শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১

মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস সম্পর্কে সুরজিৎ সেন-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গৌতম সেনগুপ্ত

 

মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস সম্পর্কে সুরজিৎ সেন-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গৌতম সেনগুপ্ত গৌতম সেনগুপ্ত: মলয় কী এমন লেখক যে ওঁর লেখা পড়তে হবে ? মানে কেন পড়ব ? সুরজিৎ সেন: কী পড়ব, কেন পড়ব বা পড়ব না --- এটা পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর অমুক জিনিস পড়তেই হবে, না পড়লে চলবে না --- এটা মডার্নিজমের সমস্যা। ইচ্ছে হলে পড়বেন, না হলে পড়বেন না।আর তাছাড়া আমি তো বাংলা সাহিত্যের জেলা-কমিটির মেম্বার নই যে গাইডলাইন অনুযায়ী ভালো-খারাপ বলতে না পারলে, আমায় কন্ট্রোল কমিশানের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তার চেয়ে একটা গল্প বলি শুনুন, দীপকদা, মানে দীপক মজুমদার, সমাজের প্রান্তবাসী অর্থাৎ মার্জিনালদের কথা বলতে গিয়ে আমায় গল্পটা বলেন। গল্পটা উনি শুনেছিলেন প্যারিসের এক ভবঘুরের কাছ থেকে। গল্পটা এরকম। দেবদূত কাথকাদ একদিন আকাশের গলিঘুঁজি পেরিয়ে, টাল খেয়ে, টপকে একটা আকাশছোঁয়া বাড়ির চুড়োয় গিয়ে দাঁড়াল। তারপর লাফ দিল নিচের অস্পষ্ট পৃথিবীর দিকে। নিচের পৃথিবী থেকে ভেসে এল অসংখ্য হাততালি, সেই সব দর্শকদের যারা ভেবেছিল এটা আত্মহত্যা। কাথকাদ ওই হাততালিকে অভিনন্দন বলে ভুল ভেবেছিল। এর পর সে আকাশচুড়ো থেকে লাফ দেয়াটাকে রীতিমত অভ্যাসে পরিণত করে ফেলল। ব্যাপারটা বুঝে শহরের মেয়র আঁতকে উঠলেন। এ-ধরণের জিনিস যদি শিশুরা নকল করতে শুরু করে ? কাথকাদকে গ্রেপ্তার করা হল। একটা দমবন্ধ-করা ঘরে রিসেপশানিস্টরা তাকে সেই চেয়ার এগিয়ে দিল, যেটা তার ডানা দুটো রাখার পক্ষে উপযুক্ত নকশায় তৈরি নয়। ইতিমধ্যে মেয়র ও শহরের অন্যান্য কর্তাবাবারা বিচার করে রায় দিল যে, কাথকাদ এক মহা চালিয়াত, তার ডানা দুটো আসলে তার পঙ্গুতারই নিদর্শন। সেই আত্মধিক্কার থেকেই লোকের নজর কাড়ার জন্যে সে এইসব কসরৎ দেখায়। সদ্ধান্ত হল: কাথকাদের গন্ডগোল আছে। ছয়ের দশকের শুরুতে মলয় কাথকাদের মতই লাফ মারেন বাংলা সাহিত্যের পৃথিবীর দিকে। ওই দশকের মাঝামাঝি বাংলা সাহিত্যের মেয়র ও অন্যান্য কর্তাবাবাদের কলকাঙিতে 'অশ্লীল' কবিতা লেখার দায়ে গ্রেপ্তার হন। এবং সিদ্ধান্ত হয় মলয়ের গন্ডগোল আছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যে. ছয়ের দশকের মাঝামাঝি, বাংলা সাহিত্য তখন যথেষ্ট সমৃদ্ধ [ অবশ্য জীবনানন্দের উপন্যাসের কথা তখনও জানি না, কমলবাবুর উপন্যাস বা আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস তখনও লেখা হয়নি], বামপন্হী আন্দোলন তখন আন্তর্জাতিক তত্ত্বের কচকচিতে ভর্তি, শিল্প-সাহিত্য তখন ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদের নিত্যনতুন থিয়রির চর্বিতচর্বণ। সব মিলিয়ে ভাবখানা এরকম, যে, পশ্চিমবাংলা মননের দিক দিয়ে ভারতের সবচেয়ে আধুনিক রাজ্য, ওদিকে সত্যজিৎবাবুরও রমরমা। কিন্তু মলয়ের গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে বোঝা গেল সমস্ত ব্যাপারটা কী সাংঘাতিক ভিকটোরিয়ান ছিল। আধুনিকতা-ফতা সব ফালতু। অনেকদিন আগে মলয়ের একটা কথা পড়েছিলাম যে, "আধুনিকতা এক ধ্রুপদী জোচ্চোর"। এর মানে আজ বুঝতে পারি। এ হল ইউরোপিয় এনলাইটেনমেন্ট প্রসূত আধুনিকতা--- যা দিয়ে শাসকপ্রভূদের কলোনিমনন তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। যাতে প্রভূদের শিখিয়ে দেয়া গাইডলাইনের বাইরে কেউ কিছু না ভাবে। মলয় বাংলা ভাষায় লেখালিখির মধ্য দিয়ে ব্যাপারটায় একটা টোকা দেন। তাতেই হৈ হৈ ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত নকশালরা এই ব্যাপারটিকে ধাক্কা দেয়। পরে অবশ্য তারা আরেক ধরণের ভিকটোরিয়ানিজমের জন্ম দেয়। যা হোক, মলয় যে তখন থেকেই মেইনস্ট্রিমের বাইরেই রয়ে গেছেন --- মানে বুঝতেই পারছেন ছয়ের দশকের মেইনস্ট্রিম আর নয়ের দশকের মেইনস্ট্রিম --- এক নয়। এই জন্যেই মলয়ের লেখা পড়া দরকার। গৌতম সেনগুপ্ত: এত মেটাফরে কথা বললে তো খুব মুশকিল। মলয়ের গল্প-উপন্যাসের বৈশিষ্টটা কী ? যেখান থেকে ওই লাফ-টাফ বা কাথকাদের কথা আসছে। সুরজিৎ সেন: মেটাফরেই তো কথা বলতে হবে। জানেন না কোথায় বাস করছি ? যাকগে, যা বলছিলুম, শাসকপ্রভূরা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়ে গেছেন ভাষা-কাঙামো, পদ্ধতি, বিন্যাস। এই দিয়েই যাবতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি। মলয় গল্প-উপন্যাসে শুরু থেকেই ওই মাস্টারদের তৈরি ল্যাঙ্গোয়েজ-জেল ব্রেক করে বেরোবার চেষ্টা করেছেন। কারণ লেখালিখির শুরুতেই যে ভাবেই হোক না কেন, বুঝতে পেরেছিলেন মলয়, যে, নেহেরুভিয়ান সরকারি খরচে যে বিশাল কেরানি-আমলা সমাজটির বাড়বাড়ন্ত, তাদের জন্যে উপনিবেশের ডিমটি ফেটে বেরিয়ে পড়েছেন কমার্শিয়াল কথাসাহিত্যিকরা, আধুনিকতার দুরারোগ্য ব্যাধি হিসেবে।এই মানচিত্রের বাইরে মলয় চলে যেতে পেরেছেন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে মলয় কোনও নবদিগন্ত উন্মোচন করেছেন। কিন্তু কতকগুলো ব্যাপার আছে। লেখার ব্যাপারে মলয় কাউকে পরোয়া করেন না, এমনকি নিজেকেও নয়। লেখার মধ্যে দিয়ে তত্ত্ব বিক্রি করেন না, আর প্রগতিশীল বামপন্হী হবার লোভ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। মলয় বোধহয় বাংলা ভাষার একমাত্র লেখক যাঁর বইয়ের কোনো কপিরাইট থাকে না। এটা উনি করতে পেরেছেন তার কারণ গল্প-কবিতা-উপন্যাস লিখে কোনওদিন কোনও লেখক-প্রতিষ্ঠা চাননি--- মানে লেখক নিজেই একটি ব্র্যান্ড নেম, তাঁর লেখার প্যাকেজিং, রিভিউ ডিজাইন, সেলেবিলিটি, মিডিয়া হাইপ--- মলয় এসব চাননি। সোজা কথায়, লিখে বাড়ি গাড়ি বউ রাঁঢ় ট্রাকটর এসব করতে চাননি। এরপর প্রশ্ন উঠবে, চাইলেই কি পেতেন ? জানি না। খুব বড় সরকারি চাকরি করতেন --- এসব নিয়ে যাতে ভাবতে না হয়। সেই মেধা, যোগ্যতা ওঁর ছিল। আর এই দুহাজার সালেও তো বাংলা গল্প-উপন্যাসের পাঠক হিসেবে ৬০ পেরিয়ে-যাওয়া মলয়ের উপরউ ভরসা করে আছি। অথচ আমি চাই আমার বয়সের (৩৮/৩৯) কোনও লেখকের উপর ভরসা করতে। পারছি কই ? কেউ তো নজরে পড়ছে না। গৌতম সেনগুপ্ত: এ তো গেল মলয়ের গদ্য ইন জেনারাল, কিন্তু 'নামগন্ধ'টা নিয়ে আলাদা করে… সুরজিৎ সেন: মলয়ের প্রথম উপন্যাস 'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস', দ্বিতীয় উপন্যাস 'জলাঞ্জলি', তৃতীয় 'নামগন্ধ'--- একটা জার্নি 'ডুবজলে' শুরু হয়ে ভায়া 'জলাঞ্জলি' শেষ হচ্ছে 'নামগন্ধ'-এ। কিসের জার্নি ? না, অরিন্দম বলে একটি ছেলে খুব বড় সরকারি চাকরি করে পাটনায়, পাটনা থেকে বদলি হয়ে আসছে কলকাতায়। অবশ্য এর মানে এই নয় যে উপন্যাসগুলো আলাদা করে পড়া যাবে না। পড়া তো যাবেই; কারণ প্রতিটি উপন্যাসই স্বয়ংসম্পূর্ণ। অরিন্দম কলকাতায় আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের কথকতা শুরু হয়ে যায়। বালির ভোটবাগানে বজরং মার্কেটের (এশিয়ার বৃহত্তম স্ক্র্যাপ আয়রনের বাজার ) দখলদারির জন্যে একটা খুন দিয়ে উপন্যাসের শুরু। আর যা দলটি খুন করছে তাদের একজনের সবুজ টিশার্টে সাদা হরফে লাখা 'ভ্রূপল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে'। মলয় কিন্তু আমাদের চারপাশের ভায়োলেন্সটাকে সব সময় লিখছেন। আর এই উপন্যাসে রিয়েলিটি আর প্রতীকের একটা নকশা তৈরি করেছেন। রিয়েলিটি হল, আদিত্য বারিক, যে, পুলিশের এ এস আই-এর চাকরি পেয়েছে, 'ওর আদর্শ হল রুণু গুহনিয়োগী নামে একজন প্রাক্তন অফিসার, যদিও তার সঙ্গে আদিত্যর পরিচয় নেই, কিংবদন্তি শুনেছে, কাগজে পড়েছে, আদালতে গিয়ে দেখেছে সহকর্মীদের সঙ্গে, জয়ধ্বনি করেছে, যখন অযথা বিচার চলছিল লোকটার। জ্যোতি বসুর মতন কর্মজীবী মুখ্যমন্ত্রী ওব্দি রুণু স্যারের কদর করে পদোন্নতির ধাপ একের পর এক এগিয়ে দিয়েছিলেন ওনার দিকে'। ( নামগন্ধ পৃ ৫ )। আপনি তো জানেন রুণু গুহনিয়োগী কে ? কী ব্যাপার ? আর প্রতীকটা হল ওই 'ভ্রূপল্লবে...', আশা করি বুঝেছেন। এখনকার পশ্চিমবঙ্গের সার সত্যটি মলয় জানিয়েছেন এই ভাবে, 'এ এস আই-এর চাকরি পেয়ে নিজেকে সুসজ্জিত করে তোলার অভ্যাসে কিছুটা রদবদল করেছে ও, আদিত্য। এখন ও জনসনের বেবি পাউডার, বাচ্চাদের সাবান, শ্যাম্পু, শিশুদের ক্রিম আর অলিভ অয়েল ব্যবহার করে। আগেকার এক আই জি, এখন দুটো কারখানার মালিক, শিখিয়ে ছিলেন জীবনদর্শনটা। নিষ্পাপ থাকার নিজস্ব গন্ধ আছে, বুঝলে হে, পুলিশ অফিসারের উচিত সেই গন্ধটাকে সবচেয়ে আগে দখল করা। ফি বছর পুজোয় অধস্তন অফিসারদের জন্য শিশুদের ব্যবহার্য সাবান-পাউডার-ক্রিম-শ্যাম্পুর সারা বছরের কোটা উপহার পাবার ব্যবস্হা করে দিতেন উনি...। আদিত্যর এখনকার চাকরিটা মাঙনায় হয়নি। দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। বাড়ি বয়ে একজন প্যাংলা ডাকমাস্টার জানিয়ে গিয়েছিল কার সঙ্গে কখন দেখা করলে চাকরিটা হবে। ডাকমাস্টারহীন বাঙালিসমাজ ভাবা যায় না। এরা থানার জন্য টাকা তোলার অঞ্চলভিত্তিক ঠিকেদারি নেয়।পুলিশে ঢোকার আগে আদিত্য জানতোই না যা তথ্য আর সংস্কৃতির এরা বাঙালিজীবনে চাবিকাঠি' (নামগন্ধ পৃ ৭)। উপন্যাসের অন্যতম মহিলা চরিত্র খুশি, ভারতের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে যার বয়স পঞ্চাশ। খুশি তার নিজের দাদার বাড়ি চাকরানী হয়ে বন্দি। দাদা ভবেশ এখন গ্রামের রাজনীতির দন্ডমুন্ডের কর্তা। খুশির আজও বিয়ে হয়নি। প্রথম বিয়ের সম্বন্ধ হয় ১৯৭১ সালে, হবু বরের মুণ্ডহীন ধড় পাওয়া যায়--- সে নাকি নকশাল ছিল। দ্বিতীয় হবু বর সফল আড়তদার হঠাৎ পুড়ে মারা যায়। শেষ অবধি পূর্ব পরিচিত যিশু বিশ্বাস খুশির প্রেমে পড়ে তাকে দাদার হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে গণপ্রহারে মারা যায় গ্রামবাসীদের হাতে। খুশি যেন আমাদের ভারতবর্ষ। যারাই তাকে উদ্ধার করতে যায় তাদের কপালে বোধহয় অপঘাতে মৃত্যুই লেখা আছে। অরিন্দম বর্ণহিন্দু, আদিত্য নমশূদ্র, যিশু খ্রিস্টান । উপন্যাসের শুরুর খুনের পরেই আমরা দেখি ১৮/১৯ বছরের একটা ছেলেকে একদল লোক পিটিয়ে মেরে ফেলছে এবং তারপর 'ছেলেটা মরে গেছে নিশ্চয়। তবু ওকে পিটিয়ে যাচ্ছে লোকগুলো। মৃতদেহ পিটিয়ে তার জীবন্ত অতীতের সঙ্গে যোগাযোগের ভাষা খুঁজছে লোকগুলো। অরিন্দম পড়ে গেছে সেই ভাষাসন্ত্রাসের খপ্পরে'।(নামগন্ধ পৃ ৭)।আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীরাও কিন্তু এই ভাষাসন্ত্রাসের খপ্পরে পড়ে গেছি। ইংরেজরা লুটে-পুটে খেয়ে, ভাষার কিছু প্রণালিবদ্ধ কাঠামো অন্যান্য উচ্ছিষ্টের সঙ্গে আমাদের জন্য রেখে যায়।যেমন ইংরেজি Bitter Experience শব্দটির বাংলা হল 'তিক্ত অভিঞ্জতা' । মানে খুব খারাপ কিছু প্রত্যক্ষ বা অনুভব করা। অথচ আমাদের বাঙালি জিভে উচ্ছে নিম করলা সুক্তো--- এই সব তিক্ত স্বাদ বা অভিঞ্জতা খুবই উপাদেয়। যেহেতু সাহেবরা Bitter Experience বলতে খারাপ কিছু বোঝায়, তাই আমাদের ভাষাবিদরাও খারাপ কিছু বলতে 'তিক্ত অভিঞ্জতা'ই বুঝেছেন। ছোটগল্প-উপন্যাস বলতে কী বোঝায়, অক্সব্রিজসরবনের সাহেবরা যেমন-যেমন বলে গেছেন, আমাদের শিক্ষকরা বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়েছেন। আজ সেই মৃত ভাষাটিকে হাজার পিটিয়েও তার জীবন্ত অতীতের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে না। মলয় তাঁর লেখালিখির শুরু থেকেই এটা ধরতে পেরে সেটাকে ফাঁসিয়ে দেবার চেষ্টা করে গেছেন বরাবর। 'নামগন্ধ'ও তার ব্যতিক্রম নয়। আর রসবোধ--- যেটা বাংলা লেখালিখিতে ক্রমশ বিরল হয়ে এসেছে, সেটার একটা চমৎকার সূক্ষ্ম ব্যবহার মলয় করেছেন তাঁর উপন্যাসগুলোয়। এমনিতে মলয়ের লেখার কোনো মডেল নেই। চরিত্ররা নিজেরা নিজেদের গুরুত্বহীনতায় ভোগে, ভঙ্গুর, টাল-খাওয়া, পোস্টকলোনোয়াল মতদ্বন্দ্বের, জটিলতার, আলাপচারিতা--- এই হল মলয়ের লেখা। এই ভঙ্গীটা আমাদের ভাষায় নেই বললেই হয়। আর এই জায়গা থেকেই জমে যায় মলয়ের উপন্যাস। 'হিমঘরের পিওনটাও চড়া দামে বন্ড কেটেছে ইউনিট ম্যানেজারের চোখের সামনে। পিওনটা গ্রুপ থিয়েটার করে। ওদের নাটক দলটার নাম প্রতিবাদী সভা। একাডেমিতে নীলদর্পণে ভালো অভিনয় করেছিল'--- ( নামগন্ধ পৃ ৯৫ ) ক্লাস।এই হিমঘর---আলু চাষির দুর্দশা---আলু পচে যাওয়া---বামপন্হীদের বদমাইসি--- এই সব পাবেন 'নামগন্ধ' উপন্যাসে। সত্যিই একটা নিষিদ্ধ পশ্চিমবঙ্গের ছবি। আম কেমন খেতে সেটা শোনার চেয়ে খেয়ে দেখা ভালো--- সোজা কথা, উপন্যাসটা পড়ে ফেলুন।