সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

Poems of El Salvador poet Roque Dalton translated by Malay Roychoudhury

এল সালভাদর-এর কবি রোক দালতন-এর কবিতা ( ১৯৩৫ - ১৯৭৫ ) । অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী
তাঁর রাজনৈতিক দলের লোকেরা ঈর্ষাবশত তাঁকে খুন করেছিল
               
       
   
যোদ্ধার বিশ্রামের জায়গা   
মৃতরা প্রতিদিন অস্হির হয়ে পড়ছে ।

আগে তারা সরল ছিল
আমরা শক্তডাঁটি ফুল দিতুম
দীর্ঘ তালিকায় তাদের নামকীর্তন করতুম
দেশের সমাধির
অসাধারণ ছায়ারদল
রাক্ষুসে শ্বেতপাথর ।                   

শবদেহগুলো ভবিষ্যতের জন্য সই করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে
সার বাঁধার জন্য ফিরে গেছে তারা
আর আমাদের পুরোনো সঙ্গীতের তালে কুচকাওয়াজ করেছে ।

কিন্তু আর নয়
মৃতেরা
বদলে গেছে ।

তারা সবাই বিদ্রূপাত্মক হয়ে গেছে
নানা প্রশ্ন তোলে ।
আমার মনে হয় তারা বুঝতে আরম্ভ করেছে যে
তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ !

আক্রোশ
স্বদেশ তোমার অস্তিত্ব নেই
তুমি স্রেফ আমার একটা খারাপ আকার
শত্রুদের শব্দ আমি বিশ্বাস করতুম

তোমাকে বিশ্বাস করার আগে তুমি এতো ক্ষুদ্র ছিলে
তুমি উত্তর বা দক্ষিণ
কোথাও পৌঁছোতে না
কিন্তু এখন আমি জানি তোমার অস্তিত্ব নেই
আর মনে হয় না কেউ তোমাকে চায়
আমি কোনো মাকে তোমার কথা বলতে শুনিনি

তা আমাকে আনন্দ দেয়
কেননা তা থেকে প্রমাণ হয় যে আমি একটা দেশ ভেবে নিয়েছি
যদিও তার জন্য আমি কোনো সংস্হায় গিয়ে আটক হবো

তারপর তোমার তীরে আমি এক ছোটোখাটো দেবতা

( আমি বলতে চাই : আমি একজন অনাবাসী
তুমি একজন অ-দেশ )

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সংস্হা
আমার দেশের রাষ্ট্রপতিকে
আজকাল বলা হয় কর্নেল ফিদেল সানচেজ হারনানদেজ
কিন্তু জেনারাল সোমোজা, নিকারাগুয়ার রাষ্টপতিও
আমার দেশের রাষ্ট্রপতি
আর জেনারাল স্ত্রোয়েসনের, প্যারাগুয়ের রাষ্ট্রপতি,
উনিও অনেকটা আমার দেশের রাষ্ট্রপতি, যদিও ততোটা নয়
যতোটা হণ্ডুরাসের রাষ্ট্রপতি,
জেনারাল লোপেজ আরেলানো, কিন্তু হাইতির রাষ্ট্রপতির 
চেয়ে খানিক বেশি,
মঁসিয় দুভালিয়ের ।
আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আমার দেশের বেশি রাষ্ট্রপতি
আমার নিজের দেশের রাষ্ট্রপতির চেয়ে,
যার নাম, আমি যেমন বলেছি, আজকাল
কর্নেল ফিদেল সানচেজ হারনানদেজ ।

ঝামেলার সন্ধানে
আমার প্রথম রাজনৈতিক গোপন-সভার রাতে বৃষ্টি পড়েছিল
আমার বৃষ্টিপথকে উদযাপন করেছিল চার
বা পাঁচজন চরিত্র সরাসরি গোয়ার পেইনটিঙ থেকে এসে
ঘরের ভেতরে সকলকেই একটু অবসাদগ্রস্ত দেখাচ্ছিল
হয়তো নির্যাতন আর এমনকি আগামী দিনের যে অত্যাচারের
স্বপ্ন তারা দ্যাখে তার জন্য ।

সংঘের প্রতিষ্ঠাতারা আর হরতালকারীদের গলায়
এক ধরণের খসখসেভাব ছিল আর বলল যে আমার
একটা ছদ্মনাম নেয়া দরকার
যে আমাকে প্রতিমাসে পাঁচ ডলার করে দিতে হবে
যে আমরা প্রতি বুধবার মিলিত হবো 
আর এই যে আমার পড়াশুনা কেমন চলছে
আর এই যে আজকে আমরা একটা লেনিন-পুস্তিকা তৈরি করতে চলেছি
আর এই যে প্রতিবার দেখা হলেই কমরেড সম্ভাষণের প্রয়োজন নেই ।

যখন আমরা কথাবার্তা শেষ করলুম বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল
দেরি করে বাড়ি ফেরার কারণে মা বললেন বেরিয়ে যেতে ।

আমার গা থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়
সেই সব দিনগুলোয় আমা গা থেকে শোকের রঙের গন্ধ বেরোয়
যখন ফুলগুলো তাদের দামের দরুণ মুষড়ে পড়ে
খরার কারণে একজন গরিব মানুষের মারা যাবার মতন
এই নিশ্চয়তায় যে শিগগিরই বৃষ্টি পড়বে।

একটা ছোটো বিপর্যয়ের ইতিহাসের মতন আমার গা থেকে গন্ধ বেরোয়
যা সমস্ত শবগুলোকে সংগ্রহ করে রেখেছে
আমার গা থেকে বাসি বিশৃঙ্খলার মতন গন্ধ বেরোয় যা বিশ্বাসে পালটে গেছে
তার মহান শিখাকে শ্রদ্ধার মলম মাখানো হয়েছে ।

আমার গা থেকে বহুদূরের সমুদ্রের মতন গন্ধ বেরোয় যার অযুহাত আমি দিই না
এই দুর্গন্ধ থেকে আমি যৎসামান্য মারা যাবো
আমার গা থেকে অবহেলিত শোকসভার গন্ধ বেরোয়
ফ্যাকাশে ছায়ার মতন মৃত বাড়ির মতন ।

আমার গা থেকে লোহার ঘামের মতন গন্ধ বেরোয় ধুলোর মতন
চাঁদের আলোয় ঢাল নেমে গেছে
গোলোকধাঁধার মুখে ফেলে যাওয়া হাড়ের মতন
ভোরের বাষ্পে ।

আমার গা থেকে কেবল আমার পরিচিত পশুর গন্ধ বেরোয়
মখমলের ওপরে অজ্ঞানের মতন
আমার গা থেকে একজন বালকের খারাপ আঁকার গন্ধ বেরোয়
যেমন অনন্তকাল যার দিকে কেউ তাকাবে না ।

আমার গা থেকে গন্ধ বেরোয় যেন সবকিছুর জন্য বেশ দেরি হয়ে গেছে।

মাথাব্যথা সম্পর্কে
একজন সাম্যবাদী হওয়া বিরাট ব্যাপার
যদিও তা তোমাকে অনেক মাথাব্যথা দেয় ।
কেননা সাম্যবাদীদের মাথাব্যথাগুলো
ঐতিহাসিক, মানে
ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে তা কমবে না
যাবে যখন পৃথিবীতে স্বর্গোদ্যান সৃষ্টি করা হয়ে ।
ব্যাপারটা সেই রকমই ।

পুঁজিবাদের আমাদের মাথায় আঘাত লাগে
আর আমাদের মাথা কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয় ।
বিপ্লবের জন্য সংঘর্ষে আমাদের মাথা একটা দীর্ঘমেয়াদি বোমা ।
সমাজবাদ গড়ার জন্য
আমরা মাথা ব্যথার পরিকল্পনা করি
যা একে কমায় না -- বরং বিপরীত ।

সাম্যবাদ হবে, অন্যান্য ব্যাপারের মধ্যে
সূর্যের মাপের অ্যাসপিরিন ।

তোমার মতন
তোমার মতন আমি
ভালোবাসাকে ভালোবাসি, জীবন, মিষ্টি গন্ধ
সব জিনিসের, আকাশ-নীল
জানুয়ারি-দিনের উপত্যকা ।
আর আমার রক্ত গরম হয়ে যায়
আর আমি চোখ দিয়ে হাসি
যা অশ্রুর ফোঁটাগুলো জানে ।
আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীটা সুন্দর
আর দারিদ্র্য, রুটির মতন, সকলের জন্য ।
আর আমার শিরাগুলো আমাতেই ফুরোয় না
বরং সর্বসাধারণের রক্তে
যারা জীবনের সংঘর্ষ করে চলেছে,
ভালোবাসা,
ছোটোখাটো জিনিস,
উপত্যকা আর রুটি
সবায়ের কবিতা ।



                                           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন