শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২

উপন্যাস : জঙ্গলরোমিও

 মলয় রায়চৌধুরীর জাদুবাস্তব উপন্যাস : জঙ্গলরোমিও 


          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          --আরে...এই  মিশকালো নিনড় ভদ্রলোক বলেন কি... ছ’ফিটের হবেন বোধহয়...তাই বলে…

          --নট মি...ইটস দি বার্ড’স সঙ…

          --কথাগুলা উনার নয়...বাইঞ্চোত আমাগো টিয়াপাখির...উনি টিয়াপাখির কাছ থিকা শিখসেন...

          --আপনি ওয়াঁকে নিগ্রো নিগার ব্ল্যাক মুলাট্টো যা ইচ্ছে বলতে পারেন...ওয়াঁর খারাপ লাগবে না...টু বি প্রিসাইজ...উনি আমেরিকান নন...আফ্রিকান...ওয়াঁর মা আফ্রিকা থেকে ইটালিতে গিয়েছিলেন...ওয়াঁর নামটা বিটকেল...ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে শুরু... ওয়াঁর মতন জিভ মুচড়ে উচ্চারণ করতে হলে...বিদ্যাসাগর  মশায়কে তৃতীয়ভাগ লিখতে হতো...উনি কালু শুনতে অভ্যস্ত...জেলহাজতে ওয়ার্ডেনরা ওয়াঁকে কালু নামেই পেটাতো...আমরা ওয়াঁকে কালু না বলে শিস দিয়ে ডাকি...কালো মানে যে কয়লাটে তা উনি জানেন...অন্যদের জীবনের পাঁক তুলতে-তুলতে এদেশে এসে পৌঁছেচেন...ঠিকই... ওয়াঁর উচ্চতা সাড়ে ছ’ফিট...ব্লাডি ফাকিং হাইট...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম... মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --বাংলা জানেন ?

          --নাহ...টু বি প্রিসাইজ...ভাঙা-ভাঙা বাংলা...বাকিটা বোবামি দিয়ে বুঝিয়ে দেন...আপনি আমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ব্লাডি ফাকিং ইউজড টু হয়ে যাবেন...আপনি ওয়াঁর মুখে এক্ষুনি যা শুনলেন...টু বি প্রিসাইজ...তা উনি শিখেছেন আমাদের টিয়াপাখির কাছে...টিয়াপাখিটা প্রতিদিন সকালে ওই কথাগুলো কপচে-কপচে আমাদের ঘুম চটকায়...জঙ্গলের এফ এম রেডিও বলতে পারেন... 

          --এখানে ডুয়ার্সের গভীর জঙ্গলে এসে জুটলেন কী করে...টিয়াপাখি আর কেলো দুজনেই ? টিয়াপাখি তো শুনেছি বাজার থেকে কিনে খাঁচায় না পুরলে মানুষের মাতৃভাষায় কথা বলেন না...জঙ্গল থেকে ধরে এনে সরাসরি কথা বলানো কঠিন...মানে...যায়ই না বলানো...কথা বলানোর জন্য খাঁচায় পোরা বা পায়ে শেকল বাঁধা জরুরি...দ্যাখেন  না...কাকাতুয়াদের পায়ে শেকল বেঁধে তারপর কথা বলানো হয়...উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছিলুম...মানুষ হোমিনিড থেকে হোমোসেপিয়েন হতে পারতেন না...যদি না তাঁরা খাঁচা বা কারাগার আবিষ্কার করতেন...খাঁচা আবিষ্কার করে তাতে মানুষকে পোরবার পরই মানুষ গোঙাতে-গোঙাতে আমাকে ছেড়ে দাও... আমাকে যেতে দাও...আমি কিচ্ছু করিনি...ধরণের তোতলামি আওড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন... লজ্জাস্হানে অশথ্থপাতা বাঁধা বা কোমরে ঝাউপাতা ঝোলাবার প্রথা তারপর ঘটেছিল...

          --টু বি প্রিসাইজ...যেভাবে আপনি এখানে এসে জুটলেন... আমি এসে জুটেছি...উনি সেভাবেই এসে জুটেছেন...তবে ব্লাডি ফাকিং টিয়াপাখিটা একজন নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট কোম্পানির ঘ্যামচাঁদ মালিকের বাড়ি থেকে চুরি করে আনা...চোদ্দো হাজার কারখানা লাটে উঠে ওই একরকম কারখানাই তো টিকে আছে ধর্ষণমাতৃক দেশে...শ্বেতশুভ্র চিৎফাঁদ পাঁজির টয়লেট  রোল…নেপোপ্রেমী...দুটো টিয়াপাখি আমরা ওয়াঁর বাড়ি থেকে চুরি করে এনেছিলাম...অন্যটাকে গত বছর শেয়ালে বা কোনো জংলি জানোয়ারে পালকসুদ্দু খেয়ে ফেলেছে বলে মনে হয়...সেই পাখি অসামাজিক গাধার বদলে বলতেন সামাজিক চুতিয়া...

          --মানে...কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই সামাজিক চুতিয়া ? তার মানে মরা পাখিটা জীবন্ত পাখিটার চেয়ে উচ্চশিক্ষিত  ছিলেন বলে অনুমান করতে পারা যায়...আই অ্যাম শিওর...তাঁকে নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট  কোম্পানির বাড়িতে ওপরের খোপের খাঁচায় বেশিদিন থাকতে হয়েছে...

          --চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট  কোম্পানির নেপোপ্রেমী  চৌখাম্বা মালিক প্রতি বছর যে খয়রাত দিতেন আর খাইখরচ... খোরপোষের সুপারিশ করতেন...তার জন্য পাখি দুটো পুষেছিলেন...পাখিদুটোর সামনে নাম লেখা গ্রিটিং কার্ড ফেলে দিতেন...টু বি প্রিসাইজ...যে পাখিটা চুতিয়া কপচে গান শোনাতেন...সেই পাখিটা যাঁর নামের কার্ড তুলতেন তাঁকে দশ গুণ...আর অন্য পাখিটা তুললে  চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট কোম্পানির দশরঙা ক্যালেণ্ডারে তাঁদের ছবি ছাপিয়ে দিতেন...কাঁধে সিল্কের চাদর-গামছা দিয়ে...ঠাণ্ডা-মার্বোনাইটের দিওয়ানে-খাসে...সেসব ঐতিহ্যের কাহিনি ওনার চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট নেপোপ্রেমী রোলেই নজরে পড়েছিল এককালে...আমরা যখন ওয়াঁর বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়েছিলাম...সেদিনকেই  চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট  রোলে ছেপে  বেরিয়েছিল...কী অসাধারণ বৈজ্ঞানিক  প্রক্রিয়ায় উনি খয়রাত-খোরপোষ অনুদান প্রকল্প আবিষ্কার করেছেন...আমরা টয়লেট বা টিশ্যু   ব্যবহার করার সুযোগ নমাসে-ছমাসে পাই... ওই যখন ব্লাডি ফাকিং ছোটো-ছোটো ঘটনা ঘটাতে বেরোই তখন সেদিনকার  চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট  রোলগুলো কোনো ঠেক থেকে দুষ্টুমি করে তুলে  নিই...যাতে প্রতিভাশালী গরুপাচারকারী আর সৃষ্টিশীল গাছ-মাছ-ঠিকেদার কত্তাদের খবরাখবর পাওয়া যায়...আর ডাকাতি করার নাব্যতা আছে এমন চিৎফাঁদ টয়লেট পাঁজি মালিকটালিকের নামসাকিন ঘাঁতঘোঁত জানা যায়...নয়তো ডুয়ার্সের এই গভীর জঙ্গলে বসবাস করে কী করেই বা জানা যাবে কারা কারা ব্লাডি ফাকিং ঘাপটি মেরে এদিক-ওদিক হাত ঢোকাচ্ছে...পাখিদুটোর সামনে  কেলো টয়লেট পেপারের টুকরো রেখে রেখে ওয়াঁদের এফ-এম বুকনির বদভ্যাসকে নিয়মিত করে ফেলেছিলেন...কার সঙ্গেই বা উনি কথা বলবেন বলুন...হয় পাখিদুটোর সঙ্গে...নয়তো নিজের প্রেমিকার সঙ্গে...ভালোই ফোঁড়তুলুনি প্রেমিকা পেয়েছেন...কথা আদান-প্রদানের অসুবিধা হয় না... 

          --খাঁচা থেকে কী করে খেলো জংলি জানোয়ার...আপনারা তো খাঁচাসুদ্দুই তুলে এনেছিলেন...নাকি ?

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --আমরা খাঁচাসুদ্দু চুরি করে এনেছিলাম বটে...কিন্তু টু বি প্রিসাইজ...জঙ্গলে উড়িয়ে দেবার পরও ব্লাডি ফাকিং পাখিদুটো  পালালেন না...থেকে গেলেন আমাদের সঙ্গে...বোধহয় মানুষদের সঙ্গে থাকার বদভ্যাস হয়ে গিয়েছে ওনাদের...ওই যে আপনি বললেন...একবার খাঁচায় ঢুকিয়ে বুলি শিখিয়ে দিলেই  তিনি হোমিনিড থেকে হোমোসেপিয়েনের রাস্তায় সরসরিয়ে নামতে শুরু করেন...লাল-গলা পাখিটাকেই খেয়ে ফেললেন কোনো নোলা-সকসকে জংলি জানোয়ার...সেই থেকে বেঁচে-থাকা সবুজগলা পাখিটা রাতের বেলায়  যাঁর ঘরে উড়ে গিয়ে বসেন ইউজুয়ালি সেই ঘরেই থাকেন রাতভর...মানুষ-ন্যাওটা হয়ে গেছেন পাখিটা...কুরুচকুনে টিয়া...

          --যাক...জঙ্গলে আপনাদেরও টাইম পাস...ফুটপাতিয়া বাংলায় গালাগাল-গুঞ্জরিত এফ এম সঙ্গীত শোনেন...নয়তো...যা দেখছি...এখানে টিভি মোবাইল বা ওই ধরণের আমুদে গ্যাজেট জিইয়ে রাখার কোনো পরিষেবা নেই...এই সমস্ত ভেবেই আমি সন্ন্যাস নিয়ে হিমালয়ের কোনো গুহার জাঙালভিটে অ্যাডপ্ট করতে যাচ্ছিলুম...মরবার জন্য কারণ চাই তো...জেলে উদ্দেশ্যহীন ঘানি ঘোরাবার চেয়ে...

         --আজকাল তো সন্ন্যাসীরাও ল্যাপটপ-পেন ড্রাইভ  আর মোবাইল ফোন...টু বি প্রিসাইজ...স্মার্ট ফোন রাখছেন... কুম্ভমেলায় হোমের আগুন জ্বেলে...ছিলিমে টান দিয়ে...ফোনে মিউজিকাল আশীর্বাদ দিচ্ছেন শিষ্যদের...মোবাইল টাওয়ারের আওতায় সন্ন্যাস নিলেই হল...টাওয়ারগুলো তো দিনকেদিন গ্রামগঞ্জের… শানপুকুরের...মঠের…বাউলদের...শ্মশানের…চিড়িয়াখানার কাছেপিঠে চলে যাচ্ছে...

          --আইলেন কী কইরা বাইঞ্চোত এত দূর...ডুয়ার্সের জঙ্গলে...এত ভিতরে...ট্যুরিস্ট রুট ছাইড়া...ফেডেড জিন্স...সবুজ টিশার্ট...স্পোর্টস জুতা...মুক্তাছাগু দাড়ি...

          --আমি তো আইনের চোখে আবির দিয়ে পালাচ্ছিলুম...ভেবেছিলুম হিমালয়ে কোনও পাথুরে আড়ালে ঠাঁই নিয়ে সন্ন্যাসীর জীবন কাটাবো...দমদম বিমান বন্দর থেকে ভুটানের পারো বিমানবন্দর...তারপর লোকাল বাসে করে গেলেফু...পারো থেকে গেলেফুও বিমানে আসতে পারতুম...পুলিশে ম্যানিফেস্ট দেখে তা থেকে ফলো করবে আঁচ করে লোকাল বাসে চাপলুম...গেলেফু থেকে হাঁটতে হাঁটতে বর্ডার পার করে শিলিগুড়ির দিকে না গিয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গলে ঢুকলুম...তিন দিন হেঁটেছি...কী করব ভেবে পাচ্ছিলুম না...তারপর আড়াল থেকে আপনাদের চারজনকে দেখতে পেলুম...মাটির গর্তে কিছু করছেন...মনে হল আমার বয়সী একজন লোককে তাতে শুইয়ে দিয়ে মাটি ছড়িয়ে দিলেন... এরকম ঘন জঙ্গলে একজনের শবে মাটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন দেখে মনে আশা জাগল যে হয়তো আপনারাও আমার মতন সামাজিক গাড্ডায় পড়ে গিয়ে থাকবেন…

         [স্কাউন্ড্রেলগুলোর সঙ্গে ঠিকমতো কথা চালিয়ে যেতে পারছি মনে হয়...যা বলছে এরা...বেশ বিপজ্জনক লোকজন…পিওর ক্রিমিনাল না সন্ত্রাসবাদী যাচাই করে দেখা যাক...বেশ ঘাঁটি গেড়ে বসেছে জঙ্গলের ভেতরে...তবে রিপোর্ট ছিল কেবল একজনের উপস্হিতির...এরা তো একটা গ্যাঙ...]

          --টু বি প্রিসাইজ...হয়তো ব্লাডি ফাকিং  গাড্ডা...কিন্তু সব গর্ত একই রকম হয় না...আপনার ব্লাডি ফাকিং গাড্ডার কথা বলুন...তারপর আমাদের গাড্ডার কথা শুনবেন...তবে...টু বি প্রিসাইজ...ব্যক্তিগত সাম্প্রতিকের কথাই কেবল বলবেন...আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক অতীত নেই...বুদ্ধ বলে গেছেন... অতীত নিয়ে চিন্তা কোরো না...ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ো না...নিজের মনকে বর্তমান মুহূর্তের দিকে একাগ্র করো...বাই বুদ্ধ আই মিন গৌতম বুদ্ধ হু লেফ্ট হিজ ফ্যামিলি...নট দ্য ওয়ান হু ইজ লেফ্ট বাই দি লেফ্ট ফ্যামিলি...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --যাঁর ওপর মাটি ছড়িয়ে দিলেন তিনি  আপনাদের কে ছিলেন… আত্মীয়… বন্ধু… বহিরাগত… চুকলিখোচর...দেহরক্ষী...

          --না...না...তিনি আমাদের পঞ্চমজন...ভুল বলেছি...ষষ্ঠজন...ব্লাডি ফাকিং আত্মহত্যা করেছিলেন..টু বি প্রিসাইজ...নাম আমরা ব্যবহার করি না...পুরুষ মানুষের জীবনে সবচেয়ে ক্ষতিকর হল তার পোশাক আর নাম...আমরা নামহীন পুরুষদের নিয়ে পোশাকহীন সমাজ গড়ার পক্ষে...কেবল কোল-প্রেমিকাদের নাম থাকবে...আমাদের প্রেমিকাদের একটি করে নাম আছে...জঙ্গলে এসে আমরা বদলাইনি...জঙ্গলকেই বদলে দিয়েছি...সবাই মিলে যদি উলঙ্গ সমাজ গড়েন তাহলে ভয় শোক মায়া লজ্জা অপমান ঘেন্না অমর্যাদা সংশয় থেকে ছাড়ান পেয়ে যাবেন...প্রেমিকারা আমাদের মরমিয়া উদ্ধার... 

            --এখানে জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা...স্ট্রেঞ্জ...সমাজ সংসার ছেড়ে এসেও আত্মহত্যার কারণ থাকে নাকি...   

          --এঁড়ে নেকুপুসু জিদ...ওয়াঁর  প্রেমিকার বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে পারেননি উনি...যে  প্রেমিকা ওয়াঁর ছিল...তাঁকে উনি বলতেন চাঁদবদনী...লিগালি ব্লণ্ড...

          --ওঃ...প্রেমিকার  জন্য বিবাগী হয়ে চলে এসেছিলেন...তা সে তো ওনার বয়ঃসন্ধির রসকশের দিনকালে ঘটে থাকবে...যদিও দূর থেকে আবছা দেখে  মনে হল আমার-আপনার চেয়ে কচিনধর মানুষ... 

          --আমরা জঙ্গলে নিজের-নিজের সোহাগী প্রেমিকার সঙ্গেই বসবাস করি...ওয়াঁর প্রেমিকাও এখানেই থাকেন... 

          --প্রেমিকা...বিয়ে-শাদি-নিকা না করে সবাই লিভটুগেদার করছেন নাকি...চুল দাড়িও কামান না...আঁচড়ান না...সবাই...গায়ের দুর্গন্ধে মহিলারা অবজেক্ট করেন না ? সকলে এভাবে বাসি নোংরা লুঙ্গি পরেই কাটিয়ে দেন...খালি পায়ে...দাঁত মাজেন না...চোখে পিচুটি...নখে ময়লা...

         [ প্রেমিকা...ডুয়ার্সের গভীর জঙ্গলে প্রেমিকা...তারা কারা...এদের মতোই নোংরা...এদের দলের মহিলা সদস্য...নাকি জোর করে তুলে এনেছে...বলছে লিগালি ব্লণ্ড...বিদেশিনী হবে...আরও খুঁচিয়ে এদের কাণ্ডকারখানা জানবার চেষ্টা করি…]

          --না...কেন অবজেক্ট করবেন...ওয়াঁদের থেকেই আমাদের গায়ে...আপনি যাকে বলছেন দুর্গন্ধ...আর আমরা বলি সুগন্ধ...তা ছড়িয়ে পড়ে...মন দেয়া-নেয়ার ঢঙে গন্ধ দেয়া-নেয়া...দরকার পড়লে কেলো চুল দাড়ি কেটে দ্যান...ওয়াঁর কাছে খুর আছে ব্লাডি ফাকিং সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য...মুর্গি-খরগোশ-বাদুড় কাটার জন্য অবশ্য ছুরি-চপার আছে...সেই খুর ব্যবহার করে সবাই নমাসে-ছমাসে গোঁপদাড়িভুরুবগলকুঁচকি কামিয়ে  চুলহীন হয়ে যাই...চুলের কোষাগারে জমা থাকে...পাথরে ঘষে খুরে শান দিয়ে রাখেন...কাঁচিও আছে...যদি দরকার পড়ে...আমরা কারোর জন্য স্মৃতি ছেড়ে যেতে চাই না...চুল ছাড়া...নাম থাকলেই স্মৃতির ঝুঠঝামেলা… ইতিহাস-ফিতিহাস...আমাদের প্রেমিকাদের মন আর হৃদয় টাইপের ফালতু ব্যাপারের ঝঞ্ঝাট নেই...কেননা ওনাদের রয়েছে পবিত্র প্রবৃত্তি...বিশুদ্ধ প্রেম...

          -- সব সময় সবাই খালি গায়ে এই চাককাটা লুঙ্গি পরেই থাকেন...নাকি প্যান্ট-শার্টও পরেন ?

          --না...বাইঞ্চোত সাধারণত আমরা সবাই নাঙ্গা পোঙায় থাকি...নাঙ্গা চুকিতকিত খেলি...গাছের ডালে-ডালে নাঙ্গা চোর-পুলিশ খেলি...দোলনচেয়ারে নাঙ্গা দোল খাই...ছিলিমে পাতা ফুঁকি...নাঙ্গা দাবা খেলি...নাঙ্গা তাস খেলি...নাঙ্গা লুডো খেলি...আইজকা উনি মারা গ্যালেন বইলা সন্মান জানাইতে লুঙ্গি পইরতে হইল...জঙ্গলের প্রাণীগো পোশাক পরনের প্রয়োজন নাই…

         --আপনি বাঙাল নাকি ?

         --হ্যাঁ..উনি রায়টের পরের বাঙাল...রায়টের আগের হলে ওয়াঁর মুখে শুদ্ধ বাঙালেবুলি শুনতেন… বাবুয়ানি দেখতেন...       

          --আচ্ছা...

          --টু বি প্রিসাইজ...আমরা জানি যে পুরুষের পক্ষে পোশাক ব্যাপারটা ক্ষতিকর...শুধু শীতকালে  ঠাণ্ডায় ব্লাডি ফাকিং প্যান্ট-শার্ট-সোয়েটার-কোট-জুতোমোজা না পরলেই নয়...বর্ষায় রেইনকোট...সিসিটিভি থেকে মুখ আড়াল করার ছাতা...যিনি মারা গেছেন তিনি টাকমাথা ছিলেন...ভাবুক ছিলেন তো...পাদতেন আর বলতেন সরি...কম বয়সে টাক পড়ে গিয়েছিল...শীতের সময় টুপি পরতেন...আর জঙ্গলের বাইরে ডাকাতি করতে যেতে হয়...যখন যেমন ডাকাতি তার তেমন পোশাক...আমরা টুকরো-টুকরো ঘটনা দিয়ে গড়া...গন্ধ তো হবেই… থাকতে-থাকতে আপনারও অভ্যাস হয়ে যাবে...ডোন্ট ওয়রি...অভ্যাস আমাদের দাস...যিনি মারা গেলেন তিনি ডাকাতিতে অংশ নিতেন না...সংসার পাহারা দিতেন...চাবির থোলো হ্যাণ্ডল করতেন… এক-তরকারি… দু-তরকারি ভাত রেঁধে রাখতেন...আপনাকে আপাতত ওয়াঁর ডিউটি দেয়া হবে...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --আমার  যা ঘেমো প্যাচপ্যাচে হাল...আজকেই চুলহীন হয়ে গেলে ভালো হতো...তিন-চার দিনের খোঁচা দাড়িও খচখচ করছে...

          --এক্ষুনি হবার দরকার নেই...সবাই যেদিন হবো...আপনিও হবেন...তাড়াহুড়োর কী আছে...টু বি প্রিসাইজ...চুলহীন হওয়াকেও উৎসব বলে মনে করুন না...তা হলেই তো হল...চুলহীন দেহে সবাই মিলে উলঙ্গ নাচার আনন্দই আলাদা...সেদিন যদি বৃষ্টি পড়ে তো কথাই নেই...এই বয়সে নাচানাচি করেছেন কখনও...না প্রাইমারি স্কুলেতেই ঠ্যাঙের পাঁই-পাঁই ফুরিয়ে গেছে...উচ্ছৃঙ্খল না হলে নাচতে পারবেন না...

         --শহরে এই বয়সে কি আর নিজে-নিজে নাচার অবসর থাকে...নানা রকমের সরকারি আর দলীয় বাঁশ নাগরিককে নাচাতে থাকে...নিজে উলঙ্গ হতে হয় না...ওনারাই খুলে নেন...

         --তাহলে এখানে আমাদের সঙ্গে চুলহীন গায়ে...ব্লাডি ফাকিং বিনা বাঁশের ফ্রিস্টাইল নাঙ্গা নাচ নাচতে পারবেন... লকিং পপিং শিমিং বামিং...আর যা ইং ইং নাচ হয়... 

         --ব্যায়াম করেন না আপনারা ?

         --করি...করি...সক্কালবেলায় সবাই আচ্ছা-করে কেজেল একসারসাইজ করি...প্রেম করার জন্য খুবই জরুরি...স্বাদের তার পাওয়া যায়...

          --ওই যে দেখা যাচ্ছে...দূরে...সবাই মিলে ওই একটা পুরোনো তিনতলা  বাড়িতেই থাকেন ? নাকি রেড- ইনডিয়ান স্টাইলে প্রত্যেকে কুটির-টুটির ঝোপড়ি-টোপড়ি তৈরি করে তাতে প্রেমিকাদের সঙ্গে থাকেন ? চলেই বা কী করে ? জনপদ থেকে তো বেশ দূরে...গভীর জঙ্গলে...দোকান-বাজার...

          --টু বি প্রিসাইজ...বলেছি তো...ব্লাডি ফাকিং চুরি-ডাকাতি করে...সাধারণত চিৎফাঁদ পাঁজি টয়লেট নেপোপ্রেমী শীর্ষকত্তা কিংবা  ভুঁড়োকাত্তিক  গাছ-মাছ-ঠিকেদার ছাতুদাদা-লাটুদাদাদের বাড়ি বা অফিসে ডাকাতি করি আমরা… ব্যাঙ্ক-ট্যাঙ্কের গেঁও হাই-তোলা ছলঘুমন্ত কেরানিদের অফিসেও ডাকাতি করি...আমাদের একজন গিয়ে ঢুঁ মেরে দেখে আসে কারা কারা শীর্ষকত্তা হয়েছে বা মাছ-গাছ-ঠিকেদারিতে পেল্লাই...সিঁধ কাটা বা হামলে পড়া যাবে...অপরিচিত শহর হলে সেখানের পথের কোনো ষাঁড়ের পিছুপিছু একজন যান পুরুত সেজে...ষাঁড়েরা ধনীদের বাড়ির খবর রাখে...দামি ফলটা-আশটা পায়...বড়সড় দাঁও মারতে পারলে ভালো...নয়তো ফলটল...মুর্গি-টুর্গি রেঁধে-পুড়িয়ে খেয়ে  উলঙ্গ কাটিয়ে দিই যত দিন পারা যায়...তবে আমাদের প্রেমিকাদের খাওয়াবার দায়িত্ব প্রত্যেক প্রেমিক নিজে নেন...তাঁদের আমরা অভুক্ত রাখি না কখনও...তাঁদের ডিপ্রেশানে ভুগতে দিতে পারি না...প্রেম অবিনশ্বর...আট হাজার বছর আগের গুহার দেয়ালেও আঁকা পাবেন...

          --তার মানে এই জঙ্গলেও পার্টিবাজি...কোন দল...এনি কালার হেটরেড...

          --আমরা কাউকে অচ্ছ্যুৎ অস্পৃশ্য মনে করি না...টু বি প্রিসাইজ...আমাদের চোখে সবাই ব্লাডি ফাকিং ব্ল্যাক...চুলের মতন... 

         --দুর্যোধনের বাল...নট চুল...

          --কালু ভদ্রলোক যা তাগড়া... ডাকাতিতে গাজোয়ারি বা ভয় দেখাতে সুবিধাই হয় ওনার সাহায্য নিয়ে...আফ্রিকার মানুষদের টেসটোসটেরনের মাত্রা বেশি...তাই তো ওনারা সব রকমের দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে... কোন আফ্রিকার লোক ? আজকাল আফ্রিকা তো নানারকম...অবশ্য আফ্রিকার লোকেদের দেখে কে যে কোন আফ্রিকার  বোঝা কঠিন...ডাকাতি ব্যাপারটা প্রকৃতিও মেনে নিয়েছে...এই তো জঙ্গলে যে গাছ যতো উঁচুতে ওঠে সে তার শেকড়কে তত তলায় নামাতে থাকে...ওপরে উঠতে হলে শোষণের জন্য নিচে নামতেই হবে…গোড়ার কাছে কাউকে মাথা তুলতে দেয়া হয় না...প্রকৃতির রাজনৈতিক নিয়ম...

         --টেসটোসটেরনের মাত্রা আমাগো কারোরই কম নয় দাদা...আমাগো প্রেমিকাদের সঙ্গে আলাপ হইলে জাইনতে পারবেন...কে কতটা ল্যাঞ্জাধারী...উনাদের হইলেই হইল...অরগ্যাজমের চাহিদা নাই...ইনফ্যাচুয়েশানের দুর্ভোগ নাই...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --নিউকামার মোসাই...ওসব শোষণ-শাসনের ইশতাহারি বক্তিমেবাজি ছাড়ুন...বলেছি তো...আমাদের ব্লাডি ফাকিং পারিবারিক সামাজিক অতীত নেই...মানে আমাদের ওপরে ওঠা আর নিচে নামার সুচিন্তা বা দুশ্চিন্তা নেই... কেলোর কোনো দেশ নেই...ছিল এককালে...এদেশে যেদিন ঢুকেছেন সেদিনই উনি নিজের ব্লাডি ফাকিং পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন...টু বি প্রিসাইজ...ধরা পড়ার পর…আদালতে কয়েকবার তোলা হয়েছিল ওয়াঁকে...তুললে বলতেন যে উনি এদেশেরই লোক...সরকার প্রতিবার হিমসিম খেতো প্রমাণ করার জন্য যে উনি এদেশের নাগরিক নন...যারা ব্লাডি ফাকিং এদেশের নাগরিক তারা গুচ্ছের কাগজপত্র যোগাড় করতে হাল্লাক হয়ে যায় নিজেদের নাগরিক প্রমাণ করার জন্য...যারা নাগরিক নয় তারা যে সত্যিই নাগরিক নয় তা প্রমাণ করার জন্য সরকারকে হন্যে হয়ে ব্লাডি ফাকিং প্রমাণপত্র খুঁজে মরতে হয়...গায়ের রঙ দেখে তো আর দেশ বোঝা যায় না...

          --আপনাদের সঙ্গে পরিচয় হল কী ভবে...

          --যেভাবে আপনার সঙ্গে হল...চোখাচুখি...টু বি প্রিসাইজ...আমরা একই ব্লাডি ফাকিং কারাগারে বিচারাধীন কয়েদি ছিলাম...আদালতে নিয়ে যাবার পথে কন্সটেবলদের পেঁদিয়ে পালাই...কেলোই সাহায্য করেছিলেন...আমি এই অঞ্চলের লোক হওয়ায় ডুয়ার্সের ঘাঁতঘোঁত ছোটোবেলা থেকে চিনি...তাই সবাইকে নিয়ে ভুটানের সীমায় এই গভীর জঙ্গলে চলে এলাম...এটা রিজার্ভ ফরেস্টের প্রায় নো ম্যানস ল্যান্ড...পর্যটকরা ল্যাংচাতে-ল্যাংচাতে এখান পর্যন্ত পৌঁছোতে পারেন না...আট বছর হয়ে গেল...বললাম তো...আমরা আমাদের পারিবারিক সামাজিক অতীত  ডিলিট করে দিয়েছি...পরিবার হলো অতীতের পরানো আপনার পায়ের মরচেপড়া বেড়ি...আর ভবিষ্যত হল আপনার সামনে লোভের সরকারি সেতু...মানুষের মতন মানুষ হয়ে বাঁচতে হলে...বেড়ি আর সেতু দুটো থেকেই ছাড়ান পেতে হবে...স্মৃতিকে ডিলিট করে ফেলুন...অতীতকে ক্ষমা করলেই ডিলিট করে দিতে পারবেন... আমরা অতীতহীন...কবে যে স্মৃতিহীন হবো জানি না...আপনার নাম আমরা জানতে চাই না...আমাদেরও কারোর কোনো নাম নেই...আপনিও আপনার  নাম-পদবি টুসকি বাজিয়ে ভুলে যান...  

          --হ্যাঁ...বাজালুম...ছেলেবেলায় আমায় ডাকনামে ডাকা হতো...তারপর ডাকনামটা একটু-একটু করে উবে গেল... ডাকনামে ডাকার লোকেরাও উবে যেতে লাগল...তারপর তাঁরা সবাই হাপিশ...ঠিকই বলেছেন...অতীত নিয়ে গর্ব করার মানে হয় না...তা নিজের হোক বা নিজেদের বা পরের...অতীত বললেই কেমন যেন একটা স্যাঁতসেঁতে প্যাচপেচে গন্ধ নাকে এসে লাগে...বিলডারে নিতে পারেনি...কাঙালিরা জবরদখল করতে পারেনি...এরকম... বনেদি কলকাতার নোনা ইঁটের ঝুরঝুরে কোম্পানি আমলের বাড়ি...

          --আপনার সঙ্গে ব্লাডি ফাকিং অন্যদের পরিচয় করিয়ে দিই...ইনি...ইনি...ইনি... আর আমি...কেলোকে তো নিজেই চিনে নিয়েছেন...আর যিনি মারা গেছেন তিনি ওইখানে কবরে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন...আই মিন চিরনিদ্রায়...

          --আপনিই নেতা ? আপনিই শুধু কথা চালিয়ে যাচ্ছেন...বুলির থান-থিত্তি ভালো...অথচ সকলের চেয়ে আপনিই বোধহয় বেঁটে... বেশ সখিমুখো আর ফর্সা...উকিলি ছিরিছাঁদও আছে...গাঁট্টাগোট্টা নেপোলিয়ানিক মুশকো জোয়ান...সিক্স প্যাক বুকপেট করে নিতে পারতেন…

         --আমাগো বাইঞ্চোত ফ্যামিলি প্যাক গোদলা তলপেটই কাজে দেয়...আমরা কুস্তি-প্রেম...নখরা-প্রেম করি না...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম মনে থাকেন যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --টু বি প্রিসাইজ...আমার হাইট চার ফিট সাত ইঞ্চি...আপনি তো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে চলেছেন...তাই ব্লাডি ফাকিং উত্তরও আমিই দিচ্ছি...সবাইকে পথ দেখিয়ে গভীর জঙ্গলে এনেছি...সবাই আমায় অনুসরণ করেছে...সুতরাং আমিই আমাদের স্বরাষ্ট্র  আর খুনোখুনির কর্ণধার...ইনি যানবাহন আর ছিনতাই… ইনি অর্থ আর চুরিডাকাতি…যিনি মারা গেলেন তিনি সংস্কৃতি আর রান্নাবান্না...ইনি...

          --এবার তাহলে ওনাকে জিগ্যেস করি...উনি আমার মতনই তামাটে আর মাঝারি...তবে টিঙটিঙে রোগা...আর ট্যারা চোখ... কোঁকড়া চুলও আছে আমার মতন...স্যার...আপনি আমাকে মারতে চাইছিলেন কেন...গুলি চালালেন আমাকে লক্ষ্য করে...ভাগ্যিস টিপ ফসকে গিয়েছিল...নয়তো মারা পড়তুম…রাইফেলটা নামিয়ে রাখুন...প্লিজ...

          --টিপ ফসকায় নাই...আপনারে বাইঞ্চোত সতর্ক করার জন্য গুলি চালাইয়াসিলাম...তাছাড়া বুইঝলেন কিনা... আপনে বন্দুক তাক করা হতেসে দেইখা দুইহাত উপরে তুইলা হ্যাণ্ডস আপ কায়দায় স্হির হয়্যা দাঁড়াইয়া পড়সিলেন... বুইঝতে পারলাম যে আপনে বাইঞ্চোত ট্রেসপাসার নন...কুনো ভিতু-ছাপ পথভুলা ট্যুরিস্ট বা ভুলাক্কড় বনবিজ্ঞানী...আপনের কাঁধে বইমেলার কবি টাইপের এই ঝোলা সাড়া আর কিসু নাই দেইখাও আস্বস্ত হইসি... বাইঞ্চোত  ঝোলা সার্চ কইরা কেবল আখরোট কাগজি বাদামের প্যাকেট জলের বোতল আর দুটা পেনসিল টর্চ... বুইঝলেন কিনা...সুতরাং আপনে পুলিসের টিকটিকি কিংবা বনবিভাগের গিরগিটি নন বইলা অনুমান করতে পারলাম...মিনারাল ওয়াটারের বোতল নিয়া সন্ন্যাসজীবন বাইছা নিয়াসেন…

         --জামা-প্যান্ট সার্চ করার সময় কাতুকুতু দিচ্ছিলেন কেন…

         --আপনের বেবি-কচ্ছপ চেক কইরা নিতে হইল... যে আপনে ব্যাটাছেলে না মেয়্যাছেলে...আর কুঁচকির ভাঁজে ছোরা-পিস্তল লুকায়ে রাখসেন কিনা তাও যাচাই করা বাইঞ্চোত জরুরি আছিল...

          --রাতে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় আওয়াজ শুনলেই টর্চ দুটো দুহাতে নিয়ে জ্বেলেছি...যাতে জংলি জীবজন্তুও আমাকে কোনো জানোয়ার মনে করে পালায়...দিনের বেলায় একটা হিজল গাছের তলায় ঘুমিয়ে নিয়েছিলুম...ওই যে নিচের দিকে জলের সোঁতামতন আছে...সেখানে…

           --দূর থেগে আবনাগে হারামি বলেই মনে হচ্ছিল...

          --হ্যাঁ...ওনার লক্ষ্য অব্যর্থ...আর্মি সেপাই ছিলেন তো...আর্মির ব্লাডি ফাকিং ডেজার্টার... 

          --রোজরোজ বাইঞ্চোত লেফট রাইট ভালো লাগত না আমার...বুইঝলেন কিনা...সৈন্যবাহিনীর কাজ যুদ্ধ করা...বেয়নেট দিয়া খোঁচানো...বিপদের ঝুঁকি ছাড়া বেঁচে থাকার কুনো মানে নাই...তা নয় আজ বইন্যা তো কাল ভূমিকম্প তো পরশু দাঙ্গা তার পরের দিন ট্রেন দুর্ঘটনা...এই সব কাজে লাগাইয়া জীবনটারে নষ্ট কইরা দিতে আছিল...তাতে গাঁইগুঁই কইরবার ফলে...বুইঝলেন কিনা...আমারে একজন কর্নেলের বাড়ির চাকর কইরা দিলে... ব্যাটম্যান...আজকাল যারে কয় সহায়ক...সায়েবের জুতার গু-গোবর  পরিষ্কার করা থিকা  ম্যাডামের ঝুলঝাড়া পর্যন্ত সবই কইরতে হইত...একদিন  পুরা বোতল ব্র্যাণ্ডি-টানা বেহেড ম্যাডাম আর কেইলে-পড়া কর্নেলের ঢলে পড়ার সুযোগে...উনার রিভলভার...রাইফেল আর বেশ কিছু কার্তুজ নিয়া বুইঝলেন কিনা… বাইঞ্চোত সটকে পইড়লাম...মিলিটারি পুলিস ধইরতে পারে নাই...ধইরলে কলকাতার পুলিস...রিভলভারটারে বিক্রি করার সময়ে...শালা যে গুণ্ডারে বিক্রি করতে গেলাম সে বাইঞ্চোতই পুলিসের ফাঁদ পাইতা ধরাইয়া দিলে...বাইঞ্চোত খোচর ছিল কী কইরাই বা জানুম...আইজকাল ভোটার-নাগরিকের চাইতা খোচর-ভোটারের সংখ্যা বেশি তা জাইনতাম না...তারপর তো শুইনলেন... কেলোদের সঙ্গে একই প্রিজন ভ্যানে  যাইবার সময়ে...বুইঝলেন কিনা...আমরা প্যাঁচ কইষা নিয়াসিলাম যে কন্সটেবলগুলারে পিটাইয়া পলাইমু… পলাইলাম...আর উনার ডুয়ার্সের অভিজ্ঞতার পিছন-পিছন...বুইঝলেন কিনা...নানা পথে বাইঞ্চোত পৌঁসাইলাম এই জঙ্গলে...সেসব আট বৎসর আগের গল্প...আপনে তো আমাদের ঘটনা শুনতে ব্যস্ত...নিজেরটা বলেন... কী কাজ কইরা পলাইতে আছিলেন...

          --ডাক্তারি করতুম...নার্সিং হোম খুলেছিলুম...যা হয় নার্সিং হোমে...অ্যাবরশানের কেস আসত...প্রথম দিকে আইনি গর্ভপাত করতুম...ক্রমে বেআইনি অ্যাবরশানও করতে আরম্ভ করলুম...তা বেশি রোজগারের লোভে মেয়ে পাচার দলের পাল্লায় পড়ে গেলুম...মেয়ে পাচারে সরাসরি যুক্ত ছিলুম না...পাচারকারীরা যেসব মেয়েদের ধরে আনত তাদের অপারেট করে ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিয়ে দিতুম যাতে ব্যবসায় নেমে পেটে বাচ্চা না আসে...কারোর ভালো করার দিনকাল আর নেই...আমি তো মেয়েগুলোর ভালোর জন্যই কাজটা করছিলুম...কোথায় অন্য রাজ্যের রেডলাইট এলাকায় বা আরব দেশ-টেশে গিয়ে যাতে বিপদে না পড়ে... হরিয়ানায় বিয়ে করার মতন মেয়ের সংখ্যা কমে যাবার ফলে পাচার বেড়ে গেছে...একই পরিবারে বাবা-কাকা-দাদা-ভাই-ছেলে-ভাইপো সবাই মিলে একটা মেয়ে কিনে পারাপারি করে কাজ চালাচ্ছে...কেনার আগে ওদের শিওর হতে হয় যে ফ্যালোপিয়ান টিউব কেটে বাদ দেয়া আছে কিনা…

         [ যাক...স্কাউন্ড্রেলগুলোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য গল্প নিজের সম্পর্কে বানিয়ে ফেলতে পেরেছি...নিজেকে ফেরারি অপরাধী না বললে এদের সন্দেহ হতে পারে...দেখা যাক...সাবধানে কথা বলতে হবে যাতে না বেফাঁস কিছু বলে ফেলি...ইনটেলিজেন্সের রিপোর্ট ছিল যে হেলিকপ্টার থেকে এই জঙ্গলে কেবল একজনকেই টার্গেট প্র্যাকটিস করতে দেখা গেছে...লঙ্গিচুড-ল্যাটিচুড ক্যালকুলেট করে লোকেট করেছিল ডিপার্টমেন্ট...বাড়িটা গাছে ঘেরা বলে বোধহয় দেখতে পায়নি...পাঁচ-ছয়জন রয়েছে জানা থাকলে সম্পূর্ণ টিম নিয়ে আসা যেত...আট বছরের পুরোনো ফেরারি বলেই হয়ত এদের ফাইলগুলোয় ধুলো জমেছে...কেস ডরম্যান্ট হয়ে আছে... ]

          --তা করতে গিয়ে ব্লাডি ফাকিং মেরেও ফেলেছেন হয়তো...কোথায় আপনার নার্সিং হোম...কোন পাড়ায়...কত নম্বর বিল্ডিং...

          --হ্যাঁ...একটা মেয়ে মরে গেল...তার পেটে আগেই বাচ্চার জেলি তৈরি হওয়া আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল...হাওড়ার ভোজপুরি মিউজিক রোডে...পাবলিক আমার নার্সিং হোম ভাঙচুর করলে...ঘুষের টাকা খেয়েও কন্সটেবলরা হাজতে ঠ্যাঙালে... জামিনে ছাড়া পেয়ে...ব্যাস...ভাবলাম সন্ন্যাসী হয়ে যাব হিমালয়ে গিয়ে...নয়তো জেল খাটতে হত...   

            --দুর্যোধনের বাল...চলুন...আমাদের জাঙাল-বাড়িতে যাওয়া যাগ...বুজে ফেলেচেন নিশ্চই যে আমাদের সঙ্গে আবনাগে থাগতিই হবে...পালাবার চেষ্টা করবিন না...নো এগজিট...পালাবার চেষ্টা করলিই পকাৎপঙ...

          --বুইঝলেন কিনা...আমরা কেউই পলাইবার চেষ্টা করি না...একসঙ্গে থাইকবার বাইঞ্চোত শর্ত হইল যে কেউ যদি পলাইয়া যাইবার চেষ্টা করে...আর যদি সে ধরা পইড়া যায়...তাইলে অন্যেরা সালিসি সভা ডাইকা তার বিচারের নাটক কইরা...সামারি এগজিকিউশান করবে...মইরা যাইবার পরে যেইহানে তারে গোর দিয়া হইবে সে জায়গাটা তারে দিয়া আগে থিকা খুঁড়াইয়া রাইখা হইবে...মেজরিটি ডিসিশান ইজ ফাইনাল...ফলে কেউ কারোর নজরদারি করি না...তবে...বুইঝলেন কিনা...বাইঞ্চোত একটা ঘটনা ঘইটা যাইবার পর প্রতিরাতে একজন জাইগা পাহারা দেই...কেননা পুলিস বা পোচার বা ফরেস্টের পাহারাদার এখানে পৌঁছে গ্যালেই ক্যাওড়া...           

         --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

         --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --আর কোথাও পালাবার জায়গা নেই দাদা...ভেবেছিলুম  নেপাল-ভুটানের জঙ্গলে একাই কাটিয়ে দেব... ভাগ্য ভালো যে আপনাদেরও পেয়ে গেলুম...নজরদারির কথাটা তুলে ভালো করলেন...পশ্চিমবঙ্গের শহরে থাকুন বা গাঁয়ে...আসেপাশের মানুষ সব সময় আপনাকে নজরে-নজরে রেখেছে...পাড়ায় পাড়ায়...দুই দলের দুটো করে ডোসিয়ার তৈরি হয়ে গেছে আপনাকে নিয়ে...কোথায় যাচ্ছেন...কার সঙ্গে মিশছেন...কোথায় চাকরি করেন... কত টাকা রোজগার করেন...কোন ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট...পোস্ট অফিসে কত টাকা আছে...নিজের বাড়ি না ভাড়া...কত ভাড়া দেন...কার কাছে সবজি কেনেন...কোন মাছ কেনেন জিওল না কাটাপোনা...বাঙাল ছিলেন না ঘটি...জবরদখল না নিজের জমি...মলে-মালটিপ্লেক্সে যান কিনা...পিওন কার চিঠি এনে দিল...কাকে চিঠি লিখছেন...কাগজের সম্পাদকদের নালিশ-চিঠি লিখছেন কিনা...কার বাড়ির দিকে তাকিয়ে বেশি দ্যাখেন... কোন দিকের জানলা খুলে রাখেন...কোন টয়লেট রোল পড়েন... ইত্যাদি...কত্তাবাবা বা কত্তামা নয়... চুনোটেঁটিয়ারা নজরে নজরে রেখেছেন...সবাইকে...কত্তাবাবা বা কত্তামা নজরে রাখেন চুনোটেঁটিয়াদের...  

          --তা যা বলেচেন...আমাদের জাঙালে অমন বাবা-মা সিস্টিম নেইকো...দুর্যোধনের বাল...আবনাগে পেয়ে...আমরাও মরা সহখুনির জায়গায় আরেগজন সহখুনি পেয়ে গেলুম...ওনার শোবার ঘর আর জিনিসপত্তর আবনার কাজে লাগবি...যদিও উনি আমাদের সঙ্গে জাঙালের বাইরে যেতিন না...মুর্গি খুন...খরগোশ খুন...এই কাজগুনোর ভার নিয়েছিলিন...রান্নাবান্না...সংসার...দেকাশোনা...ফ্লিট মারা...সদর দরোজা বন্দ করা...রোদলন্ঠন রোদে রাখা... 

          --সহখুনি...আপনারা সবাইই কি খুন করেছেন নাকি...আমি তো বেশ ডিজেক্টেড ফিল করছিলুম যে সমাজের একটা আউটকাস্ট ক্যাটগরিতে চলে যেতে হল...ওই যাকে বলে অমরতা...অমর হয়ে ওঠা...লোকের মুখে-মুখে নাম হয়ে ঘোরা...মিডিয়ায় হেডলাইন...সম্পাদকীয়...টিভি-আলোচনার রসেড়া...যাক...আপনারাও খুনি হয়ে উঠেছেন…

         --বাইঞ্চোত...আপনে নামহীন হইলে সে সমস্যায় পড়তেন না...

          --টু বি প্রিসাইজ...আপনাকে তো একটু আগে উনি বললেন যে আমরা ডাকাতি করে জীবন চালাই... আই মিন অতিবাহিত করি...তাই করতে গিয়ে সকলেই খুনি হয়ে উঠেছি...এই হয়ে ওঠা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিতে হবে...তবে যাদের যাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছি তারা ব্লাডি ফাকিং মরে গেল কি না...তা চেক করার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করিনি কখনও...অনুমান করা যায় যে বুকে বা মাথায় গুলি মারার পর ওয়াঁদের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ...দেশের স্বাস্হ্য ব্যবস্হার প্রতি আমাদের আস্হা আছে... 

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --এর পর আর হয়ে ওঠা নেই...এটাই হয়ে ওঠার শেষ ধাপ...খুন করা...মানুষকে খুন করা...আমার হাতে মেয়েটা যখন মরে গেল তখন এই কথাই উপলব্ধি করলুম...যে হত্যাই হল মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অভিমুখ...যত হত্যা...তত উন্নতি...গণহত্যা হলে তো কথাই নেই...তবে আরেকটা কথাও মনে হয়েছিল… বুঝলেন...

          --কী ? তাও বাইঞ্চোত উপলব্ধি ?

          --নারী আর পুরুষের সম্পর্ক নষ্ট করে দ্যায় তাদের শরীরের ডিসগাসটিং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-রস-রসায়ন...

          --তার ব্লাডি ফাকিং মানে...

          --ওই যেমন ফ্যালোপিয়ান টিউব...তেমনই জরায়ু… ওভুলেশান… বীর্য… টেসটোসটেরন… প্রজেস্টেরন...হরমোন... টেসটিকাল্স… আড্রেনালিন… অ্যান্ড্রোজেন...এসট্রোজেন...ফলিকল... ইউরেথরা...ফেরোমোন...অরগ্যাজম...এটসেটরা এটসেটরা...কত মানুষ যে এগুলোর জন্য খুন হয়...হেরে যায়...ভেস্তে যায়...নিজেই নিজের জীবন নষ্ট করে ফ্যালে...তার ইয়ত্তা নেই...নারী-পুরুষে প্রেমের পথে প্রধান বাধা হলো এই সমস্ত রস-রসায়ন-অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ...প্রেমকে সাংস্কৃতিক ব্যাপার করে ফ্যালে...পদ্যমদ্যখাদ্যবাদ্য... 

        [ স্কাউন্ড্রেলদের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাবার অপমানজনক দুর্গতি হল নিজেকেও স্কাউন্ড্রেলের স্তরে নামিয়ে নিয়ে যেতে হয়...জীবনে কতবার যে এভাবে নামতে হয়েছে...সেসব স্কাউন্ড্রেলরা নিজেদের কেউকেটা প্রমাণ করতে চাইলে আরও ঝামেলা...মানসিক অশান্তি…এই স্কাউন্ড্রেলটার মুণ্ডু গিরগিটির মতন ঘুরতে থাকে...কেলো লোকটা যেন চৌমাথায় কাকে-হাগা নিশ্চল মূর্তি...]

         --কথাগুনো সত্যি...আমরা আমাদের প্রেমিকার সঙ্গে নারী-পুরুষ  নোংরা মিশনারি প্রেম করি না...অন্য উপায় আবিষ্কার করে ফেলতে বাধ্য হয়েছি...পবিত্র প্রবৃত্তি...বিশুদ্ধ...লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট...গোইং স্টেডি… প্রেমিকারা আমাদের সোল মেট...মর্ম বিনিময় করি...

          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকার অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          --ওঃ কেলো...প্লিজ স্টপ রিপিটিং দি প্যারট’স সঙ...

          --দেন হোয়াই দিস স্ট্রেঞ্জার ইজ নট টকিং টু মি...

          --টু বি প্রিসাইজ...লেট আস ফার্স্ট গেট এ ফিল অফ ইচ আদার দেন ইউ মে ব্লাডি ফাকিং  টক টু হিম... হি ইজ টেলিং আস অ্যাবাউট হিমসেল্ফ...উই আর টেলিং হিম অ্যাবাউট আওয়ারসেল্ভস...হোয়েন ইওর টার্ন কামস ইউ টক অ্যাবাউট ইওরসেল্ফ...

          --ওকিপোকি...

          --কালোর কন্ঠস্বর বেশ খসখসে...ভারিক্কি বাঁশড়া...

          --ব্লাডি ফাকিং কী কথা হচ্ছিল যেন..

          --হত্যা করা নিয়ে কথা হচ্ছিল...মানুষ খুন করাই মানব সভ্যতার উত্তরণ...আর তা-ই হল প্রথম আর শেষ রাজনীতি...

          --ইউ আর রাইট...মাই মম সেড সো...

          --তা যা বলেছেন...তাছাড়া নৈতিকতা আর কী...

           --একজন মানুষ খেতে পাচ্ছে না...ফুটপাথে দুমড়ে পড়ে আছে...অথচ আশেপাশে সবাই খেয়েদেয়ে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে সূর্যোদয়ের দিকে মিছিল করে এগিয়ে যাচ্ছে...মুখে গান...হাতে  পতাকা পতপতাচ্ছে...রাতের বেলা হলে হাতে চর্বিজ্বালা মশাল...যেতে যেতে তাদের ভুঁড়ি ক্রমশ ঢাউস হয়ে চলেছে...গাল ফুলে মোদো গোলাপি...দ্যাট ইজ দি আলটিমেট অ্যাচিভমেন্ট... 

          --তা যা কইসেন...বাইঞ্চোত...খাইতে না পাইলে দুমড়াইয়া পইড়া থাকা সালা উপায় নাই...

          --ইউ আর রাইট...মাই মম সেড সো...         

          --আপনারা সিগারেট-টিগারেট লুটে-কিনে আনেন না ? আমার কাছে কয়েকটা বিড়ি আছে...অনুমতি দেন তো ফুঁকে নিই...একটু ফুঁকে নিলে পেটটা হালকা করতে পারব...আখরোটের মোচড় দিচ্ছে মাঝে-মাঝে...

          --ফুঁকুন...কিন্তু দেশলাই কাটি নষ্ট করবিন না...আমাদের জাঙাল-সমবায়ে ওটি বেশ জরুরি... এখেনে কারোর কোনো কিচুর অনুমতি নিতি হয় না...প্রেমিকার ব্যাপার ছাড়া...আমরা কেউই চা-কফি সিগারেট-বিড়ি খাই না...শুদু গ্যাঁজা ফুঁকি...এবার ডাগাতি করতি বেরোলি আবনি আবনার দরকারি বিড়ি-সিগারেট-দেসলাই  কিনি কিংবা তুলি নিবেন...বা যদি সঙ্গি না যান থালে আমরাই নিয়ে আসব...কোন ব্র্যাণ্ডের বিড়ি ফোঁকেন ? আমরা যে যার প্রেওজনের জিনিস ডাগাতির সময়ে ব্র্যাণ্ড মিলিয়ে তুলি নিই...নয়তো বেশ দূরে-দূরে গিয়ে কিনতি হয়...পাশের রাজ্যে...চাদ্দিকে আজগাল সিসিটিভির ঝুটঝামেলা...আমার মতন উনিও মদ খেতে ভালোবাসেন বলে মাজে-সাজে বেসবল ক্যাপ পরে মাঝরাতে মদের দোগানে গ্রিল ভেঙি ঢুঁ মারতি হয়...  

          --চলুন আস্তানার দিকে হাঁটা যাক...আপনাকে আপনার ব্লাডি ফাকিং ঘরটা দেখিয়ে দিই...ঘরটা তিনতলায়...সিঁড়িটা ঘোরানো...আগেকার কালের...সামলে-সুমলে ওঠানামা করতে হয়…রাতের বেলায় বেশ রিস্কি...রোদলন্ঠন আছে অবশ্য...কনেলন্ঠন...

          --তার চেয়ে বরং একটু জিরিয়ে নেয়া যাক এখানে বসে...সেই তিন দিন থেকে হাঁটছি... আপনারাও তো গোর দেবার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে ক্লান্ত হয়ে গেছেন বলে মনে হচ্ছে...দূরে ওই গুঁড়িটার ওপর বসে গ্যাঁজানো যাক... কী বলেন...ছায়ায়...

          --হ্যাঁ...কি বলে গিয়ে...ভোঁসড়ির ছ্যানা আমি বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি...

          --আপনি কি ছোটোবেলা থেকেই এরকম গৌরবর্ণ-খ্যাংরাটে...কন্ঠস্বরও বেশ মিহি ধরণের...জাপানিদের মতন দেখতে অনেকটা...চিন-জাপানে ছিলেন নাকি...

          --কি বলে গিয়ে...আমি বাগবাজারের বনেদি পরিবারের...ভোঁসড়ির ছ্যানা কেন যে অমন তিরিক্ষি স্বর তা জানি না...প্রথম থেকেই রোগাটে ছিলাম না...বসে কথা বলি...কী বলেন...আসুন...সবাই এখানেই বসি...আপনি এদিকে মুখ করে বসুন তাহলে কথা কইতে সুবিধে হবে...তা...হ্যাঁ...বাবা ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করতেন...আমি স্কুলে পড়ার সময় মোটাসোটা ছিলাম...কি বলে গিয়ে...স্কুল থেকেই ঘোড়দৌড়ে আকৃষ্ট ছিলাম...বাংগালোরে  বাড়ির কাছেই হর্স ব্রিডারের ফার্ম ছিল...ভোঁসড়ির ছ্যানা... হ্যাণ্ডলারদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের ফলে ঘোড়ায় চড়া শিখে ফেললাম...ঘোড়ার জাত...কোন ঘোড়া কেমন দৌড়োয়...সব শিখতে শিখতে জকি হবার শখ হল...জকি হবার জন্য ট্রেনিং নিতে হয়...বাংগালোরে যে ব্রিডিং সেন্টারে ট্রেনিং নিচ্ছিলাম তার মালিক সাফারিওয়ালা আমায় একদিন ঘোড়া হ্যাণ্ডলিং করতে দেখে ট্রেনারের কাজে লাগিয়ে দিলেন...ইলেকট্রিকাল ইনজিনিয়ারিং পড়া ভোঁসড়ির ছ্যানা লাটে উঠে গেল...ঘোড়ার ট্রেনারের পাশাপাশি জকির ট্রেনিংও নিতে লাগলাম...উনি আমাকে একটা ঘোড়া দিয়ে বললেন যে তাকে দুবছরের মধ্যে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আগামী রেসে ভালো ফল করে...কি বলে গিয়ে...দুবছর পরে ভোঁসড়ির ছ্যানা ঘোড়াটা সত্যিই ভালো ফল করল...দৌড়ে প্রথম হল না...কিন্তু দ্বিতীয় হল... 

         -- মেয়ে-ঘোড়া না ছেলে ঘোড়া ?         

         --মেয়ে-ঘোড়া...মেয়ে-ঘোড়া...ছেলে-ঘোড়ারা সামলে-সুমলে দোলাতে-দোলাতে তেমন ছুটতে পারে না...ঘোড়াদের তো আর ল্যাঙোট পরানো যায় না...তা ঘোড়াকে জেতানোর বিশেষ একটা ট্রিক আবিষ্কার করে ফেলেছিলাম আমি...পরের বছর কিন্তু ঘোড়াটা সবকটা রেস জিতে সাফারিওয়ালাকে এত খ্যাতি আর টাকাকড়ি এনে দিলে যে উনি ভোঁসড়ির ছ্যানা আমাকে ওনার চিফ ট্রেনার করে নিলেন...বেশ চলছিল...হুসেইনি কাওয়াসজিরা ওদের স্টাডফার্মে আমাকে ট্রেনার হিসাবে নেবার জন্য চারগুণ মাইনে দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে...সে একেবারে টানাহেঁচড়া...আমি রাজি হইনি...আমার ঘোড়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা কেন করব… বলুন… কাওয়াসজিরা আমার কয়েকজন হ্যাণ্ডলারকে হাত করে একদিন আমার রেসের ব্লু আইড গার্ল নামের ঘোড়াকে লুকিয়ে বোলডেনোন  আর স্ট্যানোজোলল অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ঠুঁসে  দিলে...কলকাতায় রেস হয়েছিল...ঘোড়দৌড়ে ভোঁসড়ির ছ্যানা কেমিকাল দুটো নিষিদ্ধ...কি বলে গিয়ে অ্যাথালিটদের যেমন  স্টেরয়েড অচল তেমন ঘোড়ার দৌড়েও নানা স্টেরয়েড নিষিদ্ধ... 

       --স্টেরয়েড ?

        --অ্যাথালিটদের মতনই...দৌড়ের আগে ঘোড়াদের রক্ত কালেক্ট করে পরীক্ষা করা হয় যে তাকে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড দেয়া হয়েছে কি না...কিন্তু শালারা আমাকে ফাঁসাবার জন্য ঘোড়ার পেচ্ছাপও চেক করেছিল...পেচ্ছাপে স্টেরয়েড পাবার পর ভোঁসড়ির ছ্যানা চারজনের অনুসন্ধান কমিটি গড়া হয়েছিল...কিন্তু ল্যাবরেটরির প্যাথলজিস্ট সান্তনমের সঙ্গে আমার খাতির ছিল...সে  আমাকে বললে যে ঘোড়ার পেচ্ছাপে আরও এক্সট্রানিয়াস এলিমেন্ট পাওয়া গেছে...আমি বুঝতে পারলাম কী এলিমেন্ট...কেননা সেই রসায়নেই জিতে যেত আমার ঘোড়া...নিষিদ্ধ স্টেরয়েড ব্যবহার করার জন্য আমি প্রথমে সাসপেন্ড আর তার কয়েকদিন পর অ্যারেস্ট হলাম...জানতাম...ভোঁসড়ির ছ্যানা যে এলিমেন্ট পাওয়া গেছে তা জানাজানি হলে অনেক বছরের জেল খাটতে হবে...আদালতে যেদিন নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন আমাদের সঙ্গে পুলিশের গাড়িতে  কেলো… ইনি… ইনি… ইনি… ইনি...আর যিনি মারা গেছেন তিনি ছিলেন...যিনি মারা গেছেন মানে আমাদের যে সঙ্গী ভোঁসড়ির ছ্যানা আত্মহত্যা করে নিলেন...কেলো মারামারি আরম্ভ করতেই ওনারাও মারামারি আরম্ভ করে দিলেন... কন্সটেবলগুলো মার খেয়ে অন্যমনস্ক আর আধথেঁতলা  হতেই সবায়ের সঙ্গে আমিও পালালাম...ওনারা না থাকলে পালাতে পারতাম না...আমাকে দেখছেন তো ভোঁসড়ির ছ্যানা একেবারে প্যাংলা টিঙটিঙে...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার  নকল করবেন না...

          --এলিমেন্ট বলছিলেন...কী এলিমেন্ট...ভেটেরিনারি ডাক্তার নই...তবু কিছুটা আইডিয়া করতে পারব... 

          --কি বলে গিয়ে...ভোঁসড়ির ছ্যানা সে আরেকদিন শুনবেন না হয়...

          --নিউকামারবাবু...উনার কথাগুলা আমিই বলতেসি...বুইঝলেন কিনা...না শুইনা আপনের মন বাইঞ্চোত খচখচ কইরবে...তার চাইতা এখনই শুইনা নেয়া ভালো...উনি রেসের আগের দিন বাছাই ঘোড়ার সঙ্গে বাইঞ্চোত একাত্ম হইতেন...

          --হোয়াট ডু ইউ মিন বাই একাত্ম...দ্যাট অলসো উইথ এ ফিলি...মানুষের আত্মা হয় বলে শুনেছি... যাদের প্ল্যানচেট করে ডেকে আনা যায়...ঘোড়ার আত্মার কথা তো শুনিনি মশায়...অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য যে ঘোড়া ছাড়া হতো তাদেরও আত্মা হতো বলে পড়িনি...মানে গল্প-টল্পতে পড়িনি...অনেক বড়ো পেনিসের শাদা ধবধবে ঘোড়া বাছাই হতো তা শুনেছি বটে...

         --ব্লাডি ফাকিং...শাদা ঘোড়ার  শাদা পেনিস হয় না...পুরাণলেখকদের এত ক্ষমতা ছিল...শাদা করে দিলেই পারতেন...

         --ছোটোদের পুরাণ বইতে কিন্তু যে ছবি আঁকা ছিল তাতে পেনিস শাদা রঙের ছিল...মনে আছে...সেই কবে পড়েছিলুম…

         --মানুষ যতই ফর্সা হোউক পেনিস বাইঞ্চোত কালো হয়...যতই আপনে ফেয়ার অ্যাণ্ড লাভলি লাগান...

          --উনি আকস্মিক ভাবে আবিষ্কার করেছিলেন এলিমেন্ট প্রয়োগ করার ব্যাপারটা...এই ব্যাপারে উনি পথ প্রদর্শক...ওয়াঁর কাছ থেকেই আমরা শিখলাম...এলিমেন্ট প্রয়োগ করার কৌশল...আপনিও শিখে ফেলবেন...একবার শিখে ফেললে আর অভ্যাস ছাড়তে পারবেন না...জঙ্গল ছেড়ে বেরোতে ইচ্ছে করবে না...বাইরে বেরিয়ে পৃথিবীকে মনে হবে আনসিভিলাইজড...বর্বর...প্রাগৈতিহাসিক...অশিক্ষিত...

             --এলিমেন্টকে আপনি উপাদানও বলতে পারেন...রেসে ব্লাডি ফাকিং ঘোড়াদের জিতিয়ে আনার ট্রিক...

          --কি বলে গিয়ে...উপাদান বলতে ভোঁসড়ির ছ্যানা যা বোঝায় আরকি...ও আপনি আমাদের সঙ্গে থাকতে-থাকতে জেনে যাবেন...উপাদান প্রয়োগ করতে শিখে যাবেন...

          --অন্য কোনো রসায়ন ? 

          --নিউগামার স্যার...আবনি এত ইনগুইজিটিভ কেন...এত তাড়াতাড়ি...এই তো সবি এস্চেন...এখুনও তো আমাদের আস্তানায় ঢুকি অতিথি তগমাও পাননি...আবনাকে বিশ্বাস করব তবি তো…

           --বিশ্বাস ব্যাপারটাকে কেউ আর বিশ্বাস করে না...ভোটাররাও করে না...পুরুতদের কথা না তোলাই ভাল...

          --ভোঁসড়ির ছ্যানা রেসের আগের দিন সন্ধ্যায়...অন্য হ্যাণ্ডলারদের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম… তারপর যে ঘোড়া রেসে যাবে সেই ঘোড়াকে ওই ট্রিকটায় বশীভূত করে নিতাম...

          --কী করতেন ?

          --বশীভূত করে  ফেলতাম...হিপনোটাইজ...সন্মোহন...

          --ঘোটকীকে বশীভূত ? ঘোড়ার তো আঙুলও হয় না যে বেণিমাধব শীলের পাঁজি দেখে বশীকরণের আঙটি কিনে পরাবেন...অ্যাবসার্ড...        

           --চোখ বুইজা বাইঞ্চোত কল্পনাজগতের পিঠে দুইহাত রাইখা কিছুক্ষণ শান্তিতে কাটানোর চাইতা অ্যানজেলিক স্হিতি আর কী-ই বা হইতে পারে...বাইঞ্চোত ইউ ফিল ইউ আর গডস বায়োলজিকাল ফাদার... 

         --মারহাবা...ভোঁসড়ির ছ্যানা...ঘোড়া আমার..ফিল করছেন উনি...

          --মশায় আমি তো গডই জানি না...তার বাপকে কি করে জানব...কিন্তু ঘোটকীর মসৃণ পিঠে হাত বোলাবার অভিজ্ঞতা ফিল করতে পারি...স্মুথ...সিলকি...লিসাম...ডিলিরিয়াস…

         --আমরা বাইঞ্চোত যে যার প্রেমিকাগো আগাপাশ হাত বুলাই...তার জন্য চরিত্রের ভিতরে নাইমা পড়তে হয়...টুপ...ঝুপুস...আলোকিত হয়্যা উঠবেন আপনে...

          --কেলোর একটা গড আছে...তার নাম ভোদুন...উনি তো অ্যানিমিস্ট...ওনাদের ট্রাইবটা ইসলাম বা খ্রিশ্চিয়ানিটিতে কনভার্ট হয়নি...ওয়াঁর গডের কাছে হ্যাঁ বললে যা বোঝায়...না বলতেও তা-ই বোঝায়...

          --এখানেও সেই গডকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নাকি উনি...আপনারা সবাই অ্যানিমিস্ট হয়ে গেছেন ?

          --না...আমরা ফাকড বাই গড…

         --ভগবানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার...

          --আপনার ভয়েসটা বেশ স্টিরিওফোনিক...

          --হ্যাঁ...আমি চেঁচিয়ে ভগবানের অন্ধকার  কালা কানও খুলে দিতে পারি...কেউ এদিক-ওদিক চলে গেলে আমিই বাইসন ষাঁড়ের হাম্বা পাড়ি...মুশকিল হল হাম্বা শুনে অনেক সময়ে ঋতুমতি মাদি বাইসন চলে আসে...আমরা পারভার্ট হতে পারি...লম্পট নই...ষাঁড়ের মতন একপন্হী...ওয়ান অ্যাট এ টাইম...ফলো টু দি এন্ড অব দি আর্থ টু লাভ ইওর প্রেমিকা...শাশ্বত প্রেম...নিঃস্বার্থ ভালোবাসা...

          ---পার্ভারসান ইজ এ ফর্ম অফ আর্ট...নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ টয়লেট কোম্পানির  টিয়াপাখিটা ঘুরিয়ে সে কথাই বলে বলে টিকে গেল...অথচ  অন্যটাকে জংলি বেরাল-শেয়াল-ভাম খেয়ে ফেললে...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --অমন অ্যানোরেকসিক আঁকালো বাঁশ চেহারা নিয়েও এখানে এসে নতুন প্রেমিকা যোগাড় করে নিতে পারলেন ?

          --হ্যাঁ...পারব না কেন...প্রেম ছাড়া তো ভোঁসড়ির ছ্যানা গুহার দেয়ালে আঁকাই সম্ভব ছিল না...আমি আমার প্রেমিকার সঙ্গে রোমান্টিক রিলেশানশিপে আছি...আপনাকেও পাইয়ে দেব...সুইট অ্যান্ড সালট্রি… কচিকচি...ভেজা ভেজা...ধারা চারশো আটানব্বুই এ-র ভয়ভাবনা নেই... 

          --আপনারা বলছেন আপনারা ডাকাত আর খুনি...একই সঙ্গে প্রেমেরও খোল-করতাল বাজাচ্ছেন... পারভারসানকে বলছেন আর্ট...আধুনিক সমাজে থাকলেই তো হতো...যেমন হাফ-অপরাধীরা আর মহাঅপরাধীরা থাকেন...সামাজিক লোকজন তো এই ধরণেরই কথাবার্তা সভা-সমাবেশে মাঠে-ময়দানে র‌্যালির‌্যালায় বলেন...

          --টু বি প্রিসাইজ...আমরা ব্লাডি ফাকিং কমিটেড সোলস...নিদার গুড নর ইভিল...আমরা দায়বদ্ধ... আপোষহীন...আমরা উইকেড...ইন লাভ অ্যান্ড লুট…

         [ কতগুলো যুবতীকে কিডন্যাপ করে এনেছে এরা...কোথায় লুকিয়ে রেখেছে...ক্রীতদাসী হিসেবে কোথাও বন্ধ করে রেখেছে...সেসব তো কিছুই বলতে চাইছে না...কেবল প্রেমিকা-প্রেমিকা ভেঁজে চলেছে...একা না এসে পুরো টিম নিয়ে আসা উচিত ছিল…]

          --নাঃ...কিছুই মাথায় ঢুকছে না...আপনারা বেশ শিক্ষিত সংস্কৃতিমান মজাজীবি বলেই তো মনে হচ্ছে...আমি নিছক ফিকে ছিঁচকে...এই জঙ্গলে কি করেই বা সাসটেন করেন...জ্ঞানের জন্য তো শহরে থাকা জরুরি...নয়কি...বই...সংবাদপত্র...টিভি...স্মার্টফোন...ইনটারনেট...চায়ের টেবিল...কফি... কলম-ডায়েরি… মদের বোতল-টাকনা...পরচর্চা...অক্কাদেমি...সম্বর্ধনা...বক্তৃতা...বিতর্ক...বিদেশি  ফিল্ম...পিঠচুলকানি...এসব  ছাড়া জ্ঞানের অ্যালঝিমার হবার চান্স বেশি...

          --ওই যে তিনতলা পুরোনো বাড়িটা দেখছেন...ভেতরে দেয়ালগুলোয় বার্মিজ টিক উডের প্যানেলিং...যে বাড়িতে আমরা আজ প্রায় আট বছর আছি...ওটা কখনও কোনো ব্রিটিশ চা বাগান বা চটকল মালিকের ব্লাডি ফাকিং  আস্তানা ছিল...সিপিয়া হয়ে যাওয়া মহিলাদের ফোটো আছে...মহিলারা শুয়ে...হেলান দিয়ে..নানা খেলা খেলছেন... পেরেকে-পেরেকে...ওপরের ঘরে...যে ঘরটা...যিনি মারা গেলেন তাঁর ছিল...আর এখন আপনাকে অ্যালট করা হচ্ছে...ওয়াঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের বইপত্র আছে...কয়েকজন প্রিন্সলি স্টেটের রাজারাজড়ার জাঁকজমকদার ফোটো আছে...টু বি প্রিসাইজ...বহু পুরানো বইপত্র...ঘাঁটলে হাঁচি পায় এমন বই...হেঁচে নাক দিয়ে জল পড়ে এমন বই...তাঁমাদি শতকের বইও আছে...হাতে লেখা বই... কাঠখোদাই করা বই...নেগলেক্ট...পোকা... আর সময়ের ধুলোয় অবশ্য অনেক বই নষ্ট হয়ে গেছে...যখন আমরা জঙ্গলে ঢুকি তার প্রায় মাস চারেক পরে ঘোরাঘুরি করতে-করতে ব্লাডি ফাকিং বাড়িটা আবিষ্কার করি...  ওই যে গাছগুলো দেখছেন...বাড়িটাকে ঘিরে রয়েছে...লক্ষ্য করে দেখুন...ওগুলো এই জঙ্গলের গাছ থেকে আলাদা...ডুয়ার্সে এলম পপলার সিলভার-বার্চ ওক উইলো অ্যালডার হয় না...ওই গাছটা দেখছেন...লাল রঙের ফুল ওটা রোয়ানে...তার থেকে দূরে বাঁদিকে ওই গাছটা হথর্ন ওর ফলন থই-থই ফলগুলো পাকা লিচু বলে মনে হতে পারে...তা থেকে আরও পেছনে কয়েকটা গাছ দেখা যাচ্ছে...ডালে ডালে লাল রঙের ফুল...ওগুলো পলাশ নয়...রেড মেপল...ওই মানে ইয়ে...ব্লাডি ফাকিং ইংরেজরা পপলার গাছে মিসলটো পরগাছা লাগায়...সেই মিসলটো রয়েছে দেখুন পপলার গাছে...উনি অনেক ফুলের গাছও পুঁতেছিলেন...অনাদরে সেগুলোর বীজ পড়ে-পড়ে শীতের পর ফুটতে শুরু করে...ওয়াইল্ড রানঅ্যাওয়ে ফ্লাওয়ার্স…

         --ইংরাজরা আসবার আগে থেকেই বাঙালিরা পরগাছাপ্রেমী...নেপোপ্রেমী...মোসায়েবপ্রেমী...

          --গাছপালা ফুলফলের বিশেষজ্ঞ ছিলেন নাকি স্যার...আপনার গলার স্বরও দালের মেহদির মতন রোমান্টিক...গানও গান বা গাইতেন নিশ্চয়ই... এত ভালো গলাকে অপচয় করে বুড়িয়ে দেবার  মানে হয় না... বাকচালাক নেতা নেপোলিয়ানের কন্ঠস্বরও নাকি গমগমে ছিল... 

          --হ্যাঁ...বুইঝলেন কিনা...ওয়ান্স ইন এ হোয়াইল উনি বাইঞ্চোত ভাঙা গলায় গান গাইয়া শোনান আমাদেরকে...যিনি মারা গ্যালেন তিনি গিটার বাজাইয়া ভাটিয়ালি গান গাইতেন...দালের মেহদি কি স্কচ ভাষার গান করেন...তুরুত্তু  তুরু তুরু গানটা  স্কচ...আইজকাল অবশ্য বাঙালি গায়ক-গায়িকারাও বাংলা ফিল্মে স্কচ গান প্লেব্যাক কইরা শোনান...চিৎফাঁদ বানাইল তোরে...তুরুত্তু তুরু তুরু...কেন-কিঁ তুরু তুরু...কেন-কিঁ তুরু তুরু...

          --ভালোই হল...আমিও গিটার বাজাতুম...তবে বাংলায় গাইতে পারি না...যে ঘরটা অ্যালট করলেন সেখানেই আছে গিটারটা তো...নাকি…

        --হ্যাঁ...যিনি মরি গেলেন...তাঁর ঘরিই রাকা আচে...আবনি মনের সুখে ড়িং ড়াং টিং টাং কত্তে পারবেন...আমরা যখুন আমাদের প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করব...তখুন বাজাবেন...বেশ প্রেম-প্রেম আবহাওয়া গড়ে উটবে… টেসটোসটেরনে টইটুম্বুর...চকাচক...জাঙাল জবজবে...

          --আগে চলুন...কি বলে গিয়ে...ভোঁসড়ির ছ্যানা ফুলের গাছগুলো দেখিয়ে দিই...আপনাকে...ফুলের বাগান নয়...আমরা ওদের জীবনে পদক্ষেপ করিনি...জঙ্গলে ওরাও জংলি হয়েই থাকুক...আমাদের মতন...কিন্তু সবাই মিলে খেয়াল রাখি যাতে পোকা-মাকড় না লাগে...মাঝেসাঝে ফুলের মালা গড়ে প্রেমিকাদের পরাই...পেছন দিকে ফলের গাছও আছে...রান্নাবান্না না হলে যা খেয়ে আমরা টিকে থাকি...মানে যখন চুরি-ডাকাতি করতে যেতে ভালো লাগে না...ভোঁসড়ির ছ্যানা আরও অনেক ব্যবস্হা করেছিলেন  সায়েব...

          --টু বি প্রিসাইজ...সবুজ আপেল...লাল নাসপাতি...ফলসাগাছ বা ব্লুবেরি...স্ট্রবেরির ঝোপ...টেঁপারি ঝোপের মতন লাল আর সোনালি রাস্পবেরি...কালো আঙুরের মতন দেখতে প্রুণ...ব্লাডি ফাকিং অনেক ফলের গাছ আছে...জংলি টোমাটো আর ঢেঁড়স ঝোপও আছে... 

          --এরকম ঘন জঙ্গলে কাঠের প্যানেল দেয়া বাড়ি বাগান ফুল-ফল করলেন কেন তা জানতে পেরেছেন...

          --না...বুইঝলেন কিনা...বাইঞ্চোত কোনোরকম লিখাজোখা সূত্র নাই….বাড়িটা বাইরে থিকা চুণসুরকির...ভিতরে বার্মিজ টিক উডের প্যানেল...চুসকিমার ধনী আছিলেন নিশ্চয়ই...বর্মা থিকা সেগুনকাঠ আনাইয়া ডুয়ার্সের জঙ্গলে রেস্ট হাউস তৈরি কইরাছিলেন মানেই অঢেল ফরফরানো ট্যাকা...নীলকর-টিলকর বিজনেস আছিল বোধ হয়...দেয়ালে একটা কম্পাস আছে..কোন দিকে ইংল্যাণ্ড... ভুটান… বাংলাদেশ… বিহার...হদিশ পাইবেন...

          --লোগটা বইটইতে নিজের নাম...  লিকি যাননি...আমরা অবশ্যি সব বই ঘাঁটিনি...এতো ধুলো...আচে হয়তো একধটায়...যিনি মরি গেলেন তিনি ঘাঁটতেন...আর হাঁচতেন...ক্লাসিক বই হলি মানুষেরা হাঁচে...যদি না হাঁচেন থালে ক্লাসিক নয়...হাঁচির সঙ্গে নাক থেকি জল পড়লি বুজবেন তা কালোত্তীর্ণ...ইংরেজরা  যা পেতো সেখানিই নিজের নাম খোদাই করে দিত...মরি যাবার পরি কবরে...অবৈধ বাচ্চাদের পদবিতে...কিনেকেটে পাওয়া চাগর-চাগরানির নামি... 

          --হ্যাঁ...তা যা বলেছেন...অনেকটা কুকুরদের পেচ্ছাপ করে এলাকা দেগে দেয়ার মতন...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --বা...কি বলে গিয়ে...ভোঁসড়ির ছ্যানা পাড়ার দেয়াল দখলের মতন...

          --এগুলো কী মশায়...যেন মাটিতে চাপড়া-কবর দিয়ে জায়গাটাকে দেগে রাখা হয়েছে...একটা একটু উঁচু...ফুল ছড়ানো…

          --যেটা উঁচু...ভোঁসড়ির ছ্যানা সেটা আমাদের প্রথম প্রেমিকার সমাধি...তখন আমরা একজন প্রেমিকাকেই সবাই মিলে শেয়ার করতাম...উনি মারা গেলেন...তার পর থেকে সকলে আলাদা প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করি…

          --ওহ..মনটা ভার হয়ে গেল শুনে...আর এই দুটো...          

          --উই দুটা...বুইঝলেন কিনা...বাইঞ্চোত সত্যই কবর...একটা সম্ভবত পোচার আর অন্যজন তার সঙ্গী...বোধহয় ফরেস্ট গার্ড...ইদিকে আইসা পইড়াসিল...তাদিগে আমরা গুলি কইরা মাইরা ফেলতে বাধ্য হই...তারা তো আপনের-আমার মতো সমাজ-খ্যাদানে আছিল না...তাদিগে মাইরা ফেলার পর বাইঞ্চোত গোর দেয়া হইসিল...ত্যাখন অভিজ্ঞতা আছিল না বইলা বেশি গভীরে কবর দেয়া হয় নাই...পরের দিন সকালে উইঠা দেখি বাইঞ্চোত জংলি জানোয়াররা মাটি খুঁইড়া লাশ বের কইরা মাংস খাইসে...হাড়গোড়গুলা আবার নতুন কইরা গোর দিয়া অনেকটা মাটি চাপা দিতে হইসিল...তাদিগের সঙ্গে যে মোবাইল আছিল তা পাথর দিয়া গুঁড়াইয়া ফেলসি...রেঞ্জারের ডায়েরিটারে বাইঞ্চোত পুড়াইয়া দেয়া হইসিল...সেই ঘটনার পর থিকা আমরা রাতে একজন  জাইগা পাহারা দেই...দিনের বেলাতেও একজনের হাতে বন্দুক থাকে... 

          --বন্দুক তাক করতেই ভোঁসড়ির ছ্যানা  ঝুঁঝকো দুটো পালাতে আরম্ভ করল...তখনই আমাদের সন্দেহ হল যে ব্যাটারা নিশ্চয়ই টিকটিকি...কিছুটা ধাওয়া করে দুটোকেই পায়ে গুলি করে কাবু করে দিই...মুখ খুলতে ওদের নাম-সাকিন বেরিয়ে পড়ল...একবার এখানে এসে পড়ার পর...আমাদের দেখে ফেলার পর...আর তো ফেরত যেতে দেয়া যায় না...ফেরত গিয়ে  ভোঁসড়ির ছ্যানা আমাদের ডেরার কথা ফাঁস করে দিত আর আমরা...আবার জেলে ঢুকতুম...ধরে এনে সেদিনকেই নিকেশ করে দিতে হয়েছিল...কেননা এত কান্নাকাটি করছিল আর পায়ে পড়ছিল যে শেষে ভোঁসড়ির ছ্যানা আমাদের মধ্যে কারোর মনে দয়ামায়া উঁকি দিলেই হয়েছিল আরকি...যিনি মারা গেলেন তাঁর বড্ডো দয়ার শরীর ছিল...বলছিলেন যে পায়ে গেঁদাপাতা থেঁতো মাখিয়ে পেছনের জেলগারদে বন্ধ করে রেখে দেয়া হোক...সারাজীবন জেলেই থাকুক যাবজ্জীবন কয়েদির মতন...উঁকিঝুকি মেরে  আমরা অ্যামিউজমেন্টের মজা নেবো...খাবার জিনিস ছুঁড়ে-ছুঁড়ে দেবো...

          --রেঞ্জারটা বাঙালি ?           

          --ব্যানার্জি আছিল ...গায়ে পৈতাও আছিল বাইঞ্চোত...পৈতাসুদ্ধু  ওরে গোর দিয়াসিলাম আমরা...বেচারা ব্রাহ্মণবাচ্চা...জন্তুজানোয়ারগুলা মাংস খুবলাইয়া খাইবার পর পৈতাটাও খাইয়া থাকবে...পুলিস ওই মোটা ডায়েরিটারে পাইলে বাইঞ্চোত  কয়েকজন ঘোড়েলঘাগুর নামধাম জাইনতে পারত…

         --বন্দুক-পিস্তল কোথা থেকে জোগাড় করলেন...বেশ করিৎকর্মা লোক আপনারা…

         --সরকার জেল-হাজতে পাঠাইয়া  বাইঞ্চোত আমাগো জীবনে অনেক সুযোগ-সুবিধা কইরা দিসে...কত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা আলাপ-পরিচয় কইরতে পারসি...এই পাশের রাজ্যের ল্যাঞ্জাধারীদের আর উই পাশের রাষ্ট্রের কেল্লাছাগুদের সঙ্গেও যোগসাজস কইরা দিসে...তাদিগের ঘাঁটিতে আগাম টাকা আর তালিকা দিয়া আসি...পরে কেউ গিয়া নিয়া আসি...তারা ভাবে আমরা লেখাপড়া-শিখা মানুষ...নিশ্চয়ই বিপ্লব করি...ওরা তো  জানে না যে আকাট না হইলে আইজকার দিনে নেতাগিরিতে মাথা গলানো মুসকিল...হিঁঃ হিঁঃ…

        --ওপাশের রাষ্ট্রের ছাগুদের কাছ থেকে পেন ড্রাইভও আনি...গানের...ফিল্মের...কাঁচাছাগুরা শারুখ খান সালমান খান আমির খান ফারহা খান ইরফান খান ইমরান খান সাজিদ খান সইফ আলি খানদের পছন্দ করেন...পাকাছাগুরা সেই ইউসুফ খানেই আটকে গেছেন...অনেক সময়ে ফিল্মের পেন ড্রাইভ এনে দেখি ভুল করে ওয়াঁরা আফগানি ছাগু...পাকিস্তানি ছাগু...আরব ছাগুর চামসানি বোমাকেত্তন দিয়ে ফেলেছেন...মুখে কালো মোজা পরে আলজিভ নেড়ে ভুজুংভড়কি...

         [ স্কাউন্ড্রেলগুলো ভেতরের সব কথা বলে দিচ্ছে...হয়তো আমাকে খুন করার ষড় কষছে...যা জানতে চাইছি সবই তো বলে দিচ্ছে...শুধু প্রেমিকাদের আড়াল করে রেখেছে...হয়তো ভাবছে আমি কোনো তরুণীকে চিনে ফেলতে পারি…]

          --ওহো...এই ফুলগুলোর কথা বলছিলেন...কয়েকটা ফুল তো কলকাতার বাজারে পাওয়া যায়...

          --ড্যাফোডিলস ফুল দেখেছেন ? ছোটোবেলায় ওয়র্ডসওয়র্থের কবিতা পড়ার সময় যে ফুল কল্পনা করে নিতে হতো...এই যে দেখুন...এইটেই ব্লাডি ফাকিং ড্যাফোডিল্স...ডুয়ার্সের জঙ্গলে এসে কান্তি নষ্ট হয়ে গেছে... বাঙালিত্ব পেয়ে বসেছে ফুলটাকে...ছিৎরে আদেখলা...

          --ওঃ...আমি ভাবছিলুম লিলিফুল...বেঁজিও রয়েছে...যাক সাপখোপের ভয় নেই…

         --আমরাই তো শঙ্খ লাগি...লাগাই...সাপের আবার কি দরকার...

          --দেখুন...শাদা সামার স্নোফ্লেক...গোলাপি ফক্সগ্লোভ...নীল স্প্রিং জেনেশিয়ান...বেগুনি জেকবস ল্যাডার...হলুদ প্রিমরোজ...গোলাপি ডরসেথ হিথ...শালুকের মতন উড অ্যানামোন...হলুদ মাঙ্কি ফ্লাওয়ার...

          --স্যার...আপনি ইংল্যাণ্ডের গাছপালা ফুলফল সম্পর্কে এত কথা জানেন...ইংল্যাণ্ডে ছিলেন নাকি... আসলে জানতে ইচ্ছা হল...যদিও অতীতের কথা তুলতে নিষেধ করেছেন... 

          --হ্যাঁ...ইংল্যাণ্ডে ছিলাম...টু বি প্রিসাইজ স্কটল্যাণ্ডে...উচ্চমাধ্যমিক করে গ্ল্যাসগো গিয়ে কেমিকাল ইনজিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছিলাম...চাকরিও পেয়েছিলাম ভালো...অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয় এই কাঠের বাড়ি যিনি তৈরি করেছিলেন তিনি স্কটল্যাণ্ডের লোক...আমরা এসে একটা বিশেষ ব্র্যাণ্ডের ব্লাডি ফাকিং সিংগল মল্টের বোতল পেয়েছি...বাজারে বিক্রি করলে অত পুরোনো মল্টের দাম অন্তত লাখখানেক কি লাখদুয়েক টাকা হতো...বইয়ের সংগ্রহে স্কটল্যান্ড সম্পর্কে আর স্কটদের সম্পর্কে লেখা বইয়ের সংখ্যাই বেশি...হাঁচির ভয়ে একদুটোই দেখেছিলাম...রবার্ট বার্নসের স্কটিশ ডায়ালেক্ট পোয়েমস...জর্জ ম্যাকডোনাল্ডের এ ফেয়ারি রোমান্স অফ মেন অ্যন্ড উওমেন আর দি প্রিন্সেস অ্যান্ড দি গবলিন...এই সব বইয়ের মলাট দেখেছি...স্কটল্যাণ্ডে একটা সিংগল মল্ট ডিসটিলারিতে বিশেষজ্ঞের কাজ করতাম...মদ খাবার অভ্যাস হয়ে গেল...ডিসটিলারির সেলারে রাখা তিনশ বছরের একটা বোতল দেখে লোভ সামলাতে পারিনি... সেলারে দাঁড়িয়েই ঢকঢকিয়ে মেরে দিয়েছিলাম...মিস্টার ম্যাকফেল্টেন...মানে ডিসটিলারির মালিক...এমন বাপ-মা তুলে অপমান করেছিল যে  রাগের মাথায় ওই বোতলের পোঁদ ভেঙেই খুন করে দিলাম...খচাখচ...খচাখচ...পেটের নাড়িভুঁড়ি বাইরে...রক্তারক্তি...তারপর সেদিনকেই ব্যাক টু ইনডিয়া...ইনডিয়ায় পালিয়ে আসার পর ভেবেছিলাম যে সব চাপা পড়ে গেল...তা হয়নি...ব্লাডি ফাকিং ইংল্যান্ডের পুলিশ ভারত সরকারকে লেটার রোগেটারি লিখে আমার অনুসন্ধানে লাগিয়ে দিলে...ধরা পড়ে গেলাম... অবধারিত এক্সট্রাডিশান থেকে বাঁচার জন্য কেলোর সাহায্য নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আমিও পালালাম...সবাই মিলে ভাগলবা... 

         [ আবার স্কাউন্ড্রেলসুলভ কথা চালাচালি করি...কতক্ষণ নিজেকে স্কাউন্ড্রেলের অভিনয় করতে হবে কে জানে...কি করে এদের জালে তুলব...মহিলাদের উদ্ধার করব...মহিলারা যেতে চাইবেন কি না তাও অজানা…একজন বিদেশিনীও আছেন বোধহয়...তাঁরাও হয়ত এদের দলের সদস্য...অন্য প্রসঙ্গে যাই...যৌনতার প্রসঙ্গে... ]

          --আপনি ওদেশে বিদেশিনীদের সঙ্গে শুয়েছেন ? নাকি ওদেশে গিয়েও ভার্জিন রয়ে গেলেন ? ওখানে তো শুনেছি মেয়েদের সঙ্গে শোবার দেদার সুযোগ পাওয়া যায়...না...মানে আপনার হাইটের জন্য প্রশ্নটা মনে এলো...

          --না না...ব্লাডি ফাকিং ফ্রি ফর অল নয়...বেশ্যালয়ে পাওয়া যায়... 

          --যাননি একদিনও ?   

          --বাঃ অগো যাইবে না আবার...বাইঞ্চোত মেম পাইলে কে সাড়ে...দুধ-আলতা দুটা ঢাউস-ঢাউস বুক...

          --যেতাম...যাবার জন্য আমার ব্লাডি ফাকিং ডিসটিলারি থেকে বেশ দূরে যেতে হতো...ট্রেনে করে এডিনবরা কিংবা গ্ল্যাসগো...বেশিরভাগ বেশ্যাই ছিল পূর্ব ইউরোপের...ভাঙা কমিউনিস্ট দেশগুলোর ব্লাডি ফাকিং মেয়ে...সকলেই আমার চেয়ে ঢ্যাঙা আর চওড়া...আমি ফাকিং-সাকিং করতাম না...জাস্ট বুকের ওপর শুয়ে ঢাউস দুটো গোলাপি মাইতে মাথা গুঁজে থাকতাম...বুকে মাথা গুঁজেই বুঝতে পারতাম কেন কম্যুনিস্ট দেশগুলো টিকলনা...আপনি কারোর ভালো করতে চেয়েছেন কি টিকবেন না...ব্লাডি ফাকিং কী হল শেষ পর্যন্ত ? মেয়েগুলোকে বেশ্যাগিরি করতে হচ্ছে...নিজেদের দেশগাঁ থেকে পালিয়ে...যে যুবতীর ঘরে যেতাম তাকে আগে থেকেই বলে দিতাম যে আমি কিসিংও করব না...ফাকিংও করব না...জাস্ট  বুকের ওপর শুয়ে থাকব...দেহের গরম-গরম আমেজ নেবো...ডুবে থাকব হারিয়ে যাওয়া সাম্যবাদের স্বপ্নে...ঘুমিয়ে পড়লে জাগিয়ে দিও...আর পুরো সময়ের বিল বানিয়ে পেমেন্ট নিয়ে নিও...মেয়েগুলো কিন্তু সৎ...একবার তো ট্রেন জার্নি করে ক্লান্তিতে বুকের ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম... ঘুম ভাঙতে মেয়েটা বললে যে আরেকজন বাঁধা খদ্দের এসে গিয়েছিল বলে আমাকে না জাগিয়ে আমার তলা থেকে বেরিয়ে খদ্দেরের আশ মিটিয়ে...পোঁছাপুঁছি করে...আবার আমার তলায় এসে আমায় জড়িয়ে শুয়ে পড়েছে...সেই বাবদ ডিসকাউন্ট দিয়ে দিলে...

          --তা কেন ? ফাক আর সাক  করতে অসুবিধা কোথায় ? ডিসফাংশানের সমস্যা আছে নাকি...

          --আমার ব্লাডি ফাকিং যৌনরোগের ভয় আছে...কমিউনিস্টদের নাকি যে প্রেমরোগ ধরে তা সহজে ছাড়ে না... আমাদের দেশেই  দেখুন না...কমিউনিস্টরা চলে গেলেন...কিন্তু ওয়াঁদের দেয়া ভালোবাসার গণরোগ যেমনকার তেমন রয়ে গেছে... দগদগে...ছাতাপড়া...ও রোগ সারতে সময় লাগে...অনেকসময় অবশ্য ব্লাডি ফাকিং ইউটোপিয়ার স্বপ্নে আপনা থেকেই ঘুমের মধ্যে ইজাকুলেশানের টুরুর-টুরুর হয়ে যেত...উত্তেজনা হলেও আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতাম...নিজেকে বোঝাতাম...লিটল গাই...ডু নট গো ইনসাইড...কাম ডাউন...কাম ডাউন...ডু নট বিহেভ লাইক এ কমিসার…

         --দেশে ফিরে আর বেশ্যালয়ে যান না যান না…

         --আমরা কেউই বেশ্যালয়ে যাই না…কোনো মেয়ে আমাদের প্রেমিকাদের ধারেকাছে আসতে পারবে না...এখন যেমন শান্তিতে আছি তা দিতে পারবে না...আমাদের প্রেমিকারা কোনো সাংসারিক অশান্তি করেন না...পবিত্র প্রেম...অবিনশ্বর সম্পর্ক...তুলতুলে...চুলবুলে...

         --বিদেশে বেশ্যালয়ে যেতেন যে…

         --তা যেতাম...আগেকার সংসার জীবনে সকলেই যেতাম...

          --আপনাদের যে প্রেমিকারা এখানে রয়েছেন তাঁদের বলেছেন...সকলেরই তো প্রেমিকা রয়েছেন এখানে...

          --তাঁদের বলাও যা না বলাও তাই...প্রেমিকার সঙ্গে আমার কোর্টশিপ চলছে...শুনলেন না একটু আগে...কেলোর ভোদুন ভগবানের কাছে হ্যাঁ মানে যা বোঝায়...না মানেও তাই বোঝায়...এখানে জঙ্গলের ব্লাডি ফাকিং জীবনে আমাদের ওইটাই মূলমন্তর...চলুন বাড়ির পেছন দিকটাও দেখে নিন…

         [ একজন তরুণীকে গণধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে স্কাউন্ড্রেলগুলো...অন্য তরুণীদের কিডন্যাপ করে এনে বন্ধ করে রেখেছে নিশ্চয়ই...দেখতেও পাচ্ছি না...গলার আওয়াজও শুনতে পাচ্ছি না...তাদের শাড়ি-ব্লাউজও তো কোথাও দেখছি না...বাইরে শুকোবে...তারাও কি ক্রিমিনাল নাকি…অন্য কোথাও ঘর-টর আছে মনে হয়...]

          --চলুন...আমাকেও তো কাজ শেয়ার করে নিতে হবে...দেখে রাখি...আরে...আপনারা তো মুর্গিও পুষেছেন দেখছি...তা দিশি মুর্গি পুষলেন কেন ? ব্রয়লার পুষতে পারতেন...পোলট্রি ফার্মের মতন...

          --দিশি মুর্গি নিজের খেয়াল নিজেরা রাখে...ভোঁসড়ির ছ্যানা মোরগ নিজের হারেমে বাদশার ডিউটি সমাধা করে ডিমের ব্যবস্হা করে দ্যায়…হারেমের ডিম থেকে অনেক কনেমুর্গি আর দামড়া-মোরগ সাড্ডল্য হয়... ব্রয়লার রাখলে তাদের স্বাস্হ্যের খেয়াল রাখতে হতো...ছ্যানা কিনে এনে মানুষের মতন মানুষ করতে হতো...বিশেষ খাবার দিতে হতো...ব্রয়লাররা তো মোরগের ভালোবাসার ডিম পাড়ে না...ওটা ওদের মেন্সটুরেশান...ভোঁসড়ির ছ্যানা যথেষ্ট দিশি মুর্গি আছে...পালক ছাড়িয়ে...আগুনে পুড়িয়ে খেলেই হল...নো তেল নো মশলা...নুন মাখান আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খান...তবে রোজ-রোজ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের জ্যামে দুঘন্টা তো লাগবেই...পেট পোষ্কার রাখার জন্য পায়খানার মাঠের গাছে-গাছে পঞ্চধাতুর ফাং শুই ঘণ্টি টাঙানো আছে...লঙ্কার গাছও আছে চৌহদ্দির মধ্যে...ওগুলো আমরাই পুঁতেছি...বীজ এনে...ভোঁসড়ির ছ্যানা লঙ্কা পেকে শুকিয়ে গেলে তা থেকেই আবার বীজ তৈরী হয়ে যায়...যিনি মারা গেলেন তিনি মাঝেমধ্যে বাটার চিকেন রাঁধতেন...তাতে বাটার থাকত না অবশ্য...

          --বুইঝলেন কিনা...বাইঞ্চোত মুর্গিগুলারে জংলি জানোয়ারে তুইলা নিয়া যায় না...দূরে সইলা গেলে সে সম্ভাবনা থাকে...দিনের বেলায় ছাইড়া দেই...রাতের বেলায় উই খাঁচা দেখতাসেন...প্রায়  ঘরের মাপের... তাতে ঢুকাইয়া দেয়া হয়...ইন ফ্যাক্ট ওরা নিজেরাই সন্ধ্যা হইবার আগে আইসা ঢুইকা পড়ে...বাইঞ্চোত খাঁচাটা বোধহয় স্কট সাহেবে পাখি পোষার জন্য তৈরি করতেসিল... 

          --আর এটা কী ? এটা তো জেলখানা বা থানার লক-আপের মতন সামনে দিকে  গরাদ দেয়া...

          --এটায় হয়তো সায়েব জংলি জানোয়ার পুষত...বা পোষা কুকুর রাখত...কিংবা তখুনকার দিনি ভারতীয়দের সাজা দেবার জন্যি  সায়েবরা ব্যক্তিগত কারাগার রাখত...তাও হতি পারে...ওটাকে আমরা ভাঁড়ার ঘর  হিসাবে ব্যবহার করি...যখুনই চাল… আটা… ডাল… আলু… পেঁয়াজ… তেল… আনাজ… মশলাপাতি… বাসন-কোসন...পেটরল...ডিজেল...হ্যানত্যান জিনিস বাল্ক আনা বা হাতানো হয়...তখুন ওর ভেতরে রাখি...ইঁদুরে কাঠবিড়ালিতে খরগোশে নষ্ট করে...তা করুক...তার পরেও যা বাঁচে আমাদের জন্য যথেষ্ট...

         --জঙ্গলে গিয়ে টয়লেট করতে হয় নাকি ? সাহেবরাই তো টয়লেটকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসতে শিখিয়ে গেছে…

         --রামায়ণ-মহাভারতে টয়লেটগুলা কি রাজপ্রসাদেই আছিল ? কুরুক্ষেত্রে কুথায় হাইগতে যাইত শতশত কৌরব-পাণ্ডব সৈন্য...যুদ্ধক্ষেত্রে সুলভ শৌচালয় আছিল কি...কৌরবদিগের প্রাসাদে কয়খানা টয়লেট আছিল...অ্যাটাচড ওয়াশরুম...পঞ্চবটি বনে...আকবরের সৈন্য রাজস্হানে লইড়বার সময় কুথায় হাগিত...জলের বদলে বালি দিয়া পুঁছিত কি...

          --এই...চুপ করুন...এখন ব্লাডি সিরিয়াস ইশ্যু তুলবেন না...টু বি প্রিসাইজ...প্রত্যেক তলায় ঘরের ভেতরেই একটা করে পায়খানা আছে...পায়খানা মানে চেয়ারের মাঝে গোল করে কেটে এনামেলের গামলা বসানো...তাইতে সায়েব-মেমরা মনে হয় হাগতেন-মুততেন...আর ভারতীয় মেথররা নিয়ে গিয়ে ফেলে আসতেন...এনামেলের পাত্রগুলো আমরা মুর্গিদের খাবার দেবার কাজে লাগাই...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          -- আপনি এই বয়সেই ফোকলা হয়ে গেলেন কী করে ?

          --বুঝলেন কিনা...প্রেমিকার থন চুষে...

          --থন না স্তন...

          --থন...থন...উনি আপনারে আনন্দদায়ী হুরিপরির কথা কইলেন কৎখন আগে...তা হুরুপরির থন চুষলে দাঁত একটু আইলগা তো হইবেই...হেথায় থাইকতে-থাইকতে প্রেমিকার সঙ্গদানে আপনেরও হইবে...উইটাই বাইঞ্চোত আমাগো দাঁত মাজার পদ্ধতি বইলা মনে লইতে পারেন...

          --এখন কোথায় হাগতে যান আপনারা...

          --ওই যে ওই দিকে...বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী ওই দিকটাই সঠিক...যেখানি আবনি গুলি খেয়ে মরার ভয়ে হ্যাণ্ডস আপ করি দাঁড়িয়ে পড়িছিলেন...তার পাশ দিয়ে এক ফার্লংটাক এগিয়ে  আগাছাঘেরা জায়গাটায় ফাঁকা দেখে বসতে হয়...কুয়োটাও ওই দিকেই...আগি কুয়ো থেকে জল তুলি মগি করি নে যাবেন...কুয়োর কাচেই মগ আচি...মাজে-সাজে সবাই মিলে হাগতি বসি গল্পগুজব করার ইচ্ছে হয়...তাই অনেকগুনো মগ আচি...আবনার যদি বড় মাপের বা ফুলআঁকা মগ দরকার হয় তো তাও আচি...যিনি মরি গেলিন তিনি  মুর্গিদের ঠেঙে চেয়ে এনামেলের গামলা নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে রেকেচিন... রাতবিরেতে তিন তলা থেকি নাবতি চাইতেন না...সকালি রোদ উটলে মাটি খুঁড়ি পুঁতি আসতেন...আবনাকে তিন তলার ঘর অ্যালট করা হয়েছে...আবনিও ইচ্ছে হলি  চেয়ারে বসি গামলায় হাগতি পারেন...যিনি মরি গেলিন তাঁর রাকা একাধটা গামলা আচি মনে হয়...আমরা তো ওনার ঘরে যখুনতখুন যেতিম না...পচন্দ করতিন না... 

          --কুয়োটাও সাহেবেরই খোঁড়ানো ?

          --ভোঁসড়ির ছ্যানা আমরা মাটি খুঁড়ে লাশকে মাটি চাপা দিতে পারি মানে এই নয় যে জঙ্গলে বসবাস করার জন্য কুয়োও খুঁড়ে ফেলব...

          --আমি একটু হেগে আসতে চাই...সকালে পেয়েছিল...কিন্তু জলের অভাবে চেপে গিয়েছিলাম...তারপর ভেতরে সেঁদিয়ে গেছে...

          --একটু কেন...বাইঞ্চোত পুরাটাই হাইগা আসুন না...ফুল কোর্স...

          --যেখানে হ্যাণ্ডস আপ করে দাঁড়িয়েছিলেন ভোঁসড়ির ছ্যানা সেখান পর্যন্ত সটান চলে যান...তারপর এক-দু ফার্লং এগিয়ে ফাঁকা দেখে বসে পড়ুন...গাছের ডালে-ডালে ফাং শুই বাজনা আছে...কোঁৎ পাড়তে না হয় যাতে...

          --বুঝলেন কিনা...হাইগবার জন্য আগে থিকা বাইঞ্চোত এক ফুট গভীর গর্ত কইরা রাখি আমরা...হাইগা চাপা দিয়া দেই...নয়তো জঙ্গলের নিবাসীরা  কেউ কেউ গু খাইবার লোভে নানাদিকে ছড়াইয়া ফ্যালে… ফেলাইয়া-ছড়াইয়া খাইবার অভ্যাস...কয়েকটা গর্ত করা আসে...তারই একটায় আপাতত হাগুন...পরে আপনেও নিজের হাইগবার গর্ত খুঁইড়া রাখবেন... খুরপি-টুরপি আসে...বৎসরখানেক পরে ফার্টিলাইজার হইয়া যায়… অরগ্যানিক সব্জি পাওয়া যায়...স্বাস্হ্যের পক্ষে ভালো...

          --এইখানে রেখে যাচ্ছি ঝোলাটা...

          --যান...হয়ে আসুন...

          --ওকে...সি ইউ...হ্যাভ এ গুড টাইম…

          --[ মানুষের গুয়ের গন্ধ পেয়ে তবেই জায়গাটা পিনপয়েন্ট করেছিলুম...রেলে যেতে-যেতে গুয়ের গন্ধ থেকে যাত্রীরা টের পায় এবার শহর এলো...ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে...হ্যাণ্ডস আপ করার আগে এখানেই অটোম্যাটিক পিস্তল  ঝোপের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলুম...যাতে স্কাউন্ড্রেলগুলো জানতে না পারে...ওই তো...ঝোপের ভেতরে...কাজে দেবে...সবকটা কোনো এক ফাঁকে আনআর্মড থাকলে হাতে-পায়ে গুলি মেরে ঘায়েল করে  দেবার সুযোগ খুঁজতে হবে...দুজন অফিসারকেই স্কাউন্ড্রেলরা মেরে ফেলেছে...দুজন ছিল তো ওদের হ্যাণ্ড উইপনস নিয়ে বেরোনো উচিত ছিল...যাক নিজেদের আত্মপরিচয় দ্যায়নি ওরা...স্কাউন্ড্রেলগুলো ভাবছে ওরা পোচার আর ফরেস্ট গার্ড ছিল...হেগে নিই...কখন থেকে চেপে আছি এই স্কাউন্ড্রেলগুলোর পাল্লায়...শালারা ঘোড়েল ক্রিমিনাল...নিজের সঙ্গীকেই মেরে ফেলল কি না কে জানে...মেরে ফেলে হয়ত বলছে আত্মহত্যা করে নিয়েছে...এদিকে প্রেমিকাদের দেখা নেই...কিছু একটা গোলমাল আছে নিশ্চয়ই...প্রেমিকা প্রেমিকা বলে চলেছে...তাদের তো দেখা নেই...কন্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে না...কোথাও নিশ্চয়ই বন্ধ করে রাখে দিনের বেলায়...স্কট সাহেবের হয়ত মাটির তলায় সেলার-টেলার আছে কোথাও...পিস্তলটা এবার কাজে দেবে...জাঙিয়ার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখি...ব্যাটারা যদি আবার সার্চ করে তাহলে বিপদ...হাগা...হাগা শব্দ হিব্রু ভাষায় আছে...ওল্ড টেস্টামেন্টে...হাগা মানে হিব্রু ভাষায় মেডিটেশান...লাতিনে অনুবাদ করার সময়ে হাগাকে করে দিয়েছিল মেদিতেশিও...হাগবার জন্য কনসেনট্রেশান জরুরি...মেডিটেট করে...মেডিটেট করে নিচে নামাতে হয়...তিনদিন যাবত এত আজেবাজে খেয়েছি যে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে গেছে...যাক নামছে...নেমেছে...যাই এবার দেখি স্কাউন্ড্রেলগুলো কি পাঁয়তাড়া কষছে…ইনটেলিজেন্সের ইনফরমেশান ভুল ছিল...এরা সন্ত্রাসবাদী নয়...বইপড়া বিপ্লবী নয়.. ক্রিমিনাল...ঘাগু ক্রিমিনাল...পড়াশোনা করে এই লাইনে ঢুকলে যা হয়...রাজনীতিতে গেলেই পারত...]

          --কি বলে গিয়ে, অনেকখুন তো গেচি লোকটা...দুর্যোধনের বাল...এখুনও পেট পোষ্কার হল না ?

          --দেকুন তো ওনার  ঝোলার ঘাঁতঘোঁতে লুকোনো কিছু আছে কিনা...বিশ্বাস নেই লোকটাকে... গেলেফু থেকে বড় রাস্তা ধরে জঙ্গলের দিকে নেমে ডুয়ার্সে ঢুকতে বুকের পাটা দরকার...ফেডেড জিন্স...স্পোর্টস জুতো...

           --দ্যাখতাসি...

           --দুর্যোধনের বাল...টর্চ দুটো দেকুন...পেন-পিস্তল নয়তো...

           --নাঃ...ইলেকট্রনিক টর্চ...বাইঞ্চোত ব্যাটারিও নাই...

            --দুর্যোধনের বাল…আরেগবার চেগ করি নিন...

          --নাঃ...কিসুই তো নাই...

           --আমি বলি কি...দুর্যোধনের বাল...ব্যাটাকে উড়িয়ে দেয়া যাগ... ফালতু রিস্ক নিয়ে কি দরকার... কোতাগার কে...সালা মরল না বাঁচল তাতি আমাদের কি...

           --কী কন আপনে...আমরাও উনার মতই বাইঞ্চোত বিপদে পড়সিলাম...সকলে এককাট্টা হইয়া স্বাধীন হইলাম... উনাকেও স্বাধীন জীবন কাটাইতে দেয়া উচিত নয় কি...যিনি মারা গ্যালেন তাঁর চাকরিতে একজন বদলিও চাই...আমরা বাইরাইলে এখানে থাইকবে...রাইনধা রাইখতে পারবে...

           --দুর্যোধনের বালের স্বাধীনতা...সালা সারা জীবন ল্যাংটো পোঁদের ক্লিভেজ দেখিয়ে চুকিতকিত খেলতি হবি...গাছি চড়ি চোর-পুলিশ খেলতে হবি...লুঙ্গি পরি কাটাতে হবি...শহরের মজা নেই...কিছু নেই...মিছিলে যাবার জো নেই...কোতাও দেয়াল নেই যে তাতি স্লোগান লিগব...মল-মাল্টিপ্লেক্স নেই...ডিসকো নেই...নাইটক্লাব নেই...ডমিনোজ পিৎজা নেই...কোকাকোলা নেই...ম্যাকডোনাল্ডের বার্গার নেই...কেএফসির চিকেন ঠ্যাং নেই...স্টারবাক্স নেই...এ কোন দুর্যোধনের বালের স্বাধীনতা...

       --কোন দ্যাশে যে কে বাইঞ্চোত স্বাধীন থাকে...সে দ্যাশ আর সে স্বাধীনতা...বাইঞ্চোত আহা...

        --যিনি মারা গেলেন তাঁকে তাহলে মাথায় ঘুষি মেরে বেলেত ফেরত কোতল করলেন কেন...ওনার কি মজার দরকার ছিল না...

         --উনি ব্লাডি ফাকিং আমার প্রেমিকার সঙ্গে শুয়েছিলেন... 

         --শুলেই বা...ওনার  ইরেকশান হতো না...আমরা নিজের চোখে আর হাতে দেখেছি...নাড়িয়ে-চাড়িয়ে দেখেছি...ডিসফাংশানাল...নকশাল করতে গিয়ে পুলিশের লাথিতে বিচি ফেটে গিয়েছিল...

         --ব্লাডি ফাকিং উনি আবার নকশাল করতেন নাকি...নকশাল হ্যাঙ্গাম যখন হয়েছিল তখন উনি বাপের টেস্টিকল্সে লিকুইড ছিলেন...উনি যে নেতার  স্যাঙাত ছিলেন সে নকশাল করত...খোকাবয়সে...তাই যিনি মরে গেছেন তিনি নিজেকে ওই লেবেল লাগিয়ে নিলেন...ওই নকশাল ব্যাপারটার জন্যই মাথা গরম হয়ে যেত...তার ওপর বারবার কপচাতেন যে আমাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত...ঘানি ঘোরাবার কোটা পুরো করা উচিত...যখনই দেখুন... ব্লাডি ফাকিং আউড়ে চলেছেন...হ্যাঃ হ্যাঃ...আমি নকশাল ছিলাম মনে থাকে যেন...চলুন সবাই মিলে আত্মসমর্পণ করি...নকশাল ছিলেন বলে কোন বাল উপড়ে তিস্তার জল উদ্ধার করেছেন শুনি…

         --বাল নয়...বাল নয়...দুর্যোধনের বাল...

         ---ওকে...ওকে...এনটায়ার কৌরব ক্ল্যানের বাল...এমন ভাবে কথাগুলো বলতেন যেন নকশাল হওয়া মানে মনীষী বা ঋষিমুনি হয়ে যাওয়া...আমাদের চেয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া...ওয়াঁর নেতা তার গুরুঠাকুরের কথামৃত শুনে...বই পড়ে সেই কেতাবের নকশা অনুযায়ী খুন করে ছেলেবেলায় হাত পাকিয়েছিল...আমরা কোনো গুরুঠাকুরের বইটই না পড়েই...হাত না পাকিয়েই...মাঝবয়সে খুন করে চলেছি...তফাতটা কি শুনি...ওয়াঁরা তালিকা মেনে টিক দিয়ে গলা কাটত...আমরা বাধা পেলে দনাদ্দন উড়িয়ে দিই...আমরা যাদের অ্যাট দি স্পট শত্রু হিসাবে বেছে নিই..ওয়াঁরা আগে থাকতে তালিকা লিখে  তাদের গণশত্রু হিসাবে বেছে নিতেন...শালা...রোজ রোজ আমি নকশাল ছিলাম আমি নকশাল ছিলাম...চলুন আত্মসমর্পণ করি...সাজা ভুগে নিই... শুনতে-শুনতে ব্লাডি ফাকিং মেজাজ একদম খিচড়ে গিয়েছিল...আসলে উনি নেতার বিদ্যাধরী স্যাঙাতগিরি করার সময়ে মাগিবাজিতে ফেঁসে গিসলেন...যিনি মরে গেছেন...তখন ওয়াঁকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে মাগিবাজি করার যন্তর থেঁতলে-দুমড়ে দিয়েছিল... টু বি প্রিসাইজ...সেসব নকশালরা রিটায়ার করেছে...চুল পাকিয়ে সরকারি খোরপোষ  ফ্ল্যাট-ট্যাট নিয়ে গুছিয়ে বসেছে...সরকারি-বেসরকারি পুরস্কার হাতিয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধী বই লিখে কামাচ্ছে...নয়তো ল্যাপটপ নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে তালিকা অনুযায়ী টিক দিচ্ছে...তা করলেই পারতেন...তা নয়...কেতাবি ভেড়ুয়াগিরি আর ফিসফিসবাজি ছাড়তে পারেননি...জেলহাজতে তো ব্লাডি ফাকিং পচে মরছিলেন...ওয়াঁর রিটায়ার্ড নকশালদাদা জামিন দিয়ে ছাড়াতে পারত...তার বদলে ওয়াঁকে আরও অনেক আই পি সি ধারায় ফাঁসাবার জন্য পুলিশকে টিপস দিয়ে দিলে...আমাদের সঙ্গে যদি না পালিয়ে আসতেন...তাহলে আন্ডারগ্রাউন্ড সাকরেদদের ঠিকানা আদায় করার জন্য পুলিশ ওনার ব্লাডি ফাকিং চোদ্দপুরুষের গুষ্টিকেও ক্যাওড়ায় পাঠিয়ে দিত...

         --তাইতে টাকমাথায় ঘুষি মেরে খুন করতে হবে ? তাছাড়া আমাদের মতন...যিনি মরে গেছেন তাঁরও ফ্যামিলি-ট্যামিলির টান ছিল না...আর লিগ্যালি ব্লণ্ড চাঁদবদনীকে...যিনি মরে গেছেন তিনিই নিজের সঙ্গে এনেছিলেন...আপনিই চাঁদবদনীকে... যিনি মরে গেছেন তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিলেন…

        --দুর্যধনের বাল...আমার তো মনি হচ্চিল ঘুষি খেয়ি অজ্ঞান হয়ে গিসলেন...মরি যাননি...

         --আরে মরে গিসলেন...আমি নিজে নাকের কাছে হাত রেখে দেখেছি...চাঁদবদনী আমার প্রেমিকা...আমাকে চাঁদবদনী ভালোবাসেন না তো কি হয়েছে...আমি তো বাসি...আমি চাঁদবদনীকে ভীষণ ভালোবাসি...আমার ঘর থেকে  ফুসলিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে শুয়েছিলেন...নিজের চোখে দেখেছি…ওখানেই ওয়াঁর লুঙ্গির খুঁট খুলে নড়া ধরে মাথায় দিলাম এক ঘুষি...ছিটকে গিয়ে পড়লেন...তারপর আর ওঠেননি...আপনারাও দেখেছেন...লুঙ্গি খসে ল্যাংটো পোঁদে উপুড়...

        --চাঁদবদনী ওনার সঙ্গেই শুতে চাইতেন...দুজনে একে আরেকজনকে জড়িয়ে শুয়েছিলেন...চাঁদবদনীর পায়ে ওনার পরানো নূপুর ছিল...মাটি চাপা দেবার আগে মারা গেছেন কিনা হানড্রেডপারসেন্ট শিওর হওয়া উচিত ছিল…আপনি আপদ বিদায় করার ধান্দায় তাড়াতাড়ি মাটি খুঁড়ে গতি করার কথা ভাবলেন…

       --ব্লাডি ফাকিং আপনারাও তো মাটি ফেললেন…

       --আমরা জাস্ট রিচুয়াল ফলো  করতেসিলাম...মাটি সড়াইয়া দিতেসিলাম...মইরা গেসেন কিনা...বাইঞ্চোত শ্বাস-প্রশ্বাস চলতাসে কিনা তাতো আপনে চেক করলেন...       

         --ওপরের ঘরে...বোধয়...যিনি মারা গেছেন... তাঁর  একা-একা ভোঁসড়ির ছ্যানা শীত করছিল...তাই নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাপ নিচ্ছিলেন...চাঁদবদনীর শরীরের তাপের ওপর আপনার চেয়ে বেশি অধিকার ছিল যিনি মরে গেছেন তাঁর...

         --আরে তো ব্লাডি ফাকিং আমার প্রেমিকাই বা কেন...আপনাদের প্রেমিকাও তো ছিল...আপনাদের প্রেমিকাদের দেহেও তো তাপ আছে...

         --দুর্যোধনের বাল...আবনাদের জয়েন্ট প্রেমিকাকে হ্যাণ্ডেল করা সহজ...পিঙ্কি-পিঙ্কি বোঁটা...নরম নরম গোলাপি থলথলি...আর ওনার অধিগার ছিল চাঁদবদনীর ওপর...উনি নিয়ে এস্ছিলেন মানি উনিই চাঁদবদনীর সোয়ামী...তাছাড়া ইরেগসান হয় না বলি কি আর দুর্যোধনের বাল প্রেম করে না লোকি...থার্ড সেক্সের মানুষও তো প্রেম করে...প্রেম করার সঙ্গে ইরেগসানের কোনো সম্পর্ক আচি বলি আমি মনে করি না...

         --না...আমি প্রথম থেকেই সবাইকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলাম যে আমার চাঁদবদনীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেলে ক্ষমা করব না...যিনি মরে গেছেন তিনি ভেবেছিলেন যে ব্লাডি ফাকিং জাস্ট ফাঁকা হুমকি দিচ্ছি...আপনারা নিজেদের মধ্যে প্রেমিকা এক্সচেঞ্জ করেন... আমি কি করেছি কখনও...আমার প্রেমিকা  এক্সক্লুসিভলি আমার...

         --চুপ চুপ...

          --ওই যে আসচেন দুর্যোধনের বাল...হেগেমুতে...হেলতে-দুলতে…

         [স্কাউন্ড্রেলগুলোর কথা কাটাকাটি শুনে ফেলেছি...তার আঁচ একদম দেয়া চলবে না…মেরে ফেলে বলছে মারা গেছেন...প্রেমিকাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব...সুন্দরী প্রেমিকার কথা হচ্ছিল...নিশ্চয় বিদেশিনী... ]

          --হাগতে বসে  চারটে পাকা কবর চোখে পড়ল...ওগুলোও কি আপনাদের পোঁতা লাশ ?

          --কি বলে গিয়ে...ওগুলো বহুকাল আগের...ভোঁসড়ির ছ্যানা... যে সায়েব এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন... ওনারই আত্মীয়-ফাত্মীয় হবে হয়তো...

          --বুঝলেন কিনা...জাস্ট গেস ওয়র্ক...ক্রিশ্চান সায়েবদের কবরে নাম আর জন্ম-মৃত্যু লেখা থাকে...ক্রশ চিহ্ণ থাকে...সেসব কিছুই নেই কবরগুলোয়...অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা এপিটাফ থাকে...

         -- কে অত বাইঞ্চোত খাটবে...ফালতু শ্রমদান...          

         --কি বলে গিয়ে...চলুন...আপনার  ঘরটা দেখিয়ে দিই... টু বি প্রিসাইজ...আপনার বয়স আমাদের থেকে কম...তিনতলায় ওঠানামা করতে অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না...জঙ্গলের ভালো ভিউ পাবেন...পূর্ণিমার চাঁদ-টাঁদও নজরে পড়তে পারে...শীতের সকালে ছিলিমে কুয়াশা নিয়ে ফুঁকতে পারবেন...আমরা ডাকাতি করতে বেরোলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আয়েস করতে পারবেন...দু-এক তরকারি ভাত বা মুর্গি ছাড়িয়ে-পুড়িয়ে রেঁধে রাখতে পারবেন...

        --নাঃ...কলকাতায় তো তিনতলাতেই থাকতাম...একতলা-দোতলায় আমার নার্সিং হোম…

        --ফ্যামিলিকে ফেলে পালিয়ে এলেন ?

        --ফ্যামিলি কোথায় স্যার...ভূবাংলায় কেউ নেই...বাবা মারা গেলেন সাত বছর আগে আর মা মারা গেলেন পাঁচ বছর আগে...বিয়েটিয়ে করিনি...মেয়েদের যৌনাঙ্গ ঘেঁটে-ঘেঁটে মেজাজ একেবারে তেতো হয়ে গিয়েছে...বিয়ে মানে তো সেই একই ঘাঁটাঘাঁটি...বললাম না একটু আগে...প্রেম ব্যাপারটাকে নষ্ট করে দিয়েছে মানুষের শরীরের রস-রসায়ন-অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ...মা অনেক করে বিয়ে করার কথা বলতেন...কিন্তু ও বিষয়ে চিন্তা করলেই বমি পেয়ে যেত...চোখে ভেসে উঠত নানা মাপের নানা ত্বকের যোনি...একাই বেশ আছি...আর এখন তো আপনাদের সঙ্গ পেয়ে গেলাম...একই জঙ্গলের জীব...আরে...আকাশে হেলিকোপ্টার উড়ছে...ওড়ে নাকি মাঝে-সাঝে…

        --যোনি...বাইঞ্চোত দারুণ ছবি...যোনি যোনি রে যোনি রে...হিঁঃ হিঁঃ...

          --ওই মানে ইয়ে...বোড়োল্যাণ্ড...কামতাপুরি...মুজাহিদিনের নেড়ে...পারবাংলার ছাগু...আসামের অলিভ-পাতলুন ছেলে-ছোকরারা বিপ্লব-টিপ্লব করছে তো...তার সঙ্গে মুখে-গামছা মাওবাদিরাও আছে...আর্মির লোকেরা তাদের মৌচাক খুঁজে বেড়ায়...তবে বহুকাল পরে আবার হেলিকোপ্টার উড়তে দেখছি...গণ্ডোগোল হয়ে থাকবে...বাইরে বেরিয়ে... নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ টয়লেট  পাঁজি দেখলে জানা যেত... আপনি তো দিনকতক আগেই বেরিয়েছেন...ঘটেছে নাকি কিছু...

         --ঘটনা তো আকছার ঘটতে থাকে...আপনারা উলঙ্গ বিপ্লব করছেন...ছেলেছোকরারা মার্কামারা পোশাক পরে আরেক ধরনের বিপ্লব করছেন…বিপ্লব ছাড়া মিডিয়া একেবারে জোলো...সোশাল মিডিয়া পানসে...

        [ স্কাউন্ড্রেলগুলো আমার বানানো আত্মজীবনী বিশ্বাস করে নিয়েছে...আরও নৈকট্য গড়ে তুলতে হবে...যাতে এদের পুরো কাজকারবার জানা যায়…আমাকে খুন করবে না বলেই মনে হচ্ছে...কিন্তু প্রশ্ন হল তরুণীরা কোথায়...কোথাও বন্ধ করে রেখেছে নির্ঘাত...দেখা যাক...]

        --হ্যাঃ হ্যাঃ…কুড়ি কোটি দুর্যোধনের বাল...আমি সালা…

         --এই চুপ...যে মরে গেছে তার কথা আর মনে করাবেন না... 

          --হাগতে-হাগতে আরেকটা আশঙ্কা হল...পেট খারাপ করে যদি রাতের বেলায় হাগতে যেতে হয় তাহলে কি জংলি জানোয়ারের হাতে পড়ার ভয় থাকে...

          --তা থাকে...বাঘ...বাইসন...হাতির পাল...বুনো দাঁতাল শুয়ার দেখা গিয়াসে বটে...জংলি শুয়ারের মাংস পুড়াইয়া খাইতে...আহা...বুইঝলেন কিনা...তবে কাইটবার ঝামেলা এই যে...শুয়ারগুলা কাইটবার সময় এমন বাবাগো...মাগো...বইলা চ্যাঁচাতে থাকে...যেন সালিসি সভায় গণপিটুনি...কান্ট ইম্যাজিন...হাইগতে বইসলে বাইঞ্চোত অমন অবস্হায় একজন তাকে বন্দুক হাতে পাহারা দেয়...আপনারে যে ঘর অ্যালট করা হইসে  সেখানে পোর্টেবল টয়লেট আসে...

          --তাহলে তিনদিন জঙ্গলে একা-একা হেঁটে খুব জোর বেঁচে গেছি...

          --তা যা বলেছিন...আমিও ভাবছিলুম যে আবনি কি করি গেলেফু থেকি ঘন জাঙালে ঢুগলেন... দুর্যোধনের বাল ওদিকি হাতির পাল ছাড়াও বাঘ দেখা যায়...হরিণ খাবার লোভে বাঘ নেবি আসি...

          --আচ্ছা...হাগতে-হাগতে  ছাগলের নাদিও চোখে পড়ল...ছাগলও আছে নাকি জঙ্গলে...

          --বাঘের...হাতির...বাইসনের নাদি হবে হয়তো...শুয়োরের নাদিও হতে পারে...ডুয়ার্সে সকলেরই নাদি হয়...খরগোশ মারতে পারলে মাঝেমধ্যে পুড়িয়ে খাবার সুযোগ হয়...ভ্রমর দেখতে পাননি ? শহরে তো ভ্রমর দেখা যায় না...অন্য কোথাও আপনি হাগতে বসে ভ্রমর দেখতে পাবেন না...এখানেই লাইফ টাইম এক্সপিরিয়েন্স...ন্যাশানাল জিওগ্রাফিকের চেয়েও বাস্তব...

          --বোলতা...ভিমরুল...মৌমাছিই আর দেখা যায় না শহরে...তো ভ্রমর...চলুন...ওঠা যাক ওপরে… আপনারা  বোধহয় প্রতিদিন স্নান করেন না...

          --প্রেওজন হয় না...চান করে হবেটাই বা কী...সেই তো রাত নাবলিই প্রেম করতি হবি...প্রেমিকাদের আদর করতি হবি...চুকুস চুকুস করতি হবি...

          --এ তো দেখছি কাঠের পাকানো সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে...দারুণ ব্যাপার...সেগুনকাঠের সিঁড়ি... তখনকার দিনের...ভেবে দেখুন...গভীর জঙ্গলের ভেতরে...চারিদিকে সবুজ...

          --তা যা বলেছেন...ফেভিকল ছিল না...জোড়...তারপর হাত-রেলিং...ব্যালাসট্রেড...হাতল...নিউঅ্যাল পোস্ট...রাইজার এগুলো করার জন্য ভোঁসড়ির ছ্যানা উপযুক্ত ছুতোর জোগাড় করে আনতে হয়েছে... 

          --জঙ্গলের ভেতরে তখনকার দিনে যদি রাস্তা ছিল তো তা কোথায় গেল ?

          --বুইঝলেন কিনা...বাইঞ্চোত রাস্তা তো আছে...আমরা যে ট্রিপ মাইরতে বাইরাই...সেই রাস্তা দিয়াই যাই...আগের মতন চওড়া  আর নাই...কিন্তু চলার পথ আছে...বাইকেবল রোড...গোপন...

          --কই দেখতে পেলাম না তো...

          --ওদিকে নয়...রাস্পবেরি ঝোপের পাশ দিয়ে পেছনে যেতে হবে...সেখানেই আছে মোটর সাইকেলগুলো...

           --মোটর সাইকেল...দেখতে পাইনি তো...আমি তো আসার সময়ে আমার মোটর সাইকেলটা বেচে দিয়ে এলুম...

          --ছটা মোটর সাইকেল রাখা আছে...ছচ্ছটা...এই সায়েবের সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে...সায়েবরা এদেশে এসে চাকর-বাকর ছাড়া নড়া-চড়া করতে পারত না...জঙ্গলে বাগানবাড়ি করেছিল মানেই চাকরবাকরদের কোয়ার্টারও করেছিল...স্ট্রবেরি রাস্পবেরি বাগানের দিকে গেলে আপনি দেখতে পেতেন...সেটাও কাঠের...তবে বার্মিজ টিক উড নয়... লোকাল সেগুনকাঠ...

          --ছ’টা মোটর সাইকেল...ওগুলোও কি লিফ্ট করা ?

          --তা নয়তো কি...জঙ্গলে আমরা এসেছিলাম ঝাড়া হাত-পা...তারপর সবাই মিলে সংসার গুছিয়ে নিয়েছি...

          --সংসার...

          --সংসার ছাড়া কীই বা বলবেন একে...সঙ্গিনী...সঙ্গম...আর রুটিন মানেই তো সংসার...আমাদের সকলেরই সঙ্গিনী আছে...কমপ্লিকেটেড রিলেশানশিপ...আপনাকেও যোগাড় করে দেব...প্রেম ছাড়া বাঁচতে পারবেন না এই গভীর জঙ্গলে... 

          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          --সি...ইট ইজ নট মি দিস টাইম...ইট ইজ দি বার্ড রিপিটিং... 

          --ইয়েস...উই নো...ইউ বেটার ফাইন্ড আউট দি বার্ড অ্যান্ড প্যাসিফাই ইট...

          --আমার কথা তো শোনালাম...কেলো আর ওনার...দুর্যোধনের বালের...ওনাদের কাহিনি তো শোনা হল না এখনও...

          --ইয়েস...আই শ্যাল টেল ইউ মাই স্টোরি...

          --কেলো বাংলা ভালোই বোঝেন দেখছি...

          --তা বুঝবে না কেন...কতকাল যাবত আনডারট্রায়াল অতিথি হয়ে জেল আর আদালত পরিভ্রমণ করেছেন...লাথি আর লপসি খেয়েছেন...

          --ব্লাডি ফাকিং আমিই বলছি কেলোর কাহিনি...কেননা বলতে-বলতে ওয়াঁর ইংরেজির স্টক ফুরিয়ে যাবে...তখন ইটালিয়ান...ইয়োরুবা...হাউসা আর ইবো ভাষা ঢুকে পড়বে ওয়াঁর কথাবার্তায়...আমি টুকরো-টুকরো শুনে মোটামুটি একটা গল্প গড়ে তুলতে পেরেছি...সেটাই বলছি...

         --দুর্যোধনের বাল...গল্প বলচিন কেন...ওগুনো তো ওনার জীবনের ঘটনা...

         --ব্লাডি ফাকিং সেই ঘটনাগুলো গুছিয়ে বলতে গেলে গল্প হয়ে যায়...গুছিয়ে না বললেও নতুন-রীতির গল্প হয়...খাবলা-খাবলা ঘটনা জুড়ে-জুড়ে শেকল বানিয়ে দিন...ব্যাস...যেমন আমাদেরগুলো গল্প করেই তো বললাম ওনাকে... 

        --বলুন বলুন...খাবলে বা রসিয়ে...

         --ওয়াঁদের আফ্রিকায় ওলে সোয়েঙ্কা নামে একজন কলেজ ছাত্র ছয় বন্ধুর সঙ্গে একটা গোষ্ঠী গড়েছিলেন আর তার নাম দিয়েছিলেন পাইরেটস কনফ্র্যাটারনেটি…

         --তার মানে পশ্চিমবাংলা কত পেছিয়ে আছে ভাবুন...এতকাল পরে এখানকার ঘরকুনো ছাত্ররা পাইরেটস হতে পেরেছে...

          --কনফ্রেটারনিটি ? বলেননি তো আগে...

         --কনফ্র্যাটারনিটি আসলে খ্রিশ্চানদের বেরাদরি...ব্রাদারহুড...মানে ভাতৃসঙ্ঘ...টু বি প্রিসাইজ...ছাত্রদের দাবিদাওয়া... সুযোগসুবিধা ইত্যাদির জন্য আরম্ভ হয়েছিল...পশ্চিমবাংলার ছাত্র ইউনিয়ানের মতন বলতে পারেন...ওয়াঁদের লোগো ছিল মাথার খুলি আর তার তলায় দুটো পাঁজরের হাড়ের গুণচিহ্ণের ক্রস...আমাদের দেশেও ছাত্রছাত্রীদের উচিত ওই লোগোটা অ্যাডপ্ট করা...কনফ্র্যাটারনিটির সদস্য সংখ্যা বাড়তে লাগল... সদস্যরা ব্লাডি ফাকিং লোগোর চাপে নানারকম জলদস্যু নাম রাখা আরম্ভ করলে...কেউ নিজেকে বলত ক্যাপ্টেন ব্লাড আবার কেউ জন লং সিলভার...সকলেই যেন এক-একজন পাইরেট...বেগতিক দেখে ওলে সোয়েঙ্কা ওয়াঁর গোষ্ঠী ভেঙে দিলেন...তা দিলে কী হবে...ততদিনে প্রায় তিনশো স্কুল-কলেজে ব্লাডি  কনফ্র্যাটারনিটি গজিয়ে গেছে...আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা যেমন ছাত্রদের মাথা মুড়োয় ওয়াঁদের আফ্রিকায় তেমন মিলিটারি নেতারা ছাত্রদের কনফ্র্যাটারনিটি দখল করতে লাগল...কারা নতুন ছাত্রদের নিজের তাঁবেদার সদস্য বানাবে তার জন্য মারামারি...ধস্তাধস্তি...টানাহেঁচড়া...আমাদের দেশের মতনই ওয়াঁদের দেশেও ছাত্রদের দলে ঢুকে গেল মাফিয়ারা...ঠগিরা...ব্যাস...আরম্ভ হয়ে গেল  খুনোখুনি...ছাত্রি ধর্ষণ...বাজি রেখে অধ্যাপিকা ধর্ষণ এটসেটরা...বদলা নিতে ছাত্রিরাও কনফ্র্যাটারনিটি গড়তে লাগল...নানা নামে...যেমন ব্ল্যাক ব্রা যার সদস্যরা কালো রঙের ব্রেসিয়ার পরত...ভাইকুইনস...জেজেবেলের মেয়ে আরও নানা নামের... বেশ কয়েকটা কনফ্র্যাটারনিটি অ্যানিমিস্ট হয়ে গিয়েছিল...ভোদুন নামে এক দেবতার পুজো করত...

         --ডেঞ্জারাস ব্যাপার...ওলে সোয়েঙ্কাও তো আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন...তারপর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান...নিজের দেশ ছেড়ে আমেরিকা-ইউরোপে পালিয়ে না গেলে নোবেল পাওয়া মুশ্কিল…তা আপনি যতোই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করান... 

         [ এরা নিজেরাই চুরি ডাকাতি খুন করে চলেছে আর স্কাউন্ড্রেলগুলো অন্যদেশের মাফিয়াদের বলছে খুনি... ধর্ষক...ঠগি...নিজেরা তরুণীদের কিডন্যাপ করে এনে ধর্ষণ করছে...রেপিস্টের দল…এত কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে অথচ ধরা পড়ল না আট বছরে...]

         --ও...তাই নাকি...ভোঁসড়ির ছ্যানা...আমরা পালিয়ে এসে সায়েবের তিনতলা কাঠের বাড়ির আশ্রয় পেয়েছি পুরস্কার হিসাবে...

          --আফ্রিকার মেয়ে...তাঁরাও হয়ে দাঁড়ালেন মাফিয়া আর ঠগির দল...কেলোর মা অমনই একটা কনফ্র্যাটারনিটির সদস্য ছিলেন...ছাত্ররা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল...যারা ধর্ষণ করেছিল তাদের গ্রেপ্তারও করেছিল ওদেশের ব্লাডি ফাকিং পুলিশ...আদালতে তারা বললে যে শয়তান ওদের ফুসলিয়ে কুপথে নিয়ে গিয়েছে বলে তারা ওই কাজ করে ফেলেছে... 

         --তাই ?

          --হ্যাঁ...তারা দাবি করেছিল যে অসৎ আত্মা থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য তারা অমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল...ছাড়া পেয়ে নিজেদের কাল্টে ফিরে গেল ছোঁড়াগুলো...যেমনটা আমাদের দেশে হয়...ফিরে যায়...আবির মাখে...মোটর সাইকেল চাপে…

        --আচ্ছা...

         --কেলো বলতে চান না কনফ্র্যাটারনিটিটার নাম...আমরাও জানতে চাইনা...মিলিটারির কোনো অফিসারের বউ সেজে ওয়াঁর মা চলে গেলেন ইটালি...ব্লাডি ফাকিং সে ব্যাটা মিলিটারি অফিসার মনে ভরে গেলে ওয়াঁর মাকে বিদেয় করে দিলে...ইটালিতে ওয়াঁর মা বেশ্যাগিরি করে কেলোকে মানুষ করেছেন...কেলোও যোগ দিয়েছিলেন একটা ড্রাগ সিন্ডিকেটে...যারা ক্যাপসুলে কোকেন ভরে এশিয়ার বাজারে পাঠায়... 

          --সিন্ডিকেট শব্দটা শুনলেই তো ভয়ে পেট গুড়গুড় করে মশায়...

          --শুনুন না গল্পটা...পরে আরেকবার ব্লাডি ফাকিং হাগতে যাবেন না হয়...মাঝখানে বাধা দিলে গল্পের মই হারিয়ে ফেলব...উপসংহারে নামতে পারব না...তা যারা ইনডিয়ায় মালগুলো আনে...তারা প্রায় পঞ্চাশটা করে ক্যাপসুল ভরা স্যাশে খেয়ে এখানে এসে হেগে...গু থেকে বেছে নিয়ে যাকে দেবার তাকে হ্যান্ডওভার করে দ্যায়...ভারতের বিমানবন্দরে মাফিয়াদের এজেন্ট অপেক্ষা করে...যাতে যে ক্যাপসুল নিয়ে আসছে সে অন্য কোথাও গিয়ে আগেই হেগে নিয়ে একদুটো ক্যাপসুল সরিয়ে না রাখে...কেলোর সঙ্গে আরেকজন কেলো ছিল...তার পেটে একটা ব্লাডি ফাকিং ক্যাপসুল ফেটে গিয়ে স্যাশে লিক করে ফুখে ফেনা উঠে বিমানবন্দরে নেমেই পকাৎপঙ অক্কা...চার বছর যাবত তার ঠাণ্ডাকাঠ লাশ মরচুয়ারিতে পড়েছিল...কোনো দাবিদার যখন নেই...তখন কাকেই বা দেবে পুলিশ...তার ওপর অ্যানিমিস্ট না পেসিমিস্ট টের পাবার উপায় ছিল না...শেষে নাকি আদালতের অনুমতি নিয়ে দাহ করে দিয়েছে...আসলে নুনুর খোসা অটুট ছিল বলে গোর দেবার দরকার মনে করেনি থানাপুলিশ...জানেন তো...কাশ্মীরে কোনো সন্ত্রাসবাদী মরলে সবচে আগে তার নুনু চেক করা হয়...আমাদের জঙ্গলে অবশ্য যে-ই মরুক না কেন...দাহ করা হবে না...তা সে তার নুনুর খোসা আস্ত থাকুক বা ছাড়ানো... কেবল গোর দেয়া হবে...দাহ করতে গেলেই আকাশে ধোঁয়া উঠে যাবে আর আমাদের আস্তানার কথা ফাঁস হয়ে যাবে... আপনি কি ভাবছেন পুলিশ আমাদের খুঁজছে না...আপনি মরলে আপনাকেও গোর দেয়া হবে...আপনার নুনুর খোসা তো আস্ত...অ্যাঁ...সাধু হবার ষড় করেছিলেন... 

        --আজ্ঞে হ্যাঁ...আমার কচ্ছপের মাথা ভেতরে...উনি তো স্বহস্তে ভেরিফাই করেছেন...তারপর...

         --এই কেলো তো সেই কেলোর আগেই বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন...ক্যাপসুলগুলোর স্যাশে গু থেকে নিয়ে হ্যাণ্ডওভারও করে দিয়েছিলেন...যাতে আবার না ইতালিতে ফিরে যেতে হয় তাই ব্লাডি ফাকিং পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে মিশে গিয়েছিলেন একশো তিরিশ কোটির ভিড়ে...ইতালির মাফিয়া আর এদেশের এজেন্টরা খুঁজে বেড়াচ্ছে ওয়াঁকে...তাই উনি জেল থেকে পালাবার ষড় করেছিলেন...আমরাও তাতে যোগ দিলাম... 

         --উইডো...উইডো...

         --হ্যাঁ...কেলোর মাকে ধর্ষণ করার পর একটা ব্লাডি ফাকিং বুড়োর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছিল... সে মরে যেতে মহাবিপদে পড়ে গেলেন ওয়াঁর মা...ওয়াঁর মায়ের ট্রাইবে বিধবাদের দুবছর স্নান করা...পোশাক পালটানো...চুল কাটা নিষিদ্ধ...সেই দুবছর গায়ে গোবর আর পাম অয়েল মাখতে হয়...মাটিতে শুতে হয়... কালো কাপড় পরে থাকতে হয়... স্বামী মারা গেলে বিধবা তখন স্বামীর বাড়ির বয়োজেষ্ঠ্য পুরুষের সম্পত্তি...ওয়াঁদের দেশে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে পাঠানোর মতন তো মথুরা-বৃন্দাবন নেই...বয়োজেষ্ঠ্য পুরুষ মানে বুড়োর বড় ছেলে...সে ছিল মিলিটারির লোক... সে ওয়াঁর মাকে নিজের রক্ষিতা করে নিলে আর ইতালিতে পোস্টিঙের সময়ে নিয়ে গেল সেদেশে...

          --ডুয়ার্সে এসে আপনারাও নিজেদের কনফ্র্যাটারনিটি প্রতিষ্ঠা করলেন...

         --ভোঁসড়ির ছ্যানা... কনফ্র্যাটারনিটি অফ চুকুম-চাকুম…

        --যোনি-যোনি রে যোনি রে যোনি...ছবি দেখতাসি...হিঁঃ হিঁঃ...

         --থাক থাক....আমাদের কনফ্র্যাটারনিটির বয়স্ক সদস্যের কাহিনিটা হয়ে যাক...

         --এই দুর্যধনের বাল...বয়স্ক বলবিন না...চুল আবনাদের চেয়ে বেশি পাগলিও বয়সে আমি সবারচে ছোটো...ইনক্লুডিং দিস নিউকামার  সদস্য...যিনি মরি গেচেন শুদু তিনি আমারচি ছোটো ছিলেন...

         --স্যার...বলুন বলুন...আপনার কাহিনি বলুন...

         --দুর্যধনের বাল...আমার গল্প অত খোচ্চুরে মড়াপোড়া নয়... আমার একটা মোটর সাইকিল মেরামতের গ্যারাজ ছিল...ভালোই চলত...তিনজন মেগানিগ রাত্তির বেলায় গ্যারাজেই শুতো...মাজ রাত্তিরি গ্যাস সিলিণ্ডার ফেটি মরি গেল তিনজনি...পুলিস আমাগে ধরলে...বেআইনি গ্যাস সিলিণ্ডার ব্যওহার করার অপরাধে... তাপ্পর পাবলিকের আঙুল আর মিডিয়ার বাঁশে মার্ডার চার্জ জুড়ি দিলে...আমার উগিল বললে যে পার পাওয়া মুশ্কিল...দুর্যধনের বাল...পুলিশের ভ্যান থেকি মারপিট করি এনারা পালাচ্চিন দেকি আমিও ওনাদের পেচন-পেচন দৌড় লাগালাম...নয়তো  জেলি গিয়ে ঘানি ঘোরাতি হতো...তাপ্পর দুর্যধনের বাল...এখেনে কেটে গেল আট বচর...ভাগ্যিস মাটা আর বাবাটা গত হয়েচে...দুর্যধনের বাল দিব্বি আচি এখেনে...মাজখান থেগি যে মরি গেলন সে মরি গেলন...ঘেঙিয়ে ঘেঙিয়ে গিটার বাজাতিন...বেচ্চারা...গান শোনাতিন…

        --ফুঃ...কাঁদো কাঁদো খইরিমুখো গান...উঁয়াউ উঁয়াউ... 

         --ব্লাডি ফাকিং পুরোটা বলুন না...অটোমোবাইল ইনজিয়ারিঙে তিন বছর গাড্ডুস মেরে আটকে গিয়েছিলেন আর তারপর…

         --হ্যাঁ...দুর্যধনের বাল...অনেকে আটবচর দশবচরও ইনজিয়ারিঙে আটগি থাগে...প্রবলেম হল যি আমাকে ইনজিনিয়ার করার দুঃস্বপ্ন দেখত মাটা-বাবাটা...মাটা-বাবাটাকে হাতি পেলি আজগি হয়ি যেত  দুচার রাউন্ড...আমার কাচে কখুনি জানতে চায়নি যে আমি ইনজিনিয়ার হতি চাই কি না...আমি কিছুই হতি চাইনি...যা আছি তা-ই থাকতি চাই...বাবাটা ইস্কুলে থাকতিই সগগে চলি গেল...বাবাটার দুঃস্বপ্ন পুরো করার জন্যি বাবাটার প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকার আদ্দেক ডোনেশান দিয়ে মাটা ভত্তি করি দিল তামিলনাডুর শ্রীরামুলু ইনজিনিয়ারিং কলেজে...পরপর দুবার ফেল মারার খপরে মাটার হার্ট অ্যাটাক হল...মাটা যে ফ্যামিলি পেনসান পেত তা বন্দ হয়ি গেল...থার্ড বছরে ফেল মেরি বুজলুম আমার দ্বারা হবি না...যেটুকু সিকেছিলুম আর যতটুকু প্রভিডেন্ট ফাণ্ড বেঁচেছিল তা খরচ করি দুর্যধনের বাল মোটরসাইকেল সারাবার আর পার্টস বিক্রির গ্যারাজ খুললুম...দুর্যধনের বাল কে-ই বা জানত যে গ্যাস সিলিণ্ডার ফেটি তিন তিনটে ছোকরা মরি যাবে... তাদের এগজন আবার মাইনর...

         --ওঃ...আপনিই ওই মোটরসাইকেল ফ্লিটের কমাণ্ডার…

         --দুর্যধনের বাল...চলুন না দেকিয়ে আনি...তবে তো বুজতি পারবেন...কেন এখুনও আমাদের কোঁকের পুঁইবিটুলি  অব্দি খুঁজে পায়নি হুকুমবরদারেরা... আট বচর হতে চলল...

        --চলুন...

         --চলুন চলুন... আপনারাও চলুন...দুর্যধনের বাল...এনাকে ফাইটার মেসিনগুনো দেকিয়ে আনি...

         --চলুন...বাইঞ্চোত...

         --দেখে হাঁটবেন...ব্লাডি ফাকিং বিছুটিগাছ সামলে…বিছুটিঝোপ খাঁটি সাম্যবাদী...সবাইকে সমান মনে করে...

         --কোনগুলো বিছুটি…

         --চুলকাইলে বাইঞ্চোত বুইঝতে পারবেন...যোনি-যোনি রে যোনি রে...ওই দিকেরগুলা বিছুটি নয়...ওগুলা গাঁজাপাতার দঙ্গল...সায়েবের চাকররা পুঁইতাসিল আমাগো লগে...অহন আমরা ফুঁকি...হিঁঃ হিঁঃ...

         --এই দেকুন...আমাদের ফ্লাইং মেসিন...দুটো রয়াল এনফিল্ড...এগবারে সাইলেন্ট রয়াল এনফিল্ড... লোকি রয়াল এনফিল্ড চাপি যাতি তার আওয়াজে পাবলিক মোটর সাইকেলের দিকি হিংসেতে তাকায়... আমার মেসিন দুটো এমন যে মাছেরা জলি যেমন  সাঁতার কাটি...এই গাড়ি তেমনিই নিঃশব্দে রাস্তায় দৌড়োয়...গাড়ি দুটোয় কি-কি আচে জানেন...ব্যাটারি চার্জার...ইনভার্টার...ল্যাপটপ রাকার বুট...অ্যান্টি-স্লিপ টিউবলেস টায়ার...বাকি চারটে বাজাজ পালসার দুশো এসএস...সুজুকি গিক্সার...হণ্ডা ড্রিম নিও আর ডুকাটি মন্সটার...দুর্যধনের বাল আমি আর কেলো রয়াল এনফিল্ড হ্যাণ্ডেল করি...অন্যগুনো এনারা করেন...রোঁদে বেরোবার সময়ে দুর্যধনের বাল ইচ্ছেমতন নম্বর প্লেট লাগিয়ে নিই...পোস্চিমবাংলা ছাড়াও অনধ্র...উড়িসসা...বিহার...আসসাম আর ঝাড়খণ্ডের নম্বর প্লেটও গেলেফুর এক পেইনটারকে দিয়ে আঁকিয়ে রেকেচি…পুরো মোটরবাইক ওয়র্কসপ আমাদের...

       [ এই ক’জন মিলেই পুরো অরগ্যানাইজড গ্যাঙের মতন কাজ করে যাচ্ছে...ধরা পড়ল না কি করে… বন্দুক...পিস্তল সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে...বাইরে ডাকাতি করতে যায়...ব্যাঙ্ক ডাকাতিও করে ...কাঁচা টাকা...বেশ বেপরোয়া...তরুণীদের তুলে এনে ক্রীতদাসী করে রাখে...এরা জঙ্গলের ভেতরে সবসময়ে উলঙ্গ ঘুরে বেড়ায়...অদ্ভুত...শীতকাল ছাড়া...]

         --তবু তো দেখছি আপনারা মোবাইল ফোন রাখেন না...

         --দুর্যধনের বাল...মহাপাগলু না রংবাজের বং...মোবাইল বা ইনটারনেট...ওয়াই ফাই হলেও...ট্রেস থেগি যায়...ইনটেলিজেন্সের টিকটিকি ঠিগ ধরি ফেলবি...কত রকুমের খাকি-নজর যে গড়ি উটিচে...পুলিস... মিলিটারি পুলিস...সি আর পি এফ...আইটিবিপি...আর পি এফ...এটিএস...বিএসএফ...আরপিএফ...আসাম রাইফেলস...স্পেসাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স...সিবিআই...সিআইডি...আইবি...আরএডাবলু...রাসট্রিয় রাইফলস... হোমগার্ড...সাগর প্রহরি বল...এনএসজি...নারকটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো...এয়ার ইনটেলিজেন্স...নেভি ইনটেলিজেন্স...সাইফার ব্যুরো...আরও কত কি...তার ওপর পার্টিদের সাদাপোশাগ ক্যাডারপুলিস...ক্লাবপুলিস... পাড়াপুলিস...নজরদার-পুলিস তো আচিই...

         --ওটাও বলুন...আপনার বাড়ি ফেরার স্কোপ ছিল...তবু ফেরেননি...এখানে একবার চলে এলে আর ফেরা যায় না...

         --একবার রোঁদে বেরিয়ে লুকিয়ে রাতির বেলায় গিসলুম দেকার জন্য যে কি অবোস্তা আমার গ্যারাজের...গিয়ে দেকি পার্টির দাদারা দকল করি পার্টি অফিস বসিয়েচে..আমার দোকানের বোর্ডেই রঙটঙ করি পার্টির নাম লিকে তার পাসি ঝাণ্ডা পঙপঙাচ্ছে... মোড়ের পানির দোকানে পানঅলা ছিল না... একটা বছর দশের ছেলি দোকান বন্ধের তোড়জোড় করছিল...আমাকে দ্যাকেনি আগে...তার  ঠেঙে জানতে পারলুম যে পার্টির দলচামচারা সিলিণ্ডার ফাটার কেস ক্লোজ করিয়ে দিয়িচে...ছেলেটা বললে...যার মোটর সাইকেল সারাবার গ্যারাজ ছিল সে বিদ্যাসাগর সেতু থেকি লাফিয়ে আত্মহত্যা করি নিয়েচেন...পার্টির বাবুরা  গ্যারাজে ওনার শ্রাদ্ধশান্তি করার পর দলখুড়োখুড়িদের আড্ডাখানা বসিয়েচিন...শুনি ভালো লেগেছিল যে যাক... সরকারি রেকর্ডে মরি গেচি...বেঁচে থাগতে নিজের মরি যাবার খপরই পরমানন্দ...আমি তো বেঁচি নেই...বাবাটা-মাটা দুজনেই গত...সুতরাং ফিরি যাবার  প্রশ্নও ওটে না...তাছাড়া আমায় আবার জ্যান্ত করি দিয়ে পুলিস  ধরলি প্যাঁদানির চোটে হয়তো দুর্যধনের বাল এই জঙ্গল সমবায়ের কথা বলি ফেলতুম...আর সবাইকে বিপদে ফেলি দিতুম... 

         --নানা রজ্যের নম্বরপ্লেটের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টির ঝাণ্ডাও রেখেছেন দেখছি...নেতাদের মুখোশও রেখেছেন...আপনারা সত্যিই অত্যন্ত বুদ্ধিমান মজাজীবি মশাই...জানি না কতদিনে আপনাদের মতন স্মার্ট হয়ে উঠব…

        --হিঁঃ হিঁঃ...যোনি-যোনি রে যোনি রে...

         --সব রাজ্যে তো একই দলের রাজত্ব নেই...ভোঁসড়ির ছ্যানা অন্য রাজ্যে ঢুঁ মারতে চাইলে সেই রাজ্যের সাসকদলের ঝাণ্ডা মোটর সাইকেলে লাগিয়ে নিলে কেল্লা ফতে সহজ হয়...নিজেদের রাজ্যে অবস্হা বুঝে ব্যবস্হা...আজগাল মোটর সাইকেল গ্যাঙ তো হেঁজিপেঁজি নেতারাও পুসচে...আমরাও অমন গ্যাঙ সেজে ঝোপ বুঝে কোপ মারি...তবে নেতাদের মোটর সাইকেল গ্যাঙের মতন আমরা গাঁয়ে-গলিতে খেতে-মাঠে ধরসন-টরসন করি না... আমরা নিজের-নিজের প্রেমিকার সঙ্গে শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে ভালোবাসাবাসিতে তৃপ্ত...

        --ভালো আইডিয়া বের করেছেন...

        --এখানে টোটাল ডেমোক্র্যাসি...বুঝলেন...সবাই নিজের-নিজের আইডিয়া দ্যায়...তাতে কাজের কাজ হয়... কেবল ব্লাডি ফাকিং অনুমতি না নিয়ে প্রেমিকা শেয়ার করা চলবে না...ওসব মেট্রোপলিসে হয়...

       --কোনের ওই বাক্সটারে দেখতাসেন...সায়েবের কুনো কাজে লাইগত উনার সময়ে...আমরা বাইঞ্চোত উইতে টুপি রাখি... যাতে সিসিটিভিগুলা থিকা মুখ আড়াল কইরা কাজ করা যায়...আর সার্জিকাল গ্লোভ...যাতে কুথাও অ্যাকশানের সময় আংগুলের ছাপ  না থাইকা যায়…

        --টুপি ?

        --হ্যাঁ...এই দেখুন...বেসবল ক্যাপ...বেরেট...বিনক্যাপ...বুনিন হ্যাট...ক্রিকেট ক্যাপ...নেপালি টুপি... কারাকুল টুপি...টাম...রেডিমেড পাগড়ি...সবকটাই তিনচারটে করে আছে...জৈষ্ঠ্য মাসে রোদ দেখিয়ে নিতে হয়...যাতে ছাতা না পড়ে...এখন থেকে এই কাজগুলো আপনাকে করতে হবে….

        --ফুটবল খেলোয়াড়দের জার্সিও রেখেছেন দেখছি...বেশ গুছিয়ে...ন্যাপথালিনের গন্ধও পাচ্ছি...

        --হ্যাঁ...ম‌্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড...বার্সেলোনা...রিয়াল মাদ্রিদ...ব্রাজিল...আরজেনটিনা...জার্মানি...রাশিয়া নানা দেশের আর দলের...তবে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের রাখিনি...অযথা ঘটি বাঙালের ঝামেলায় পড়তে হয়... কোন পাড়ায় কোন দলের ঢাকিরা থাকে তা তো জানা যায় না...হয়তো দেখবেন ঝেড়ে কলকাতিয়া খিস্তি ঝাড়ছে অথচ কেঠো ইস্টবেঙ্গল...বিদেশি দল বা দেশের জার্সি হলে নিশ্চিন্তে কাজ সেরে আস্তানায় ফিরে আসা যায়… কারোর ইচ্ছা হলে তিনি প্রেম করার সময়ে নিজের প্রেমিকাকে ঝাণ্ডা পরিয়ে দেন…নেতার মুখোশ পরিয়ে দেন...যিনি যে নেতাকে পছন্দ করেন...ফিল্ম অ্যাকট্রেসদের মুখোশ অনেক খুজেছি...পাইনি...

      --এইটুকু ঝাণ্ডা...শাড়ি-চুড়িদারের মতন পরা যায় নাকি…

     --যায় যায়...বুকে-পিঠে বেঁধে দিলেই হল…

       --আর তলার দিকটা ?

       --তলায় আবার কেন...বাইঞ্চোত প্রেম করবেন কি কইরা তলায় বাঁনধলে…

      --নেতার মুখোশ পরান কেন...সবই তো দেখছি নেতানেতিদের কম বয়সের মুখোশ...

      --ওইগুলোই ফ্রি বিলি হয়...আপনি যাকে ভালোবাসেন তার মুখোশ আপনার প্রেমিকাকে পরিয়ে প্রেম করুন…শঙ্খ লাগিয়ে সাপের ঢঙে রাত কাবার করুন...মানুষকে ভালোবাসুন...মানুষের জয় জয় করুন...

         --ভোঁসড়ির ছ্যানা...উনি প্রেমিকা শেয়ার নিষেধের কথা বলছিলেন...যদি চান… নিউকামারবাবু… আমাকে বলবেন...আমি আমার প্রেমিকাকে একরাতের জন্য লোন দেব...আমার প্রেমিকা ভিষণ ইউজার ফ্রেণ্ডলি...বোঁটায় মুখ দিলেই ফিল গুড আরাম পাবেন...স্লিপিং পিল ছাড়াই ঘুম পেয়ে যাবে...চুকচুকিয়ে স্বপ্নও এসে যেতে পারে...ইন এক্সচেঞ্জ আপনি আপনার প্রেমিকা পেয়ে গেলে আমায় লোন দেবেন...

         --থ্যাংকস ফর দি অফার...কিন্তু আমি তো বলেছি যে আমি মেয়েমানুষের ওসব ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না...ওদিকে একটা ঘর রয়েছে বলে মনে হচ্ছে...ওই যে দূরে…

     [ তরুণীরাও কেমনতর...যার তার সঙ্গে শুয়ে পড়ে...প্রেমিকের অনুরোধ রাখতে অচেনা মানুষের সঙ্গেও শুতে রাজি…জঙ্গলের ভেতরে আলট্রামডার্ন মহিলার দল...নাকি জোরজবরদস্তি করানো হয়...]

      --ওইটা পরে দ্যাখবেন অখন...আইজকা বাইঞ্চোত সব দ্যাখলে আগ্রহ ফুরাইয়া যাইবে... 

       --আপনি একজন ডাক্তার...এখানে এসে পড়েছেন...ভালোই হল...আমাদের ব্লাডি ফাকিং জ্বরজারি হলে একজন ডাক্তারের প্রয়োজন প্রায়ই খটকাতো…

         --গোছা-গোছা অ্যান্টিবায়টিক আর অ্যান্টিএলার্জিক এনে রাখলেই হল...দুটো খেলে একটা কাজে লেগে যায়...তালিকা দিয়ে দেব...

          --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক চিত্রকর নাট্যকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

         --ইটস নট মি...ইটস দি বার্ড...

         --বাইঞ্চোত পাখিটা উইড়া যায় না কেন জানি না...

         --এবার যখন বেরোব তখন এটাকে নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ টয়লেট  কোম্পানির কাছে উড়িয়ে আসতে হবে...হয়তো ওনার দানদাদন আটকে গেছে পাখিটা নেই বলে...

         --নো নো...উইথ হুম শ্যাল আই টক দেন...

         --ইউ আর টকিং এনাফ উইথ ইওর লাভার ইন দ্য নাইট...ইন ইওর ট্রাইবস ল্যাংগুয়েজ...ইন ইটালিয়ান...ইন সাইন ল্যাংগুয়েজ...

         --ইভন দেন...লেট ইট লিভ ইন ফ্রিডাম...

        --চলুন...আজকের মতন যথেষ্ট ব্লাডি ফাকিং জ্ঞানপ্রাপ্তি হয়েছে...

        --চলুন...

          --এক তলায় এটা বোধহয় সেই স্কটিশ সাহেবের ড্রইং রুম...পেল্লাই ঘর মশায়...সেই যে ছবির কথা বলছিলেন তখন...এইগুলো...

          --বাইঞ্চোত...এই ছবিটা দ্যাখতাসেন...সায়েব বাঘ মাইরা তার পিঠে পা দিয়া দাঁড়াইয়া...হাতে দোনলা…

          --আজকাল তো দেশে আর বিশেষ বাঘ নেই...চিনের টাইগারচাউতে আর টাইগ্রেস-মানচুরিয়ানে ওখানকার মিলিটারির বড়বাবুরা বাঘের হাড়ের গুঁড়ো কিংবা বাঘিনীর মাংসের আচার ওপর থেকে ছড়িয়ে দিয়ে দুটো কাঠি দিয়ে খায়...টেসটোসটেরন বাড়াতে পারে...দেশের সীমাও বাড়াতে পারে...

          --তার মানে সায়েব বোধহয় জঙ্গলে শিকার করতে আসার জন্য বার্মা টিক উডের এই বাড়িখানা তৈরি করেছিলেন...

          --ছবিগুলো দেখতে থাকুন...সাঁইত্রিশটা অক্ষত ফোটো আছে এই ঘরটায়... অন্যগুলো খারাপ হয়ে গেছে...যিনি মারা গেলেন তাঁর ঘরে অনেক ফোটো আছে... সায়েব সম্পর্কে একটা আইডিয়া করতে পারবেন...এই সায়েব আমাদের ডিভাইন গাইড...উনি স্বর্গ থেকে আমাদের পথ দেখান...

          --হ্যাঃ হ্যাঃ...কুড়ি কোটি দুর্যধনের বাল...আমি সালা এগগালে নগসাল ছিলুম...মনে থাকে যেন...

          --এই চুপ...যে মরে গেছে তার নকল করবেন না...

          --আরে...এই ছবিতে সাহেবের সঙ্গে এই চারজন মহিলা তো ইনডিয়ান বলে মনে হচ্ছে...দেখুন... দেখুন...নাক-নকশা...গায়ের রঙ...গয়না...এনারা মোটেই মেম নন... 

         --টু বি প্রিসাইজ...বেশ কিছু গয়না আমরা  সিন্দুকে পেয়েছি...ডাকাতির টাকাকড়ি ওই সিন্দুকেই রাখা হয়...লুটে আনা হাতঘড়ি এটসেটরা...

         --গয়না... বেচে দিয়েছেন নাকি ?

         --বেচতে গিয়ে ধরা পড়ি আরকি...আমরা ডাকাতি করি মেইনলি প্রয়োজনের মাল আর ক্যাশ… গয়না-ফয়না তুলি না...বিক্রির ধান্দা করতে গেলেই পুলিশের ফাঁদে পড়তে হতো...সংসারের জিনিসপত্র তুলি...যেমন মোটর সাইকেলগুলো...ল্যাপটপ...ফিল্মের সিডি… পোশাক… খাবার-দাবার...এইসব...

        --ল্যাপটপ ?

        --বুঝলেন কিনা...মোটর সাইকেলে ব্যাটারি রিচার্জ করে ফিল্ম-টিল্ম দেখি...প্রেমদেহ রিনিউ করার জন্য ল্যাংটো মেমদের সিডি দেখে  কালাতিপাত করি... 

         --সাহেবের ইনডিয়ান সঙ্গিনীদের গয়নাগাটি কী করলেন...

         --কেন...আমাদের প্রেমিকাদের পরাই...আপনাকে যখন প্রেমিকা পাইয়ে দেব আপনিও পরাবেন...

         --ওঃ...হ্যাঁ...আপনাদের প্রেমিকাদের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম...তাঁরা এখনও ফিরলেন না...

         --ফিরবেন ফিরবেন...সন্ধ্যা নাগাদ ফিরবেন...ওনাদের আদর করে ডেকে আনতে হয়...প্রেমিকা বলে কথা...

         --যান কোথায় ওনারা ?

         --সবাই মিলে দিনের বেলাতেই খাওয়া-দাওয়া সেরে ফ্যালেন...যাতে রাতের বেলায় আমাদের সঙ্গদানে সময় নষ্ট না হয়....তাই ওয়াঁদেরও তা নিয়ে ব্লাডি ফাকিং ভাবনাচিন্তা করতে হয় না...বাইরে যখন বেরোই না তখন কিছু রেঁধে খেতে হলে...যিনি মারা গেলেন তিনি রেঁধে রাখতেন...দিনের বেলায় কেরোসিন স্টোভে রাঁধি যাতে আকাশে ধোঁয়া উঠে আমাদের আস্তানা ফাঁস না হয়...রাতের বেলা রাঁধলে উনোনের আলো দেখা যাবে বলে রাঁধি না...বাড়ির ভেতরে জানলা বন্ধ করে ব্যাটারি-কনেলন্ঠন বা রোদলন্ঠন জ্বালি...সবায়ের ঘরে আছে…যিনি মারা গেলেন তাঁর ঘরেও...       

         --এই ছবিটা দেখেছেন তো...চারজন ভারতীয় মহিলা...নিশ্চয়ই সাহেবের রাখেল...প্রথম দিকে পাদরিদের বারণ ছিল বলে সাহেবরা খোলাখুলি হিদেন মহিলাদের বউ করতে পারত না...বউ করার আগে ধর্ম পালটিয়ে নিতে হতো...মানে আমি সেরকমটাই অনুমান করছিলুম...সাহেব ভারতীয় সঙ্গিনীদের এখানে লুকিয়ে রেখেছিল...শহরে কিংবা স্কটল্যাণ্ডের বউকে না জানিয়ে ভারতীয় মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছিল...

        --সব ফোটোগুলো দেখুন...সায়েবের গল্প স্পষ্ট হবে...আপনি হয়তো ঠিকই অনুমান করেছেন...স্কটল্যাণ্ডের বেশ্যালয়েও দেখেছি যে ফর্সা সায়েবরা রোগাটে আফ্রিকান বেশ্যাদের চৌকাঠেই বেশি ঢুঁ মারেন...ইনডিয়ানরা যেমন ফর্সা মেমদের চৌকাঠে ঢুঁ মারতে ভালোবাসেন...

       --ইয়েস ইয়েস...ইন রোম অলসো দোজ বাগার্স লাইকড টু পিক আপ ব্ল্যাক হুকার্স...

        --হ্যাঁ...তাই তো দেখছি...দাঁড়ান সবকটা ছবি একবার দেখে নিই...এটা মনে হচ্ছে লণ্ডনের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দপতরের বিলডিং...আর এটা ওদের ঝাণ্ডা...ক্রস আর লাইন... ব্ল্যাক অ্যাণ্ড হোয়াইট ফোটো বলে ফ্ল্যাগের রং যে লাল তা বোঝা না গেলেও...লাল ঝাণ্ডার রাজত্ব  সেই তখনই...লর্ড ক্লাইভের আমল থেকে  শুরু হয়েছিল...

      --আর কই...ভোঁসড়ির ছ্যানা...বুঝলেন কিনা...সে কোম্পানিও নেই...শাদাসায়েবও নেই...তামাটে সায়েবও নেই...রয়ে গেছে তাদের হেগে রাখা এনামেল গামলা...আর কুমড়োভুঁড়ি আমলা...

     --আর নেপোপ্রেমী চিৎফাঁদ টয়লেট পাঁজি কোম্পানি...

      --খুঁটিয়ে দেখি মহিলাদের...এসব ফোটো বেশ দুষ্প্রাপ্য...বাজারে ঝাড়লে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে...যারা ইতিহাসের বইটই লেখে তারাও গবেষণার নতুন নতুন গপপো-টপপো পাবে...আমার মনে হয় চটকল বা চাবাগান নয়...এই সাহেবের কাজকারবার তারও আগের...এই মহিলারা আফিমচাষিদের বউ বা মেয়ে হতে পারেন... আপনারা যেমন টাকাকড়ি-মালপত্র তুলে আনেন...ওনারা তেমনি আফিমচাষিদের বউ-মেয়ে তুলে নিয়ে যেত... 

      --মেট্রপলিসের বাঙালি সাকরেদরা কিন্তু এদান্তি আর তুইলা নিয়া যাইবার হ্যাঙ্গাম করে না...যেথায় পায় ধরেবেঁধে সেথায়ই কাজ সাইরা ফ্যালে...পকাৎপঙ...গ্রাম হইলে সালিসি সভার বাছাই করা পোলারা লাইন দিয়া একে-একে পকাৎপঙ করে...বাইঞ্চোত আমরা তা করি না...নিজের নিজের প্রেমিকার সঙ্গে হেভেনলি রিলেশানশিপ নিয়া স্যাটিসফায়েড...পবিত্র প্রেম...

       --বাঘ ছাড়া সাহেব হরিণ...বাইসনও মেরেছিল...বাইসনের পিঠে পা রেখে দাঁড়িয়ে ফোটো তুলিয়েছে...

       --দেখুন দেখুন...আপনি ঘুরেফিরে দেখতে থাকুন...আমরা ততক্ষণ সায়েবের সেগুনকাঠের দোলন-চেয়ারে বসে দোল খাই...আর আরাম করি...এই দোল খাওয়াই আমাদের প্রধান পাসটাইম...পাঁচটা চেয়ার রয়েছেই…

সকলে ল্যাংটো পোঁদে দোল খাই আর নাস্তা-খাস্তা খাই...হাতে হাতে ছিলিম ঘোরে...ওই কোনের সিন্দুকটা খুলবেন না যেন...ওতেই ডাকাতির টাকাকড়ি আর প্রেমিকাদের গয়নাগাঁটি রাখি আমরা...

       --মাই গড...এই ছবিগুলোয় মহিলাদের গায়ে পোশাক নেই...শুয়ে...হেলান দিয়ে...কুকুরে ওনাদের...সাহেব কুকুর পুষেছিল...কুকুর দিয়ে মহিলাদের...এবার অনুমান করতে পারছি...ওই চারটে কবর নিশ্চয়ই চারজন মহিলার...কুকুরদের পেনিস আর পেচ্ছাপ থেকে মানুষদের লেপ্টোসপিরোসিস রোগ হয়...ফুসফুসের রক্তক্ষরণ থেকে রোগি মারা যায়...মহিলারা হয়তো ওই রোগে মারা গিয়েছিলেন...তারপর সাহেব সব ছেড়েছুড়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পালিয়েছে...দে পিটটান...কুকুরগুলোকে বোধহয় জ্যান্ত কবর দিয়েছিল... 

     --সায়েবের বোধহয় ডিসফাংশান রোগে ধরেছিল...আর মহিলা চারজন...সায়েব থার্ড সেক্সের লোক ছিল...নয়তো...কেন...আ্যাঁ... 

      --এটা কি দেয়ালে ? কাঁচাপাকা চুল দিয়ে আঁকা ইন্সটলেশান মনে হচ্ছে…

     --যিনি মারা গেছেন তাঁর তৈরি শিল্প...আমাদের সকলের শরীরের চুল ফেভিকল দিয়ে টিক উডের ওপর সেঁটে উনি একখানা অবিনশ্বর পেইনটিঙ তৈরি করে দিয়ে গেছেন...বিপ্লবের জয়গান...   

      [না...এটা সত্যিই কাঁচাপাকা চুল সেঁটে আঁকা...উত্তরাধুনিক ইন্সটলেশান হয়তো...লণ্ডনে নিলাম হলে অনেক টাকা দর উঠতো...সেলারে যাবার গোপন দরোজা নয়...ফ্লোরটা তো কাঠের নয়...ফ্লোরের ওপরে কোনো পাটাতন দেখছি না...তাহলে তরুণীরা কোথায়...এতগুলো তরুণী…একটু জোরে-জোরে কথা বলি যাতে তরুণীরা শুনতে পান...]

       --দোতলায় আমরা যে ঘরগুলোয় থাকি সেখানে মাটিতে বাঘের চামড়া...হরিণের চামড়া...বাইসনের চামড়া পাতা আছে...ওগুলোর ওপরেই মহিলাদের শুইয়ে...কুকুর দিয়ে...শীতকালে তার ওপরে শুলে ঠাণ্ডা কম লাগে...ওই যে উনি যিনি বিলাত থেকে পালিয়ে এসেছেন...ওনার  ঘরে দেয়ালে বাঘের মুণ্ডু ঝোলানো আছে...আমার আর এনার ঘরে বাইসনের শিং-উঁচু মুণ্ডু আর আর্মি ডেজার্টার...ওনার ঘরে হরিণের মুণ্ডু...দুটো হরিণের...সামবর আর বার্কিং...

      --আমি যে ঘরটায় থাকব তাতে নেই তো...ভাগ্যিস..

      --না...তাতে চারজন মানুষের করোটি দেয়ালে টাঙানো আছে...আর যিনি মারা গেছেন তাঁর টাঙানো দাড়ি-টেকো-গুঁফো বিদেশিদের রঙিন ছবি...ঘরে ধুপকাঠির গন্ধ পাবেন...

      --করোটি...উরেব্বাপ...আই অ্যাম শিওর নিশ্চয়ই ওই চার মহিলার...মারা যাবার পর সায়েব ধড় থেকে মুণ্ডু আলাদা করে করোটি বানিয়ে টাঙিয়ে রেখেছিল...ওই ঘরেই থাকত নিশ্চয়ই…মহিলারা মারা যাবার পর স্কচ খেতে খেতে তাদের করোটির দিকে তাকিয়ে কাঁদতো...ওই ঘরে কি অন্ধকারে কান্না দোল খায়...

      --ওই ঘরেই তো যাবতীয় বইপত্র...ম্যাণ্টলপিস...পালঙ্ক...ক্যাণ্ডলস্ট্যান্ড...সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো আয়না...আরও টুকিটাকি নানা জিনিস আছে...

      --হ্যাঁ...স্কাল...হিউমান স্কাল...সায়েবরা নিজেদের বাড়ির দেয়ালে হিউমান স্কাল ঝোলায়...স্কটল্যাণ্ডে যে ব্লাডি ফাকিং  ডিসটিলারিতে কাজ করতাম তার মালিকের বাড়িতে দেখেছি...পালিশকরা কাঠের বোর্ডে বসানো...বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির মাঠ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিল...যুদ্ধ জেতার মেমেন্টো...আমেরিকানরা ইরাক থেকে ফোটো তুলে যেমন মেমেন্টো নিয়ে গেছে...কেউ শবের ওপর মুতছে...কেউ পোঁদে চোঙ ঢোকাচ্ছে…

    --ব্যাবিলনের আমলের সোনাদানাও মিউজিয়াম থেকে নিয়ে গেছে...আমরা সোনাদানা নিই না...

     --তাহলে এগোই...দেখি আমার ঘর...দুপুরের ন্যাপ নিয়ে নিই... 

    --যিনি মারা গেছেন তিনি অনেক টিপটপ লোক ছিলেন...পাউডার...পারফিউম...চুল না থাকলেও চিরুনি...নারকেল তেল...সাবান পাবেন...আমরা ওনাকে এনে দিতাম...এখন দুপুরে আপনার বাদাম খেয়েই কাটান...সন্ধ্যা বেলায়  দেখা যাবে...যিনি মারা গেছেন তাঁর ঘরে জলের ব্যবস্হাও আছে...কুয়োর জল হলেও প্লাস্টিকের ফিল্টারে প্রত্যেকদিন ভরে রাখতেন...পরশুও ভরে রেখেছিলেন...ফিলটার ক্যান্ডলটা অবশ্য বদলানো হয়নি... এবার বেরোলে মনে করে কয়েকটা ফিলটার ক্যাণ্ডল আনতে হবে... 

      --কেন যে আত্মহত্যা করলেন ভদ্রলোক...

      --বেচারা...বাইঞ্চোত প্রেমিক মানুষ...      

     --তাহলে যাই তিনতলায়...     

     --হ্যাঁ...ঘুমাইয়া ন্যান...তিনদিন জঙ্গলে ঘুমাননি...একখান ঘুম দ্যান...যোনি-যোনি রে যোনি রে...হিঁঃ হিঁঃ...

     --দাঁড়ান...দাঁড়ান...এক মিনিট...আপনি তো এখনও পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নন...চলুন...আপনাকে আপনার ঘরে পৌঁছে দিই...বাইরে থেকে বন্ধ করে দেবো আপনার ঘর...আপনি ইচ্ছে করলে ভেতর থেকে বন্ধ করে নেবেন...  হাগা-হিসি পেলে চেয়ারে এনামেলের গামলা আছে...টয়লেট পেপার রোল আছে...যিনি মারা গেছেন তাঁর রাখা...ব্যবহার করতে পারেন... 

      --ঠিক আছে...চলুন...বন্ধ করে দেবেন...নো প্রবলেম…

      --সন্ধ্যায় দেখা হবে…

      --[ ঘুমটা ভালোই হল...খাটের ওপর উঠে দেখি দেয়ালে টাঙানো মাউন্ট করা করোটিগুলো...এদের তলায় 

তো ইংরেজিতে নাম লেখা রয়েছে  প্রত্যেকের...রাজরাজেশ্বরী… সন্ধ্যারাগিনী… চপলচারিণী… সুখশ্বেতাম্বরী...এনারাই তাহলে সাহেবের রাখেল...আগেকার কালে ঘোমটা দিতেন বলে ওনাদের রক্ষিতা বলা হতো...স্কাউন্ড্রেলগুলো বলে চলেছে যিনি মারা গেছেন...যিনি মারা গেছেন...শুনতে তো পেলুম যে বিলাত ফেরত স্কাউন্ড্রেলটাই মাথায় ভোঁচকানির চোটে মেরে ফেলেছে...তারই প্রেমিকাকে দখল করে...আজকাল অবশ্য একজন তরুণী দুই-তিনজনকে ফাঁসিয়ে একই সঙ্গে প্রেম করে...সাইজ ম্যাটার্স...কয়েকজনের সন্দেহও রয়েছে যে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন...যিনি মারা গেছেন  তাঁর ঘর তো বেশ সাজানো-গোছানো...প্রচুর বইপত্র...বাংলা বই...বাংলা ফিল্মের পত্রিকা...কবিতার বই...লোকটা পড়ুয়া ছিল বোধহয়...খাটও রয়েছে...সাহেবের ...ড্রয়ারের মধ্যে এটা কি প্লাসটিকের প্যাকেটে...এটাই তো লাল-গলা টিয়াপাখিটা...ইনিই তাহলে লাল-গলাকে মেরে ফেলেছেন… চুপচাপ...স্কাউন্ড্রেলগুলোকে জানতে দেননি...কেন...কোনো কারণ ছিল নিশ্চয়...কয়েকটা বই উলটে পালটে দেখি...যিনি মারা গেছেন তাঁরই হাতের লেখা মনে হচ্ছে...লিখেছেন...ঘরে এনামেলের বালতিতে হিসি করার কী যে আনন্দ... অন্য বইতে দেখি...কয়েকটা বইতে দেখছি লিখে রেখেছেন...চাঁদবদনী আমি তোমায় ভালোবাসি...আসকাতুরে মাতালটা তোমার অযুগ্যি...কে এই চাঁদবদনী...সেই মহিলাই বা দুজন প্রেমিককে খেলাচ্ছেন কেন...যিনি মারা গেছেন তিনি কি ভিতু-ভাবুক ছিলেন...সমকামীরা কি ভিতু-ভাবুক হয়ে যান সমাজের চাপে...নাকি এখানে এই স্কাউন্ড্রেলগুলোর মধ্যে পড়ে ভিতু-ভাবুক হয়ে গিয়েছিলেন...যিনি মরে গেছেন তিনি... অন্য ক্রিমিনালগুলোর কাছে বন্দুক-পিস্তল ছিল মানে যিনি মারা গেছেন তাঁর কাছেও হয়তো ছিল….আগেই উড়িয়ে দিতে পারতেন...করেননি কেন কে জানে...দেখি...নাঃ...ঘরে কোথাও বন্দুক বা পিস্তল নেই...গিটার রয়েছে তো...টিউনিং করে রাখি...সন্ধ্যাবেলা বাজাবো...বইমুখখু স্কাউন্ড্রেলগুলোকে কোনোরকমে অন্যমনস্ক করে ফেলতে হবে...হাতে-পায়ে গুলি মেরে ঘায়েল করে দেয়া গেলে চলতে-ফিরতে পারবে না...দেখা যাক...ওদের প্রেমিকাদের সঙ্গে আগে পরিচিত হই...লিগ্যালি ব্লণ্ড চাঁদবদনীর বদনখানা দেখি…পিস্তলটা জাঙিয়া থেকে বের করে পাশ পকেটে ঢুকিয়ে রাখি...বলা যায় না...হঠাৎ দরকার হতে পারে...কেউ দরোজা খুলছে বোধহয়...আওয়াজ হচ্ছে...]

         --শশশশশ...ভোঁসড়ির ছ্যানা...বেড়ে গিটার বাজান তো...যিনি মারা গেলেন তাঁর চেয়েও ভালো...তাহলে সন্ন্যাস নিচ্ছিলেন কেন...সন্ন্যাসী হয়ে গিটারের জন্য মনকেমন করলে কী করতেন...আ্যাঁ...প্রাণায়ামের একনাক টেপা গিটার বাজাতে হতো...

          --কে…আরে...আপনি তো উলঙ্গ...এক্কেবারে উদোম...

          --আমি...আমি...প্রেম করতে হবে তো...পোশাক পরে তো আর করা যায় না...বিলিতি গান বেড়ে বাজান...ভালো...চাঁদবদনীর প্রেমিকের ভালো লাগবে...বিলেতে ছিল বলে বড়াই করে ভোঁসড়ির ছ্যানা…

          --তাই ওনাকে নেতা করেছেন আপনারা…

          --কোন ভোঁসড়ির ছ্যানা নেতা...এখানে কেউ কারোর চামচা নয়...আমার কাছে নেতাগিরি ফলাতে আসলে বাঁটকুলকে দেবো এইসান লাফা...মাটির তলায় ঢুকে রামায়ণের সীতার পা টিপবে… যাকগে… চলুন...সেরিমনি চালু করে দিয়েছে সবাই যে যার ঘরে...অন্ধকার হয়ে এলো...সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে সেরিমনি করলে জমবে...যিনি মারা গেলেন তিনিও মাঝে-মধ্যে জমায়েতে গিটার বাজাতেন...ওই বাংলা গান আরকি...একটাই গান জানতেন...সেটাই বাজিয়ে-বাজিয়ে গাইতেন...আট বছর যাবত…আর চাঁদবদনী আসার পর চাঁদবদনীকে শোনাতেন...চাঁদবদনীর পায়ে নূপুর বেঁধে দিতেন...গিটার বাজিয়ে গাইতেন...বিলাত ফেরতের তো গা জ্বলে যেত...

         --কি গান…

         -- শুনে শুনে কুলকুচির মতন মুখস্হ হয়ে গেছে...শুনুন..গাইছি…একটু নাকি সুরে গাইতে হয়...

            আঁমায় এঁত রাঁতে ক্যাঁনে ডাঁক দিঁলি প্রাঁণ-কোকিঁলা রেঁ

            আঁমায় এঁত রাঁতে ক্যাঁনে ডাঁক দিঁলি

            নিঁভা ছিঁল মঁনের আঁগুন জ্বাঁলাইয়াঁ গেঁলি প্রাঁণ-কোকিঁলা রেঁ

            আঁমায় এঁত রাঁতে ক্যাঁনে ডাঁক দিঁলি...

        --চারটে নূপুর রয়েছে দেখলুম ড্রয়ারে…

        --চারটেই তো…

        --ম্যান্টলপিসের ভেতরে একটা প্যাকেটে আপনাদের লাল-গলা পাখিটার দেহ রয়েছে…

        --দেখি...দেখি...হ্যাঁ...তাইতো...কখন এক ফাঁকে এনে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন…

        --কিন্তু কেন...পাখিটাতো দেখতে কত সুন্দর…

        --আরে...চিন্দিচোর...উনি ভাবতেন যে পাখিটা ওনাকেই গালাগাল দিচ্ছেন...ওনার এইসব বইফই… পদ্যটদ্য… গানফান নিয়ে পরাণপাতলা ছিলেন...হয়তো অন্য পাখিটাকেও মেরে ফেলতেন...ওটাও তো গালাগাল দিয়ে এফ এম রেডিওর গান শোনান...তার আগেই উনি নিজেই কোতল হয়ে গেলেন…

       --কোতল… 

       --হ্যাঁ...টকিট্যারচা বিলাত ফেরতের সঙ্গে চাঁদবদনীকে নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি এমন গর্মাগর্মিতে চলে গিয়েছিল যে দুজনের মধ্যে একজনকে কোতল হতেই হতো…অবশ্য সত্যিই মারা গেলেন কি না সে বিষয়ে আমার এখনও খটকা আছে...হয়তো চাঁদবদনীকে দখল করার জন্য তাড়াতাড়ি মাটি চাপা দিয়ে দিলেন...অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন না মারা গিয়েছিলেন...আমার তো সন্দেহ যায়নি...

       --আচ্ছা...আমি তাই ভাবছিলুম যে খামোখা আত্মহত্যা করতে গেলেন কেন...

        --যাকগে...যেতে দিন...যা হবার হয়ে গেছে...আপনি কী গান বাজাচ্ছিলেন...একেবারে ঝমাঝঝম… মারিকাটারি...গাইছিলেনও...শুনতে পেলুম…ঝিনচাক...শালা জমে যাবে...

        --শুনুন...কেমন লাগে বলুন…হেভি মেটাল...স্যামি হ্যাগারের গান…

        --শোনান...বসি একটু…ওসব হাগাহাগি নাম তো শুনিনি...নামের কোনো দরকার নেই...

        --হেড ব্যাঙার্স ইন লেদার

          স্পার্কস ফ্লাইং ইন দি ডেড অফ নাইট

         ইট অল কামস টুগেদার

         হোয়েন দে টার্ন আউট দি লাইট

         ফাইভ থাউজেন্ড ওয়াটস অফ পাওয়ার

         অ্যাণ্ড ইটস পুশিং ওভারলোড

         দি বিস্ট ইজ রেডি টু ডিভাওয়ার

         অল দি মেটাল দে ক্যান হোল্ড

         রকিং ওভারলোড

         স্টার্ট টু এক্সপ্লোড…

      --ভোঁসড়ির ছ্যানা...দারুন...ফাটাফাটি...জমে যাবে…মাতিয়ে দেবে...চকাচক ধকাধক প্রেম করা যাবে...

      --[ যাক...এই স্কাউন্ড্রেলটাকে প্রভাবিত করতে পেরেছি মনে হচ্ছে...অসতর্ক থাকবে হয়ত...অন্য স্কাউন্ড্রেলগুলোকেও এক জায়গায় জড়ো করতে হবে…কিন্তু এদের প্রেমিকাদের সামলাব কী করে সেটাই সমস্যা...তাদের যদি কিডন্যাপ করে এনে থাকে তাহলে তাদের সাহায্য পেতে পারি...দেখা যাক কতদূর কি করতে পারি...]

         --চলুন...গিটার নিয়ে নিচে চলুন...        

         --কী...খাওয়া-দাওয়ার জোগাড় হয়ে গেছে নাকি...চলুন...তিন দিন হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলুম...সন্ধ্যা হয়ে গেল...অন্ধকার...

          --সিঁড়িতে রোদলন্ঠন রেখে এসেছি...চলুন...আজকে তো বেশ বড়ো চাঁদ দেখা যাচ্ছে আকাশে...পূর্ণিমায় টেসটোসটেরনের জোয়ার ডাকে...ষাঁড়াষাঁড়ি...সেরিমনি চলছে...যে যার নিজের ঘরে সেরিমনি করছে...দেখবেন আসুন...আওয়াজ করবেন না...আসুন...সেররিমনির পর আফটার পার্টি...

          --ছমছমে আধো-অন্ধকারে কিছুই তো ভালো দেখতে পাচ্ছি না...পাকানো সিঁড়ি...

          --আমার হাত ধরুন...ধাপগুলো সামলে নামুন...

          --কোথায় হচ্ছে সেরিমনি...কিসের সেরিমনি...আপনারা ক্যালেণ্ডারও রাখেন না যে জন্মদিন-টিন পালন করবেন...

          --আরে ভোঁসড়ির ছ্যানা...সেসব নয়...আমাদের প্রেমিকাদের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়নি তো...চলুন... পরিচয় করিয়ে দিই…প্রেমিকার সঙ্গে যে যার নিজের ঘরে...বুঝলেন কিনা...হ্যাঃ হ্যাঃ...

         --কার ঘরে হচ্ছে... সকলে যে যার আলাদা সেরিমনি করছেন...না ড্রইংরুমে জড়ো হয়েছেন...ড্রইংরুমে একজোট হয়ে করলে আরও মজার হবে...আমি গিটার বাজিয়ে গাইতে থাকবো...আপনারা প্রেমিকাদের সঙ্গে নাচতে থাকবেন...ডুয়ার্সের জঙ্গলে ডিসকো...

          --আরে চলুন না ভোঁসড়ির ছ্যানা...নিজের চোখে দেখুন...কানে শুনুন...তবে তো...আস্তে...আওয়াজ করবেন না...হ্যাঁ...এই ঘরের দরোজাটা  ফাঁক করা আছে...উঁকি দিন...কেলোর ঘর…ব্যাটারি-লন্ঠন জ্বলছে… কেলোর প্রেমিকার নাম সন্ধ্যারাগিনী…

         --সন্ধ্যারাগিনী...কেলো উচ্চারণ করতে পারেন কি প্রেমিকার নাম…

         --উচ্চারণ করার দরকার হয় না...

          --কেলো তো পুরো ল্যাংটো...কী করছেন উনি...প্রেমিকা কোথায়...কোনো মহিলাকে দেখছি না তো… একটা হরিণ বলে মনে হচ্ছে...ছাই রঙের...সামবর হরিণ...সামবরের গলায় সোনার হার পরিয়েছেন...অন্ধকার অন্ধকার...গলা জড়িয়ে ধরেছেন...তার মানে সামবর হরিণই ওনার সঙ্গিনী...সন্ধ্যারাগিনী...হ্যাঁ...তাই তো...কি করছেন কী...দেখলুম ওনার সেরিমনি…অন্ধকার এগোচ্ছে...অন্ধকার পেছোচ্ছে...অন্ধকারে মেশাচ্ছেন  অন্ধকার...বিড়বিড় করছেন…

         --দুচার ছিলিম ফুঁকে...নিজের ভাষায় প্রেম নিবেদন করছেন...আমি তোমায় ভালোবাসি...আমাকে ছেড়ে যেও না...তোমায় ছাড়া বাঁচব না...প্রেমে পড়লে লোকে যাসব ভুজুং-ভাজুং দ্যায় আরকি…ঘরের মেঝেতে গাঁজা পাতার ডাল দেখছেন তো...ওনার প্রেমিকা ওই পাতা চিবুতে ভালোবাসে...

         --এরকম প্রেম নিবেদন আগে দেখিনি কখনও...পাশের ঘরটা কার...

          --আসুন...পাশের ঘরে আসুন…আর্মি ডেজার্টারের ঘর এটা...উঁকি দিন...চুপচাপ…এনার প্রেমিকার নাম চপলচারিণী...

         --এনার প্রেমিকাকে...দেখি...গুমো গন্ধ আসছে...হরিণ...গায়ে ছিটে...চিতল হরিণ...গলায় সোনার হার… দুটো কানে মাকড়ি...ছ্যাঁদা করেছেন নাকি কানে...কোমরে লুঙ্গি নেই...একই কাজে মগ্ন… এগোচ্ছেন… পেছোচ্ছেন...গলা জড়িয়ে ধরে আছেন...কোথা থেকে এলো...সামবর...চিতল…ইনি অবশ্য প্রেম নিবেদন-টিবেদন করছেন না...একমনে নিজের কাজে মগ্ন...

          --কেন...জঙ্গলে ফাঁদ পেতে...মাটি খুঁড়ে তাতে ওপর থেকে ডালপালা চাপা দিয়ে...আপনাকে বলেছিলাম ভোঁসড়ির ছ্যানা হর্স রেসে ঘোড়াকে জিতিয়ে আনার রসায়ন...ম্যাজিক এলিমেন্ট...ঘোড়াকে আমি এই ভালোবাসার রসায়নে সন্মোহিত করতুম...কেলোর প্রেমিকা...আর্মি ডেজার্টারের প্রেমিকা...দেখলেন তো কেমন সন্মোহিত...আত্মসমর্পণ করেছে প্রেমিকের কোলে…এবারে আমার প্রেমিকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই...পাশের ঘরে আসুন…আজকে ও আপনার...

         --কিন্তু ঘোড়া তো বেশ উঁচু…

         --একটা টেবিলের ওপর দাঁড়াতাম…

         --সব সময় কি মাদি প্রেমিকা পড়ত ?

         --না না...এঁড়ে না নৈ ল্যাজ তুলে দেখে নিয়ে...রেখে বা ছেড়ে দেয়া হয়...

         --দেখি...কে আপনার প্রেমিকা...বেশ বড়সড় উঁচুগলা ছাগল...ইনিই আপনার সঙ্গিনী...এরকম ছাগল কোথায় পেলেন...জঙ্গলে তো হয় না...শাদা ধবধবে ছাগল…ছাগলের সঙ্গে...তাই আপনার গা থেকে রামছাগলের গন্ধ বেরোচ্ছে...আপনিও গলায় সোনার হার পরিয়ে রেখেছেন...আপনার ঘরের মেঝেতেও গাঁজাপাতার ডাল রয়েছে...আরে...সত্যিই...আপনাকে দেখে দৌড়ে চলে এলো...

         --হ্যাঁ...গাঁজাপাতা চিবুতে আমার প্রেমিকারও ভালো লাগে...আমি ওনাকে স্নান করিয়ে দিই রেগুলারলি...নিজে স্নান করি না তো কি হয়েছে...আজকে আপনার জন্য দিচ্ছি ওকে...ওনার নাম রাজরাজেশ্বরী...এখনই প্রেম করবেন...না পরে…রাজরাজেশ্বরীর সঙ্গে প্রেম করার সুবিধা আছে...দুহাত দিয়ে শিংদুটো আঁকড়ে ধরুন আর মনের সুখে সেরিমনি করতে থাকুন...উনি তখন গাঁজাপাতা খাওয়ায় মগ্ন থাকবেন...ওনাকে চুরি করে এনেছি...মোটর সাইকেলে চাপিয়ে...একটা বাড়ির বাইরে বহরমপুর শহরে বাঁধা থাকতেন...বেলেত ফেরত কোলে নিয়ে বসলেন...আর পোঁ পাঁ...হ্যাঃ হ্যাঃ...রাজরাজেশ্বরীকে খাবে বলে পুষেছিল হয়তো...এ কি কেটে-কেটে খেয়ে ফেলার প্রাণী...বলুন...থন দেখুন...মুখে নিয়ে স্বর্গে পৌঁছে যাবেন আপনি… আপনার ঘরে নিয়ে যাবেন না এখানেই আমার ঘরে...আমার আপত্তি নেই...রাজরাজেশ্বরীও কারোর সঙ্গে প্রেমে আপত্তি করেন না…সবাই ওনার সঙ্গে প্রেম করেছেন...মুখোশ পরিয়ে বা বিনা মুখোশে...মুখ বদলাবার ইচ্ছা হয় তো…

         --আমার মনকে প্রথমে মানিয়ে নিতে হবে...তারপর...কয়েকদিন সময় লাগবে...তাছাড়া ছাগলের মাংস খেতে ভালো লাগে...চুমু খেতে আপাতত ভালোলাগবে না...আজকে আপনিই আপনার প্রেমিকার সঙ্গদান করুন...বিলেত ফেরতের ঘর কোনটা...ওনার প্রেমিকাকেও দেখি... 

         --এর পাশের ঘরটা...    

          --মাই গড...উনি তো...বিলেত ফেরত...পুরোপুরি পোশাকহীন...মদের বোতল গড়াচ্ছে মেঝেয়...মাতাল হয়ে গেছেন...মুখ ব্যাজার করে টলছেন...ওটা কি...ওটা তো গোলাপি রঙের বিদেশি শুয়োর...ইয়র্কশায়ার পিগ...মাদি বলেই মনে হচ্ছে...গলায় গয়না-টয়নাও পরানো হয়েছে...পেছন-পেছন দৌড়োচ্ছেন বিলাত ফেরত...

        --শশশশশশ...চুপচাপ দেখতে থাকুন...প্রেমের গন্ধ অনেকটা মড়াপোড়ার মতন...তা যে প্রাণীই বাছুন… হিংসের গন্ধের মতন...ঈর্ষার গন্ধের মতন...

          --ওনার কাছে যাচ্ছে না তো...পালিয়ে বেড়াচ্ছে সারা ঘরময়...এই কাজে...রাজি হচ্ছে না তো...কাছে যেতে রাজি  নয়...সমবর...চিতল...ছাগলের মতন...

          --শুয়োর নয়...শুয়োর বলবেন না...চাঁদবদনী ওনার প্রেমিকার নাম...দেখুন...চাঁদের আলোর মতন...লিগালি ব্লণ্ড...অন্ধকারেও দেখতে পাচ্ছেন...গোলাপি...তাই তো ওনাকে নিয়ে এত টানাটানি...চাঁদবদনীর গোলাপি ঠোঁটের পাউট দেখুন...কোনো ফিল্ম অ্যাকট্রেস ওনার ধারেকাছে আসতে পারবেন না...

           --প্রেমিকা...এই প্রেমিকার কথাই বলছিলেন...তাই চারটে নূপুর...

           --হ্যাঁ...তাই তো...যিনি মারা গেছেন তিনিই সরকারি অ্যানিমাল হাজবেণ্ডারি ফার্ম থেকে চুরি করে এনেছিলেন...প্রথম অধিকার তাঁরই ছিল...মোটর সাইকেল চালিয়েছিলেন আর্মি ডেজার্টার...আমরা সবাই মিলে গার্ড অফ অনার দিয়ে এনেছিলাম চাঁদবদনীকে...কিন্তু আনার পরেই দাবি করে বসলেন বেলেত ফেরত...বললেন উনি কোলে বসিয়ে এনেছেন বলেই ওনার হতে পারে না... কেননা ওনার সঙ্গদানের ক্ষমতা নেই…শরীরে… জঙ্গলরোমিও হবার মতন রসায়ন নেই...ভালোবাসার প্রতিদান দেবেনই বা কী করে...উনি বেলেত ফেরত...চাঁদবদনীর দাদু-দিদাও বেলেতের...তাই উনি নিয়ে নিলেন...

         --উনি তো ঘরের কোনে নিয়ে গিয়ে ভালোবাসাবাসি  করার চেষ্টা করছেন...জোর করে..এটা তো অন্যায়...পারস্পরিক অনুমতি ছাড়াই...উইদাউট কনসেন্ট...

          --দেখলেন তো...ওই কাজটাই সেরিমনি...উনি আপনার সঙ্গে চাঁদবদনীকে শেয়ার করবেন না...যিনি মারা গেছেন তিনি চাঁদবদনীকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে...পায়ে নুপূর পরিয়ে...জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন… বিলাত ফেরত হয়তো  চাঁদবদনীকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য মেরে ফেলতেন...মত বদলে যিনি মারা গেছেন তাঁকে  এক ঘুষিতে মেরে ফেললেন...তাঁর দেহ কাঁধে চাপিয়ে নিচে নিয়ে এলেন...মাটি খোঁড়ার তোড়জোড় করলেন… বললেন...যিনি মারা গেছেন তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন...

          --এটা অন্যায়...যিনি মরে গেছেন তিনি প্রেম করার জন্য এনেছিলেন...এটা চলতে দেয়া যায় না...

          --কী আর করবেন...যিনি মারা গেছেন তিনি তো মারাই গেছেন…তিনিও তো..আপনিই খুঁজে পেলেন… লাল গলা টিয়াপাখিকে মেরে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন...তা কি অন্যায় নয়...

          --আরেকজন কই...উনি কোন প্রেমিকাকে ভালোবাসেন দেখি…

         --ভোঁসড়ির ছ্যানা...চলুন..ওই ঘরটার দিকে...আওয়াজ করবেন না...কাঠের ওপর আলতো পায়ে না হাঁটলে আওয়াজ হবে...দরোজা ফাঁক করাই আছে...উঁকি দিন…

        --যাক...উনি ব্যাটরি লন্ঠন জ্বালিয়েই সেরিমনি করছেন...আরে…এনার কোমরেও লুঙ্গি নেই...

        --শশশশশ...আস্তে…

        --এনার প্রেমিকা তো একটা ভেড়া...শাদা রঙের ভেড়া...কোথায় পেলেন…ইনিও কয়েক ফুঁক ছিলিম টেনেছেন বোধহয়...দেখে যা মনে হচ্ছে...

       --কেন...পাহাড়তলি থেকে...একজন পাহাড়ি একপাল ভেড়া চরাতে নিয়ে যাচ্ছিল...ধবধবে শাদাটাকে তুলে নিলাম...বেলেত ফেরত চালাচ্ছিল...হাওয়াই জাহাজের মতন উড়িয়ে দিলে গাড়িটা...পাথর পাতা রাস্তায়…

       --কী নাম ওনার প্রেমিকার...

       --সুখশ্বেতাম্বরী…

        --ভেড়াদের তো লোম কামিয়ে দিতে হয়...নয়তো ওদের গ্রীষ্মকালে গরম লাগে…

        --গরমকালে কুয়োতলায় নিয়ে গিয়ে প্রতিদিন চন্দন সাবান মাখিয়ে স্নান করান...তারপর তোয়ালে দিয়ে বেশ করে পুঁছে দেন...তবেই না সুখশ্বেতাম্বরী ওনাকে এত ভালোবাসে...নিজের চোখেই দেখুন না দুজনে কেমন গায়ে গা...মেড ফর ইচ আদার…

       --লোম বেড়ে গেলে গরমকালে তো গরম লাগবে…

       --কেলো ওনার কাঁচি দিয়ে কেটে দ্যান...আমরা সুখশ্বেতাম্বরীর লোম মাথায় দেবার বালিশে ব্যবহার করি...শিমুল তুলোর চেয়েও নরম...কেন...আপনার ঘরে বালিশে মাথা দিয়ে টের পাননি..

        --তা সত্যি...আপনারা আপনাদের প্রেমিকার জন্য মেড ফর ইচ আদার...প্রেমিকাদের গলায় বেল্ট পরিয়ে রেখেছেন...চাঁদবদনী ছাড়া...প্রেমিকাদের নামগুলো কি সবাই মিলে ঠিক করেছেন..

       --না...যিনি মারা গেছেন তিনি প্রেমিকাদের নাম দিয়েছেন...বইফই পড়াপড়ি করতেন তো...কেলো তো অমন নাম দিতে পারতেন না...উনি অবশ্য ওনার নিজের ভাষায় নামকরণ করেছেন...তা উচ্চারণ করতে গেলে জিভ জড়িয়ে যায়...ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে শুরু…বেল্ট থাকলে আলিঙ্গনের সুবিধা হয়...চাঁদবদনীকে ওনারা দুজন পরাতে চাননি...দেখলেন তো মাতালটা পেছন-পেছন দৌড়োচ্ছে...

      [ যিনি মারা গেছেন তিনি এদের প্রেমিকার নামগুলো সাহেবের রাখেলদের নামে নামকরণ করেছেন...কেবল নিজের প্রেমিকার বেলায় নতুন নামকরণ করেছেন...স্কাউন্ড্রেলগুলো এটুকুও বোঝেনি...আট বছর হয়ে গেল...ওপরের ঘরটা সম্পর্কে এদের আগ্রহ ছিল না বোঝাই যাচ্ছে...গ্রন্হভীতি সম্ভবত...কিংবা যিনি মারা গেছেন তাঁকে এড়িয়ে চলত…]

        --কেউ বাঁদর বা হনুমানের সঙ্গে সম্পর্ক পাতালেন না কেন...জঙ্গলে তো প্রচুর রয়েছে...

        --আমরা ইনসেসচুয়াস সম্পর্ককে অনৈতিক মনে করি...তাই…

        --সবাই আট বছর যাবত…

        --না না না না...যিনি যখন তাঁর মনের মতন প্রেমিকা পেয়েছেন...তবে পাঁচ বছরের বেশি তো হবেই...

         --প্রতিদিন তো আপনারা একা-একা সেরিমনি করেন...আজকে ড্রইংরুমে সকলে মিলে অরজি করা যাক...আমি গিটার বাজাব...আপনারা তালে তাল মিলিয়ে সেরিমনি করবেন…

         --অরজি মানে…

         --হইচইভরা উত্তেজনার উৎসব…এপিফ্যানি বোধ করবেন...

         --ভালো আইডিয়া দিয়েছেন ভোঁসড়ির ছ্যানা…           

         --আমি নিচের তলায় গিয়ে গিটার বাজিয়ে শুরু করছি...আপনারা চাঁদবদনী রাজরাজেশ্বরী সন্ধ্যারাগিনী চপলচারিণী সুখশ্বেতাম্বরীকে নিয়ে আসুন...সকলের সামনে সকলে প্রেম করবেন...লজ্জা করবে না তো…

         --কেন লজ্জা করবে শুনি মোসাই…চপলচারিণী বা সন্ধ্যারাগিনীর কি লজ্জা করে যে আমাদের করবে… আমরা তো গরমকালে এমনিতেই ল্যাংটো থাকি... সবাই মিলে এর আগেও এক জায়গায় জড়ো হয়ে প্রেম করেছি...খেলা খেলেছি...কিন্তু ইংরেজি গানের সুরে ইংরেজি গান গেয়ে...যাকে বলছেন অরজি… এপিফ্যানি… তেমন লীলেখেলা করিনি…ইংরেজি গানে একটা ফাস্ট পেস আছে...ওই হিন্দি গানটাতেও আছে…রাজভাষার গান তো...

        --কোন গান…

       --পানি পানি পানি পানি পানি পানি পানি পানি পানি...ফাস্ট পেস প্রেম করা যায়...তালে তাল মিলিয়ে… গান ফুরোবার আগেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন...ব্যাস প্রেমিকাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ুন...নাক ডাকুন...

       [ আমার চাকরিতে এরকম ক্রিমিনাল পাইনি...এরা কেবল চুরি ডাকাতি খুন করেই ক্ষান্ত দেয়নি...তার সঙ্গে নতুন অভ্যাস আবিষ্কার করেছে যা চাষিবাড়ির বয়ঃসন্ধির ছেলেরা লুকিয়ে একা চাষের খেতে বা আমলিচুর বনে করে...এমন নয় যে নারীর অভাব মেটাতে এই পথে গেছে এরা...কত জায়গায় ঢুঁ মারে কিন্তু কোনো শহরে বেশ্যালয়ে যায় না...পশুরতিকে সাংসারিক করে ফেলেছে...এখান থেকে আমার পালাবার উপায় নেই...এদের কেউ একজন রাতে বন্দুক হাতে পাহারা দেবে...ড্রইংরুমে নিজেদের কাজে মত্ত থাকবে যখন...তখনই হাতে-পায়ে গুলি মেরে এমন জখম করে দিতে হবে যাতে চলতে-ফিরতে না পারে...বেশি ব্লিডিং হলে মুশকিল…জীবিত ধরে নিয়ে যাওয়া যাবে না...আগে ভেবেছিলুম প্রেমিকা মানে কিডন্যাপ করে আনা তরুণী...তা নয়...]

         --ঠিক আছে...আপনি ওনাদের নিয়ে নিচে আসুন…

          --আপনি এগোন...আমি সবাইকে আনছি…

           [এত দেরি হচ্ছে কেন...গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া আরম্ভ করে দিয়েছি...প্ল্যান গোলমাল হয়ে যাবে...কেউ একজন বেঁকে বসলেই ঝামেলা…যাক...নামছে প্রেমিকাদের পেছন পেছন...সবাই উলঙ্গ...কারোর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নেই...গুড...]

          --কি হল...গুলির আওয়াজ কেন…

          --চাঁদবদনী নিচে নামতে চাইছিল না…জোর করে টানতে টানতে নামাচ্ছিল বিলাত ফেরত...গুলি চালিয়েছে চাঁদবদনীকে মারবে বলে…

          --চাঁদবদনীর গায়ে না লেগে কেলোর মাথায় গুলি লেগেছে...ঘিলু বেরিয়ে গেছে...আরে ভোঁসড়ির ছ্যানা...সন্ধ্যারাগিনীর ওপর গিয়ে পড়ল…

         [ এই লোকটা আবার কে...দুহাতে পিস্তল চালাতে-চালাতে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকছে...আমি তো রিইনফোর্সমেন্টের জন্য অনুরোধ করার সুযোগ পাইনি...অন্য আরেকটা টিম নাকি...নাঃ...ইনিও উলঙ্গ...আমার গায়ে না লাগে...সিন্দুকের পেছনে লুকোই...হরিণদুটো...ভেড়া...ছাগল...বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে সদর দিয়ে পালাচ্ছে...পালালো...ইয়র্কশায়ার পিগটা পালালো না তো...পিস্তলধারী আগন্তুকের দুই পায়ের মাঝে গিয়ে লুকিয়েছে...যিনি মারা গেছেন ইনিই সেই লোক...আই সি...শুয়োরটা তাহলে সত্যিই ভালোবাসে লোকটাকে...] 

        --মর শালা...মর তোরা...নে নে নে নে...এতদিন আমাকে হিজড়ে...ইরেকশান হয় না… মেয়েলি… ভেড়ুয়া… ঢ্যামনা...কুরুণ্ডে...মেনিমুখো...এই সব বলতিস...এবার মর… মর… মর… মর… মর… মর… মর...ল্যাংটো পোঁদে মরে পড়ে থাক...তোদের লাশ পচুক জঙ্গলে...

       --কে আপনি...ডিপার্টমেন্টের...না...দেখিনি তো...আমার পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন...আমি এদের জ্যান্ত পাকড়াও করার চেষ্টা করছিলুম...আপনি কোথা থেকে এসে গোলমাল করে দিলেন...আপনি বরং সাহায্য করতে পারতেন আমাকে...এদের ধরে নিয়ে গিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করতুম...এদের অপরাধের ফিরিস্তি অনুযায়ী বহু কেসের সমাধান করা যেত...আট বছর যাবত কত অপরাধ এরা করেছে...নাঃ...সব গুবলেট করে  দিলেন...

         --আমি মরিনি...ঘুষি খেয়ে মরে যাবার ছল করে ছিটকে পড়েছিলাম...এক ফাঁকে পালাবো ভেবেছিলাম...কিন্তু প্রতিশোধ নেয়া জরুরি ছিল...তাছাড়া চাঁদবদনীকে ফেলে পালিয়ে যাওয়া উচিত হতো না...ওরা ভেবেছিল আমাকে জ্যান্ত পুঁতে দিয়ে মেরে ফেলবে...আমি মাটি তুলে বেরিয়ে এসেছি...আপনি যখন হেগে ফিরছিলেন সেসময় মাথা উঁচিয়ে দেখে নিয়েছিলাম...পিস্তল কুড়োলেন ঝোপ থেকে...জাঙিয়ায় ঢোকালেন...তখনই অনুমান করেছিলাম যে আপনি এদের ধরতে এসেছেন...আমিও দুটো পিস্তল লুকিয়ে রেখেছিলাম...ওরা জঙ্গলের বাইরে বেরোলে...কোনো ফল লক্ষ্য করে...চালানো প্র্যাকটিস করে নিতাম...মরেছে সবকটা...এদের কারোর বেঁচে থাকার অধিকার নেই...এবার চাঁদবদনী আমার একার...আমি এদের সঙ্গে থাকলেও কোনো ডাকাতি বা খুনে অংশ নিইনি...চাঁদবদনীকে তুলে আনা কি অন্যায়...নিজের চোখেই দেখুন... চাঁদবদনী আমায় ভালোবাসে...ওদের কোনো বেআইনি কাজে অংশ নিইনি...এদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম...এর আগে শুধু একটাই খুন করেছি...লালগলা টিয়াপাখিকে মেরে ফেলে...অন্য টিয়াপাখিটা কোথায়...ওটারও গতি করতে হবে…

         --ওই যে গান গাইতে গাইতে উড়ে বাইরে বেরিয়ে  যাচ্ছে…

         --কেন-কিঁ কেন-কিঁ কেন-কিঁ কবি লেখক নাট্যকার চিত্রকর অভিনেতা ভাস্কর স্হপতি এরা সবাই অসামাজিক গাধা...

          

   

   









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন