রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২

কেদার ভাদুড়ীর কবিতাগুচ্ছ

 কেদার ভাদুড়ীর কবিতাগুচ্ছ

 


হঠাৎ পুস্পিতা

হঠাৎ পুষ্পিতা এসে বললো‌: দেখুন স্যার,

আমাকে না জানিয়ে অনেকেই প্রপোজ করে, কি করি?

বললাম‌: করবেই তো

মেয়েরা প্রপোজিত হবে, তবেই না মেয়ে !

পুষ্পিতা কি এমনই হয়েছো?

ভ্রুণ থেকে ভ্রুণাতীত, জন্ম থেকে জন্মাতীত তুমি

প্রজাপতি আসুক, কী আছে !

একদিকে প্রজা, অন্যদিকে পতি, দ্বৈতবাদ, সেইতো সুন্দর।

 

পুষ্পিতা বললো, কি কথা ! অনন্য। অন্যতর স্বাদ।

তখুনি ঘরে ঢুকলো একফালি অন্ধকার, একফালি পোড়-খাওয়া পূ্র্ণিমার চাঁদ।

চুমো কনজিউমার গুডস্

বাবা বলেছিলেন, অত গল্প পড়িস কেন, খোকন?

সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে মেশ, দেখবি গায়ে গল্প লেখা থাকে।

 

সেই থেকে আজতক আমি গোগোল পড়িনি

সেই থেকে আজতক আমি জ্যাক লন্ডন

সেই থেকে আজতক আমি টেগোরের গল্পগুলো

চেকভের গল্পগুলো লু শ্যুনের গল্পগুলো মোপাসাঁ ইস্তক।

 

শুধু একবার চুরি করে ভিক্টর হুগোর গল্প

সেই-যে-সেই ছেলেটি, দ্বীপের মেয়েটি,জাহাজডুবি……….

যাচ্চলে, মনে নেই।

 

মনে থাকে কি কখনো এইসব বাঁদরের, ইঁদুরের গল্প?

রোমানফ কী বলেন? টলস্টয়? আনাতোল কী বলেন? ডুমা?

বৃদ্ধ মানুষটি এবং সমুদ্রের গল্প লিখে যে ছেলেটি গুলি খেলো, সেও

রেমারএ কী বলেন? টুর্গেনিভ কী বলেন? মম?

খেজুরগাছের দেশে মাদী চিতাবাঘের পাল্লায় টুঁটিকাটা ছাড়া

উপায় থাকে না।

 

উপায় কি থাকে না কখনো? আমি শুধু দুটি, দুটি মাত্র স্টেট এক্সপ্রেস খাইয়ে

রুশী মেয়েটির গায়ে গল্প পেয়েছিলুম, দু’গালে দ? চুমো।

একটি চুমোর জন্য আমি

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি রাজত্ব ছেড়েছি

রাঁধুনীকে বলি আমি, আহা গিন্নি রান্নাঘর দেখ

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি সাম্রাজ্য ছেড়েছি

ধোপানীকে বলি আমি, আহা গিন্নি স্নানঘরে যাও

 

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি সাম্রাজ্য বেচেছি

চাকরাণীকে বলি আমি, আহা গিন্নি ঘরদোর মোছো

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি রাজত্ব ছেড়েছি

সেবিকাকে বলি আমি, আহা গিন্নি মাথা টেপো দেখি

 

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি অপমানি হব

রক্ষিতাকে বলি আমি, আহা গিন্নি আলোটা নিবাও

তোমার একটি চুমুর জন্য আমি অপমানি হব

বিয়োনিকে বলি আমি, আহা গিন্নী গর্ভবতী হও

 

তোমার একটি চুমোর জন্য আমি মৃত্যুমুখি হব

রাজত্ব সাম্রাজ্য ছেড়ে আমি নরকে পৌঁছবো

মোহ

চারিদিকে বৃক্ষ অগুনতি। তারই একটা হেভেনলি ফ্লেইম,

ফ্লেইম? না ইনফার্নো?এই জেনে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে

ইন্ডিয়ান লেবার নামের, পাশে লুকিয়ে হঠাৎ……….

হঠাৎ্ই শুনতে হ’লো সেই স্বর, বাংলায়‌: অসভ্য!বাঁদর!

 

মাধোরায়, গুর্জরদেশের এই মন্দিরের পাশে

যে অরণ্য আছে সহস্র শিল্পের, শিল্পের কর্মের,

নবম কি একাদশ শতকের, আমি শুধু তার

স্তনের উজ্বল মসৃণতা দেখেছিলুম ব’লেই

হাত দিয়ে, বাঁ হাত দিয়ে, ছুঁয়ে, মসৃণতা

দেথেছিলুম ব’লেই শুনতে হ’লো সেই স্বর বাংলায়‌: অসভ্য, বাঁদর!

 

কিন্তু বাংলায় কেন? গুর্জরদেশের ভাষা ওকি ভুলে গেছে, মেয়ে?

উৎকল দেশেও তাই, একবার, কোনারক, সূর্যের মন্দিরে,

বিজয়নগরে, কেশব মন্দিরে, মদনিকা, আর্শিতে যখন

মুখ দেখেছিলো একা, হঠাৎ তখুনি স্তনে হাত রেখেছিলুম ব’লেই……...

আহা, মামাল্লাপুরমেও তা। লালচে, কালো, সাদা পাথুরে মেয়েরা

ভাবতে ভাবতে লজ্জা, না লজ্জা নয়, শরমে মরে যাই শুধু।

 

কেননা, আমার ভিতরে যে মেয়ে থাকে, চুল বাঁধে, নাচে, গায়

স্তনে সর মেখে শুয়ে থাকে, উপন্যাস পড়ে, পিয়ানো বাজায়,

পার্টিতে চিকেন স্যুপ খায়, হরিদ্বারে গিয়ে পিদিম জ্বালিয়ে

পিতৃপুরুষের দায়ে একবার ভাসিয়েছিলো গঙ্গায়, সেই।

অনিবার্যকারণবশত

অনিবার্যকারণবশত

আমি কাল দিব্য আঁধারে গাছের তলায় দাঁড়াতে পারিনি রাধে।

বেলগাছে ভূত থাকে, থাকেনা কি? ব্রহ্মদত্যি, এ কথা তো জানা,

কিন্তু যেটা জানা ছিলোনা তা’হলো তার পক্ক বিম্বাধর ফল, লোভ

পয়োধরা তুমি, পয়স্বিনী, অববাহিকায় আছো।

 

থাকো, কিন্তু ক্ষমা করবে তো, বলো? অনিবার্যকারণবশত

তুমিও তো একদিন এইদিন এতোদিন, আহা—

অনিবার্যকা-র-ণ-ব-শ-তঃ।

লিপস্টিক

 

আমি এক গো-পন্ডিতের মতোই বুরবাক।

 

ছেলেরা চুল কাটে

মেয়েরা চুল রাখে, কেন?

 

ছেলেরা ধুতি পরে

মেয়েরা শাড়ি পরে, কেন?

 

ছেলেরা দেড় মিটারের জামা পরে।

মেয়েরা কোয়ার্টার মিটারের

জামা পরে কেন?

রহস্য বুঝিনি।

এইসব ব্রতকথা

এতদিন আমি তাই ছিন্ন কন্থা সোহাগে ভরেছি

দুধেল ওয়ারে যেন, ভারতীয় রিঠে দিয়ে কাচা।

কে বানিয়েছিল, বুনেছিলো ঘুঘুসই চিত্র দিয়ে?

দেবযানী? শাড়ির সবুজ সুতো লাল সুতো নীল

উঠিয়ে উঠিয়ে? ধৈর্যের পুরাণ থেকে নাদব্রহ্ম

শুনে শুনঅ? ছুঁচ তার কতবার ফুটে গেছে, ব্যথা,

আঙুলের অগ্রভাগে রক্তবিন্দু চুষে নিয়ে শে্ষে

হেসেছিলো মৃদু জ্যোৎস্না, তালপাতা শুয়েছিলো পায়ে।

 

এইসব ব্রতকথা শতাব্দীর শুরু হ’তে শেষ।

এখন? চন্দনা নদীটির কাছে কোনো ঘর একা

দাঁড়িয়ে থাকেনা দেখি, কদলীবৃক্ষের মাথা, ভ্রাতঃ

দোলেনা বাতাসনির্ভর, বলেনা চন্দনা নদীটি

কবে বুঁজে গেছে, মেঠো ঘেরি সরে গেছে, মেছুয়ারা

ভাটিয়ালি ভুলে গেছে, সুজন নাইয়া আজ কই?

ক্যাপ্টেনের নাম কেন্ রবিনসন

বাংলা বলতে জানেন হিন্দিও

চোস্ত উর্দুতে কথা বললে বোঝাই যায় না

অ্যাংলো ইন্ডিয়ান

 

ক্র্যাক পাইলট বলে তাঁর নাম আছে

এয়ার পকেট পেলেও

বাম্প করে না তাঁর কাইট—

ডি.সি. ফোর হান্ড্রেড ফোর

 

শুক্কুরবারের ফ্লাইটে তাঁর কায়রো যাবার কথা

মাঝখানে কুয়ায়েত

নাবতে হবে

 

কাইটে পেট্রোল ভরা হয়ে গেছে

থাউজেন্ডস্

অ্যান্ড থাউজেন্ডস্ অব লিটারস্

হান্ড্রেড অকটিন

এখন এখন শুধু

ফ্লাইং কনট্রোল থেকে সিগন্যাল স্রেফ বাকি

 

রেডি থামস্ আপ

একটা টিহি-টিহুউউ শব্দ করে জেট

ডি.সি. ফোর হান্ড্রেড ফোর উড়ে গেল

 

তিরিশ নম্বর সীটে তিরিকলাল বললেন

আপেলের রস

তেত্রিশ নম্বর সীটে বাচ্চা ছেলেটা

বমি করল

 

এয়ার হোস্টেস মিস স্যানিয়াল

অদ্ভুত তৎপরতায়

বমি আর আপেলের রস

সামাল দিয়ে উঠল

 

ককপিটে তখন কেন রবিনসন

কো-পাইলটকে বললেন

হোলড্ দ্য জয়স্টিক

ড্রাইভ স্ট্রেট অ্যাহেড

তারপর

আরব সাগরের সবটুকু ব্লু ক’রে

স্কাইকে স্কাই ক’রে ফরেনসিক

ইন্টারকমে বললেন, মিস স্যানিয়াল

সী মি অ্যাট ওয়ানস্

 

বমি আর আপেলের রস

ব মি আ র আ পে লে র র স

মিস স্যানিয়াল ইন্টারকমেই উত্তর দিলেন

স্যর, আয়াম অফুলি বিজি, অফুলি……….

 

তিন মিনিটে তিন ক্যান

ফরাসী শ্যাম্পেন গলায় ঢেলে

কেন্ রবিনসন

গকগক্ করে দরজা খুললেন

গকগক করে লাফিয়ে পড়লেন

উইদাউটা প্যারাশুট

ডি.সি. ফোর হান্ড্রেড ফোর উড়ে গেল

নিচে নীল সমুদ্র

সবুজ আয়নার মতো ছড়িয়ে আছে

দিগদিগন্ত

 

কেন্ নাবতে লাগলেন

একটা শকুন এসে বলল

হাই, মে আই ইট ইনটু ইউ

কেনের টিউনিক উড়ে গেল

একটা চিল এসে বলল

লুক্ দিসিজ হাউ উই সুপ

কেনের ট্রাউজার্স খুলে গেল

বাজপাখি যে বাজপাখি

দ্য ডিউফল হক্

সেও বলল

কাম্ অন্, টেক আউট ইয়োর

আন্ডার ভেস্টস, উইল ইউ

কেন্ ন্যাংটো হয়ে গেল

 

সূর্য তখন ডুবুডুবু ডুবছে

চাঁদ তখন উবুউবু উঠছে

ঠিক তখনি

বিশ হাজার ফিট নিচে সমুদ্রের বুকে

বিশ ফুট জল লাফিয়ে উঠল

বলল, কাম্ ইন চাম, কাম্ ইন

দু-ফিট সমুদ্রের তলে

দুটো সার্ডিন খেলা করছিল

একজন আরেকজনকে চোখ টিপে বলল

দেখেছে

তিন ফিট সমুদ্রের তলে

তিনটে হেরিং তিনশো মালিক তাড়া করছিল

একটু দাঁড়াল

তারপর তার চোখে এইসা ঢুঁ মারল যে

চোখ গলে গেল

পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটা অক্টোপাস

শুঁড়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল

আ উইন্ডফল

পৃথিবীর মাটি

পৃথিবীর আকাশ জল

টলটল করলেও

সময়ে সময়ে টলোমল

 

পরদিন খবরের কাগজে বরুল

দ্য পাইলট অব দ্য ডি.সি. ফোর হান্ড্রেড ফোর

ওয়াজ হাইজ্যাকট ইন দ্য মিড এয়ার

আমরা ফ্লাইং সসারের কথা

ভাবতে বসলুম

 

কেউ জানল না

কেউ জানল না কেউ

শুধু আমিই জানলুম—

দ্য কো-পাইলট

আমিই জানলুম

আ উইন্ডফল

মিস স্যানিয়াল এখন

আঃ আমিই জানলুম

আ উইন্ডফল

‘এসো, প্রেমে পড়ি’

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেল

চলে গেল ? চলে তো যায়নি দূরে, এই তো আছেই

এই যে ডাকছি, এই যে ভাবছি, এই যে বলছি এই যে লিখছি, এই

পাতাল গঙ্গার কথা, আকাশ গঙ্গার কথা অনেক উঠলো

মনে, বাস্তবিক, আর কি কখনো হারাই, হারাবো ?

এমন স্টেশন দেখিনা যে নেমে যাবো ।

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো ।

যাত্রীরাই ধোয়ালো মোছালো, ধীরে ধীরে বড় ক’রে তুললো

জটিল লৌহবর্ত্মে ধ্বনি এমন কলকোলাহল মুখর

যে, তারাই স্টেশনে স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশ, বেশকয় টিকিটচেকর

কাছে এলে স্পষ্ট শুনি সৌভ্রাতৃত্বে শেষ মৃগদাব

এমন স্টেশন দেখিনা যে নেমে যাব ।।

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো ।

পাশের প্রথমশ্রেণী থেকে উড়ে এলো কেচ্ছার দিদির বড়ো

স্বেচ্ছাচারী হাসি । যা বলো তা বলো, যা করো তা করো

এই সব বর্ধিষ্ণু নিয়মে আমি দেখি আমাকে তাতালো

ফলে দেখা হ’লে স্বর্গীয়াদের কেনই বা আর অশ্রুকে মোছাবো

এমন স্টেশন দেখিনা যে নেমে যাবো ।

ট্রেনের মধ্যে প্রসব ক’রে মা আমার চলে গেলো ।

চলে গিয়ে গাছ হ’য়ে ফুটে উঠলো, মিথ্যে কথা, ফুল দিলো ফল

মিথ্যে কথা, ছায়া দিলো, মিথ্যে কথা, সবুজের অশ্রু টলোমল

রং দিলো, মিথ্যে কথা শুধু কাঠ হয়ে জ্বললো, জ্বলে উঠলো

পুড়লো, পুড়ে গেলো, ছাইভস্ম মেধা শক্তি, দেহটির স্নেহ, কখন জানাবো ?

এমন স্টেশন দেখি না যে নেমে যাবো । 

‘কাব্য’

আমি যুবতীটিকে বললামঃ সাবান যে মাখো, সাবানেরও

একটা স্নেহভাব আছে । শাড়ি যে জড়াও, গায়ে

শাড়িরও একটা সূত্রভাগ আছে । সেই স্নেহভাব, সূত্রভাব-

নিয়েই তো ভালোবাসা, নয় ?

শুনে ও দেখি তখনো চুপ করে রইলো, যেমন যুবতীরা থাকে ।

দাবদাহ এমনই যে অরণ্যে লেগেছে আগুন, আগে ।

বইমেলা-৯৩, এবং কয়েক ফোঁটা আধুনিক অশ্রু

এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা

ফাঁকা মানে? বই আছে, বুকস, কিন্তু অক্ষরগুলো নেই

ফাঁকা মানে? লোকজন আছে, কিন্তু মানুষজন নেই

সজল পাইপ টানে, আমি চুটা , তামাক বিহীন

কাঁচাপাকা দাড়ির ভিতরে ধোঁয়া জমে, জমে লালন ফকির

অশোক পদ্যের পেছনে কয়েক সহস্র কাস্ক মদ্য উড়িয়ে এখন

এখন? বইমেলায় গিয়ে দেখি ফাঁকা

ছড়া ও কবিতা যারা উগরে দিতো প্রতিপদে জ্যোৎস্নার ভিতরে

তারাও নিস্তেজ যেন, নিথর নীরব

তাদের  জীবন ঘোড়াগুলো, উটগুলো

ঐতিহাসিকের পাতা ছিঁড়ে, পাতা ছিঁড়ে খেতে চায়

লবণবিহীন

‘এমনি খবর’

মালিনী যে মেয়ে, চিকন শাড়ির মতো আলো, এখন কোথায়

মালবিকা জানে, মৃত্যুঞ্জয় জানে, উত্তম জানে না

এবার বইমেলায় গিয়ে দেখি  ফাঁকা

অতীন্দ্রিয় বলেছে জবর ঃ মৎস্য-নিগমে শুধু

হৃদয়ের বাইপাস ছিঁড়ে আঁশ পড়ে আছে ফ্যাকাশে ও সাদা

‘শেষ প্রেম’

যুদ্ধে যাবো কাল । আজ এই হিমহিম ভয়ার্ত সন্ধ্যায় আমি

গৌরবের জয়গাথা পড়ে যাব শুধু? নাকি ইতি-

হাস ঘেঁটেঘুটে মিশরীয় সভ্যতার ফ্যারাও আমল থেকে

অ্যাসিরীয়, ব্যবিলনীয়, চৈনিক, মহেঞ্জোদারোর

স্পার্টান পদ্ধতি জেনে নেকড়ে ও রোমুলাস , রোম...মহাব্যোম

থেকে ফিরে আসে, হ্রীং । টেস্টের দরোজায় দেখি পিয়া, অলিম্পিয়া,

নিতম্বে উন্মুখ ।

আমি তাই দুই কাস্ক মদ্য নিয়ে ওর সামনে রেখে

বলে উঠি খা । ও খেলো, খেয়ে নিঃশেষে ফতুর করে দিলো পিপে ।

আমি ওর গা টিপে গা টিপে চুমোয় ভরে দি যোনি,

রহস্যের ঘ্রাণ, যা খাজুরাহোর মন্দিরে অক্ষত

আছে আজো, আর বিংশশতাব্দীর এই কালচক্র

শিল্প শিল্প বলে ঐতিহাসিকের ক্ষুধা, যদি দুষ্ট, আণবিক

কাল যুদ্ধে যাবো, বর্শাবিদ্ধ মরে যাবো, পড়ে যাবো ঘুড়ির পায়ের ক্ষুরে

মৃত্যুর অধিক ।

‘মদ্যপ’

ঘরটায় তালা দিয়ে অমিয় বেরিয়ে পড়লো

সিগ্রেট কিনতে । একঠোঙা কাজুও কিনবে বোধহয় । শশা ।

আমি বললাম ঃ কিরে, টিভিটা বন্ধ করবি না ?

বললো ঃ আরশোলা ও ইদুঁর, বিছানাপত্তর,

ঘরের জানালা দরোজা, সিলিঙের শুনতে ইচ্ছে করে না?

আমি আর কোনো শব্দই জোগাড় করতে না পেরে

বললাম ঃ মদ্যপ ।

‘ভারতবর্ষ’

মা এর বয়স বাহান্ন, বাষট্টি বা ওরকম, ওর বেশি হয়ে  গেলে সত্যি

মা আর মা থাকেন না হয়ে যান মাতা, মাতাজী , নতুবা বঙ্কিমী ভাষায়

মাতাঠাকুরানী ।

পূর্ণগিরি যাচ্ছি। চড়াই উতরিয়ে দেখি এক যুবা, সুঠাম সুন্দর ।

চলেছেন হেঁটে । মাথায় বিশাল এক ঝুড়ি, বেতের । ঝুড়িতে বসে আছেন এক বুড়ি

থুড়থুড়ি, ক্রিপলড, ফুলে ফলে আঁকা মাতাঠাকুরানী ।

প্রায়ই বলছিলেন ; চল বেটা চল সুন্দর ; দিমাক সে পাঁও চালাকে চল ।

দো ভাষীর কাজ করি তো ! মম কে বুঝিয়ে বলছিলাম ব্যাপারটা, তাই ।

পূর্ণগিরি কী? কে? বাহান্ন পীঠের সারবস্তু কোথায়? যমনা বা বেত্রবতীর

তীর থেকে এইসব বুড়ীরা কেনো আসে কেনো যায় ।

পুত্রের অহংকার তো বলিইনি, তবু

সেইদিন রাত্রেই নেহরু লকনৌ এয়ার পোর্ট থেকে দূরভাষ পেলেন;

না আগ্রা নয় আর, বুলন্দদরওয়াজা নয় কিছু,

কনট সার্কাস নয় ভালো, লালকিল্লা, মেরিন ড্রাইভ,

মীনাকষী টেম্পল, তাজ । দেখা হলো, দেখা হলো আজ

হোয়াট ইন্ডিয়া ইজ, হোয়াট ইণ্ডিয়া ওয়াজ । বাই...

‘উড়ান’

পাখি,      গান গায় ।

পাখি,      গান গায় না ।

এ কিরকম হলো?

একবার বললেন, পাখ গান গায়।

আবার বললেন, গান গায় না ।

প্রথমটায় হ্রস্ব ই

দ্বিতীয়টায় দীর্ঘ ঈ, লক্ষ্য করেছো?

দীর্ঘ ঈ গান গায় না, মেয়ে পাখী কিনা, তাই ।

তবে সে কী করে? কী করে?

বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে , বসে থাকে,

তা দেয়, পরে বাচ্চা হলে,

মেয়ে  পাখীই কি,

ছেলে পাখীই কি,

উড়ান শেখায় ।

‘চাকরি’

আমি মরতে-না-মরতেই আমার বউ, সুধন্যা

পাশেই ছিলো, শিয়রের কাছে,

বলে উঠলো, মৃদু নত এবং স্বাভাবিক সুরেই

বলে উঠলো, আঃ বাঁচলাম ।

আমি এখন সবে বুক ছেড়ে বুকের ওপরে উঠেছি ;

এখন, একটু বিশ্রাম নিয়ে সিলিং ভেদ করে

উর্ধ্বে চলে যাবো—

‘আঃ , বাঁচলেম !’ শুনে

এ এক আজীব বাৎ

এ এক অবিনশ্বর সত্য, মনে হলো ।

শ্বশ্রুঠাকুরানী এলো, বললো;

বলেছিলেম না? প্রেম কর, প্রেম কর, প্রেম কর

বলেছিলেম না? এ বড়োকে বিয়ে কর,

চাকরি পেয়ে যাবি, অন হিউম্যানেটেরিয়ান , নাকি… কি বলে?

কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডস ?

পশ্চাদ্ভাবন করে লাভ নেই ।

বাইশ বছরের সুধন্যা ছাপ্পান্ন বছরের বুড়োকে

প্রেম করে বিয়ে করেছিলো শুধু কি এ কারণেই

আমি আগন্তুক স্বর্ণরথকে ফিরিয়ে দিয়ে

বাড়িরই বেলগাছে ব্রম্ভদত্যি হয়ে বসে

পা দোলালেম পা দোলালেম, কান মললেম, কান মললেম

পরিশ্রুত সারসের মতো শীর্ষাসনে অতি দীর্ঘকালে ।

‘গৃহ’

একটি গৃহ বানাবার ইচ্ছে ছিলো কোন এক নদীর ধারে চওড়া

বাড়ীটি কি চওড়া, নাকি নদীটি-ই চওড়া?

পণ্ডিতগণ ভাবুন, তক্কে লেগে থাকুন, আমিও ইতিমধ্যে

বাগান সাজিয়ে নি ফুলফললতাগাছে বর্ণানুক্রমিক ।

পুকুর অবশ্য আছে, পুকুরেও নৌকা-গৃহ ঢেনকানলে

যেমন পাওয়া যায় ।

গৃহের প্রতিটি ঘরে বউ, বউ নয় বই ; দুঃখিত ! দুঃখিত

এ বয়েসে কি যে হয়, বই বলতে বউ বলে ফেলি ,

অবশ্য দুটোই এক, কেননা পাতার পর পাতা

শুধু সমারোহ জ্ঞানের ধ্যানের ভ্রমণের রহস্যের

জ্যামিতিক, ততোটা হিসাব কষিনি, কেননা সুক্ষভাগে

দুঃখ লেগে আছে কিঞ্চিৎ অধিক ।

‘বৃক্ষরোপণের কাব্য’

মাদামকুরীর মতো মুখ নিয়ে অমিতাদি আমাদের

                                  অঙ্ক নয়, ইংরেজি পড়ান ভালোই

কি তার উচ্চারন, কি তার চটজলদি কতাহ ! বলেন ঃ ভবাই,

আমি একটি পাখি দেখিতেছি, ডু ইট ইনটু ইংলিশ, ড্যু, কই

দাঁড়াও হ্যাঁ বলো , কী? আয়াম সীইং আ বডি ? ছাই !

বলেই, সবুজ ও হলুদ চক দিয়ে সত্যি সত্যি

                                  একটি পাখি আঁকলেন, পরে লাল

আমরা এতোগুলো ছেলেমেয়ে, কিছুই বুঝিনা, কাকে

বলে ভার্বস অব পারসেপসনস, কী তার রূপ,

                                  ইউসেজ, শুধু চন্দ্রমল্লিকা রুমাল

দিয়ে চোখ মুছলো ঃ আমি গিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা গাছ

                লাগিয়ে দিলাম, পাতাবাহার, অমিতাদির ডাকে ।

বৃক্ষরোপণ মানেই অক্সিজেন, বৃক্ষরোপণ মানেই অক্সাইড,

                                      বৃক্ষরোপণ মানেই......, চুপ

আজকে বৃষ্টির দিন, বৃষ্টি হলো খুব ।

‘শিস’

বাড়ির পাশ দিয়ে তো যাও, একটু শিস দিয়ো শুধু ।

শুধু শিস নয়, শিসে যেন শব্দ থাকে, সুর থাকে,

ভাষা থাকে, ভালোবাসা, গম্ভীর গম্ভীর কোনো বোধ,

বোধের অতীত কোনো? যেন থাকে স্বর্গসন্ধি , তাও?

বাড়ির পাশ দিয়ে তো যাও, একটু শিস দিয়ো শুধু

সকালে সন্ধ্যায়, এই কথা বলেছিলো মেয়ে; তাই

আমিও না মৃদু নীল উচ্চগ্রামে সকালে সন্ধ্যায়

ওর-ই গলায় ওকে প্রতিদিন শিস দিতে থাকি ।

শুনে মেয়ে স্থির থাকে কভু? জানালাটা খুলে যায়,

দরোজাটা হাট, জোড়াসাঁকো কেঁপে যায়, উত্তমর্ণ

অধমর্ণ মিলে যায়, দারিদ্র্যনিকাশী সত্যে কবি

বেদ ও উপনিষদ থেকে সাদা রক্ত বের করে

যেন ছবি, অসীম মরমী ছবি বাইশে শ্রাবণে

জনে জনে জনারণ্যে সমে শূণ্যে ক্রন্দনে ক্রন্দনে ।

‘সমকামিতার স্বপক্ষে’

শত সহস্র ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক, নাগরিক নিমন্ত্রন পেলো

আর আমিই পেলাম না? এ কেমন হল জাঁ লাইলফ?

আমি দুনিয়াজোড়া কবিতা লিখি তুমি জানতে,

আমার নিমন্ত্রন তাই অবশ্যম্ভাবী ছিলো,

কিন্তু তুমি ভুলে গেছো, স্বাভাবিক ।

যেখানে বিদ্রোহ একচল্লিশ বছরের  সেই আটচল্লিশ থেকে

সেখানে বিপ্লবীদের মাথার দিব্যি দিয়েই বলছি আমার মনে করার কিচ্ছুটি নেই

কোপেনহেগেন ! কোপেনহেগেন ! তোমাকে শুভেচ্ছা

আমি একবার ড্যানিশ সসেজ খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো ।

তোমার বরের নাম, কাগজ়ে পড়েছিলাম, জোক ভকম্যান

জার্মান জার্মান গন্ধ পাচ্ছি যেন । সে যাই হোক

ম্যান তো বটেই, শুধু ম্যান নয়, হি-ম্যান তো বটেই ।

নইলে এমন করে সমকামিতাকে স্বর্গভূমে নিয়ে আসতে পারতো না ।

আসলে সভ্যতা জানুক, শিক্ষাও জানুক, সংস্কৃতিও জানুক

যেখানে দেহ ও মনের মিল, মিলন, সেই তো বিবাহ

আমরা অপোগণ্ড, দেহ বলতে স্ত্রী বুঝি, মন বলতে পুরুষ

আমি একবার ড্যানিশ পনীর খেয়েছিলাম অসম্ভব ভালো ।

‘মাদাম ওয়াধোওয়া’

ধরা যাক

মহিলাটির সঙ্গে, ভদ্রমহিলাটির সঙ্গে

প্রথম দিন আলাপ হলো, একটু ।

দ্বিতীয় দিন তার-ও বেশি ।

তৃতীয় দিন আর-ও ।

চতুর্থ দিন ......

ধরা যাক

ভদ্রমহিলাটির নাম মাদাম ওয়াধোওয়া ।

ধরা যাক বাংলা বলতে পারেন ভালোই ।

বললেন ঃ আপনি গাছে উঠতে পারেন?

বললেন ঃ আমার বাড়িতে একটা পলাশ গাছ আছে ।

তার একটা ডাল, বেশ মোটা ডাল

আমার ব্যালকনির গা ঘেঁসে, প্রায় গা ঘেঁসে

সোজা চলে গেছে সীমান্তের সন্ধানে ।

মাঘ ফাল্গুন এলে ফুল ফোটে ।

আমি চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্নায়

দরোজা জানালা খুলে

গভীর গহন তাকিয়ে থাকি, একাই ।

তারপর?

কবি ও প্রাবন্ধিক উত্তম দাশের দেয়া

পঞ্চম মেরুকরন নিয়ে

গলায় মিষ্টি মিষ্টি ঢেলে বললেন ঃ

আপনি ডাক ও ডাহুকের স্বাদ

কিছুই বোঝেন না।

আপনি বড় বোকা ।

বলেই ষষ্ঠ ফ্যারাও, তার সঙ্গে

তুতেনখামেনের পিরামিড দেখতে

হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন, গীর্জায় ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন