শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

শ্রীমতী ঘিলু : আভাঁ গার্দ গদ্য


           শ্রীমতিঘিলু, কথাটা তোকে নিয়েই, তাই শুরু করি, অ্যাঁ ?

           ঘিলুতে ঘাপটি মেরে থাকে ভাবনা, নতুন নিমন চকচৌঁধ  ধারণা, আর ধারণা মানেই বিপদ, যেমন সৌর্ন্দয্য, জাস্ট ধারণা । কে ওসকায় নতুন নিমন ধারণা ঘিলুতে বুজকুড়ি কেটে ফেনাতে ? বাঞ্চোৎ পাগল না কি, মানুষেরা ? নিরাকার মানে কি ট্র্যান্সজেণ্ডার ? কিন্তু এই কলকাতা শহরটা নিজের নিজস্ব একটি দেশ, দেশের একটি দেশ, জাস্ট ধারণা, বিদেশে বসে মন কেমন করে, কলকাতা শহরের কোনো বিশেষ ব্যাপার নিয়ে, যেন সেটাই কলকাতা! কফিহাউস, গড়িয়াহাট, কষামাংস, ট্যাগোরগান, নাটোক, যাদবপুরের বিপ্লব, কত্তো ব্যাপার ! বাঞ্চোৎ পাগল নাকি, মানুষেরা ?

         মানুষ পুরানোকে মেনে নেয়, আর তা  খবর  হয়; আর খুব, নতুন মেনে নেয়া এবং পুরানো এটাও ব্যবহার করা হয়। বলা হয়, প্রতিটি গ্লাস জল তার নল থেকে আরেকটা কিডনি দিয়ে ছয়বার পাস করেছে আর মাংসের মাটি প্রতিটি স্ক্র্যাপকে টুকরো টুকরো করে পাথর করে ফেলেছে, লড়াই করেছে, খুঁড়ছে ;  শতাব্দী ধরে ভাঙ্গা হয়েছে। একটি নিখুঁত জগত পাবার ধান্দায়, তুই  তাদের হৃদয়, হা হা, হৃদয়টাও ঘিলু,  সেটা না থাকলে  মানুষ সবরকম সঙ্গম পারলেও, যৌনসঙ্গম পারে না।

        "আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতে চাই: মানুষ প্রেম এবং বিপ্লবের জন্য জন্মগ্রহণ করেছিল।" বলেছিলেন বুড়ো মার্কস । মানুষ পাগল না কি রে !  প্রতিটি চিত্তাকর্ষক চুমুতে লালা থাকবেই, ঘিলুর ঘাসলেট জ্বলছে, দুজনেই টের পাচ্ছে !  মাংসের সঙ্গে মাংসের যেমন যেমন ছোঁয়া তুই  দেখতে পাবি না। সাধারণত মানুষ হোক বা বেবুন, হাতের বা চার হাতের বা পায়ের,  বিশ্বাস নিজেদের শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটে । সিংহিনীর যোনি না শুঁকে সিংহ কখনও সঙ্গম করতে রাজি হয় না । কেন ? শালা, মানুষ নাকি ? আ্যাঁ । 

         তুই  বলছিস "আমি ঠিক আছি" "আমি ঠিক আছি" ! কিন্তু কখনও কখনও তুই যাকে সত্য বলে ভাবছিস তা একটা ধারণা । তুই যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করছিস তা তোর ঘিলুর ঘাসলেটে আসে আর তুই সন্দেহে ভুগবি যে ও কি আমাকে ভালোবাসে ? ব্যাস অবিশ্বাস করা আরম্ভ করে বিয়ে বা সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে চলে যা। তখন ভাববি, শালা মানুষ তো ভেঙে দেবার জন্যে জন্মেছিল । মানুষরা পাগল নাকি ! এই ভাবনার ঘাপটি-মারা বন্ধ করতে পারবি না। তখন তুই বুঝতে পারবি যে  এটা আসলে উত্তর নয়, এটা একটা প্রশ্ন। 

          এটা স্রেফ ঘিলুর ঘাসলেটের খেলা । মাংসদণ্ড  দাঁড়ায় কেন ? স্ত্রীমাংস ফুলে ওঠে কেন ? বুকের বোঁটায় কাঁটা দেয় কেন ? ঘাসলেটের কারণে, যার নাম রাসায়নিক ক্রিয়া । চিৎ হয়ে না শুলে শুক্রবীজগুলো দৌড়ুতে পারবে না, ঠিকমতন দৌড়ুতে না পারলে মাঝ রাস্তায় দম ফুরিয়ে যাবে । সিংহী জানে, বাঘিনী জানে, হায়েনানী জানে, বিড়ালনি জানে, মানুষীরা গুহার বাইরে নীলাকাশ দেখতে চেয়েছিল । ওরা কেউ কি বলে,  "আমি তোমাকে এভাবে সারা জীবন জড়িয়ে ধরে থাকতে  চাই, আর তাকে স্হাপত্যের স্থিরতা দিতে চাই।" রদাঁ, তুই ভাবছিস !

         ভাবনা ভাবো আর একে ওসকাও, তাকে ওসকাও, পোঁদে লাগো, লাগাও, ঘিলুতে জবরজং ভাবনার ফেনা তৈরি করো,  আর পচতে থাকলেই পাবলিককে বিলোও । প্রত্যেকেই তার লুকোনো অস্পষ্ট বিশ্বাসের মধ্যে অন্যের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পেলেও মনে করে যে তার পথ নিশ্চিতভাবে  অন্য সকলের থেকে আলাদা। ফলে, যুদ্ধ করাই একমাত্র উপায়, আর সেটা নোংরা। পরিষ্কার সাজানো যুদ্ধ হলেও তা গামবাটিয়া । শবের পাহাড়, পচা রক্তের শুকনো স্রোত, ভনভনে মাছি। গণকবরের সৌন্দর্য্য । বালিয়াড়ি । তোকে পালাতে হবে । ত্রাসের মুখে পড়লে তোকে হয় লড়তে হবে বা পালাতে হবে । 

          ভালোবাসা মানুষকে একে আরেকের কাছে কুৎসিত করে তুলবেই ।  সস্তা শট ট্রাই কর,  কম দামের চোট । সে নোংরা অনুভূতি বয়ে বেড়াতে হবে, কেউই নিজের মাংসের   স্মৃতি পছন্দ করে না  ।  অথচ তা সত্য না মিথ্যা জানে কেবল ঘিলুর ঘাসলেট । সুন্দর ভেবে তার দিকে চেয়ে থেকে আকৃষ্ট হয়; ঘুরে ঘুরে বেড়ায়,   তুই সুন্দর জিনিসের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিস আর যেন তোকে গড়ে নিয়ে গলিতে ছেড়ে দিয়ে গেছে ।  তোর আকৃতি বদলে গিয়েছিল, আর  কুৎসিত হয়ে গিয়েছিলিস। তুই মনে করিস যে, মানুষেরা ঈশ্বরের গুহ্যের সিংহদুয়ার দিয়ে ডানা মেলে আকাশ থেকে নেমে এসেছিল, উড়ন্ত কুমারী ডায়নোসরদের সঙ্গে । ঈশ্বর ট্র্যান্সজেন্ডার কেননা কেউ তাঁর জেণ্ডার জানে না ।

           কুমারীত্ব ! বাঞ্চোৎ ভারতীয়রা বিয়ে করার সময়ে ভাবে বউটা কুমারী হবে, প্রথম রাত্তিরে কোঁচড়ের ফিনফিনে পর্দা ছিঁড়ে রক্ত বেরোবে ! ঘিলুর ঘাসলেট ছাড়া আর কি, অ্যাঁ ?  মেয়েদের সম্পর্কে সবচেয়ে খারাপ ভাবনা মানুষ তৈরি করেছে ! পুরুযের বেলায় তা ভাবে না । কবে তৈরি হল ঘিলুর এই ঘাসলেট, কুমারীপুজো! বীরেনকেষ্টর চণ্ডীপাঠ শুনে শুনে তুই এখন বোর । মোবাইলে বাজছে, ইউ টিউবে বাজছে, রিকশাস্ট্যাণ্ডে বাজছে, টিভিতে দেখাচ্ছে ।  তোর বন্ধুদের একটা জমঘট আছে,  যারা কুমারীত্বকে ঐশ্বরিক  বলে মনে করে । আসলে এটা প্রেমিকের অবর্তমানে  সুযোগের অভাব। তুই মনে করিস যে এটা বেশ পছন্দসই বিষয় আর আলোচনা করলে মনের ভেতরে সতীচ্ছদ ছেঁড়ার আনন্দ পাবে। জাস্ট ঘিলু । বাঞ্চোৎ মানুষ নাকি পাগলক্ষ্যাপা !

          দেয়ালে দেয়ালে ভুল বানানে বিপ্লবের স্লোগান থাকতো । বিষ্টিতে আর অন্য দলের লাথিতে ধুয়ে গেছে । বাড়ির মালিকদের আনন্দ । যাক দেয়ালের কুমারীত্ব ফিরে এলো । কিন্তু নাঃ । বেচারার ঘিলুর ঘাসলেট, ভুল বানান নতুন দলরা বজায় রেখেছে । তুই একদিন জানলা গলিয়ে দলগুলোর সদর দপতরে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ ফেলে এসেছিলিস । ধপাস ধপাস, দুবার আওয়াজের পরেও দেয়ালগুলোয় যে কে সেই । বাঞ্চোৎ, পাগল নাকি মানুষেরা । পাগল নয়, পাগল নয়, তোরা স্তালিনের খাটের তলায় তৈরি পেচ্ছাপের পুকুরে ডুবে গিয়েছিলি । হায়,  পেচ্ছাপে ডুবে বিপ্লবীর ইন্তেকাল ! কেন হলো ? ঘিলুর ঘাসলেটের জন্য। অসংখ্য লুমপেন পয়দা হলো লুমপেন মাংস-মাংসীর যৌথ পরিশ্রমে । কলেজের পায়খানার দেয়ালেও বানান ভুল। কী আর করা যাবে ! কলকাতার জন্যে নসটালজিয়ায় তাও ক্রাইটেরিয়া ।

          অনেকের মনে হয় যে অপেক্ষা করা উচিত, যাতে  সম্পর্ক জোড়া লাগে। গেরুয়া আর সবুজ রাজনীতি কি জোড়া লাগবে ? তুই ওদের দেখলে, ওদের কথা শুনলে, ওরা জিতলে, ত্রাসে আক্রান্ত হোস । যারা মৃত্যুর বিষয়ে ধর্মীয় সান্ত্বনা দেয়   আর মৃত্যুর মানে পালটাতে চায়, স্বাভাবিক হিসাবে মৃত্যু নয়, তাদের জন্য মৃত্যু হল অশ্লীল রহস্য, চরম বিরক্তি, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কটা লাশ মর্গে গিয়ে ঘুমোলো তা নিয়ে ওরা ভাবে আর আনন্দ পায় । তোর মনে আছে তো ট্রেন ভরে ভরে মানুষ পালিয়ে আসছে? বাড়িগুলোর দেয়ালে, এমনকি দপতরের ভেতরের দেয়ালে অশ্লীল পরামর্শগুলো যারা লেখে, এমন লোকেদের ওপর পুলিশ এখনও কোনও নজর দেয় না। দেবে কেমন করে ! অশ্লীল গালাগাল দিতে দিতে ধানখেতের ওপর দিয়ে বউ-বাচ্চাদের পেছনে দৌড়েছিল ! 

            তুই একথাও বলছিলিস, হা হা, জয় মা কালী কলকাত্তাওয়ালি, যখন উন্নয়নের কাজে শ্রেণিভাগ মুছে যায়, আর সমস্ত উৎপাদন সমগ্র জাতির এক বিশাল সংস্থার হাতে থাকে, তখন জনগণের শক্তি তার রাজনৈতিক চরিত্র হারায় । হা হা। রাজনৈতিক ক্ষমতা, এক শ্রেণির আধিপত্য, অন্যের উপর অত্যাচার করার জন্য কাজ করে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করে কী হয়েছে তা দেখিয়ে দিয়েছে চোকসি, মোদি, মাল্যরা । যতোই যাই করো, কিছু মাংস-মাংসীর  অবদান লুটেরা-দানব পয়দা করবেই, তুই বলেছিলিস । সবই ঘিলুর ঘাসলেট । অনেক ভারতীয় জন্মায় সুইস ব্যাঙ্কের ভল্টে । পুচুৎ ।

           তুই বিশ্বাস করিস  মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে ;  সঙ্গীতকে, সেটা মানুষের মধ্যে দানবদের দমিয়ে রাখে, অধচ দানব-অসুর-ডাইনি সবই ঘিলুর ঘাসলেটে ফেনানো । তারপর বলেছিলিস, বেকার ব্যাকুল ব্যক্তির পক্ষে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা উপভোগ করা যে কি ব্যাপার তা তোর পক্ষে কল্পনা করা কঠিন। তুই বললি, সত্যিকারের স্বাধীনতা শুধুমাত্র এমনই হতে পারে যেখানে অন্যের দ্বারা কোনও ব্যক্তির শোষণ আর নিপীড়ন হয় না; যেখানে কোন বেকারত্ব নেই ; একজন লোক তার চাকরি হারানোর ভয়, তার বাড়ির আর তার ভাতকাপড় হারানোর ভয়ে বাঁচতে পারে না। শুধুমাত্র এমন একটি সমাজে ব্যক্তিগত এবং অন্য কোনও স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে সম্ভব । কিন্তু এই সমাজ শুধু ঘিলুর ঘাসলেটে পয়দা হয় । এই শুরু হলো বলে বিশ্বকর্মা পুজোর লাউডস্পিকার । 

         তুই মনে করিস, কৃতজ্ঞতা ব্যাপারটা কুকুরের ভোগা এক ধরণের অসুস্থতা।   মানবজাতিকে ধনী, মানে ভালো ব্রিডের কুকুর আর গরিব, মানে রাস্তার কুকুরে ভাগ করা হয় । এটা মজার, না। তুই চিরটাকাল নিজের ভালোবাসা উপভোগ করার চেয়ে অনেক বেশি  ঘৃণা উপভোগ করছিস। প্রেম একরকমের মেজাজ। ক্লান্তিকর।  বড্ডো দাবি  তোলে। ভালবাসা তোকে অপমান করে, কিন্তু ঘৃণা তোকে কষ্ট দেয়। তুই খুব সুন্দর, এটা অনেকসময়ে তোর একটা ব্যাথা ।  সৌম্যকান্তি যুবকদের দেখলে, সুন্দরী তরুণীদের দেখলে, যেমন ফিল্ম অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, তাদের দেখলে, তোর বুক ভয়ে ছাঁৎ করে ওঠে । কেন করে ? আসলে মনে-মনে তাদের ভাল্লাগে না, বানাওটি মনে হয়, ফালতু, নকল । ওদের কাজ সামনের লোকটাকে নির্বোধ করে তোলা, হীন করে তোলা, সস্তা আর খেলো করে তোলা । ওরা জাস্ট ঘিলুর ঘাসলেট ।

         তুই কি সত্যিই বিশ্বাস করিস যে ই ইতিহাসবিদরা  পুরুষ সম্পর্কে, নারীদের সম্পর্কে যা যা বলছেন - তা সত্য? তোর এই বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত যে এই ইতিহাস পুরুষরা লিখেছে, যারা দুর্ঘটনা ছাড়া সত্যকে কখনও সত্য বলে না। আজকে আমরা এমন সমাজে বাস করি যেখানে প্রচার মাধ্যম, , সরকার,  পেল্লাই কর্পোরেশন,  ধর্মীয় গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল মিলেমিশে জঘন্য বাস্তবতাগুলি তৈরি করে ।. তাই তুই কি তোর লেখায় জানিস, সত্য কি? কারণ মানুষ অত্যন্ত অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে খুব পরিশীলিত বিজ্ঞানীদের তৈরি ছদ্ম-বাস্তবতার সাথে বোমা হামলা করেছে । তুই তাদের উদ্দেশ্য অবিশ্বাস করিস নাকি তাদের ক্ষমতা অবিশ্বাস করিস ? ভেবে বলিস । মনে রাখিস যে এটা একটা বিস্ময়কর শক্তি: সমগ্র মহাবিশ্বের, ধ্বংসের সর্বজনীন সৃষ্টি । তোকে জানতে হবে। যারা ভয়ানক, ভয়ঙ্কর তারা প্রতারিত হয় না ।  রাষ্ট্র মাত্রেই ব্যক্তিকে ছেড়ে চলে যায় ।  শুধুমাত্র এই বিশৃঙ্খল অন্তর্দৃষ্টির শর্ত হলো  বিশ্বের একটি পূর্ণ উপলব্ধি, সমস্ত ধারণা বিবেচনা করে তুই জানা । তোর মধ্যে  একটা শীতল বিষণ্ণতা কাজ করে, তাতে তোর  নিজস্ব পূর্ণ অধিকার আছে।     

         তুই মনে করিস, ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে শুধু ভয়াবহ ঘিলুর রসায়নে  লুকিয়ে থাকতে পারিস । এ তো নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা । অথচ বয়স বাড়ার সঙ্গে তা  অভ্যাসের ব্যাপার  হয়ে ওঠে।   যদি তুই  নিজেকে খোঁচা দিয়ে তাকে কাটাতে চাস তবে ঘিলু  থেকে সেই দুশ্চিন্তা দূর হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে । শেষ পর্যন্ত তুই নিজেকে দুঃখ ভোগার জন্য অনুমতি দিয়ে ফেলবি । ভারতীয়রা  নিজের মতন দেখতে দেবী-দেবতা সৃষ্টি করেছিল । কেন ? বেদ লেখার সময়ে তারা ভীষণ সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয়ে  এটি করেছিল ।  কে তাদের দোষারোপ করতে পারে? তুই শুধু লিখতে চাস, মনের মতন লিখে যেতে চাস, আর কিছু চাইবার নেই । তাও কিন্তু ঘিলুর অপকম্মো । 

         তুই কখনও বুঝিসনি কেন  অভিশাপ, গালাগাল আর অপমান বেশির ভাগ সময়ে যৌনাঙ্গ আর যৌনকর্ম নিয়ে হয় । হৃৎস্পন্দনের মাংস তো  বিস্ময়কর আর তাতে থাকে সৌন্দর্য, আনন্দ আর পরিতোষ । যৌন অঙ্গগুলোর নাম কীভাবে ছুঁড়ে মারা হয়  এটা  অস্বীকার করা যায় না । হা মাংসময় প্রাণ, এই ছিল মানুষের পোকামাকড়ের মতন নিয়তি ! অথচ পোকামাকড়ের ধারণা করার দরকার হয় না, তারা ঘিলুর ঘাসলেটে ডোবে না । ধারণা হলো বোবা কন্ঠস্বর যা পোকার মতন মানুষের চামড়ায় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায় । ঘিলুর ঘাসলেট একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সামনে তোকে দাঁড় করায় : “ভাল মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে?”

        সাধারণ মানুষ কি ভাল হতে পারে,  যদি তারা অন্যের ক্ষতি না করে , বল তুই ? এটা ভুল প্রমাণিত। প্রতিদিন যে দুই মাসের বাচ্চা থেকে সত্তর বছরের বুড়িকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, সেই ধর্ষকগুলো তো সাধারণ মানুষ,  নয়কি ?  কী ঘটেছে যে শহরে গাঁয়ে ধর্ষকদের বাড়বাড়ন্ত ?এটাও ঘিলুর বজ্জাতি । সবাই  ভাল হতে চেষ্টা করে না । তবুও এটা অন্তর্নিহিত প্রশ্নগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  যদি অত্যাবশ্যক বৈশিষ্ট্যগুলির প্রয়োজন হয়, যেমন প্রাতিষ্ঠানিক বুদ্ধিমত্তা, তাহলে অনেক লোককে বাদ দেওয়া হবে - যেমন জ্ঞানীয় অক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিরা আজকের দিনে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না।রাজনীতিকদের চামচায় ছেয়ে গেছে চারিদিক, মূর্খের সমাজে তাদের বীর্যের দোলপূর্ণিমা । 

           তুই বলেছিলিস যে, তোর দেহের দুর্বল সুগন্ধ,  তোর রেশমি চুলের স্মৃতি আমার দুঃখ হয়ে দেখা দেবে,  দুঃখের কারণে মরতে পারব না, যদিও আপনি তা করতে পারেন বলে মনে হয়।  হৃদয় আসলে স্টপগ্যাপ বন্দোবস্ত নয়, যদিও কখনও কখনও আপনার বুকে তা আছড়ে ভেঙে পড়বে, আপনি সামলাতে হিমশিম খাবেন, অথচ আপনিই বলছেন যে সবই হলো ঘিলুর ঘাসলেট । দুঃখ সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে গেলেও টিমটিমে চিনচিনে দরদ ছেড়ে যায়, ঘায়ের দাগের মতন । এটা একমাত্র  উপায়। একদিন এমন আসে যখন আপনি আবার হাসেন, কিন্তু তা কি বিশ্বাসঘাতকতা নয় ?  আমি কিভাবে খুশি মনে সাহস যোগাড় করেন ?  তারপর আপনি নতুন অশ্রু ঝরাবেন,  কারণ আপনি একবার যেমনটি করেছিলেন তেমনভাবে তাকে মিস করবেন না ।  আপনার দুঃখ প্রকাশ করা হবে সেই প্রেমিকার মৃত্যু। দুঃখের একচেটিয়াপনা, যখন আপনি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন একা, ক্ষুব্ধ, এবং ভয়ানক। শব্দ আপনার ব্যথা প্রকাশ করতে গিয়ে ক্ষমতাহীন হয়ে যায়; আপনার কথাগুলো থেকে অন্যেরা কী বোঝে ?  স্রেফ বায়ু নাচ। ঘুরেফিরে সেই, মানুষ না পাগল রে !  তুই আস্তে আস্তে, পরিমিত পদক্ষেপ নিতে নিতে, বাতাসে ভাসানো তোর  রুপান্তরিত ছবি পাঠাবি। একটি দীর্ঘ, সাদা, গোলাপি  ব্রোকেড শাড়ির আঁচল উড়িয়ে । তারপর  কালো চুলে  ব্রাশ করবি ।

        তোর মনে হয়েছিল,  যে কারনগুলোর জন্য মানুষ কাজ করে সেই কারণগুলির উপর ভিত্তি করে পুরোনো ধারণা আকর্ষণীয় হলেও তাকে ত্যাগ করা যায় । তুই বিশ্বাস করিস যে,   খুব গরিব এবং খুব সুন্দর হতে হবে এই ধারণা  একটা নৈতিক ব্যর্থতা আবার তা এক হিসেবে পুরোনো দিনের  শৈল্পিক সাফল্য। রবীন্দ্রনাথ যে  প্রজন্মেই জন্মান না কেন,  ভাল কাজ করতেন,  কারণ তিনি একটি নোংরা ঘরের অন্ধকারে মারা যেতে অস্বীকার করতেন । উনি বর্তমান সূত্রগুলো বেছে নিতেন আর তাদের হাতে গোনা লোকেদের মেনে নিতে বাধ্য করতেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত তো বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে, শ্রেণিবিভাজক, তা জানতে পারেননি মাও সে তুঙ । রেড বুক আর কেউ পড়ে না, ছত্তিশগড়ের জঙ্গলেও পড়ে না । ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে ঘিলুর ঘাসলেট । হা বাঙালি, হা বাঙালি, হা বাঙালি । 

          তোর প্রশ্ন ছিল, “আচ্ছা, সাহিত্য কি একটা মাধ্যম ? কোন কাজের মাধ্যম ? এই মাধ্যমটা মোটেই ভাল নয় ।”  কিছু লোক যদি সাহিত্যকে সস্তা বুজরুকি মনে করে, তাহলে তার কোনও অযৌক্তিকতানেই। তুই তোর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করলি । বললি, "এটা সমস্ত  অর্জনের অবমাননাকারী, ভন্ডামি, স্থিতি অস্বীকারকারী, আইকনভাঙার খেলা, যা কোনও কার্যকর নিয়ম বা অনুক্রমের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে।  কেউ যদি বিংশ-একবিংশ  শতাব্দীকে বুঝতে চায়, তাকে মনে রাখতে হবে যে  সবসময় বর্বরতা একতা ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে চলেছে ।” কিছু বলার নেই । যে যার নিজের ভাবনা ভাবার অধিকারিণী । 

            আধুনিকায়নের মধ্যে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল খুনখারাপি, এবং এখনও একটি বড় জমঘটের সামনে খুনখারাপি ও সাফল্যের মধ্যে একটি সংযোগের অনুমতি দেওয়া হয়, প্রাথমিকভাবে অসংগঠিত সাম্রাজ্যবাদের আকারে । ভেবেছিলিস কখনও যে বিশ্বাসঘাতকরা তাদের বিশ্বাসঘাতকতার একটা তত্ব বানিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে ? আজকে তাদের নিবাস সেই আক্রমণাত্মক অশ্রুপন্থী মগজের মধ্যে,  যা কার্যত সমস্ত শিষ্যদের মাধ্যমে গড়িয়ে চলে, হা হা,  দলদাসদের জনপ্রিয় সংস্কৃতির গাড়ি। যে বিংশ শতাব্দী স্বাধীন ভারতে খুনখারাপি দিয়েই দেশটার আরম্ভ হয়েছিল সেখানে পয়সাঅলা মানে  উচ্চ সংস্কৃতির দাপট । আসলে নিম্নসংস্কৃতি বলে কিছু হয় না রে, তুই তো জানিস ।

         প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞতাকে পরিষ্কার স্লেট ভেবে ইউটোপিয়ার কথা ভাবেছিলিস ।  মানুষেরা ক্রমাগত ম্যানিপুলেশনের প্রচেষ্টা সাপেক্ষে এগিয়ে না পেছিয়ে চলেছে তা তুই নিজেই নির্ধারণ করিস, আমার কোনো বক্তব্য নেই এই ব্যাপারে । অপরাধী নিজের তত্ব ফাঁদে । কিন্তু  যা করতে চায় তা করতে ব্যর্থ হলে তাকে ধড়িবাজ  মনে হয়, ধড়িবাজ কবির সংখ্যা নির্ভর করে চেলাদের সংখ্যার ওপর । ম্যানিপ্যুলেটের, অনুমোদন সম্পর্কে এত যত্ন করে গড়ে তোলে, যাতে চেলারা তাকে শুভেচ্ছা ভেবে অনুপ্রাণিত হবে । তুই  কিভাবে এটা অস্বীকার করতে পারিস? 

           যখন তুই  উপলব্ধি করলি  যে তুই  অন্য কারো সাথে  জীবনের বাকি সময় কাটাতে চাস, তখন  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোর বাকি জীবন শুরু করতে চাইলি । তোর শরীরের কোনো অংশ সম্পর্কে গোপন  বা অশ্লীল কিছু মনে ছিল না। এখন, আমি স্বীকার করি যে কিছু অঙ্গভঙ্গি এবং কোণ রয়েছে যা লোকেদের ভালো দেখায়, যা তুই এড়াতে পারতিস।  যত বেশি তুই গণতন্ত্র নামের সিসটেম দেখিস  তত বেশি তাকে তুই  অপছন্দ করিস । বিপ্লব এসেও ফিরে গেছে দেশে দেশে, যেমন চীনদেশে, রাশিয়ায়, ভিয়েতনামে, কিউবায় । তুই যুগোস্লভিয়ার কোথায় থাকতিস রে ? এখন সেটা অন্য দেশ ? 

          নৈরাজ্যের ষড়যন্ত্র থেকে পালাতে চেষ্টা করছিস তুই । সমস্যা হলো যে পালাবার জন্যে ঘুরেফিরে সেই তো মুখের ভাষার আশ্রয় নিতে হচ্ছে, আর তুই বোবা সেজে থাকতে পারবি না । তোকে প্রতিআক্রমণের জন্যে সদাসর্বদা তৈরি হয়ে থাকতে হবে । একবার যদি কেউ তোর পিঠে ছুরি মারার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে সে সারাজীবন ধরে চেষ্টা করে যাবে । তাই প্রথম আঘাতটা তোকেই দিতে হবে, বিনা দ্বিধায়, বেপরোয়া হয়ে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন