শনিবার, ২২ মে, ২০২১

মলয় রায়চৌধুরীর দুটি কাব্যনাট্য : "ভরসন্ধ্যা" আর "ভালোবাসার উৎসব"

 মলয় রায়চৌধুরীর কাব্যনাট্য :

 ভরসন্ধ্যা

[ একটি কদমগাছ ছেয়ে আছে ফুলে ;

গাছটির চারিপাশে উবু হয়ে বসে

উনত্রিশজন বুড়োবুড়ি আর জনা

ছয় যুবক-যুবতী । সকলেই তারা

ওপরে তাকিয়ে আছে কদমগাছের

পানে ; বোঝা যায় তারা অপেক্ষা করছে

গাছটির অন্ধকার থেকে একজন

অতিমানুষের আগমন । লোকগুলো

এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ-আশায়

কদম গাছটি নাকি সেই গল্পতরু

যার গন্ধে লুকিয়ে আছেন অবতার–

নেমে আসবেন মর্ত্যে নেতৃত্ব দেবেন ।

লোকগুলোদের দেশে নেতা নেই বলে

কদম গাছের কাছে ভিক্ষা চাইছেন

যাতে একজন অতি-আধুনিক কেউ

মানুষের মঙ্গলের জন্যে আবির্ভূত

হন । অথচ গাছটি নিরুত্তর আজো । ]


বুড়োবুড়ি ( কোরাস ) ।।

কবে থেকে বসে আছি হাপিত্তেশ করে

কদমের গাছ ওগো দাওনা পাঠিয়ে

কোনো লোক, যাকে কাঁধে তুলে আমাদের

মসনদে বসাবো সকলের ভালোর

জন্য। উচিত মানুষ নেই কবে থেকে ।

অন্য জগৎ চাইছি, ভিন্ন ইতিহাস ।

বদল মানে কি স্রেফ নাচের আঙ্গিক ?

পাড়াতুতো নেতা-নেতি দেশটাকে ছিঁড়ে

সোনাদানা রাখছে বিদেশে নিয়ে গিয়ে ;

নয়তো নিজেরা নিজেদের ছিঁড়েফেড়ে

নাচন-কোদন করে জুয়া খেলছেন ।

কারো মুখ যেন লাল বাঁদরের পাছা

আবার কারোর ঘাড়ে শুয়োরের মাথা

কেউ ঝোলে ডালে ল্যাজ ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে

অনেকের জন্ম তো গুয়েরই আঁতুড়ে

পথই নজরে আসছে না আমাদের

কীভাবে পাল্টাবো এই বেজন্মাগুলোকে

যেনাদের কথা থেকে মানেরা লোপাট !


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

খুবই খারাপ যাচ্ছে দিনকাল ; শান্তি

নেই, কোনো দিশা-নির্দেশটুকুও নেই

লেগে আছে খুনোখুনি ধর্ষণ ডাকাতি

রাহাজানি বোমাবাজি কিশোরী পাচার

আর এই সবেতেই যারা দায়ি তারা

দখল করেছে মসনদ কোষাগার

আমাদের সার্কাসে আছে চক্রী ভাঁড়েরা,

বড়ই অভাব এক সৎ মানুষের ।

ভয়ে কেউ স্বপ্ন দেখতেও চাইছে না

সব ডানা রয়ে গেছে ডিমের ভেতরে

বাধ্য হয়ে বাছাই করতে হচ্ছে ভাঁড় ;

উপায় না খুঁজে পেয়ে জঙ্গলে ঢুকেছে

রেগে গিয়ে অনেকেই ধরেছে বন্দুক ।

বানচোতে বানচোতে ভরে গেছে দেশ ।


যুবতীরা ( কোরাস ) ।।

আমরা আরও গন্দা গাল দিতে চাই ;

মনে হয় মাসিকের কানি গুঁজে দিই

ধরে ধরে ওগুলোর মুখের ভেতরে ।

তাই চাই একজন বিশুদ্ধ মানুষ ।

এই সব লুচ্চা-লাফাঙ্গায় ছেয়ে থাকা

বৈভবী বাছাই থেকে মুক্ত হতে চাই ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

রয়েছে আমার স্টকে পাঁচ মহাজন

একে একে গুণাগুণ শোনো ওনাদের

তারপর ভেবেচিন্তে নির্ণয় নেবার

পালা তোমাদের ; নিয়ে যেও যাকে চাও ।

অনেকেই সৎ নয় কেউ কেউ চোর

সকলেই কচু নয় কেউ কেউ ওল

অনেকেই স্নব নয় কেউ কেউ খুনি

সকলেই সাপ নয় কেউ কেউ ব্যাঙ

অনেকেই বোকা নয় কেউ কেউ ছুঁচো

সমস্যা হল যে তারা সবাই মানুষ ।

[ হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ।

খচ্চর খুরের ধ্বনি শোনা যায়, কেউ

আসছে মিউলে চেপে এইদিক পানে ।

ভিড়ের ভেতরে এসে ঘোড়া থেকে নেমে

তাকায় সবার দিকে ; বেঁটে-ঘোড়া বাঁধে

কদম গাছেতে । লোকটির খালি গায়ে

চামড়ার শায়া, হাতে বর্শা পিঠে তীর

একটা শুয়োর মরা কাঁধের ওপর ;

তার আগমনে দুর্গন্ধ ছড়ায় এত

সকলেই বাধ্য হয় নাক চাপা দিতে ।

লোকটি নিজের পরিচয় নিজে দেয় ;

একই পোশাকে ঢোকে সাঙ্গপাঙ্গদল । ]


আত্তিলা ।।

আমি হুন আৎতিলা, দেবতার হাতে

গড়া, শান্তি-শৃঙ্খলার ভয়াল মানুষ

দেখছ আমাকে ? বহু দেশ জয় করে

সেখানের লোকেদের কবজায় আনা

কঠিন ছিল না । ছুটিয়েছি সেনাদের

তাদের ওপর দিয়ে থেঁতলে গুঁড়িয়ে

জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে । মেয়েদের

তুলে এনে বিলিয়েছি সেনাদের মাঝে ।

রা কাড়েনি কেউ । ইতিহাস দেখে নাও ।

যে যেমন আছে তেমন থাকায় রপ্ত

হয়েছে সবাই রোম থেকে দানিয়ুব

থেকে বালটিক সমুদ্রের নোনাঢেউ–

আসেনিকো আমার মতন বারোয়ারি ।

সোনাদানা কিছুই আমরা নিয়ে গিয়ে

রাখিনি বিদেশি ব্যাঙ্কে অথবা বাড়িতে ;

বাড়ি-ফাড়ি নেই আমাদের, যেথা ইচ্ছা

সেখানেই ডেরা বাঁধি, আর সে-জায়গা

হয়ে ওঠে আমাদের থাকার স্বদেশ ।

নিষ্ঠুর হিংস্রতা ছাড়া আনন্দ ঘটে না:

হৃদয়ী নায়কমাত্রে ঘোর ইডিয়ট

কেননা পাবলিক হল নির্মিত প্রাণী ।


সাঙ্গপাঙ্গদল ।।

আত্তিলা মাস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ

পাবলিক মানেই তো ভেড়াদের পাল

জন্মসিদ্ধ অধিকার কান্নাকাটি করা ।


আত্তিলার খচ্চর ( নারীকন্ঠে ) ।।

চলুন সম্রাট এটা হাঘরের গ্রাম

ঘাসও তো দেখতে পাচ্ছি না কোনোখানে

উঁহু, পুং ঘোড়াদের দেশ এটা নয়

এখানে বুকনিই পায় বক্তাকে খুঁজে

বর্তমান এলে লোকে অতীতকে খায়

স্মৃতির জোচ্চুরি নিয়ে সমাজটা চলে

ভাবছে ম্যাজিক হবে হাপিত্তেশ করে ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

সত্য বলছে আত্তিলা, কিন্তু মনে রেখো

উনি আর ওনার লোকেরা কাঁচা মাংস

খেতে ভালোবাসে । স্নান করবার প্রথা

এমনকী গরমেও ছোঁচাবার প্রথা

ওনার রাজত্বে নেই । জলের অভাব

আছে তোমাদের দেশে ; তার সমাধান

এতে হবে । খাবার সুরাহা হবে । বিয়ে

দিতে হবেনাকো মেয়েদের । পোশাকের

খরচ বাঁচবে । জনসংখ্যা কমে যাবে ।

এনার শিরায় বয় কংসের পুঁজ ।


আত্তিলা ।।

পারছ বুঝতে তো আমার খচ্চরও

তোমাদের চেয়ে কত জ্ঞানী ও বিদ্বান !


বুড়োরা ( কোরাস ) ।।

উঁহু চলবে না ; অমন জোকারচাঁদ

আছে আমাদের ভূঁয়ে প্রদেশে-প্রদেশে ;

তাদের সামনে খোকা তুমি চুনোপুঁটি ।

তারাও ধর্ষণ রাহাজানি লুটপাট

করতে ওস্তাদ বলে আমরা বিরক্ত ;

তাছাড়া সবাই ওরা সংবিধান মেনে

তাবৎ জোকারি করে দিব্বি পার পায়

রাসকেলে ঘুষখোরে ডান-বাম নেই

ঘাপলার অন্ত নেই, কোটি-কোটি টাকা

নামিদামিদের পেনটিং সোনাদানা

সুইজারল্যাণ্ডে ভল্টে লুকিয়ে রেখেছে ।

ফুসলিয়ে মেয়েদের বাজারে চালান করে ।

তুমি চাপো ঘোড়ার ওপরে । তারা চাপে

দেঁতো হেসে সরকারি মোটরগাড়িতে

এই যা তফাত, তাছাড়া সবই এক

প্রতিদ্বন্দ্বী খচ্চরে-গুণ্ডায় দেশ ছয়লাপ ।


আত্তিলা ।।

ওরা সব আমারই দত্তক সন্তান ;

আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

যাই, আরো গণতন্ত্রে আছে আমন্ত্রণ ।

[ ঘোড়ার পিঠেতে চেপে উধাও হলেন

মাতিতে থুতুর দলা ফেলে আৎতিলা ।

সাঙ্গপাঙ্গদল তাঁর পেছন-পেছন

তামাকের পিচ কদমের গাছে ফেলে ।

হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ;

বেজে ওঠে পাঙ্ক রক শীৎকারসহ ।

আবির্ভূত হল রোমের সম্রাট বুড়ো

ক্যালিগুলা নাচতে-নাচতে শিস দিয়ে

সঙ্গে তাঁর বুকখোলা যুবতীর দল

আর দুটি চেনে-বাঁধা কালো জাগুয়ার । ]


ক্যালিগুলা ।।

কী বলছিল আত্তিলা ব্যাটা নরাধম ?

আমার রাজত্বে গিয়ে জেনে নিতে পারো

সেখানে আমার মূর্তি হারকিউলিস

অ্যাপোলো মার্কুরি রূপে পুজো করে লোকে ।

সবাইকে চোখ বুজে দেখি, এমনকী

আমার ঘোড়াকে রাজদূত মর্যাদায়

প্রোমোট করেছি । ভাইবোন ভেদাভেদ

নেই বলে নিজের বোনের সঙ্গে শুতে

কোনো বাধা নেই । অজাচার অনাচার

আইনসঙ্গত কেননা যে আইনই

আমি । টুসকি বাজালে গলা কাটা যায়,

জেলে দিই আমার কার্টুন যদি আঁকে ।

তা এমন শান্তিস্বস্তি  কেউ পারবে না

দিতে তোমাদের । আমি মহা-ধুরন্ধর ।

পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ জুয়াচুরি ।


জাগুয়ারজোড়া ( পুরুষকন্ঠে ) ।।

পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ পাঁয়তাড়া ;

জীবের জগত মুছে ফেলবার ট্রিক

অপরাধহীন কোনো রাজনীতি নেই

আবিষ্কার করতে শেখাও মহাভয়

বাঁচবে কী করে প্রাণী কুবলে না খেলে !

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।


সত্য বলছেন উনি কিন্তু মনে রেখো

ক্যালিগুলা মগজবিহীন কালজয়ী ;

ওনার রাজত্বে যদি অশান্তির খোঁজ

করো, তা তোমরা পাবেনাকো । একেবারে

যাকে বলে শ্মশানের শান্তি সারাক্ষণ

অলিখিত সংবিধান ওনার জিভেতে

যে জিভ চোবানো থাকে যোনিতে মাদকে ;

অন্যের বউকে এনে ধর্ষণ করার

বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে এই শাসকের ;

ওর হাঁ-এ বক্রাসুরী বাঁকা দাঁত আছে ।


ক্যালিগুলা ।।

কারেক্ট বলেছে কদমের গাছ । আমি

যা বলি তা সংবিধান । তাই সমস্যাই

নেই কোনো আমার রাজত্বে । যোনি-লিঙ্গে

বসিয়েছি সারভিস ট্যাক্স । ইতিহাস

লেখকরা ওব্দি জানে না আমার গল্প

এত রকমের চর দরবারে আছে ;

দলের কাজের লোক তারা ফি-প্রহর

কেননা আমিই দল আমি সংবিধান

বানাই যখন ইচ্ছা কিংবা পালটাই ;

তোমাদের মতো জাতিপ্রথা-মার্কা নয় ।

মিডিয়া আমার থুতু চেটে মজা পায়

ভয়ে নাগরিকগুলো টুঁশব্দ করে না ।

এই তো দেখতে পাচ্ছ কত যুবতীরা

আমার নেশায় থাকে পুরো দিলখুশ ।

পাবলিক জিনিসটা চরসের ধোঁয়া ।

জাগুয়ারজোড়া ( নারীকন্ঠে ) ।।

আমরা এদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান

এদের নিয়তি হল হাপিত্তেশে মরা ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো তোমরা ওনাকে

অন্য কোনো প্রতিযোগী নেতা থাকবে না

ছিঁচকে চামচা-নেতা দেবে দে-চম্পট ।

কনেদের জন্যে বর খুঁজতে হবে না ।


বুড়িরা ( কোরাস ) ।।

না মা, অমন নেতার কোনো প্রয়োজন

নেই । আমরা অতিষ্ঠ তেএঁটে পাগলে,

মা-বোনের সঙ্গে শোয় এইসব নেতা

পেয়ে । খুনি ধর্ষক ডাকাত দাঙ্গাবাজ

ওরাই তো মসনদে বসে কলকাঠি

নাড়ে, দু-চারটে প্রদেশে । পাথর-মূর্তি

নিজের ও চোদ্দপুরুষের মোড়ে-পার্কে

পাঁচতলা বাড়ির সমান কাটাউট

বসিয়ে তারাও অন্ন ধ্বংস করে যাচ্ছে ;

শ্বশুর ধর্ষণ করে ছেলের বউকে

পুলিশ ধর্ষণ করে লকাপে ঢুকিয়ে

যার ফলে হারামি বিয়োয় ফি-বছর ।

সেসব হারামি একজন আরেকের

পোঁদে বাঁশ কোরে, কুকুর-কুরি ঢঙে

ঘেউ-ঘেউ চিৎকারে সমাবেশ করে

কখনো রাস্তার মোড়ে গেটে ময়দানে ।

আমরা তো শান্তি চাই, দুইবেলা পেট

ভরে খেয়ে-পরে আরাম শৃঙ্খলা চাই ।


ক্যালিগুলা ।।

ওরা সব আমারই জারজ সন্তান ;

আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

চলি, আরো গণতম্ত্রে বহু কাজ আছে ।

[ নাচতে-নাচতে শিস দিয়ে হাফ-ল্যাংটো

মেয়েদের কোমর জড়িয়ে অন্তর্ধান

করলেন ক্যালিগুলা । কদমের গাছ

হাততালি দিলেন এবার জোরে-জোরে ।

গলায় খুলির মালা পরে কয়েকটা

হাড়গিলে মানুষকে হাতকড়া বেঁধে

প্রবেশ করল পলপট, জলপাই

রঙের পোশাকে । সামরিক বাজনার

জগঝম্প হইচই ওঠে চারিদিকে । ]


পলপট ।।

দেখলুম ক্যালিগুলা উন্মাদ কাঁহিকা

গেল ওইদিকে কোনো মাগির ধান্দায় ;

তা তোমরা খুঁজছ এমন একজন

যে কিনা শৃঙ্খলা শান্তি সুখ এনে দেবে ।

আমি জোকার-সন্তান । সমাজের তলা

থেকে উঠে গরিব ভাগাও অন্দোলন

করে শহরের সবকটা মানুষকে

লাগিয়েছি ধান চাষে । গ্রাম-শহরের

পালটা-পালটি হয়ে গেছে, যেকারণে

কারোর মনেই কোনো ঈর্ষা-দ্বেষ নেই ;

প্রতিটি শহর দ্যাখো হয়ে গেছে গ্রাম,

ধানশীষে মধু হয় গোরু দ্যায় ডিম

গোবরের পোকা খেয়ে সোনা হাগে লোকে

সকলেই ভাই-ভাই নয়তো যে-যার

নিজের কবর খুঁড়ে মাটির তলায়

রাতেও সবাই খাটে বলে পাবলিক

বাড়বার কোনো সুযোগ-সুলুক নেই

মিছিল-মিটিঙ করা নিষিদ্ধ করেছি

কেরানিরা দিন-রাত চাষ করে মাঠে

খবরের পত্রিকা ছাপতে দিইনাকো

সুতরাং কোনো গুলতানি উঠবে না ।

আমার রাজত্বে পাবলিক বলে কিছু নেই ;

মাটিই মানুষ তাই মানুষও মাটি ।

জমির মালিক জমি নিজে, বুঝলে হে

পরিবার ব্যাপারটা লোপাট করেছি

কেননা আমিই সকলের পরিবার ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

হ্যাঁ, ইনি ইস্কুলে বারবার ফেল-করা

মহাসাম্যবাদী । প্রজারা এনাকে বলে

এক নম্বরের দাদা । কারোর তুলনা

এঁর সঙ্গে করা চলবে না ; তা সে ইদি

চেঙ্গিজ পিনোশে যে-ই হোন । করলেই

ধড়টা লোপাট । অতএব পল পট

যদি তোমাদের নেতা হন, পড়াশোনা

করতে হবে না বলে বাবা-মা-সন্তান

সবাই চাষের কাজে খেতচাষি হবে ;

শিল্পের ধান্দায় দেশ হবে না বিনষ্ট

অসাম্য লোপাট হবে সর্বত্র সমাজে ।

মাত্র তিনটি বছরে উনি কুড়ি লক্ষ

পাবলিক কমিয়ে ছিলেন । তোমাদের

দেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে মুক্ত হবে

জমির স্বামীত্ব নিয়ে গোল বাধবে না ।

প্রতিবাদ করার হবে না দরকার ।


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

আরে ওরকম ফেলমারা গানডুতে

আমাদের রাজনীতি পচে একাকার ।

এদেশেও জনগণ বলে কিছু নেই ।

কর্তারা যখন যাকে ইচ্ছে তুলে নিয়ে

বেমালুম মাটিতে মেশাতে এক্সপার্ট ।

জঙ্গল দখল কোরে আদিবাসীদের

তাড়িয়ে মাটির তলা থেকে খেয়ে নিচ্ছে

সোনাদানা লোহাতামা ম্যাংগানিজ ধাতু ।

ভিখারিরা ধনী হল রাজনীতি করে

কেরানিরা পার্টিবাজি করে জমিদার ।


পলপট ।।

ওরা সব আমারই বেজন্মা সন্তান

আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

টাটা বাই, অন্য কোনো গণতন্ত্রে যাই ।

[ পলপট কয়েদিরা বিদায় নিলেন ।

কদমের গাছ পুনরায় হাততালি

দিতে, ট্যাপডান্সে কুচকাওয়াজ কোরে

মুঠোর সেলামসহ ঢোকে হিটলার

সঙ্গের দেহরক্ষীরা নাচতেই থাকে

ট্যাপডান্স । কদমের গাছ হাততালি

দিলে বন্ধ হয় সবায়ের নাচানাচি । ]


হিটলার ।।

দেখলুম, কেটে পড়ল অনার্যগুলো

আরে ওরা আমার চুলের যুগ্যি নয়

নেতা হতে হলে চাই বিশুদ্ধ মা-বাবা ;

এমন দানব যার কথা আত্মহারা

করে দেবে সবাইকে খোকা থেকে বুড়ো

সমাজ চলবে শুধু নেতার কথায় ;

যত বেশি মতামত ততো গণ্ডোগোল

তাকিয়ে দেখলে টের পাবে, অশান্তির

প্রধান কারণ চারিদিকে, স্বাধীনতা

পেয়ে কাজকর্ম করতে চায় না কেউ ।

দেশকে টাইট দিতে হবে সারাক্ষণ

যাতে কেউ একটুও একান্ত নিজের

সময় না পায় । জনগণ ব্যাপারটা

চটকে মিশিয়ে দিলে ব্যাস কেল্লা ফতে ।

ভিন্নমত দেখলেই পোড়াও বিষাক্ত

গ্যাসে, তাদের নিশ্চিহ্ণ করো একেবারে ।

আমার টোটকা হল লেবেনস্রাউম,

জবরদখল করে ঝাণ্ডা পুঁতে দাও ।


যুবতীরা ( কোরাস ) ।।

আরে দাদু, অমন ভেড়ুয়া মাসতান

রয়েছে প্রতিটি রাজনীতিকের স্টকে

যাদের কাজই হল সকাল-বিকাল

একে-তাকে পোঁদে বাঁশ করে টাকা তোলা ;

অন্য মত শুনতে পেলেই পুঁতে দেবে

জলজ্যান্ত মাটির একশো হাত নিচে ।

আপনারি ঢঙে সেলাম ঠুকতে হয়

পাড়ার সিনডিকেট মাথারা এলেই ;

দেয়ালের পোস্টারের কথাও ফতোয়া ।

পোঁদেতে পার্টির ছাপ পেলেই সে নেতা ।

লেবেনস্রাউম ছাড়া কিছুই বোঝে না

আমাদের পার্টিবাজ জোকার বংশজ ।

দেয়াল দখল শুধু নয়, বউ-মেয়ে

বাড়িও দখল হচ্ছে দিনের আলোয় ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

আরেকবার ভেবে দ্যাখো, এনার মতন

দিগ্বিজয়ী দানব আসেনি কখনও ;

ইনি হ্যামেলিনের সেই বাঁশিওয়ালা

মানুষকে ইঁদুরে পালটে দিতে ওঁর

জুড়ি জন্মায়নি এখনও কোনো দেশে ।

অসন্তোষ থেকে উনি পৌঁছোন পোগ্রোমে ।

শত্রু মার্কা দিয়ে করেন নিকেশ উনি ;

ফলে নিমেষেই সারা দেশ শত্রুহীন

তারপর শ্বাসরোধী শান্তির ফোয়ারা ।


বুড়োরা ( কোরাস ) ।।

আরে নানা । সবকটা দলেই তো আছে

এই টাইপের অতিবজ্জাত জোকার

যারা জবরদখল করে দেশটাকে

উইপোকা হয়ে কুরে শেষ করে দিল ;

জনগণ ভয়ে মুখ খুলতে চায় না ।

কখন যে কোন লোক ইঁদুরে পালটে

যাবে, কারো জানা নেই । তাইতো চাইছি

আসুক এমন কোনো বিশুদ্ধ মানুষ

যার গায়ে গুয়ের কসমেটিক নেই—

মসনদটাকে সে ময়লা করবে না ।


হিটলার ।।

কারেক্ট বলেছে গাছ কদমের । যদি

ইঁদুরে পালটে যাও তাহলে সহজে

দেশে হবে মহামৌলবাদী জমপেশ

অন্যদের ঘৃণা করে কাটবে সময় ;

নিজেদের দুঃখ কষ্ট ভাবতে হবে না ।

যে তোমার মতাদর্শে নেই তাকে মারো

মৃত্যুর নেশায় থাকো মশগুল হয়ে

আত্মাহুতি দিয়ে সব ধ্বংস করে দাও ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

ওঁর মন্ত্রে তোমরা সবাই এককাট্টা

হয়ে, ভুলে যাবে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট

একে আরেকের দিকে নজর ঘুরিয়ে

আড়চোখে চরগিরি করতে পারবে ;

সময় আপনা থেকে হু-হু কেটে যাবে

মৌলবাদ বড়ই মধুর সেঁকো বিষ

যত মজে থাকা যায় তত তার মজা ।


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

মৌলবাদীদের হাতে ধাতানি-প্যাঁদানি

খেয়ে আমরা রক্তাক্ত বোবা আধমরা–

চাই না একলষেঁড়ে ওরকম জ্ঞান ।

ওই রাজনীতি করিয়েতে ছেয়ে গেছে

যারা শুধু চায় তাদের কথাই মানো

এমনকী শিশুদের দুধে তা মেশাও ।

চলবে না আত্মঘাতী বিশ্ববীক্ষা বিষ ;

পৃথিবীর কুষ্ঠরোগ ওই লোকগুলো

মৌলবাদীদের চেয়ে ক্ষতিকর নেই ।


হিটলার ।।

ওরা সব আমারই ঔরসে জন্মেছে

আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

ওরাই গেস্টাপো হয়ে আসে বারবার ।

[ বডিগার্ড নিয়ে হিটলার ট্যাপডান্স

করতে-করতে চলে যায় । হাততালি

দেন কদমের গাছ । শিকারি ব্রিচেসে

কোমরে টাইট বেল্ট দু-হাতে চাবুক

মাথায় কোঁকড়াচুল দোহারা মহিলা

প্রবেশ করেন ; চাবুক পটকে তিনি

দাঁড়ান পা ফাঁক করে । কদমের গাছ

এইভাবে মেয়েটির পরিচয় দেয় । ]


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

ইনি হান্টারওয়ালি ; হিন্দি সিনেমার

বিখ্যাত নায়িকা । যেখানে বজ্জাত পান

দেশের ভিলেনদের একা সামলান ;

দু-হাতে রিভলভার চালাতে-চালাতে

শত্রুহীন করে দেন গ্রাম ও শহর–

ফুল পাখি নদী চাঁদ ওঁর গান গায় ।

তোমাদের আর পরবর্তী প্রজন্মকে

হান্টার চালিয়ে উনি রক্ষা করবেন ।

সিনেমা-নায়িকা বলে উনি তো অমর

পোঁদেতে চাবুক মেরে ঠান্ডা করবেন

বেয়াড়াগুলোকে, যারা টাকা গেঁড়িয়েছে,

রেখেছে বিদেশে কোনো গোপন লকারে ;

মাটি থেকে ধাতু তুলে পাচার করছে

ছাপছে নকল টাকা চালাচ্ছে ধর্ষণ ;

একা হাতে সামলান হান্টারওয়ালি ।


বুড়িরা ( কোরাস ) ।।

আরে ! সেই মাদারি মামণি বাতেলানি !

হা কপাল, শেষে এই ফিলমি নায়িকা !

জীবনকে সিনেমায় আটক করার

শিল্প-শিল্প খেলা খেলে বুদ্ধিজীবিগণ–

নিজেরা তো বোকা সেজেছেন , আমাদেরো

বুঝিয়েছিলেন, সমাজ পালটে যাবে

কবিতা সিনেমা গল্প আঁকাআঁকি দিয়ে

নাচের নাটক গেয়ে বাজনা বাজিয়ে

দেশের দশের আয় বেড়ে শতগুণ !

সবই ফালতু প্রমাণিত হয়ে গেছে ।

আমরা বাস্তব চাই প্রকৃত বাস্তব ।

ধোঁয়াটে সুন্দরী দিয়ে কাজ চলবে না ।


হান্টারওয়ালি ।।

বাস্তব জগতে বাস করো বলে ভোগো

তোমরা সবাই । বিভ্রমনিবাসী হও

সারাক্ষণ কুয়াশায় বুঁদ হতে শেখো

মনে-মনে নিজেদের সুখি ভেবে নাও–

টানো নয়তো কোকেন চরস গঞ্জিকা ল

স্বপনে মিলতে পারে উদ্ধারের নেতা ।

যাক আমি চললাম, শুটিঙ রয়েছে ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

আমার স্টকের সব মহাজন শেষ ।

গাছে আর কতই বা অবতার ফলে !

[ দেখা যায় মোষের ওপরে চেপে

নীলদেহ যমরাজ আসরে এলেন

সঙ্গে হালখাতা হাতে চিত্রগুপ্ত-বুড়ো ;

আগে-পিছে দুইজন বাঁটকুল চাষি । ]


চিত্রগুপ্ত ।।

এঁদের কারোর তো হয়নি ডিউ ডেট !

এত ভিড়ভাড় কেন ? কিসের জটলা ?

প্রবলেম যে কী তা-ই তো টের পাচ্ছি না ।

সকলেই দিব্বি সুস্হ তবু মনমরা !

তা মনখারাপ থাকলেই ডিউ ডেট

দিই না কখনো । মন ভালো করবার

যে যার তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

এনাদের দেশে কোনো সৎ নেতা নেই

চাইছেন কাউকে পাঠিয়ে দিই আমি

অন্ধকার গন্ধ থেকে চাগিয়ে উঠুক

সৎ ও সুজন দেশ-রক্ষাকারী লোক


যমরাজের মোষ ( শিশুকন্ঠে )

তোমরা যা চাইছ তা বাতুলে বোকামি ।

সমাজ বদল করে গুবরে পোকারা–

নেতারা গোবর ভেবে ঠেলে নিয়ে যাও

গড়িয়ে-গড়িয়ে সেই তাল বড়ো হলে

আপনা থেকেই পাবে মহা-জননেতা

ইতিহাসে চিরকাল এমনই ঘটে

গোবর খসলে তার রূপ ধরা পড়ে

ঠিক যেরকম দেখা গেল এতক্ষণ

ওরা মহাজন হয়ে মসনদে ছিল

হেগেমুতে স্বদেশকে নষ্ট করে গেছে ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

অতএব ফিরা যাও যে যার মুলুকে

যেমন চলছে সব তেমন চলুক

তোমাদের মুরোদের বড়ই অভাব

ক্রোধ ছাড়া আস্ফালন গোসাপের বিষ ।

তবে, বার্তাহীন ক্রোধে বদল আসে না–

সুখ শান্তি পেতে হলে বিপদকে ডাকো

সাহস তো মানুষের বাঁচার আঙ্গিক

মসনদ কোনোকালে নিজেই পড়ে না ।


চিত্রগুপ্ত ।।

ফিরে যাও তারপর উঠেপড়ে লাগো ।

কোনো নেতা বদল ঘটাতে আসবে না ;

নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মসনদ ভাঙো ।

প্রিপন করতে পারি কয়েকটা ডেট

বড়োজোর । বাকি সব কাজ তোমাদের ।

[ সমবেত বুড়োবুড়ি যুবক-যুবতি

সবাই দাঁড়িয়ে উঠে চিৎকার করে

তারা সব নানাদিকে ছুটে চলে যায় । ]


————++++————–


কাব্যনাট্য : ভালোবাসার উৎসব

পরিদৃশ্য

পায়রোটেকনিকে তোলা রঙিন ঝড় ( গাঢ় লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি এবং গোলাপি । রঙগুলো প্রতিটি নারীর ভাবকল্প ) । সাত রঙের ঝোড়ো আলো ( যে রসায়নে আলো গড়ে উঠেছে : লিথিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড, কপার সালফেট, কপার ক্লোরাইড, পটাশিয়াম সালফেট এবং পটাশিয়াম ক্লোরাইড)।

পাত্রপাত্রী

১. কুলসুম বানু ( ১৪ বছর, কালো, মোটা, সলমা-সিতারার কাজকরা গাঢ় লাল সস্তা চুড়িদার ), ২. নন্দিতা সিনহা (১৯ বছরের তরুণী, ফর্সা, সুন্দরী, ঢ্যাঙা, অভিমানী, কমলা রঙের কটন শাড়ি ), ৩. ভূবনমনমোহিনী রাণা ( ২১ বছরের নেপালি যুবতী, সুশিক্ষিতা, হলুদ কাঞ্জিভরম ), ৪. চিত্রাঙ্গদা বসু ( ৩৫ বছরের বাঙালি যুবতী, যৌনকর্মী, সবুজ সিনথেটিক শাড়ি ), ৫. ক্যারল নোভাক ( ২৬ বচরের মার্কিন যুবতী, মাদকাসক্ত, নীল টপ ও ফেডেড জিন্স ), ৬. অবন্তিকা রায় ( ৩০ বছরের বাঙালি যুবতী, প্রেমে উন্মাদ, বেগুনি কল্কার জামদানি শাড়ি ), ৭. শ্রীমন্তিনী সেনগুপ্ত ( ২৭ বছরের বাঙালি যুবতী, হলুদ টপ ও জিন্সপরা, পিঠে ছড়ানো কালো চুল ), ৮. চারজন বৃদ্ধের দল ( ধুতি ও গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা ; পায়ে কথ্থক নাচের ঘুঙুর এবং প্রতি সংলাপে কথ্থকনাচের ভঙ্গীতে পাক খান ও গোড়ালি ঠোকেন । দৃশ্যকেন্দ্রে তাঁরা শবের দান দিকে সার বেঁধে দাঁড়ান ), ৯. চারজন বৃদ্ধার দল ( লাল পেড়ে শাড়ি ও ব্লাউজ । প্রতি সংলাপে ভারতনাট্যমের মুদ্রায় হাত নাচান; সেসময়ে মৃদঙ্গ বাজে । দৃশ্যকেন্দ্রে তাঁরা শবের বাঁদিকে সার বেঁধে দাঁড়ান । ), ১০. একজন টাকমাথা আউলবাবু ( প্যান্টশার্ট পরা, কাঁধে ঝোলা, কথা বলার সময়ে হিপহপ নাচেন ; হিপহপ নাচের সময়ে নেপথ্যে বাজতে শোনা যায় গিটার, ভায়োলিন, পিয়ানো, বাস ওড্রাম ), ১১. একজন যোদ্ধা ।

[ ধুলিকণাদের নিয়ে ঝড় ওঠে, প্রতিটি রঙিন

বালু, তাদের সাতটি আলোকণা একযোগে দৃশ্যকেন্দ্রে ছুটে

যায়, ঘূর্ণিকেন্দ্রে গিয়ে মানব আকার মেলে ধরে

উলঙ্গ যোদ্ধার, অবিন্যস্ত চুল তার, শ্বেতশুভ্র দাড়িগোঁফ,

ঋজু-ফর্সা । আচমকা চারিদিক থেকে ছয়জন

কিশোরী-তরুণী আবির্ভূত হন, ঘিরে ধরে বৃদ্ধটিকে খুন

করে ছোরাছুরি তরোয়াল দিয়ে আর

উধাও একইভাবে হন । তারপর চারিদিকে শব্দহীন ঝিঁঝিডাক ।

যোদ্ধাটির শব পড়ে থাকে বহুক্ষণ । মৃতদেহ থেকে ওঠে

ছয়রঙা ধোঁয়া ; কিছিক্ষণ পর নারীর আকার পায় তারা—

সেই নারীদের, যারা লোকটিকে খুন করে চলে গিয়েছিল ।

এ-সময়টুকুতে সরোদে রাগ দুর্গার আরোহ শোনা যায় । ]

কুলসুম ( উবু হয়ে যোদ্ধার হাত নিজের দুহাতে নিয়ে ) ।।

আমি এই বালকের হাতদুটি কেটে নিয়ে যাব

আমিই দিয়েছি একে প্রথম ছোঁয়ার নিরাময়

এই দুটি হাত দিয়ে আমার তাপিত তাড়নায়

শান্তি দিয়েছিল এ-বালক, অন্ধকারে হাঁস ও মুর্গির মাঝে

যখন দুজনে মিলে নিজেদের কৌতূহলী-উমে শিখিয়েছি

কীভাবে প্রেম পেলে দুধখোর প্রাণীর জন্ম হয় ।

এর হাত আমারই দ্বারা প্রভাবিত ।

এর হাত কখনো কচলায়নি গিয়ে নন্দনের বনানীতে

এতই ভার্জিন এর হস্তরেখাগুলো । ( চপার দিয়ে

বাঁ হাত কাটতে উদ্যোগী হয় । বৃদ্ধদলের প্রবেশ )

বৃদ্ধদল ( কোরাস , কুলসুমের দিকে তাকিয়ে ) ।।

নিচ্ছ যদি ছোঁয়াচ নিও

শুধুই নিজের ছোঁয়াচ নিও

অন্য নারীর ছোঁয়াচগুলো

হাতেই রেখে যেমন ছিল

তোমার তাতে নেই অধিকার

তাদের নিও যারা তোমার

গোপন-গলি চরতে এলো

প্রভাব নিয়ে গুলে খেলো !

[ নাচতে-নাচতে ঢোকে আউলবাবু নামে এক লোক ।

লাশের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁধের ঝোলা থেকে

পেন ও ডায়রি সঙ্গোপনে বের করে  ]

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

প্রশ্ন হল  এ কি যুদ্ধক্ষেত্র ধেকে পালিয়ে এসেছে ?

যতদূর জানি ব্যাটা তো মেটিং গেমের ওস্তাদ

সব্দে-শব্দে মেটিং করে বাক্যে-বাক্যে মেটিং করায়;

অথচ ছিল না এর বেঘো-মা বাপ-হেলিকোপ্টারি !

[ বৃদ্ধলের প্রস্হান ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, কুলসুমের দিকে তাকিয়ে ) ।।

তারপর তুই যাদের ছুঁলি

তারা কেন বঞ্চিত রে

তাদের হকে দেয়াল তুলে

একলষেঁড়ে বায়না ধরে

বাসি প্রেমের টাটকা বুলি

ঝাড়িস কিসের জন্য রে ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

তবে বুঝতে পারছি যোদ্ধা ছিল অতীব অশ্লীল !

নয়তো এমন ল্যাংটো পড়ে থাকে কেউ ?

পার্টি-অ্যানিমাল ছিল দলছুট বাঙালি-পুঙ্গব ।

[ বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

কুলসুম ( চলে যেতে-থাকা বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

কী হবে ওসব শুনে ? কাঁচা কৌমার্যের আরক্তিম

যা ছিল প্রথম রঙ তা তো আমারই অবদান

তাই আমি হাত দুটো নেবো ; বলুক যার যা ইচ্ছা

এর হাত আমার দ্বারাই প্রভাবিত ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ । ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল, কিন্তু কী হল শেষকালে ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

কিন্তু যোদ্ধা লোকটা কি দ্রোহী না বিপ্লবী ?

রাষ্ট্রের মালিকদের জানিয়ে রাখার প্রয়োজন

বলা তো যায় না ; শবেরাও আইনশৃঙ্খলা ভাঙে এইদেশে ।

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, বৃদ্ধদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল, কিন্তু কী হবে শেষকালে ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

বদনাম লড়াকুর পচা লাশ নেবে কি দেশের ইতিহাস ?

হতেই পারে না ; সামলাবে আমাদের পোষা খাদিম-মুন্সিরা ;

জলজ্যান্ত মাটিতে পোঁতার আগে টেঁসে গেল শালা ।

[বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

নন্দিতা ( ১৪ বছরের কিশোরীটির দিকে তাকিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে

আর চপারসুদ্ধ হাত ধরে তাকে দাঁড় করায় ) ।।

কে রে তুই কচিখুকি ? এ আবার বালক কোথায় ?

মৃত তবু কত লোভনীয়-দেহ তরতাজা টাটকা যুবক ।

নিজের চেহারা দ্যাক আর এ পুরুষ্টু লোকটাকে

কোথাও কি কোনো মিল আছে ? ছোটোলোকি

কালো মোটা বদগন্ধ বেঢপ আদল তোর ! এই

সুপুরুষ যুবা ককখনো ভুলেও ছোঁবে না তোর

টোপ-ফেলা গোপন নোংরামি । শুধু দুটি হাত নয়

এর দুটি ঠোঁটও আমার । স্বাদও দিয়েছি

আমি, বুকের সুগন্ধী গামে বনপ্রান্তে মাদুরের

গ্রীষ্মাবকাশের ঘাসে , আমারই অধিকার এর

নোনতা অধরে ; রক্তহীন কেটে নিচ্ছি

এর ঠোঁট আমারই দ্বারা প্রভাবিত;

আজ অব্দি যে কথা বলেছে সব আমারই প্রভাবে ।

[ ছুরি বের করে কাটতে ঝোঁকে । বৃদ্ধদলের প্রবেশ । ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, নন্দিতার উদ্দেশে ) ।।

নিচ্ছ যদি চুমুই নিও

ওই ঠোঁটে তো আরও অনেক

নারীর মোহের কান্না-হিসেব

গরিব-ধনী গৌরী-শ্যামা

ঘূনপোকাদের দেখা খোয়াব

বাঁচিয়ে নিজের হিসসা নিও ।

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

এ-ব্যাটা জিততো যদি আমাদের চাকরি খেয়ে নিতো !

ভাগ্যিস এমন লোক বারবার আসে বটে তবে মারা পড়ে

এদের সাকিন-নাম বাসি নথি-খাতা ছাড়া কোথাও থাকে না ।

আকাশের মেঘ খেতো ডায়নোসর তারাও আজকে হাপিস ।

[বৃদ্ধদলের প্রস্হান ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, নন্দিতার উদ্দেশে ) ।।

তারপরে তুই চুমলি যাদের

ভুললি কেন তাদের ছুঁড়ি

কোথায় সেসব ঠোঁট রেখেছিস

একেই কেন চাইরে বুড়ি

এর ভেতরে কী পেয়েছিস

মাঞ্জা-দেয়া উড়োন-ঘুড়ি ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

তবে এই লাশটাকে কোটালের হেপাজতে দেয়াটাই ঠিক

ভ্যান রিকশায় তুলে ফেলবে ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে ;

সেজেছিল প্রেমিক লড়াকু বানচোত

জানতো না প্রেম আর বিরোধিতা জলে তেলে মেশার মতন ।

[ বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

নন্দিতা ( চলে যেতে থাকা বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

ঋতুর গোপন গন্ধে মহিষের চেয়ে দৃঢ়-ঋজু এ-যুবক

খুরের ধুলোব গুঁড়িয়েছে ভুতগ্রস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাধা

তারপর যা ঘটেছে ইতিহাসে লেখা যাবেনাকো

শিং-ভাঙা পুং-ছাগলেরা পড়ে আছে প্রতিষ্ঠানের হাড়িকাঠে

তাই আমি নিতে চাই যা আমার যা দিয়ে তৈরি করেছি একে ।

কখনও দুটিঠোঁট শিশুর মতন ইনি রাখতেন বুকে

কিংবা হাঙরের ঢঙে দুই ঠোঁট মেলেছে দেহের অলিগলি

কত কাতুকুতু জমে আছে শরীরের স্মৃতি-বিজড়িত ঘরে ।

এর ঠোঁট আমারই দ্বারা প্রভাবিত ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল, কিন্তু শেষকালে কী হল ?

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, বৃদ্ধদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল, কিন্তু শেষকালে কী হল ?

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

যোদ্ধাদের কাজ হল টেঁসে যাওয়া, সেকাজ করেছে লোকটা,

হেঁ হেঁ, প্রেমপন্হা ভাঙবেন ইনি ? গানডুটা চেনেনি রাষ্ট্রকে–

যে-লোকই বসুক চেয়ারে তার মগজে বদল ঘটবেই ।

ভূবনমোহিনী ( কুলসুম ও নন্দিতার মাঝে দাঁড়িয়ে ) ।।

কী করছ কী বলছ যাতা তোমরা দুজনে মিলে,

দাঁড়াও, সবার আগে আমি জিভটুকু কেটে নিই

লেহন করেছে কতদিন নেকড়ের

ঢঙে, যে-অঙ্গে চেয়েছি হসটেলে সঙ্গে ছিল মিহিন সঙ্গীত যা আমার

দেহে আজো ঝিরিঝিরি রিমিজিমি বেজেই চলেছে ;

এর জিভ আমারই দ্বারা প্রভাবিত ।

শব্দ বলো বাক্য বলো যে-কোনো অভিধা, আমার প্রভাব তাতে

ব্যকরণে বিন্যাসে বিশেষ্যে বিশেষণে আমার প্রভাব পাবে ।

[ জিভ কাটতে ঝোঁকে । বৃদ্ধদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, ভূবনমোহিনীর দিকে তাকিয়ে ) ।।

নিচ্ছ যদি স্বাদই নিও,

স্পর্শ নয় গন্ধ নয়

শ্বাসে ভিজে গানও নয়,

তুই তো দেখি ছিলিস-মার্কা

জিভখানা এর ইলিশ-মার্কা,

কেমন করে মিল যে হয় !

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

কিন্তু এ সত্যই যুদ্ধ করেছিল কিনা তার কী প্রমাণ আছে ?

প্রমাণ থাকেও যদি ক্ষতি নেই আমাদের লোক আছে সর্বত্র ছড়ানো

লড়ায়ের ইতিহাস মিথ্যামঙ্গল লিখব তো আমরাই

সরকারি অনুদানে প্রকাশিত পড়বে খোকারা ইশকুলে ।

[ বৃদ্ধদলের প্রস্হান ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, ভূবনমোহিনীর দিকে তাকিয়ে ) ।।

তারপরে এ চাটলো যাদের

সকাল সন্ধে বিকেল দুপুর

মরল শেষে বিষে তাদের

আদর-খেকো মুখের মুকুর

জানিস সেসব দীর্ঘশ্বাসই

আটকে আছে এনার লাশে ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

তবে একটা খটকা আছে কোথায় এনার ঢাল-তরোয়াল !

না হয় লোকটা যুদ্ধে গিয়ে মরল লড়ে, ওপড়ালো কী বাল ?

[ বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

ভূবনমোহিনী ( চলে যেতে থাকা বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

জঙ্গল-নেকড়ে ছিলেন না ইনি ; বিশ্ববিদ্যালয়ে

সিংহীদের পাল এক গর্জনে এনার আওতায় আসলেও

আমিই ছিলুম এঁর নিজস্ব সিংহিনী, কথাটা রিপিট করি–

এখনো আমার লোমে আছে এঁর প্রেমসিক্ত লালা

তাহলে পাব না কেন জিভটুকু আমি ?

এঁর জিভ আমারই দ্বারা প্রভাবিত ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, বৃদ্ধদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

অনেক করেও একে জালে-ফাঁদে ফাঁসানো গেল না !

মেয়েরা ফাঁসালো একে, তার কোনো রুলবুক হয়তো বা হবে ;

এরকম রুলবুক তৈরি করতে পারত হেডকোয়ার্টার ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

চিত্রাঙ্গদা ( সবায়ের দিকে এক-এক করে তাকিয়ে ) ।।

যখনই দুঃখ গ্লানি ক্ষোভ দ্বেষে যুঝেছে লোকটা

এসেছে আমার কাছে, আমাদের কাছে ; চিত্রাঙ্গদা নাম নিয়ে

যে গেছে এনার কাছে ইনি তাকে হাতির তরল মস্তিসহ

রাতভর ডলেমলেছেন । আমি এঁর লিঙ্গটুকু নিতে চাই ।

আমাদের প্রেমের চত্ত্বরে ঠাঁই হবে ; পূজার্চনা দেব রোজ ।

এঁর লিঙ্গ আমারই দ্বারা প্রভাবিত ।

[ লিঙ্গ কাটতে ঝোঁকে । বৃদ্ধদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, চিত্রাঙ্গদার উদ্দেশে ) ।।

নিচ্ছ যদি বীর্য নিও

ঘাম পাবে না নাম পাবে না

অন্য বাবুর সঙ্গে মিশেল

করলে কিন্তু ভাগ পাবে না

এর বীর্য তুলনাহীন

বংশবিহীন দুকূলহীন ।

[ নিজেরা আপসে ফিসফিস আলোচনা করেন বৃদ্ধেরা ]

বলেছিল বটে এর কথা মহাকরণের সেই ভৌগলিক

সাতবাষ্টে তেলচিটে টাকার বাণ্ডিল নিতে-নিতে ।

আউলবাবু ( বৃদ্ধদলের উদ্দেশে, নাচতে-নাচতে ) ।।

মোটেই আমরা ভেড়ুয়া নই আমরা হলাম সেবকদেশি

বইপত্র দেয়াললিখন দেখতে পারেন আমরা কেমন

গুরুবাবা চিন্তা করেন ভাবের ঘরে লাগিয়ে এসি

মাঙনা আমরা কাজ করি না যখন যিনি তখন তেমন ।

[বৃদ্ধদলের প্রস্হান । বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, চিত্রাঙ্গদার উদ্দেশে ) ।।

ভিনশহরে দেশ-বিদেশে

ভাষার বীর্য ভাষায় মিশে

লিঙ্গ এনার একলেকটিক

চলবে না তা পুজোর ঘরে

দশক-দশক ওসব ক্লিশে

বাক-তাড়ুয়ার ঠিক-বেঠিক ।

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

সন্দেহ যে বুকের পাটা কি এর পেটালোহা যুদ্ধার মতন ?

দেখলে তো মনে হয় রোদে পোড়া খ্যাংরাটে চাষি

লাশটাকে দেখেও তো মনে হচ্ছে ছাতাপড়া বাসি ।

[ বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

চিত্রাঙ্গদা ( সকলের উদ্দেশে ) ।।

আরে ছাড়ো তোমাদের তর্ক । মনে হয়

জোয়ান উন্মত্ত হাতি রসে এলে কতটা উন্মাদ

হতে পারে, কোনোই ধারনা নেই তার

কেবল যোনির শান্তি তাকে প্রভাবিত করে দেবে ;

আমরাও ওভাবেই প্রভাবিত করেছি এনাকে ।

এঁর লিঙ্গ আমাদের দ্বারা প্রভাবিত ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, বৃদ্ধদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

চুলোয়-যাওয়া মানুষটা কি সত্যিকারে যোদ্ধা ?

অর্জুন প্রতাপাদিত্য নাকি সেই পোর্তুগিজ রোদ্দা ?

প্রতাপাদিত্যের মতো মরে গেল খাঁচায় সফরে দরবারে ;

ভাবতে পারিনি হবে লাশটার দাবিদার এতজন নারী !

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রস্হান ]

ক্যারল নোভাক ( ক্রুদ্ধভাবে মাথার সোনালি চুল ঝাঁকিয়ে ) ।।

তোমরা ভেবেছ বুঝি আমার কোনও দাবি নেই !

আমি এঁকে মাদকের যৌনতার যাবতীয় নিষিদ্ধের সাথে

করিয়েছি পরিচয় ; যাকে ইনি পতনের পাঁক ভেবে ছিলেন চিন্তিত

আমি ওঁকে সেই স্বর্গে নিয়ে গেছি । অন্ত্র পাকস্হলি ফুসফুস

আমার সংগ্রহে নিয়ে যেতে চাই ; নীলকন্ঠ থাকবে বয়ামে

অতিথিরা এলে দেখবেন অচেনাকে ভালোবাসা কাকে বলে

বিদেশি প্রভাবে আমি প্রভাবিত করেছি এনাকে ।

বিশ্বাস না হয় যদি আউলবাবুর কাছে জেনে নিতে পারো ।

বৃদ্ধদল ( কোরাস, ক্যারলের উদ্দেশে ) ।।

পাঁক নিবি তো পাঁকই নে না

নিষেধগুলো পতনগুলো

চাইলে কি হয় লেনা-দেনা

আঠা তো সব পোস্ত কুঁড়ির

তোর তাতে কী বল অবদান ?

নোস তো তুই রেডিন্ডিয়ান !

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

না বাবা না, আমি ওনার ওসব জিনিস দেখতে যাব কেন ?

শুধুই খপর দেয়া আমার কাজের মধ্যে পড়ে ।

মনে হয় এইবার মানেমানে কেটে পড়াটাই ঠিক হবে ।

[ বৃদ্ধদলের প্রস্হান । বৃদ্ধাদলের প্রবেশ । ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, ক্যারলের উদ্দেশে ) ।।

ববাম গো তোর বহুজাতিক;

যা ভাসবে তার পতন কোথায়

জোড় বাঁধলে স্বর্গ দেখিস

মাদক নেবার মজায় বোধ হয়

বড্ডো তোদের পতন নিয়ে

চুল-গামানো ফোকাস-বাতিক ।

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে নাচতে ) ।।

যুদ্ধ করে মরবে লোকে এ-কথা তো সবাই জানে !

চোকার যা তা চুকেই গেছে, এখন একে লোপাট করো দিকি

আস্ত কিংবা টুকরো করে সরাও একে আঁস্তাকুড়ে

তারপর তো গপ্পো বুনে নথিবাবা লিখবে পুঁথি ।

ক্যারল নোভাক ( সবায়ের উদ্দেশে ) ।।

জিরাফের উঁচু-মাথা, সাদা ভাল্লিকের তুষারের শুভ্রতায়

একা-একা গর্বোদ্ধত শিকারের খেলা

গোরিলার আদিগন্ধ বুক থাবড়ানো

তোমাদের রাজনীতি-সংস্কৃতির নয়

স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে নেশাগ্রস্ত আমিই দিয়েছি

সেসব বিদেশি আরণ্যকতার হাল-হকিকত

বিশ্বাস না হলে এঁকে লাশকাটা ঘরে ফেলে কেটেকুটে দ্যাখো

এঁর অন্ত্র আমারই দ্বারা প্রভাবিত

ফুসফুসে আমারই ঘনিষ্ঠ প্রভাব

পাকস্হলিতেও পাবে প্রভাব আমার ।

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, বৃদ্ধাদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, বৃদ্ধদলের উদ্দেশে ) ।।

তা না হয় হল কিন্তু শেষকালে কী হল ?

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

কী করে শিখল যুদ্ধ প্রেমিক প্রবর পচামড়া ?

মেটিং কলও দেখি হয়ে গেল যুদ্ধ-হুঙ্কার !

[ বৃদ্ধদল ও বৃদ্ধাদলের প্রস্হান । ]

অবন্তিকা ( শান্ত কন্ঠে ) ।।

তোমাদের যার যা নেবার কেটেকুটে নিয়ে যাও

অবশেষ যা থাকবে তা আমার, কেননা এ-যুবা চিরকাল

ঠকিয়েছে ভুলভাল কথা বলে অস্তি-নাস্তি করেছে ভণ্ডুল–

শেয়াল শকুন কিংবা হাঙরের মুখে এর অবশেষ দিলে

তবেই সোয়াস্তি পাবে হাড়কাটা গলি ।

[ বৃদ্ধদলের প্রবেশ । ]

বৃদ্ধদল ( কোরাস, অবন্তিকার উদ্দেশে ) ।।

কে বললে তুই শান্তি পাবি

অস্তি-নাস্তি ঘূর্ণিতে

পাবার হলে আগেই পেতিস

যখন প্রেমের দাম নিতে

ঝাঁপাই ঝুড়ে গুণছ খাবি

শরৎ বর্ষা আর শীতে ।

[  বৃদ্ধদলের প্রস্হান ও বৃদ্ধাদলের প্রবেশ । ]

বৃদ্ধাদল ( কোরাস, অবন্তিকার উদ্দেশে ) ।।

কেন এঁটো লাশ নেবে শেয়াল-শকুন

ফেলে গেছে যাকে বেওয়ারিশ

তোদের ভাষার চামুকুন,

হতেই পারে না এ হাঙরের ডিশ

দ্যাখ যুদ্ধক্ষেত্র চেড়ে বেপাত্তা সবাই

রাজার কোঁচড়ে কিংবা রানির আঁচলে

ব্যাঙরা এ-দল ছেড়ে গিয়েছে ও-দলে,

ইংরেজের হাতে-গড়া ব্যাঙ ওরা

টিভি দপতরে গিয়ে বাতেলা ঝাড়ছে ঘাড় নেড়ে ।

আউলবাবু ( স্বগতসংলাপ, নাচতে-নাচতে ) ।।

এ তো দেখছি কিংবদন্তি মেতিং গেম থেকে ফিরে

আলফা পুরুষ টেসটোসটেরনে টানে যদিও জানতুম

যাই বাবা কেটে পড়ি নথিবাবাদের দপতরে ।

( কলম ও ডায়রি ঝোলায় পুরে দৌড়ে পালায় আউলবাবু, নাচতে-নাচতে । )

[ ধুলিকণাদের ঝড় ফিরে আসে আরো বেগে ; পুরুষের শবটিকে ঘিরে

রঙিন ঘূর্ণির নৃত্যে সমবেত যুবতীকে চোখ ঢাকা দিতে বাধ্য করে ।

শবটির চারিধারে বসে পড়ে তারা । ঝড় থামে ।

যুবতীরা চোখ খোলে ঝিরিঝিরি নম্র বাজনায় । সকলেই ঝুঁকে পড়ে

চিৎকার কোরে পুরুষের নির্ধারিত অঙ্গগুলো দেখতে না পেয়ে

ওপরে দুহাত তুলে যুবতীরা হাহুতাশ করে…

নেপথ্যে সরোদে তিলক কামোদ রাগে অবরোহ শোনা যায় ]

কুলসুম  ( উঠে দাঁড়ায় )।।

এ কি ? কে এই পুরুষ ? হাত দেখছি না ! নিশ্চই নিয়েছ কেউ ।

নন্দিতা ( উঠে দাঁড়ায় ) ।।

সত্যি তো ! ঠোঁট দেখছি না ? ওফ কী বিভৎস মুখ !

কী হবে তাহলে ? গর্ভে ওর কুলবীজ থেকে গেল–

পরের প্রজন্মগুলো চলে গেল ওর আওতায় !

ভূবনমোহিনী  ( উঠে দাঁড়ায় )।।

হাঁ-মুখে জিভও নেই ; দুর্গন্ধিত পোকারা চলছে !

আমারও জরায়ুতে ওর ধাতুরস গড়ছে সন্তান জানি ।

চিত্রাঙ্গদা ( উঠে দাঁড়ায় )।।

এ-সব লুচ্চা প্রেমিকদের শেষকালে এই দশা কতোই দেখেছি,

সে-কথা ভেবেই আমি ওর জনন-ইন্দ্রিয় ভাবলুম পাবো ; কে জানতো

ওই মাংসখণ্ডটাও জালজোচ্চুরির বীজে ভরা !

প্রভাবের বীজ ফেলে চলে গেছে সবকটি প্রেমিকার দেহে ।

ক্যারল নোভাক ( উঠে দাঁড়ায় )।।

ফুসফুস পাকস্হলি অন্ত্র বৃক্ক কিছুই তো নেই ; বুক থেকে তলপেট

খাঁ-খাঁ করছে দেখছি । সন্দেহে ভুগছি এই ভেবে, ছিল কি কখনও

নাকি সব মাদকের ভ্রমে গড়া ছবিগুলো ভেঙেছে লোকটা চুপিসাড়ে

আমাদের সবাইকে নিজের নাস্তিকজালে ফেলে রেখে সটকে পড়েছে !

উল্টে আমাকেই প্রভাবিত করে গেল

গর্ভে রেখে চলে গেল নিজের বিজয়ী ঝলকানি ।

অবন্তিকা ( উঠে দাঁড়ায় )।।

জানতুম, জানতুম, মরেও ঠকাবে এই লোক ;

পুরো প্রকৃতিকে, মেঘ রোদ ঝড় রঙসুদ্ধ দখল করেছে

ভাষাকে লাগাতো কাজে যখন তরুণ আর ডাকাবুকো ছিল

শব্দ-বাক্যে ফাঁদ পেতে আমাদের অযৌক্তিক আত্মীয় করেছে

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক, ইরর‌্যাশানাল সম্পর্কের মনোমুগ্ধকর টোপ

উফ যা উপেক্ষা করা ছিল অসম্ভব ।

প্রভাব রেখে গেল শরীরে আমাদের । অক্ষরের সন্তানেরা,

তারা নিশ্চয় এর যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে আঘাত হানবে মনোমত ।

[ অসহায় তরুণীরা মৃতদেহ ঘিরে বসে পড়ে । ঠিক তখনিই ঝড়

পুনর্বার আগুনের ধুলো নিয়ে দৃশ্যকেন্দ্রে আবির্ভূত হয় ;

টের পাওয়া যায় না কী ঘটছে লাশটিকে ঘিরে,

ছেয়ে যায় চারিদিক দুচোখ ধাঁধানো ঘন নীলাভ আলোয় ;

দৃশ্যকেন্দ্রে শ্রীমন্তিনী আবির্ভূত হন, হলুদ টপ ও জিন্স-পরা । ]

শ্রীমন্তিনী ।।

কিছুই পাইনি আমি এই পুরুষের কাছ থেকে

যদিও আমিও তোমাদের মত এর ভালোবাসা পেতে কত

দিন রাত্রি সপ্তাহ বছর মাস চেষ্টা করে গেছি

তবে জানি আমি এঁর মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি কোষে

শব্দ-বাক্য চিহ্ণ-ছবি হয়ে আছি রেমব্রাঁর ইহুদি দম্পতি

যেভাবে রয়েছি আমি অজন্তার মোহিনী  ম্যুরালে

কোণারক খাজুরাহো মহাবলিপুরমের সম্ভ্রান্ত অর্জুনে

চিনের পোড়ানো মাটি-যোদ্ধাদের রহস্যতে মিশে

সান্তো দোমিঙ্গোর সিংহে ইরানের আর্দাবেল জাজিম-বুনোটে

জ্যাকসন পোলকের একত্রিশে আর ভ্যান গঘের কেদারায় ।

দেখতে পাচ্ছ না ? তোমাদের সবকিচু দিয়ে দিয়েছেন ;

কী করবে মৃতদেহ থেকে মাত্র তোমার প্রণয়ে তৃপ্ত অঙ্গখানা নিয়ে ?

ঠিক করে চেয়ে দ্যাখো প্রতিটি অঙ্গই এঁর দেহে বর্তমান ।

এনার শবটি নিয়ে আমরা সবাই মিলে চলো এক উৎসব করি

জীবনের যাপনের বিজয়ের মহা-উৎসব ।

কুলসুম ।।

ঠিকই বলেছ তুমি ; ভালোবাসাবাসি নিয়ে উৎসব করি ।

চিত্রাঙ্গদা ।।

মনে হয় আমরাও উৎসবে মাতি সকলেই ।

ক্যারল নোভাক ।।

চলুন তাহলে । মৃতদেহ ঘিরে সমবেত উৎসব হোক ।

[ আরেকবার ঝড় ওঠে, এইবার সাতরঙা ঝড় । যুবতীরা

সকলে একত্রে শবদেহটিকে তুলে অন্তরালে চলে যান ।

আড়ালে বাজতে থাকে মৃদু ইগর স্ত্রাভিন্সকির কনচের্তো বেহালায় ;

শোনা যায় যুবতীগণের উল্লাস—

দৃশ্যকেন্দ্রে আরো বেশি আলোকিত হয়ে ওঠে রঙের মিশ্রণ । ]

( রচনাকাল : সেপ্টেম্বর-নভেম্বর ২০১


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন