অপুর চরিত্রের সমকক্ষ আরেকটি নতুন কাজ হতে চলেছে বাংলায় । আমি নিজেই মদ, তাড়ি, গাঁজা, চরস, ভাঙ সবই খেতুম কলেজবন্ধুদের দলে । তাই ওনার মদ খাওয়াটা কোনো ব্যাপার ছিল না । আমার ‘ছোটোলোকের যুববেলা’ বইটা পড়ে দেখতে পারিস ।
মৃগাঙ্কশেখরঃ আন্দোলনের নেতা হিসেবে রক্তিম চাটুজ্জের নামে বনি ক্রাউন স্কলারসিপ সুপারিশ করেছিলেন এই বিষয়টা ঠিক জানি না। একটু বলবে।
মলয়ঃ বনি ক্রাউন পুরস্কারটি ওনার জন্যই নির্দিষ্ট করেছিলেন, সে কথা ডেবোরা বেকার ওনার 'দি ব্লু হ্যাণ্ড' বইতে লিখেছেন ; বইটা বিট কবিদের ভারতে জীবনযাত্রা নিয়ে ; অবশ্য বইটায় হাংরি আন্দোলন নিয়ে অনেক উল্টোপাল্টা কথা আছে, যেগুলো ডেবোরা বেকারের স্বামীকে ফিড করেছিলেন রামায়ণ নট্ট কোম্পানির অধিকারী মশায় । রক্তিম চাটুজ্জে কেন যে ল্যাং খেয়ে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট করেননি ডেবোরা বেকার । এবার 'রাহুকেতু' থেকে বেরিয়ে আমার অন্য উপন্যাসে চলে যা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন