শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সৌমাল্য মুখার্জী বলেছেন

 সৌমাল্য মুখার্জী

কাব্যধর্মী গদ্য ও মলয় রায়চৌধুরীর লেখায় যা শেষ দেখেছি

______________________________________________

আমার ধারণা (যা ঠিক, বা ভুল-ও হতে পারে) :

কাব্যধর্মী গদ্য মানেই কি নিরতিশয় বিনয়, বিমূর্ত বায়বীয় তরলতা, হাওয়ার মতো নেশার মতো ভেসে যাওয়া? জোলো, খারাপ গদ্য-কে কবিতাধর্মী বলে চালানো আর কতদিন চলবে? উপর্যুপরি কবিতা (যদিও তা কবিতা নয়, অকারণ স্বপ্নাবেশ, তরল রোম্যান্টিকতা) মিশিয়ে দিলে গদ্য কবিতাময় হয়ে ওঠে না | গদ্যের ফর্ম, বিষয়বস্তু, ভিশন্, থিম, ন্যারেটিভ থেকে যদি কবিতা-টা উঠে আসে তখনই তা মিশ্রণযোগ্য | অর্থাৎ গদ্যের শরীর ও মন যদি জন্ম দেয় কবিতার, কাটা-সেলাইয়ের দাগ উবে যাবে | এবং কবিতা গদ্য-কে তরল করে না, বরং সলিড করে, নীরন্ধ্র করে, গদ্য-কে এক গাঢ়, নিরবচ্ছিন্ন শরীর দেয় | কাব্যভাষা যে গদ্য-কে ধারণ করছে তা অতনু নয়, ভীষণভাবে শরীরী। দেখেছি কেউ-কেউ কোনো উপন্যাস পড়ে বলে ওঠেন, আহা, ঠিক যেন কবিতা ! বেশিরভাগ সময়ে পড়ে দেখি উপন্যাসটা অত্যন্ত খারাপ, জোলো। কবিতা-ও নয়, গদ্য-ও নয়! কাব্যধর্মী গদ্য শেষ সম্ভবত লিখতে পেরেছেন মলয় রায়চৌধুরী। মলয় এখনো লিখে চলেছেন, ইনএভিটেবলি। যে নানাবিধ ভাঙা-গড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে মলয় নিয়ে গেছেন নিজের গদ্যশৈলী-কে তা পাঠক দেখেছেন, দেখছেন । বঙ্কিমের 'কপালকুণ্ডলা' থেকে নবারুণের 'কাঙাল মালসাট', ন্যারেটিভে কমেন্টরির ভূমিকা নতুন নয় । কিন্তু যেভাবে মলয় ব্যবহার করেছেন কমেন্টরি-কে তাঁর সাহিত্যে, উপন্যাসে (অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা) বা গল্পে (জিন্নতুলবিলাদের রূপকথা) তা নিজেকে নির্দ্বিধায় অন্য ভঙ্গি থেকে পৃথক করেছে। কমেন্টরি কথনক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেনি, তার স্থান অধ্যায়ের অন্তে নয়, ন্যারেটিভের ভিতর, কখনো সংলাপের-ও ভিতর। কাব্যধর্মী গদ্যের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মলয়ের একটা গল্প, অনেক আগে লেখা, ১৩৯১ বঙ্গাব্দে, 'বাতাসের ঘ্রাণশক্তি ঝড়কে আমিষাশী করে'। ভাষা কাব্যধর্মী। আত্মজৈবনিক কথনে লেখা। এরকম গল্প বাংলা ভাষায় আর ক'টা লেখা হয়েছে জানি না। গদ্যের কাব্যময়তা কোনো এলিয়েন এলিমেন্ট নয়। তার জন্ম হয়েছে বায়োলজিকালি। গদ্যের হাত-পা-চোখ, ভিতরে কাব্যময় স্পন্দন্দের অস্তিত্ব স্পষ্ট ঠাহর করা যায়। এবং এই গল্পের ভাষা, যে মুণ্ডহীন ভাষা-কে এখন এদিকে-ওদিকে পোস্টমডার্ন বলে চালানো হয়ে থাকে, তার প্রতি কটাক্ষ নয়, থাপ্পড় নয়, উপেক্ষা ! কে না-জানে 'আমি ও বনবিহারী' উপন্যাসে কবিতা ও গদ্যের মধ্যবর্তী স্পেস আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন সন্দীপন, মলয়ের এই স্পেস মধ্যবর্তী নয়, গদ্যের দেহ থেকে, নাভি থেকে জন্ম নেয় কবিতার ব্রহ্মভ্রূণ ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন