মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

মলয় রায়চৌধুরীর "ছোটোলোকের কবিতাসমগ্র" -- প্রথম খণ্ড ( ১ )

 ছোটোলোকের কবিতাসমগ্র ( প্রথম খণ্ড )

মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা

একা

উৎসর্গ : একলব্য

একাই লড়েছিলুম

কেউ বলেনি 'হোক কলরব'

একাই নেমেছিলুম

ব্যাংকশাল কোর্টের সিঁড়ি বেয়ে

সেদিন একাই

কলকাতার পথে ঘুরেছিলুম

সকাল পর্যন্ত


বাংলার ত্রস্ত নীলিমা

উৎসর্গ : লাবণ্য দাশ

সোনালী ডানার চিল নাই আর, কাঁদেও না, এখন কেবল

সারাদিন ডিজেল-আকাশ জুড়ে শকুনেরা পাক খায়

আপনার দেখা সেইসব বধূরাও নেই ; তারা সব ধর্ষিত হয়ে

ধানসিঁড়ি নদীতীরে লাশ হয়ে আছে । উবে গেছে ব্রা্‌হ্মধর্ম--

গাঁয়ে ও শহরে যখন-তখন দাঙ্গা লেগে যায়, লাশ পড়ে থাকে।

.

আমিও আপনার মতো মিশতে পারি না হায় সবায়ের সাথে

মনে হয় বিশ্বাস করার মতো কিছি নেই, কেউ নেই

বাংলার ত্রস্ত নীলিমা ছেড়ে, আত্মনির্বাসন আজ ভালো মনে হয় ।


প্রেমিকা

উৎসর্গ : রত্নপ্রভা

মাথার দিক থেকে গেলা আরম্ভ করো তুমি

চেবাও না, চেবাবার দাঁত নেই, শুধু একটু-একটু করে

পুরোটা অস্তিত্ব গিলে নাও, জীবন্ত গিলে নিতে থাকো

একেই প্রেম বলে মনে করো তুমি

প্রেমিককে আগাপাশতলা চুবিয়ে জারকরসে

দুটি দাঁতে বিষ জড়ো করো


লারগা ভিদা আল কমান্দান্তে

উৎসর্গ : পাবলো নেরুদা

আমি রাইফেল চালাতে শিখেছিলুম

আমি স্টেনগান চালাতে শিখেছিলুম

আমি রিভলভার চালাতে শিখেছিলুম     

শিখেছিলুম আপনার স্মৃতিকে নিজের ভেতরে পুষে রাখব বলে

মার্গারেটের ডাকে বলিভিয়ায় গিয়েছিলুম

নয়েস্ত্রা সেনিওরা দ্য লা পাজ-এ

উচ্চতায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলুম

লারগা ভিদা আল কমান্দান্তে

চিলে আর পেরুর বাতাসে ঝড় তুলেছিল আমার চিৎকার

বাতাস বইলে মনে হয় সবুজ রঙের ঘোড়ার দল ছুটছে

আমিও একটা সবুজ ঘোড়ার ওপরে বসে দেখলুম গাছের ওপরে আপনার বাসা

ম্যাকাও পাখির মেটিঙ কল যেন বুলেট ছুটছে

কমান্দান্তে চে

কমান্দান্তে, আপনি পৃথিবীর স্বপ্ন

আপনি দুটো হাত দিয়ে স্বপ্ন দেখতেন আর দেখাতেন

তাই শত্রুরা হাত দুটো কেটে নিয়ে লোপাট করে দিয়েছিল

নয়টা বুলেটে বিদ্ধ করেছিল আপনাকে

বুলেটের আওয়াজ চিরকাল ধরে রাখবে ম্যাকাও পাখিরা

আমার কবিতায় আপনার মোটর সাইকেল ছুটবে

সারা লাতিন আমেরিকা জুড়ে

আমি নিকারাগুয়ায় গিয়েছিলুম আরনেস্তো কার্দেনালের সঙ্গে দেখা করতে

মার্গারেট র‌্যানডালের সঙ্গে কথা বলতে

মার্গারেট আমার বিপ্লবের কবিতা প্রকাশ করতো

আমাকে চুমু খেতে দিয়েছিল মার্গারেট

যাতে ঠোঁটে বিপ্লবের উষ্ণতা নিয়ে দেশে ফিরি

টুপাক আমারুর দলের গেরিলাদের আগে আমি গেরিলাদের সঙ্গে মিশিনি

আমি ওদের দেখাদেখি টুপাক আমারুর নামে জয়ধ্বনি দিলুম

কিউবায় যাইনি কমান্দান্তে

আপনি কিউবা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন

আপনি বুঝে গিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপোস করা যায় না

কিউবা থেকে আপনার হাত দুটোও লোপাট হয়ে গিয়েছিল

কিউবার নোটে আপনার সই থাকতো

লারগা ভিদা আল কমান্দান্তে


ঝিউড়ি মেয়ের স্বপ্নে

উৎসর্গ : লেডি গাগা

মোদোমাতাল ঝিউড়ি মেয়ের স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এলুম অনেক কষ্টে

সারা গায়ে চাবুক-পেটা রান্নাবঁটির কোপের রক্ত

পা ধরে টানছিল আরও ভেতর অন্ধকারে

যতোদিন না চুল পাকবে এই কড়ারে রাখবে বেঁধে

একটু নেশা কেটে গেলেই লাথাবে লোহার জুতো

ঝিউড়ি মেয়ের স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এলুম কুচোমাংসের টুকরো মানুষ

টুকরো দিয়ে গড়া ওই ঝিউড়ি মেয়ের মাতাল স্বপ্ন

সেই থেকেই টুকরোগুলো খুঁজে বেড়াই লেডি গাগায়


“হে প্রেম হে নুনু”

উৎসর্গ : বিয়ার গ্রিলস

লড়ছিল দুই পুংহরিণ, শিঙের সঙ্গে শিঙ জড়িয়ে

হরিণীদের সবকটাকে পাবার জন্য

গোটা দশেক ভার্জিন আর বাদবাকিরা ঋতুগন্ধা

ঘাপটি মেরে দেখছিল চার-পাঁচটা সিংহী

দুটোকেই ধরল ঘিরে আর খেতে-খেতে ছিঁড়তে লাগলো

পৌঁছে গেল খোকাসিংহ খুকিসিংহি রক্তভোজে

এগিয়ে এলেন পুরুষসিংহ দুলকিচালে

পুংহরিণের নুনু দুটো সিংহমশায় খাবেন


অশোকের শিলালিপি

উৎসর্গ : হিউয়েন সাঙ 

চারিদিকে হিজিবিজি স্পষ্টবাক বোবাদের গেঁড়িচোখ ভিড়ে

কে যে পরশ্রমজীবি নয়, সত্যি বলতে, টের পাওয়া যেত যদি

ঝড়েদের লেজ ধরে বৃষ্টিতে ঝুলে তারা পিঁড়ি-ছেড়ে ওঠা

বরেদের পাঁয়তাড়া ফ্রাই-করা প্রজন্মের বৈদ্যুতিক পুং

নেমন্তন্ন পাওয়া মাত্র পত্রপাঠ ছিঁড়ে ফেলার আনন্দে ভোগে--

তা ভুগুক, ক্ষেতি নেই । ডানার খাপে-খাপে যে-মস্তি লুকিয়ে রয়েছে

নিজেরই গলার স্বরে প্রতিধ্বনি সেজে তা তো বেমালুম হাওয়া

তাদের আঙুল নোংরা বরফের কোমল মোবিলে

তাহলে কাদের থাকে নখদর্পণের মতো মাথামোটা চিজ

বলো দিকি ! হ্যাঁ ঠিক, টিভি না থাকলে শ্যালে টেনে নিয়ে যেতো


জোব চার্নকের দিশি অ্যাণ্ডাবাচ্চা

উৎসর্গ : সঞ্জীব নিয়োগী

বেচারি ব্যথিতচিত্ত কুকুরির ফেকলুছাপ প্রতিস্বপ্নে যাঁরা

স্যাঁতসেঁতে বাগ্মীতাগড়া বাস্তবে হিসেবি আদর্শবাদ পুযে

অণ্ডকোষ ভরে ভরে আওয়াজের গুণিতকে তোলাবাজ আনলেন

রাংতায় বানানো সেসব সাকিন-পরিচয়হীন মনোপজীবীই তো 

তারিয়ে তারিয়ে ভোগ করেন শান্তিমিছিলের ঢিল-ছোঁড়া দূরত্ব

আমি হ্যান আমি ত্যান আমি অমুক আমি তমুক আমি কেউ আমি কেটা

ভেবে ভেবে মশা-মাছিরাই কিনা মানব সভ্যতা পালটে দিলে

কেননা হাতফেরতা প্রেমিকদের প্রেমপত্রের ইনটারভ্যালে যে-প্যাঁচ থাকে

তা বুঝতে তুলোটনরম আবৃত্তিকারিনীদের কালো রঙের দুধ

বাকসাঁতারুদের ভাসিয়ে দেয়া বুদবুদের ঢঙে ফানুস হয়ে যায়

শেষে সেও-ভি-আচ্ছা ধাঁচের দার্শনিকতার ফুলেল আত্মকেন্দ্রে

মাচানে-মাচানে বুকনিবাজ থেটার-বিপ্লবীদের এমন পেঁকো জমঘট

যে বাঙালি আর কাঙালির তফাত এই ঘোচে কি সেই ঘোচে

মুক্ত চিন্তা মানে মনে-মনে ভাবুন দাদা পথিমধ্যে স্পিকটি নট

জোব চার্ণকের আদুরে গাড়ূগোপালদের ঔরস যে বহুরূপী ।


সপ্তফণ

উৎসর্গ : হিড়িম্ব এবং তাঁর বোন হিড়িম্বা

যে-মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে না

এমনই একজন সেদিন গোরস্হানে বল্লে

ঘৃণা করতে পারি এমন কিছু দিন দিকিনি

যাতে বেতো-শকুনদের অবসরপ্রাপ্ত বাসা থেকে

ফেলে-দেয়া জব্বর প্রশংসাগুলো কুড়োতে না হয়


ভদ্রপাল

উৎসর্গ : সুকৃতি শিকদার

চিঁটির হুঁচোট খেয়ে যে-পাথর চলেছেন গড়িয়ে-গড়িয়ে

মনোমজাদার ওঁর আধাফিল্মি ছম্মকছল্লো সুর--

যেন গড়াচ্ছে গড়াক শালা অসমমাত্রিক ধাক্কা পোয়াবার শেষে

থামবে চৌচপাট ক্যারদানি-চিত্তির কোনো হাফবাচনিক মহাফেজে

মাকড়সাথুতুর ছড়া লিভ-ইন গাঁটে-গাঁটে বেঁধে

ঘুষি-খাওয়া ত্যাবড়ানো ভুরু তুলে দেখবেন 

খুড়ো তো মিচকে-মারা দিবাচর ভদ্রপাল শিলা


পাল্প ফিকশন

উৎসর্গ : অমৃতলাল বসু

যে-ভাষায় বাণিজ্য হয় না শুধু পদ্য লেখা যায়

সে-ভাষায় কথা বলে-বলে ক্লান্ত জিভ নাড়িয়ে 

কুয়াশায় সাঁতরে আসা রিকশাটাকে যখন ডাকলুম

দেখলুম তার হলুদ গায়ে কালো অক্ষরে লেখা :

‘যে লেখে বিস্তর মিছা সে লেখে বিস্তর’ ।


আইলা রে

উৎসর্গ : নুরুন্নাহার শিরিন

আরে হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিসলুম

খড়ের-মড়া পোড়াবার প্রতিবাদী গ্যাঞ্জামের ধোঁয়ায়

সমসাময়িক হবার ধান্দায় যেনারা জড়ো হয়েছেন

তেনাদের বুকনির মুসাফিরখানায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে 

দেখলুম পকেট মারছেন গোল্ডফিশ চেহারার এক মাগ-মহিলা

আকাশ জুড়ে তখন ফুৎকারে-গড়া পেল্লাই রামধনু

যা টুকে রাখছিলেন হোঁৎকাপোঁদা খবরের কাগজের হাফখোচর

এক বেড়ালগুঁফো সাংবাদিক যেনার আঙুলের কন্ঠস্বর 

থেকে-থেকে ডটপেনের ডগায় লুকিয়ে কাশলে কী হবে

ভোরবেলা উঠেই জানি দেখতে পাবো আলকাৎরায় 

চোবানো করোটির ফোকলা-অক্ষর হাসি


দেহপট

উৎসর্গ : দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ

নোংরা ঘোলাটে পদ্মা আর গঙ্গা যেভাবে বঙ্গোপসাগরকে নীল করে তুলেছে

ঠিক সে-ভাবেই আগুনের দু’চার কলি নিঃশ্বাসে গড়া গান গেয়ে আমি

রুদ্রাক্ষহীন আঙুলে হাওয়ার শুটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে জব্বর এক গপ্পো বানাই

অনেকটা যুবতী শোকাতুরাকে জড়িয়ে মৃতকে ভুলে দেহতাপের মাতনে

আমারই দুটো ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেন কানে-কানে বলছি

হ্যাঁ গা মেয়ে, ব্যকরণ যদি জানো, বলো দিকিন এই দেহ ব্যাপারটা কী ?


অংশুমালী, তোর ওই হরপ্পার লিপি উদ্ধার.

কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে

ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই

কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই

অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ

প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে

কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি

নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল

মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা

মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই

ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ

আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান

জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে

সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত  বলে মনে হয়, ব্যাস

ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ

গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা

হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে

হরপ্পার লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই

অবন্তিকা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–

অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে

আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস



মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

উৎসর্গ : সোনালী চক্রবর্তী

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, "চলুন পালাই"

ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই

নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন

ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, "ভালোবাসি" লেখা কার্ডসহ

সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট

তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাঝ ডুবিয়েছিলে

তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি

উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না

গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই

চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আইড্রপ দিও

গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ-করাই আছে

আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না

মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও

ছ'মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও

ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে

রাত হলে দু'চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না

কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো

মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, মোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে


কবিতা সাহেব

উৎসর্গ : বৈদ্যনাথ মিশ্র

তাকিয়ে পাথর করে দেবার সৌন্দর্যবোধ যে আমার ছিল না

তা কাজরি মাছের জাতীয় সঙ্গীতের ছোটো-ছোটো ঢেউ দিয়ে বানানো

অচেনা টগবগে মেয়েদের দেখে ভাল্লাগে এমন উড়ুউড়ু দুপুরে 

আকাশের গনধধ শুঁকতে-শুঁকতে লতিয়ে ওঠা গাছের ডগায় টের পেলুম

যে আমায় শহুরে চাকরানির দোআঁসলা ইশারায় আবডালে বলেছিল

ডাকটিকিট ছাড়া জীবনে আর কিছু চাটা হয়নি নাকি গো দাদাবাবু 

পাঁকে হাঁটতে পায়ের আবার কষ্ট কিসের ? হ্যাপা তো সব মাথার ।

.

.

সে যাকগে ! দিনে দুবার অস্ত-যাওয়া সূর্যের একটা চিত্রকল্প যদি পেতুম

নিদেনপক্ষে খোসপাঁচড়ার অলংকরণে একজন স্যানিটারি বাঙালির উপমা

তাহলে অজ্ঞান করার ওষুধের সুগন্ধি ফিসফিসানি শুনতে শুনতে

নিশাচর শুক্রকীটরা যেভাবে নুডল-নরম ঠোঁট আর সুপ-গরম শ্বাসের

তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে ঝড়ের কায়দায় ফুরিয়ে যাবার তাড়ায় ভোগে

জিভের ওপরে হামাগুড়ি দেবার ইচ্ছে গোপন রাখতো না এদান্তি কেউ

পথচিহ্ণ দেখে মালুম হতো কে-কে কোনখানে দাঁড়িয়ে আর কোথায় যাচ্ছে

.

.

আয়নাও তো দেখি পারা ঝরিয়ে নতুন-বউয়ের স্মৃতি ভুলে যায়

তাই বলে যাদের রাশিফল সব কাগজেই নিত্যিদিন হাসিখুশি থাকে

তারা কি পোয়াতি-কাঁঠালের গাছপাকা গন্ধে হিংসুটে বোলতাদের ডাকবে

নাকি স্ফূলিঙ্গের জুতো পরা দূরপাল্লার রেলগাড়ির বাংকে শুয়ে ভাববে

পরতের পর পরত বয়সের মুখোশ জমে মুখটাই সাহেব হয়ে গেল গো


মাংস

উৎসর্গ : রঘু ডাকাত

লোকগুলো সাধারণ, ভিড়ের ভেতরে ঢুকে কেন

এমন খুংখার হিংস্র হয়ে পেটাতে লাগলো বুড়োটাকে

বেদম প্রহার, মুখ থেকে আতঙ্ক গোঙানি রক্তের ভলক

খালি গায়ে লাঠি দিয়ে লালচে নীলাভ দাগ দেগে

যতোক্ষণ না বুড়োটা পথের ওপরে পড়ে নিথর নীরব

আটপৌরে পথ-চলতি লোকেরাও ভিড়ে মিশে গিয়ে 

ভয়ংকর কেন ? আত্মচেতনা বিসর্জন দিয়ে

অন্যেরা যা করছে তাতে জুটে গেল ? কীভাবে 

দ্বৈতসত্তায় একটা বিষাক্ত আত্মা ঘাপটি মেরে থাকে !


এইভাবে মগজে নোংরা বিষ গড়ে ওঠবার কী কারণ

হতে পারে ? লোকগুলো সবাই তো সংসারি, ছেলে-মেয়ে

বউ বাবা রয়েছে বাড়িতে, চাকরি-বাকরি আছে

কিংবা চাষ-বাস জমি-জিরে, মাঠে কাটা ধান পড়ে আছে

একটু আগেই তো স্বাভাবিক পথচারী ছিল, এখন

হিংসা সম্পর্কে বোধহীন । মাংসের প্রতিশোধ নিতে

মোষের মাংসকেও গরুর মাংস নাম দিয়ে বুড়োটার

জীবন্ত মাংস খুবলে বিষাক্ত অপর সত্তাকে

আনন্দে আত্মহারা করে ছেড়ে দিলে হোমো স্যাপিয়েন


গপ-শপ

উৎসর্গ : অঞ্জন ঘোষরায়

একদিন না, কাকেদের সড়গড় ভাষায় দেখলুম

সরকারি প্যানেলভূক্ত মড়াগুলো আমায় চিবিয়ে খাচ্ছে

দাঁতগুলো খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশিত বত্রিশ ভল্যুম মেঘ

চেহারা দেখে মনে হল সব বাসি বিয়ের টাটকা বর

ব্যাঙের ডিমে তা দিতে মগ্ন বগিথালা-ছাপ পদ্মপাতায়

যারা হাই তুলে-তুলে অফিসঘরের হাওয়া পালটায়

কথাটা এতো সহজ যে বলে বোঝাতে পারব না অবশ্যি

এখানে একটা মেটাফর ঢুকিয়ে ব্যাপারটা খোলসা করা যায়

টেকোদের ব্রোঞ্জমূর্তি মরে যেতে চায় অথচ উপায় নেই

রাতের সঙ্গে ঘুষোঘুষির পর রক্তশূন্য সকাল বেলায়

পালাবদল না-হওয়া অব্দি ভুগতে থাকা অমরত্বের কলঙ্কে

প্রদূষিত পরিবেশ দিয়ে সুনির্মিত অহংকারের ছাইপাঁশে

হাউ-হাউ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মা-মরা রাস্তায়

যেন ঘড়ি থেকে মুহূর্ত সরিয়ে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েছে



আহ্লাদে সাতখানা

উৎসর্গ : মানিক বৈরাগী

যে-মেয়েটির

চোখের পাতা  দুর্গাটুনটুনির ফিনফিনে ডানায় গড়া

তার সঙ্গে মানে বাদ-দেয়া শব্দে তৈরি আলটপকা বাক্যালাপে

নাতি-নাতনিদের ঝুলতে শেখাচ্ছিলেন লোলগতর বাদুড়ঠাকুরমা

.

যে-গ্রামে

মোষের কেঁদোপিঠে বসে শালিকপাখিরা হিচহাইক করে

সেখানের প্রেশারকুকারগুলো কিন্তু মেয়েটিকে দেখে আজও সিটি মারেনি

অথচ ওর সারা গায়ে জল চুয়ে-পড়া সোঁদা সুড়ঙ্গের ঘনসবুজ গন্ধ ছিল

.

যে-দেশে

চোখের জল ফেললে সত্যিই টপ করে মিউজিকাল শব্দ হয়

ওখানেই তো প্রতিটি শবের চোখের পাতা বোজাবার চাকরি পেয়েছে মেয়েটি

ইচ্ছে করলে ও চাঁদের কায়দায় যে-কোনো সমুদ্রের গোমর ঘোচাতে পারে

.

যে-জাজিম

মেয়েটির নাচের তাল নিজের মির্জপুরি নকশায় পুষে রাখে

তা আসলে ঝাঁকবাঁধা কাজরি মাছের কাতুকুতুতে খিলখিল ঢেউ

শহুরে টবের গোলাপের ঢঙে আলসে থেকে ঝুঁকে মেয়েটিকে ডাক পাড়ে

.

যে-লোকটা

লুঙ্গি না ধুতি পরবে ঠিক করতে না পেরে কাকতাড়ুয়া রয়ে গেল

তার সঙ্গে বিয়ে হতে ঝিলমিলে অন্ধকারে শুয়ে মেয়েটি জানতে পেরেছে

ওর বুকের খড়ে কুয়াশা জমে শ্লেষ্মা হয় বলে মাথায় পোড়ামাটির হেলমেট

.

যে-দরজার

কপাটে খোলা আর বন্ধ করার আওয়াজ চুপচাপ লুকিয়ে থাকে

তা ঘুরিয়ে বলা যায় যে সে-আওয়াজ এমনভাবে গুজব ফিরি করে যেন

বাদামের পাঠবস্তু চোখের সামনে মেলে ধরে মুখস্হ করছে কাঠবিড়ালি

.

যে-জেলখানায়

এক চিলতে আকাশে দ্বিতীয়ার চাঁদ তিন লাফে উঠে পড়ে

সেখানে পেঁয়াজ ছাড়িয়ে-ছাড়িয়ে যাদের কান্নার স্টক শেষ হয়ে গেছে

পান্তুয়ার মাংস দিয়ে তৈরি সেসব মহিলাদের ভিড়ে মেয়েটি আজ নায়িকা



নায়কত্ব

উৎসর্গ : শ্যামল শীল

আটাকলের চনমনে গমদানার কায়দায় নাচতে-নাচতে

জুতোপায়ে বাজারে গিয়ে যখন খালি পায়ে নিজের মধ্যে ফিরি

বাসন-ধোয়া আওয়াজে চমকে ওঠে কাঁসাপেতলের রান্নাবাড়ি

বুঝতে পারি না অতো গান কেন ওইটুকু গলায় ধরে রাখে পাপিয়া

মাটিতে কান পেতে শুনতে পাই আরশোলাদের শোকপ্রস্তাবের ফিসফিস

.

বয়স হবার পূর্বাভাস আয়না তো অনেক আগেই দিয়েছিল

আমিই বরং ভেবেছি কাঁধে পাণ্ডবদের কালাশনিকভ নিয়ে বেরিয়ে পড়ব

কিন্তু মাঝরাতে হাতের মুঠো যে উন্মাদ হয়ে যাবে তা কে জানতো

.

প্রথম চুমুর স্মৃতি রোমন্হন করতে যে বৃদ্ধ এখন ইনটেনসিভ কেয়ারে

নিজের ভুলগুলোকে সন্মান জানানো হয়ে ওঠেনি বলে

মদ খেয়ে নর্দমায় পড়ে থাকার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ হল না

সমুদ্র তো অবিরাম ঝাঁপাই ঝুড়ে স্বাধীন হতে চায় তবু পারে না

.

ঝড়ের সঙ্গে লড়ছে বাড়িটা অথচ ভেতরে বসে লোকটা ভাবছে ওইই লড়ছে

উত্তরটা কী ? উত্তরটাই তো প্রশ্ন ! প্রশ্নটা কী ? প্রশ্নটাই তো উত্তর !

.

অতো বেশি পালক রঙ রূপ নাচ নিয়ে ময়ূর ওড়ে না

ওকে কেবল দেখুন আর প্রশংসা করুন ; ও-ই তো নায়ক



স্বচ্ছ দেওয়াল

উৎসর্গ : রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায়

সে দেওয়াল কেমন দেখতে জানে না

দেওয়ালটা যার সেও কখনও জানেনি

সে কেবল জানে রয়েছে দেওয়ালখানা

বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে সেই যুবকের জন্য

যাকে সে ভাঙতে দেবে

যুবকেরা তবু গলদঘর্ম হয় স্বচ্ছ একটা পাতলা

দেওয়াল ভাঙতে

হাজার হাজার বছর যাবত চলছে দেওয়াল ভাঙা

রক্তের সাথে রসের তৈরি সেই দেওয়াল

যার ভাঙে তার গর্ব ধরে না

যে ভাঙছে তারও অহমিকা নাচে ঘামে

রসের নাগর খেতাব মিলেছে প্রেমিকের

প্রেমিকা দেখাবে চাদরে রক্ত লেগে

অধ্যবসায়ে সময়ের সাথে লড়ে

দেওয়াল ভাঙার সে কি আনন্দ দুজনেরই

যে ভাঙল আর যার ভাঙা হল

সেলোফেন ফিনফিনে

দেওয়াল না ভেঙে মানুষ জন্মাবে না

তাই সব দেওয়ালই স্বচ্ছ মাংসে গড়া

সেলোফেনে হোক কিংবা 

লোহার ইঁটের অদৃশ্য সীমারেখার

প্রেমের ঘামেতে ভিজিয়ে ভেঙে ফেলা দরকার



টাপোরি

উৎসর্গ : অলোক গোস্বামী

আমি যে-কিনা পালটি-মারা তিতিরের ছররা-খাওয়া আকাশ

জলে ডোবা ফানুসপেট মোষের শিঙ থেকে জন্মেছিলুম

অলসচোখ দুপুরে পুঁতি-ঝলমলে নিমগাছটার তলায়

থাবা-তুলতুলে আদর খাচ্ছিলুম ভুরু-ফুরফুরে শ্যামাঙ্গী গৌরীর

হাত-খোঁপায় গোঁজা বৃষ্টির কাছে নতশির স্বর্ণচাঁপার কোলে

.

আমি যে-কিনা গ্রিলবসানো সকালমেঠো দিগন্তে দাঁড়িয়ে 

মাড়ানো ঘাসের পদচিহ্ণ আঁকা শোকাচ্ছন্ন রোদের সোঁদাভূমিতে

শেষ গড়াগড়ির বিছানায় কাঠকীটের রাতঘ্যাঙোর শুনেছি

ভাবছিলুম উদ্দেশ্য প্রণোদিত হলেই খারাপ হতে যাবে কেন রে

পদ অলঙ্কৃত-করা গতরের ঘামে কি খাটুনির লবণকলা নেই

.

আমি যে-কিনা ডাহুককে জিগ্যেস করেছি প্রজাপতির ডানায় কী স্বাদ পাস

কানপটিতে খুরধ্বনি সেঁটে চিপকো খেলার তেজবরে কনের আদলে

জাহাজ-এড়ানো লাইটহাউসের আলোয় এক করাতদেঁতো হাঙর

যামিনী রায়ের আঁকা স্তনের কেরানির সঙ্গে মহাকরণের খাঁচালিফটে

হেঁকেছিলুম আরোহী-ফেলা পুংঘোড়ার লাগামছেঁড়া হ্রেষা

.

আমি যে-কিনা উচ্চিংড়ের স্বরলিপিতে গাওয়া ফুসফাসুরে গান

বেড়াজালের হাজার যোনি মেলে ধরে রেখেছি ইলশে-ঝাঁকের বর্ণালী

স্বদেশী আন্দোলনের লাশঝোলা স্মৃতির গাবগাছের পাশের ঝোপে

শুকপোকায় কুরে-খাওয়া লেবুপাতার পারফিউমড কিনার বরাবর

পাথরকুচি কারখানা-মালিকের ঘাড়কামানো পাহাড় থেকে উড়ছি



ভূমিকাবদল

উৎসর্গ : গোবর্ধন আচার্য

হাই তুলতে-থাকা থুতনির তিলে বিষে নেতিয়ে আছে যে-বিকেল

কিস্তিতে কেনা আদরের বেড়াজাল কচুপাতার টলটলে সবুজ নাভিতে

অল্পস্বল্প ঢিলেঢালা প্রতিধ্বনি মিশিয়ে মাখিয়ে দিন ঝিনচাক দেদোল দেহে

হারানো জিনিসের বিকল্প পাবেন চাউনির অভিযোগ থেকে পোঁ-পাঁ বেরিয়ে

ডুমোডুমো করে কাটা কথাবাত্রায় চুবিয়ে নিন প্রজাপতি গর্ভের ডিজেল

খুজলি-খচিত কানের মাকড়সাকে বলুন রংচটা আঁখিউলির কী রেট যাচ্ছে

ও-ই আনবে নিরুদ্দেশ নুড়ির জলস্মৃতি আর রয়াল বেঙ্গল খচ্চর ডাক

কাঁচি-কাটা পুকুরের পানাচাদর গায়ে আখের রস পালটান খেজুর পাটালিতে




না-ব্যালাড

উৎসর্গ : ফিরাক গোরখপুরী

জ্বলন্ত রাজহাঁসের কয়েল-খোলা ডানা থেকে

গুটিপোকার সবুজ রক্তসমুদ্র বিয়োবার পর

মেঘের তলপেটে ওই খোসাছাড়ানো চাঁদ

ঢেউকে হুকুম করেছে কাঁকড়াদের বুকে জ্যোতিষ মুছতে


কানায়-কানায় ভরা চিরহরিৎ আলজিভের পদ্মে

পরাগ-হাতড়ানো মৌমাছি তার আঁচল উড়িয়ে

গরিমারাঙা গণপ্যাঁদানির বেহেড গ্রামে খুঁজেছে 

পাশে শুয়ে মনকেমন দূরত্বের ধুমধামাকা গান



নেভো মোম নেভো

উৎসর্গ : লেডি ম্যাকবেথ

আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালো

ফিল্মে দেখেছি, আগুন নগ্নিকা, বুক দুটো অতো ছোটো কেন

দুঃখ হয় নাকি ? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে

হত্যা করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকলেন, নয়তো বুক উঁচু করে বলতেন

যা করি তা কারি, প্রেত তোর তাতে কী, তুই কি ঘুমের ইন্দ্রজালে

শুধু বুক খুঁজে বেড়াস নাকি ! সত্যিই তাই, আপনার ঘুমে ঢুকে

তাছাড়া কি খুঁজবো বলুন ? ফেরার ট্যাক্সিভাড়া ? গ্যাসের রসিদ ?

যা ইচ্ছে করুন আপনি, জেনে নেবো, চলন্ত গাছেরা বলে দেবে,

না জানলেও আকাশ তো ভেঙে পড়ছে না ; আপনি আমার প্রিয় নারী,

মন খারাপ করে দিলেন আজকে বৃষ্টির দিনে, ছাতাও আনিনি,

আপনার পাশ দিয়ে যেতে-যেতে ছাতার আড়াল থেকে আপনার

ছোট্টো দুটো বুক জরিপ করে নিতে পারি, ব্র্যাঙ্কোর প্রেত আমি,

ছোরা দুটো নিলেন দুহাতে তুলে, মনে হয়েছিল বুকের গরবিনি, হত্যা

নেহাতই অজুহাত, কেউ তো আর মনে রাখবে না, উনিও জানেন

তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল, না না, হাঁ-মুখের ঠোঁটে নয়

পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি হওয়া, যেন ইস্কাপন

নষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি, যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না

খুলে বলি আপনাকে, আমি কীরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন,

যেমন ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে খুঁটে পড়ে

আমার ভেতর সেরকমই পোষা আছে কয়েকটা অসুখ

বুঝলেন, যখন প্রথম পড়ি, প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন আপনার !

লেডি ম্যাকবেথ ! আহা কি শঙ্খিনী নারী, কি ডাগর রক্তময়ী চোখ

ঘুমন্ত হেঁটে যাচ্ছো মৃত্যুর মসলিনে সম্পূর্ণ পোশাকহীন, কোনো খেয়াল নেই,

চেয়েছি জড়িয়ে ধরতে, বলতে চেয়েছি, লেডি, লেডি, নগ্ন পশ্চিমে

একটা চুমু শেষবার দাও, পুরস্কার নিয়ে ডাইনিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে

রক্তাক্ত ছোরার সঙ্গে কথা বলো, বুকের নির্দয় ওঠা-নামা, লেডি

ম্যাকবেথ, ওই যিনি ছোটো বুকে মনটা খারাপ করে ফিরছেন বাড়ি

ওনাকে উৎসাহিত করো, বড়ো, আরবের সমস্ত আতর ধুতে পারবে না

হত্যার মিষ্টি গন্ধ, যেমনই লোক হোক সে তো তার নিজস্ব দৈত্যের সৃষ্টি,

তেমন নারীও, আত্মজীবনীতে লিখবেন কিন্তু প্রথম হস্তমৈথুনের স্বাহা

ক্লিটোরিসে অঙ্গুলিবাজনার মৃদু উগরে-তোলা ঝর্ণাঝংকার

আপনার নগ্নতার ব্যক্তিগত ছন্দ লেডি ম্যাকবেথের মতো হাঁটছেন

কলকাতার রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমাকে চিনতে পেরেছেন ?

আমি ব্যাঙ্কোর প্রেত, প্রতিটি হত্যাদৃশ্যে উপস্হিত থেকে

বুকের বর্তুলতা মাপি, যবে থেকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে দুরূহ লেগেছিল

লেডি ম্যাকবেথের লোভ সিংহাসনে রাজমহিষীর মতো উঁচু বুকে

বসে আছো, স্কুল-ফেরত সম্পূর্ণ উলঙ্গ তুমি হাঁটছো পাশাপাশি

ঘুমন্তকে নয়, ঘুমকে খুন করেছিলে তুমি, চিৎকার করছিলে

'কে জানতো বুড়ো লোকটার গায়ে এতো রক্ত এতো রক্ত ছিল !'

এসবই আপনার নারীত্বের রক্ত, ছোট্টো দুটো বুকের দুঃখের

ভাববেন না বেশি, যৌবন ফুরোবার সঙ্গে এই দুঃখ চলে যাবে

তখন দেখবেন ক্লিটোরিস সাড়া দিচ্ছে না, রসশাস্ত্রহীন দেহ

আদিরস প্রথমে লোপাট, ঘুমন্ত হাঁটবার আহ্লাদ নামছে দুঃস্বপ্নে

আপনার ছোট্টো বুক ছোট্টোই থেকে যাবে যতোই উদার ওন

ভিখিরি দেখলেই বটুয়াতে কয়েনের ওজন কমান, লেডি ম্যাকবেথ

ছাড়বে না, উচ্চাশার কি দুর্দশা, হাতে রক্ত, নেভো মোম নেভো


কপিরাইট

উৎসর্গ : মেহের উন নিসা বেগম

অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা

পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে

লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে

ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি

চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে

ম্যাজেন্টা-গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে

গুনেগুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান

কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।


অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা

এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল

কিন্তু দুজনেই এর-তার কাছে থেকে

শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে

ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা

ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই ।


প্রজাপতি প্রজন্মের নারী তুই অবন্তিকা

উৎসর্গ : চিত্রাঙ্গদা দেব

রবীন্দ্রনাথ, এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না।

অবন্তিকা বলছিল আপনি প্রতিদিন

ওকে রুকে নিচ্ছেন, আপনাকে সাবান

মাখাবার জন্য, বুড়ো হয়েছেন বলে

আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে

ভয় পান, আর হাতও পৌঁছোয় না

দেহের সর্বত্র, চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা--

পোশাক খুললে, আসঙ্গ-উন্মুখ নীল

প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে

আর তারা আপনার লেখা গান গায় !


এটা আপনি কী করছেন ? আপনার

প্রেমিকারা বুড়ি থুতথুড়ি বলে কেন

আমার প্রেমিকাটিকে ফাঁসাতে চাইছেন !


নাচ মুখপুড়ি

উৎসর্গ : প্রস্থানত্রয়ী

নাচ তুই নাচতে থাক অবন্তিকা উইখেকো গোরিলার ঢঙে

নাচতে থাক নাচতে থাক নাচ কী হয় কী যে হয় তালে-তালে

আমি আছি তোর ঘামে নুন হয়ে হাওয়ার সঙ্গে ট্যাঙ্গো

আলোর সঙ্গে ফক্সট্রট কিংবা দোলানো পাছায় মাম্বো রুম্বা বুগি

পাসো দোবলে লিকুইড লকিং বোলেরো জাইভ সুইং সকা

মুনওয়াক ফ্ল্যামেঙ্গো নাচে কথা বলা বন্ধ রেখে

নিজেকে নাচাতে থাক ডি.জে. আমি আছি তোর নাভি ফুটো করে

হালকা হলুদ পোখরাজে অন্তর্বাসে আছি আলতো সন্মোহিনী কটুগন্ধে

মোদো-ভাপ নিঃশ্বাসে নখের পুরোনো ময়লায়

চুমুপ্রিয় গালের ফুসকুড়ি হয়ে তেষ্টা-পাওয়া খসখসে ঠোঁটে

শ্লেষাত্মক হাসি হয়ে আছি বুঝতে পারবি না মুখপুড়ি

কেননা তুই ঢঙি চিরকাল কেবলই নেই নেই নেই নেই

নেই নেই নেই নেই করে নেচে গেলি নেচে গেলি নেচে

ভাষার মাস্টার বোদা করিয়োগ্রাফারের ইশারায়


দলে দলে 

উৎসর্গ : মাও জে দঙের লম্বা লাফ

সব দেশেই বিপ্লবীর জলপাই পোশাকে অস্ত্রধারী দল আছে    

চোরাচালান হয়ে আসে বোমা বারুদ কালাশনিকভ

একদল আরেকদলের লোকেদের খুন করে জয়ধ্বনি দেয়

তুলে নিয়ে যায় আরেকদলের নারীদের ধর্ষণ করে

বিক্রি করে হাতবদল হয় শেকলে বেঁধে নিয়ে যায়

ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দলবেঁধে উল্লাস করে সবায়েরই

আছে বিপ্লবের তত্ব, এক দলের তত্বের আরেক কাঠি ওপরে

আল-কায়দা, আল-শবাব, আনসারাল শারিয়া, ইমাম শামিল

খোরসান গোষ্ঠী, আইসিস, আবু সায়াফ, বোকো হারাম,

জুনুদ উল খালিফা-এ-হিন্দ, মুজাহাদিন শুরা, আনসার খালিফা

জামাত আল জিহাদ আল ইসলামি, জামিয়া ইসলামিয়া, 

কুর্দিস্তান ওয়কর্স পার্টি, লর্ড রেজিস্ট্যান্স আর্মি, তালিবান,

হেজ্বে ইসলামি গুলবুদিন, ফিদাই মাহাজ, সালাফি জিহাদি,

মাগরিব কায়দা, হাককানি বিপ্লবী, কাবিন্দা ফ্লেক, মাপুচে,

অ্যান্টি বালাকা, কোওরদিনাদোরা আরাউকো-মালেকো,

জিনজিয়াং স্বাধীনতা সংগ্রাম, তুর্কিস্তান ইসলামি বিপ্লব,

ব্ল্যাক ইগলস অব কোলোমবিয়া, গাইতানিসতাস, ইএলএন,

ইপিএল, ফার্ক, ইতুরি বিপ্লব, কাটাঙ্গা বিপ্লব, কিভু বিপ্লব, 

কামউইনা নাসাপু বিপ্লব, এম সাতাশ, মাই-মাই, রুদ-উরুনানা,

নিয়াতুরা, এফডিএলআর, মাই মাই শেকা, মাই মাই ইয়াকুটিমবা,

রাইয়া মুটোমবোকি, এফএনআই, এফআরপিআই, এফপিজেসি,

মাই মাই ইয়াকুটিম্বা, মাই মাই গেদেঅন, কোরাক, সিপিকে, নালু,

কামউইনা নাসাপু মিলিশিয়া, বুন্দু দিয়া কঙ্গো, আল ফুকরান ব্রিগেড,

আনসার আল শারিয়া, ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ, হাসম বিপ্লব,

এরিট্রিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, এরিট্রিয়ান কুনামা লিবারেশন,

ইথিয়োপিয়ান পিপলস ফ্রন্ট, ওরোমিয়া লিবারেশন ফ্রন্ট, ওগাডেন 

ন্যাশানাল ফ্রন্ট, ওরোমো লিবারেশন ফ্রন্ট, সিদামা লিবারেশান ফ্রন্ট,

ব্ল্যাক স্টার অব গ্রিস, কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসিস্ট, হরকত অল

মুজাহাদিন, হিজবুল মুজাহাদিন, জয়েশে মোহম্মদ, খালিস্তান কমান্ডো

ফোর্স, লশকরে তৈয়াবা, সিমি, জেমা ইসলামিয়া, মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট

মাওইস্ট পার্টি অফ ইরান, কুর্দিস্তান পার্টি অব ইরান, জুন্দুল্লাহ, কুর্দিস্তান 

ফ্রিডাম পার্টি, ইসলামিক মার্কসিস্ট পার্টি অফ ইরান, হেজবোল্লাহ,

আল নুসরা, মাওইস্ট আর্মি অফ মেহিকো, নিওজাপাটিসমো, রেনামো

অফ মোজামবিক, নাইজার ডেল্টা অ্যাভেঞ্জার্স, বায়াফ্রা অ্যাভেঞ্জার্স

বালোচ রিপাবলিকান আর্মি, সিপাহে সাহাবা দেওবন্দি, শাইনিঙ পাথ

অব পেরু, বিপ্লব চলতেই থাকে চলতেই থাকবে খুনোখুনি ধর্ষণ

রঙিন ঝাণ্ডা, গরু-ছাগলের সঙ্গে নারীদের তুলে নিয়ে যাবার বিপ্লব




পপির ফুল

উৎসর্গ : আলুপোস্ত

বোঁটায় তোর গোলাপ রঙ অবন্তিকা

শরীরে তোর সবুজ ঢাকা অবন্তিকা

আঁচড় দিই আঠা বেরোয় অবন্তিকা

চাটতে দিস নেশায় পায় অবন্তিকা

টাটিয়ে যাস পেট খসাস অবন্তিকা


অন্তরটনিক

উৎসর্গ : চামেলিবাঈ

বিড়ি ফুঁকিস অবন্তিকা চুমুতে শ্রমের স্বাদ পাই

বাংলা টানিস অবন্তিকা নিঃশ্বাসে ঘুমের গন্ধ পাই

গুটকা খাস অবন্তিকা জিভেতে রক্তের ছোঁয়া পাই

মিছিলে যাস অবন্তিকা ঘামে তোর দিবাস্বপ্ন পাই


তোর বহির্মুখ, মুখপুড়ি

উৎসর্গ : মৎস্যকন্যা

তোর বহির্মুখী দেহ, আদরক্লান্ত ঘামে, মুখপুড়ি মেছোমেয়ে

আলুথালু মরশুমে বেড়ে ও ফিকিরহীন, অপপ্রচারে, বুঝলি

জাহাজ ভাসাতে চাইছে পিম্পদের ঘোড়েল জোয়ারে ।

হাউ সিলি ! নো ? কী বলিস, ডারলিং, সুইটি পাই ?

তোর নাব্য নগ্নতা গ্লসি কাগজের চারু মলাটে হেলান দিয়ে

পুজো সংখ্যার মোটা বেহেডদের পাশে শুয়ে করছেটা কী ?

বল তুই ? তোর কোনো সে নেই ? বোবা না বধির তুই !

অলংকার-টলংকার বেচে খেয়েছিস জানি । বাড়ির কাঠামো

দেখছি ঝুলে গেছে দশ বছর বাদে-বাদে কিস্তি দিতে-দিতে;

হাউ স্যাড । চ্যাংড়া যারা জোটে তারা টেকে না কেন রে ?

বছর না যেতেই কাট মারে ! অথচ বডি তো সরেস আজও

অক্ষরের ধাঁচে জমে একেবারে টানটান আগাপাছতলা

কন্ঠের টিউনিঙও শ্বাসকে ফুরিয়ে ফ্যালে রাত বাসি হলে ।

বেশ্যার আলতামাখা গোড়ালি দেখবো ভাবিনি--- তাও

ব্যালেরিনা জুতোর আবডালে, ডারলিং, ঘামে-ভেজা

প্রণামের খাতিরে তুই কতরকমের ফাঁদ পেতে রেখেছিস !


পরমাপ্রকৃতি

উৎসর্গ : প্রিয়াংকা সিংহ ভট্টাচার্য

মেঘের রঙ দিয়ে ছুঁয়ে দিস অবন্তিকা

চামড়া বাঘের ডোরা ধরে

হাওয়ার রেশম দিয়ে চুল আঁচড়ে দিস অবন্তিকা

মাথা বেয়ে ওঠে বুনো মহিষের শিং

ঝড়ের মস্তি দিয়ে পাউডার মাখিয়ে দিস অবন্তিকা

গায়ে ফোটে গোখরোর আঁশ

হরিণের নাচ দিয়ে কাতুকুতু দিস অবন্তিকা

ঈগল পাখির ডানা পাই

রোদের আঁশ দিয়ে নখ কেটে দিস অবন্তিকা

গজায় নেকড়ের থাবা হাতে-পায়ে

নদীর ঢেউ দিয়ে ঠোঁটে চুমু খাস অবন্তিকা

কাঁধে পাই রাবণের জ্ঞানীগুণী মাথা

বৃষ্টির ঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরিস তুই অবন্তিকা

হুইস্কির বরফ হয়ে যাই

গানের সুর দিয়ে চান করিয়ে দিস অবন্তিকা

ডুবে যেতে থাকি চোরা ঘূর্ণির টানে


নয়নিমা

উৎসর্গ : নাওমি ক্যাম্পবেল

ব্যায়াম করিস তুই অবন্তিকা, নরম গোলাপি ম্যাটে শুয়ে, মিহিমিহি

বাজনায় বডি তোর মৃদঙ্গ তালের ঢঙে ফুল-অন উরুকে ফোলায়

পা দুটো ওপরে ওঠে, উলঙ্গ সাঁতারু, আয়নার পারা গুঁড়োগুঁড়ো

ভাসাস সঙ্গীতে ধোয়া উড়ন্ত বকের ডানা, কাকে দিবি বলে

কাঁচা মাটি মাখছিস আঁটো সাঁটো লোভনীয় পাছাকে দুলিয়ে ?


মর মুখপুড়ি

উৎসর্গ : মেডুসা

এই বেশ ভাল হল অ্যামি, বিন্দাস জীবন ফেঁদে তাকে

গানে-নাচে মাদকের জুয়ার পূণ্যে অ্যামি, কী বলব বল,

অ্যামি ওয়াইন হাউস, অ্যামি, আমি তো ছিলুম তোর

জানালার কাঁচ ভেঙে 'ল্যাম্ব অফ গড'এর দামামায়

বাজপড়া গিটারের ছেনাল আলোয় চকাচৌঁধ ভাম,

অ্যামি, আমি তো ছিলুম, তুই দেখলি না, হের্শেল টমাসের

শিয়রে বিষের শিশি মাধুকরী লেপের নিঃশ্বাসে, অ্যামি

স্তনের গোলাপি উলকি প্রজাপতি হয়ে কাঁপছি, দেখছিস

লাল রঙে, অ্যামি, অ্যামি ওয়াইন হাউস, মুখপুড়ি

হ্যাশের ঝাপসা নদী কোকেনে দোলানো কোমর, চোখ

থ্যাবড়া কাজলে ঘোলা ঠিক যেন বাবার রিটাচ করা

খুকিদের নকল গোলাপি ঠোঁট বয়ামে ভাসাচ্ছে হাসি

সাদা কালো, হ্যাঁ, সাদা কালো, ব্যাক টু ব্ল্যাক গাইছিস

বিবিসির ভিড়েল মাচানে কিংবা রকবাজ ঘেমো হুললোড়ে

আরো সব কে কী যেন ভুলে যাচ্ছি ভুলে যাচ্ছি ভুলে...

ওহ হ্যাঁ, মনে পড়ল, ক্রিস্টেন পাফ...জনি ম্যাককুলোস...

রাজকমল চৌধুরী...ফালগুনী রায়...অ্যন্ড্রু উড...

সেক্স পিস্টলের সিড ভিশাস...দার্বি গ্রেস...অ্যান্টন মেইডেন...

সমীর বসু...শামশের আনোয়ার...কে সি কালভার...

হেরোইন ওভারডোজ, ছ্যাঃ, ওভারডোজ কাকে বলে অ্যামি

ওয়াইন হাউস, বল তুই, কী ভাবে জানবে কেউ

নিজেকে পাবার জন্যে, নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়বার জন্যে...

য়ুকিকো ওকাকার গাইতে গাইতে ছাদ থেকে শীতেল হাওয়ায়

ৱদু হাত মেলে ঝাঁপ দেয়া, কিংবা বেহালা হাতে সিলিঙের হুক থেকে

ঝুলে পড়া আয়ান কার্টিস, কত নাম কত স্মৃতি কিন্তু কারোর

মুখ মনে করা বেশ মুশকিল, তোর মুখও ভুলে যাব

দিনকতক পর, ভুলে গেছি প্রথম প্রেমিকার কচি নাভির সুগন্ধ,

শেষ নারীটির চিঠি, আত্মহত্যার হুমকি-ঠাসা, হ্যাঁ, রিয়্যালি,

নরম-গরম লাশ, হাঃ, স্বর্গ নরক নয়, ঘাসেতে মিনিট পনেরো

যিশুর হোলি গ্রেইল তুলে ধরে থ্রি চিয়ার্স বন্ধুরা-শত্রুরা,

ডারলিং, দেখা হবে অন্ধকার ক্ষণে, উদাসীন খোলা মাই,

দু ঠ্যাং ছড়িয়ে, একোন অজানা মাংস ! অজানারা ছাড়া

আর কিছু জানবার জানাবার বাকি নেই, অ্যামি, সি ইউ...

সি ইউ...সি ইউ...সি ইউ...মিস ইউ অল...


সবুজ দেবকন্যা

উৎসর্গ : আবসাঁথ

ওঃ তুই-ই তাহলে সেই সুন্দরী দেবকন্যা

তুলুজ লত্রেক র‌্যাঁবো ভেরলেন বদল্যার

ভ্যান গঘ মদিগলিয়ানি আরো কে কে

পড়েছি কৈশোরে, কোমর আঁকড়ে তোর

চলে যেত আলো নেশা আলো আরো মিঠে

ঝলমলে বিভ্রমের মাংস মেজাজি রঙে

বড় বেশি সাজুগুজু-করা মেয়েদের নাচে

স্পন্দনের ছাঁদ ভেঙে আলতো তুলে নিত

মোচড়ানো সংবেদন কাগজে ক্যানভাসে


অ্যামস্টারডম শহরের ভিড়ে-ঠাসা খালপাড়ে

হাঁ করে দেখছি সারা বিশ্ব থেকে এনে তোলা

বিশাল শোকেসে বসে বিলোচ্ছেন হাসি-মুখ

প্রায় ল্যাংটো ফরসা বাদামি কালো যুবতীরা

অন্ধকার ঘরে জ্বলছে ফিকে লাল হ্যালো

এক কিস্তি কুড়ি মিনিট মিশনারি ফুর্তির ঢঙে

পকেটে রেস্ত গুনে পুরোনো বিতর্কে ফিরি

কনটেন্ট নাকি ফর্ম কোনটা বেশি সুখদায়ী

তাছাড়া কী ভাবে আলাদা এই আবসাঁথ ?

যুবতী উত্তর দ্যান, শুয়েই দ্যাখো না নিজে

এই একমাত্র মদ যা বীর্যকে সবুজ করে তোলে।


ম্যালেরিয়া

উৎসর্গ : রোনাল্ড রস

দেখলি তো অবন্তিকা মশা বধুরাও তোর

প্রেমিকগুলোর রক্ত চেনে! মেঝেয় ছড়ানো তোর

গুঁড়ো গুঁড়ো মুখচ্ছবি উড়িয়ে পড়েছে সটকে

তোর যত পার্টটাইম সুবেশ ডিউড দল ।

জ্বরদেহ চাইছে রে জড়িয়ে ধরুক তোর

গা-ময় ছড়ানো শীত নিভিয়ে ফেলুক কেউ

তাপের স্হানিক নিম শুকনো ঠোঁটের শ্লেষে

যা তুই চিরটাকাল আমারই জন্য শুধু

রাখলি ঘুমের ভানে--এরম ব্যবস্হা ভালো

অন্তত তাহলে শুধু আমার কাছেই পাবি

জ্বরের বিকল্প রোগ।


শরীর সার্বভৌম

উৎসর্গ : ডক্টর হু

জরায়ুটা বাদ দিয়ে অমন আনন্দ কেন অবন্তিকা

তাও এই গোরস্হানে দাঁড়িয়ে গাইছিস তুই

মৃত যত প্রেমিকের গালমন্দে ঠাসা ডাকনাম

যারা কৈশোরে তোর বিছানার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে

ভুতুড়ে কায়দায় ঝুঁকে প্রেম নিবেদন করেছিল ?

তারপর তারা সব একেএকে লাৎ খেয়ে বিদেয় হয়েছে

অন্য যুবতী ফাঁসতে যাদের জরায়ুপথ বীজ শুঁকলেই

কয়েক হপ্তায় ফুলে ওঠে। সেসব মহিলা কিন্তু আনন্দই পেতো

এই মনে করে যে দেহটা তো সার্বভৌম ; মন বা মনন নয়,

মন না চাইলেও দেহে খেলে যায় ওগরানো তরল বিদ্যুত

যা কি না ভালো খারাপের ঊর্ধ্বে। ঠিকই বলেছিস তুইও

শরীরই সার্বভৌম...



উৎসব

উৎসর্গ : গুহ্যকালী

তুই কি শ্মশানে গিয়েছিস কখনও অবন্তিকা ? কী বলব তোকে !

ওহ সে কী উৎসব কী আনন্দ, না দেখলে বুঝতে পারবি না--

পাঁজিতে পাবি না খুঁজে এমনই উৎসব এটা । কফিতে চুমুক দিই।

আগুনকে ঘিরে জিন্স-ধুতি-প্যান্ট-গেঞ্জি মেতে আছে ননস্টপ

মিচকে আগুন তেড়ে নাচছে আনন্দ খেয়ে, ধোঁয়ার বাজনা

শুনে কাঁদো-চোখে যারা সব অংশ নিতে এসেছে তারাও মজা

শেষে শেয়ার বাজারে কী উঠল কী নামল আবার ট্যাকসি

ধরে ছোটো নিরামিষ কেনাকাটা পুরুতের দেয়া লিস্টি মেনে--

চলিস শ্মশানে কাঁধে চিপেস্ট পালঙ্কে শুয়ে লিপ্সটিক মেখে...

নিয়ে যাব একদিন সবাই প্রেমিক মিলে কাঁধের ওপরে ডারলিং...


তোর সুগন্ধ, মুখপুড়ি

উৎসর্গ : বেবি, দীপ্তি ও মীরা

ঠিকই বলেছিলি, মুখপুড়ি, থাকুন না সঙ্গে সবসময়, কোঁকড়া দুর্গন্ধ হয়ে

দেহের নৌকো জুড়ে, আগাপাশতলা, নোনা বাঁকে মাছেদের অপলকা ঝাঁকে

কোথাও অ্যাড্রেনালিনে নীল তাঁতে বোনা গোড়ালি-গন্ধকে মাখা ভিজে-নাচ

চামড়ায় মরে-যাওয়া জং-ধরা হাঙরের মিষ্টি হাঁ-মুখ ভরা খিলখিল আলো

খুঁজুন না যা চাইছেন, ভিনিগারি ঘামের রোদ্দুর, গ্রন্হিল জ্বরের নিঃশ্বাস

ছানাকাটা দুধেল উত্তাল, তাও হরমোনের তরল বারুদে তিতকুটে

বলেছিলি তুই, প্রেম ? ছ্যাঃ, সুগন্ধ তো বানানো নকল তার সাথে, ডারলিং

মাংসের মেদের মজ্জার আত্মীয়তা নেই। পেতে হলে শুধুই দুর্গন্ধ নিতে হবে

যা তোর একান্ত আপন, বলেছিলি। চারিপাশে বাতাসের নিভাঁজ জারকে

তোর ওই ঘোষণা উড়ছে: সি ইউ... সি ইউ... সি ইউ... সি ইউ...


ফেলে গিয়েছিস তোর লনজারি টপ জিন্স বক্ষবন্ধনী হাইহিল। কই তোর

দুর্গন্ধ কোথাও তো নেই মুখপুড়ি ; ফেলে-যাওয়া কিছুতেই নেই। সবই

ভিনিভিনি খুশবু মাখানো। যতক্ষণ ছিলি, তোর গা থেকেও ওই একই

পারফিউম উড়েছে, বানানো নকল, তোরই মতন মুখপুড়ি, কথার

ফেনানো জালে টোপ বেঁধে যা তুই ফেলেই চলেছিস প্রতিরাত প্রতিদিন।

তাহলে ফালতু তোর সি ইউ...সি ইউ.. ডাক হাতছানি উদোম ইশারা।


শুদ্ধ চেতনার রহস্য

উৎসর্গ : রজকিনী

ঠিক আছে, লাফাও

অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম কাচের জানালা খুলে কুড়ি তলা থেকে

বাতাসে ঝাঁপাও তুমি টাঙাইল আঁচল উড়িয়ে

শূন্যে ভাসবে কালো ঢাল এলোকেশ

দু পায়ে আচেনা নাচে পৃথিবীর রঙিন মাটিতে

নেমে এসো তুমি

তখন খামচে দেখো হাওয়ার শরীর কীরকম

খেলবে তোমাকে নিয়ে ওলোট-পালোট

আমার পায়ের কাছে পড়ে তুমি ছত্রখান হও

খণ্ড-বিখণ্ড হাড় থ্যাঁতা মাংস নাড়িভুঁড়ি সব একাকার

ঠোঁট যোনি উরু নাভি পাছা স্তন আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে

সৌন্দর্য বিমূর্ত ক্বাথে মাছির খোরাক হবে তুমি


সব জড়ো করে তবু তুমি নও

তুমি সে-সময়ে রৌদ্রে ভাসমান

বুঝেছিলে মিথ্যে এই প্ররম্ভিক অধঃপতন ।


শিল্পোন্নয়ন

উৎসর্গ : সতীময়না-লোরচন্দ্রানী

এ কী তুমি এইখানে পাগলাগারদে

পায়েতে শেকলবাঁধা নেয়ারের খাটে

উদোম উলঙ্গ শুয়ে আছো চুলে জট

নোংরা নক বেড়ে গেছে দুচোখে ঢুলুনি

সারাঘর বমি মুত পায়খানা ভরা

ভাতমাখা এনামেল থালা এককোণে

শরীর ধোওনি জলে নেমে কতদিন

চেনাই যায় না এককালে পাঁচতারা

হোটেলে নেচেছ নাভি নিতম্ব কাঁপিয়ে


আরেকবার সুস্হ হও শুভ্রা রায়

নাচব সকলে তুর্কি গাঁজা-ভাঙ টেনে

হাড়িয়া মহুল খেয়ে ফিরিঙি আদলে

উঠে এসো সুর্মা চোখে লুপুঙগুটুতে

বেবাক দুনিয়া যায় জাহান্নমে যাক ।



বিজ্ঞানসন্মত কীর্তি

উৎসর্গ : গুলে বকাওলী

ফ্যান টাঙাবার ওই খালি হুক থেকে

কন্ঠে নাইলন দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়ো

কপাট ভেজিয়ে দরোজার চুপিসাড়ে

উঁচুতানে রেডিও চালিয়ে তাড়াতাড়ি

শাড়ি শায়া জামে খুলে টুলের ওপরে

দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁস-রশি পরে নিও

সারারাত অন্ধকারে একা ঝুলে থেকো

চোখ ঠিকরিয়ে জিভ বাইরে বেরোনো

দুপাশে বেহঁশ দুই হাত আর স্তন

জমাট ষোড়শি শূন্য পায়ের তলায়

পৃথিবীর ধরাছোঁয়া ছাড়িয়ে যেখানে

বহু পুরুষের ঠোঁটে আদর খেয়েছ

সে-শরীর ছুঁতে ভয় পাবে তারা আজ


দোলো লাশ নামাবার জন্য আছি আমি ।



সুফিয়ানা

উৎসর্গ : রাবিয়া আল-আদাবিয়া

এ কেমন ক্রিমতোলা বাংলায় কথা কোস তুই

যে ভেলকিবাজ রোদের ভয়ে ঝরে পড়া শিউলিফুলগুলো

পাখিদের রোমান্টিক গানকে নার্ভাস করে তোলে

যেন হাঁ-মুখে নার্সের থার্মোমিটার


দোলের দিন ডেকে-ডেকে হাঁপানি ধরে গেল কোকিলটার

আসলে তোর কেন মতামতহীন হবার আধিকার নেই

একটা হ্যাঁ-এর সঙ্গে একটা না মিশিয়ে তখনই জানা যায়

যখন প্রেমের ক্লাইম্যাক্সে মাটির সঙ্গে আমি যোগাযোগ হারাই

শাঁতার কাটবার মতন তোর গভীর টলটলে সংলাপে

যে-দিন জিরে-জিরে করে কুচোনো বিদ্যুতের সবুজ জোনাকি

ঘোড়াহিন রেসের মাঠে তোকে ঘিরে বেশরম হ্রেষা হয়ে উড়বে

ইরানি হরফে তোকে প্রেমপত্র লিখে রাখবে বটগাছের শেকড় ।



দালাল

উৎসর্গ: জগৎশেঠ

এ কী কুলনারী তুমি জাহাজঘাটায় দেহ বেচতে এসেছো

লুঙি-পরা পানখোর দালাল রাখোনি

সাদাপোষাকের কবি শরীর ঝাঁঝরা করে দেবে

শাঁখা-নোয়া খুলে তারা দুহাত হিঁচড়ে টেনে তুলবে লরিতে

লকাপে ল্যাংটো মাঝরাত.....সে-সময়ে গেয়ো তুমি রবীন্দ্রসংগীত


ছিহ কুলখুকি তুমি সবায়ের আদর কুড়োও

যারতার সাথে গিয়ে যেখানে-সেখানে শুয়ে পড়ো

চারিদিকে কটাচোখ ধ্রুপদী জোচ্চোর সব নজর রাখছে মনে রেখো


আমি তো স্ট্রেচারবাহী কিছুই করতে পারব না

হয়তো টিফিনবাক্সে এনে দেব রুটি আর আলুজিরে ভাজা

গান শোনাবার মাঝে ঝুঁকে-ঝুঁকে পয়সা কুড়োবো

ভোর হলে গঙ্গার পাড়ে তুমি দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বমি কোরো

হাসপাতালেতে পাবে বেডপ্যান গ্লুকোজ বোতলে জল

তালচিটে বিছানায় পাশে শোয়া ঘুমন্ত কুকুর ।


বজ্রমূর্খের তর্ক

উৎসর্গ : উমা মাহাতো

আজকে শুক্কুরবার । মইনে পেয়েচি । বোধায় শরতকালের পুন্নিমে ।

পাতলা মেঘের মধ্যে জোসনা খেলচে । মাঝরাত । রাস্তাঘাট ফাঁকা ।

সামান্য টেনিচি তাড়ি । গাইচি গুনগুন করে অতুলপ্রসাদ ।

কোথাও কিচ্ছু নেই হঠাত নেড়ি-কুকুরের দল

ঘেউ ঘেউ করে ওঠে । তাড়া করে । বেঘোরে দৌড়ুতে থাকি ।

বুঝতে পারিনি আগে । রাজপথে এসে হুঁশ হয় ।

মাইনেটা পড়েচে কোথাও হাত থেকে । কী করে ফিরব বাড়ি ?

কেধ তো বিশ্বাস করবে না । ভাববে খেলেচে রেস,

গিয়েচে মাগির বাসা, বন্ধুদের সাথে নিয়ে বেলেল্লা করেচে ।

বন্ধুবান্ধব কেউ নেই । রেসও খেলি না কতকাল ।

অন্য স্ত্রীলোকের খোলা-বুকে হাত শেষ কবে দিয়েচি যে

ভুলে গেচি । জানি না বিশ্বাস করে না কেউ কেন ।

আমার তো মনে হতে থাকে, যা করিনি সেটাই করিচি বুঝি ।

যা কইনি, সেকথা বলিচি । তাহলে এ পুন্নিমের মানে ?

কেন এই মাইনে পাওয়া? কেন গান ? কেন তাড়ি ?

.

আবার ঢুকতে হবে রামনোংরা গলির ভেতরে । নির্ঘাত কুকুরগুলো

গন্ধ শঁকে টের পাবে । ছেঁকে ধরবে চারিদিক থেকে ।

যা হবার হয়ে যাক । আজ শালা এস্পার কিংবা ওস্পার ।



প্রিয়তমার নিলাম

উৎসর্গ : অসন্ধিমিত্রা

বিশল্যকরণী বলে কিছু নই শেষ ওব্দি লক্ষ্মণের লাশ

রাবণের মর্গে পড়ে ভেটকে উঠেছিল

ভিড়ের দড়ির টানে

খর্ব অপুষ্ট জরাক্লিষ্ট মুখে কাঠের জগড়োনাথো ফিরেছে স্বস্হানে

ওরকম মুখ বুজে থাকব বলে আসিনি এখানে আমি

গন্ধমাদন কাউকে ল্যাজ তুলে আনতে হবে না

কেননা ভূমিষ্ঠ হয়েই মাটি কামড়ে ধরেছি কষদাঁতে

শীতকালে কেন ফিকে ন্যাপথালিনের গন্ধ মানুষীর নিশ্চুপ স্তনে

যে-মুখে রেখেছি হুল লেহনে বোটকা স্মৃতি বৃক্কে নেমে যাবে

ফেরারির অগ্নিচোখ অর্জন করেছি শ্রমে

বল্লম ধরার আগে আঙুলের খাঁজ হেজেছিল

বাতাসে বাবরি উড়বে চ্যাঁচাব দুখাঁধ তুলে

বুকের ওপরে দুই হাতা ঘুষি আছড়ে বলব বারবার

অগ্নি সংযোগ করো শান্তিভঙ্গ হোক ছারখার করো

ক্রন্দনরত কারা গুঁড়ি মেরে এলোচুলে ঘোর অন্ধকারে

শানাচ্ছে কুখরির ডগা উল্কাপাথরে ঘষে একটানা সুরে

টিকটিকিদের ল্যাজ আছড়াবার ক্ষীণ শব্দ

ঝড়ের ধুলোয় নাকে জ্বালা ধরে

মুখেতে রুমাল বেঁধে নিঃশব্দে ঘোড়া থেকে নামি


যে-রকম কথাছিল আবার এসেছি আমি নিলামের দাক দিতে

এইবার সবচে বেশি দাম ধরে দেব

মাত্র দু-পাঁচশো নয় কিংবা মাসখানেকের জন্যে ঘানির মজুরি

তুমি ধ্বংসধ্বনি খুকি

ভবিষ্যৎ থকথকে হারামরক্তে ডুবে আছে ।



বাকদানো

উৎসর্গ : আন্দালীব

তোদের তো বলিছিলুম বাবা কিন্তু তোরা গা কল্লিনে

তবলা-বাজিয়ের কানে আওয়াজের আগেই য-ভাবে বোল ফোটে

অ্যাগবারে তেমনিই যে-দিকে মাথা করে শুই সে-দিকেই কেন সুয্যি ওঠে জানি না

.

আমাদের যুধিষ্ঠির, সেই যে, পাশাখেলার গ্র্যাণ্ডমাস্টার

বেতলা ফরেস্টে দ্রোণাচার্যের সেমিনারে অর্জুনকে ধাতানি দিয়েছিল

'পা নাচিয়ে কক্ষুনো নাচবিনে, সব্বোদা বাতাস নাড়িয়ে নাচবি'

.

তোদের ওদিকটায় তো সভ্যতা মানেই শহর, কী, ঠিক বলিচি না?

জ্বরের ঘোরে-বলা প্রলাপ খানিক পরেই দেখবি আলোচনা হয়ে গেচে---

কাব্যি করে বলতে হয়, 'ওগো এ যে গোঁজবঙ্গের পালতোলা শামুক ভাসিয়েচো'

.

যখুন দুঃখকষ্ট চেপে যেতে শেখার বয়েসে পৌঁছোলুম, অ্যাঁ

ঘুমন্ত অবস্হায় যে-পাখিটা বিপদে পড়েচে তার মাঝরাতের ডাকে

দেহের বিতর্কিত জায়গায় হাত দিয়ে ফেলার ভয়ে আমি তো থরহরি

.

বিড়ির শেস-ফুঁকের আয়েস টেনে মেয়েটি যখুন পোনয় নিবেদন কল্লে

একাধটা অঙ্গকে বিশ্বেস করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল রে

তা, সবাই তো আর সবায়ের ব্যথার গন্ধ টের পায় না

.

এ-বাড়ির ঘড়িগুলোকে দ্যাখ, বড্ড কামচোর, সবুর করতে পারে না;

কী করি ? আমি তো পাহাড় থেকে ঝাঁপ-দেয়া ঝর্ণার ফূর্তি দুমুঠোয় পুরে

মৌমাছিদের রানিকে নিয়ে বরযাত্রীদের সঙ্গে ওইবঙ্গে কেটে পড়লুম...



পরবর্তী সর্বনাশ

উৎসর্গ : অজাতশত্রু

পাহাড়ের বাঁকে ট্রেন দেখা গেছে যাও

এইবালা ঘুমে অচেতন গৃহস্হালি

ফেলে ছোটো মাথা পেতে দিতে রেলপথে

এরপর রাতে আর কোনো ট্রেন নেই

পিষে কেটে ছটুকরো হয়ে যাও তুমি

শাঁখা পলা গুঁড়ো হয়ে মিশুক মাটিতে

তলপেটে রাখা ভ্রুণ নিসর্গে ফিরুক

ত্রেনের পয়ার ছন্দে নিজেকে ভুলিয়ে

তোলপাড় করে দাও সুখের সংসার

ভয় দুঃখ শোক গ্লানি দিয়ে বন্ধ করো

অমল আনন্দ শেষ হোক ভাঙা ঘুমে


দুহাত বাড়িয়ে সারারাত রেলপথ

শিশির উপেক্ষা করে তোমার শরীর

পাবে বলে ঠায় জেগে আছে সন্ধে থেকে



স্হানিকতা

উৎসর্গ : মো, এবাদুল হক

যে-মানুষীর হনুমানের ঢঙে চার হাতে জড়িয়ে ধরার তল্পিতল্পা ছিল

তার সঙ্গেই তো ধুপকাঠি-গেঁথা পাকা-কলার কুচকুচে পিঁপড়ে পাড়ায়

অন্ধকার দিয়ে নিজের বদ-দূরত্বটুকু বেঁধে রাখতে চাইছিলুম

.

ওকে পেয়েছিলুম ছোটবেলার চান-করার হল্লায় তৈরি বিয়েবাসরে

মেঘ থেকে বৃষ্টিফোঁটা খুঁটেখুঁটে ঘাম জমিয়ে তুলত মুখময়

.

গৌড়ের সেসব ভুলভাঙা রাজপথ তো এখন অচেনা খেতসবুজ গ্রাম

মিটকি মেরে পড়ে আছে আলোর ঝলকানিতে টোলখাওয়া বিদ্যুতে

কেননা ইতিহাসে ঢুকতে গিয়ে চৌকাঠে ঘা খেয়ে ওর মাথা ফেটে গেছে

.

হয়তো একদিন তিলোত্তমাদের ফেলে দেয়া তিলগুলো জড়ো করে ফেলবে

আর চিতার ওপর হাসতে-হাসতে উঠে বসবে আগুনের মুখোশপরা গৌড়



উৎপাদন পদ্ধতি

উৎসর্গ : এথেনা

বিদ্যুতের তার ঝড়ে ছিঁড়ে ঝুলে আছে

এতো কী ভাবছো বাজে সারাদিন ধরে

যাও ছুঁয়ে দাও গিয়ে মাথা ঠিক রেখে

মুঠোর ভেতরে নাও তীব্র জ্যোতিরেখা

একটা ঝলকে স্নেহ রক্তে ঢুকে যাবে

দেখে নাও মাটিতে পা থাকা কত ভুল

মাটি ও তোমার মাঝে দরকার ছিল

হাকুচ আড়াল কোনো হিজড়ে তৈজস

কীরকম জ্বলে ওঠো দেখতে চেয়েছি

শাদা ত্বক এক লহমায় পুড়ে কালো

চোখ থেকে চাউনি উধাও জানুদেশ

থিরথির কেঁপে ছিটকে ঘাসের মধ্যে

পড়ে তুমি বারকয় নড়েচড়ে স্হির

শেষবার তারপর ঝুঁকে চুমু খাবো ।



ধনতন্ত্রের ক্রমবিকাশ

উৎসর্গ : আর্টেমিস

শেষরাতে পাশ থেকে কখন উঠেছ

চুপচাপ আলমারি ভেঙে কী অ্যাসিড

ঢকঢক করে গিলে মরছ এখন

আলজিভ খসে গেছে দুগালে কোটর

মাড়িদাঁত দেখা যায় কষেতে বইছে

গাঢ় ফেনা হাঁটুতে ধরেছে খিঁচ ব্যথা

চুল আলুথালু বেনারসি শাড়ি শায়া

রক্তে জবজবে মুঠোতে কাজললতা

শোলার মুকুট রক্ত-মাখা একপাশে

কী করে করেছ সহ্য জানতে পারিনি

শুনতে পাইনি কোনো চাপা চীৎকার

তবে কেন সায় দিয়েছিলে ঘাড় নেড়ে

আমি চাই যেকরেই হোক বেঁচে ওঠো

সমগ্র জীবন থাকো কথাহীন হয়ে


ডোমনি

উৎসর্গ : অলকনন্দা রায়

ডোমনি, তুইই দয়াল, খয়েরি চাউমিন তাপের খোলসে

জিভ দিয়ে পড়ে থাকি, টাকরা মন্দাক্রান্তা ছন্দে কাঁপে

ডোমনি, তুইই দয়াল, চরণ বিভক্ত তোর মধ্যযতি দিয়ে

ঠোঁট চেপে পড়ে থাকি, বানভাসি ঢেউ খেলায় নদী ঢুকে আসে

ডোমনি, তুইই দয়াল, টানপ্রধান অনুষ্টুপ তোর তরল পয়ারে

মুখ দিয়ে পড়ে থাকি শ্বাসযতি শ্বাসাঘাতে ছন্দখেয়ে টলি

ডোমনি, তুইই দয়াল, বুকের স্তবকে রসের স্পর্ধা এনে দিস

নাক দিয়ে পড়ে থাকি হরিণেরা কস্তুরি নাচে চৌপদীলঘু

ডোমনি, তুইই দয়াল, স্বর্ণলতা কোঁকড়া চুলের আয়েসে

কান দিয়ে পড়ে থাকি, বাণের বাকসম্ভোগী ডাক শুনি

ডোমনি, তুইই দয়াল, আদি আলুথালু ক্রৌঞ্চী তোটক তৃণক

গাল রেখে পড়ে থাকি, ত্রিগুণবারি বাকসম্ভোগে ঝরে কামচণ্ডালী

ডোমনি, তুইই দয়াল, চাপল্যছাক্কস দ্রুতছন্দের আদিস্বরে

গোঁফ দিয়ে সুড়সুড়ি দিই তোর কালিকাগহ্বরে, ধামালি দিগক্ষরা ওরে

ডোমনি, তুইই দয়াল, আমি খালিপিলি আকখা বিরামচিহ্ণে থামি

মাথা গুঁজে পড়ে থাকি, অভেদ খুলে যায়, বেরোয় সিঙ্গলমল্ট মধু

ডোমনি, তুইই দয়াল, স্হিতিস্হাপক লঘুদ্রূতি স্বরধ্বনি ওঠে

হাত রেখে পড়ে থাকি, গোলাপরঙ ধরে, তোর মোহন আবসাঁথ উঁকি দেয়

ডোমনি, তুইই দয়াল, অঙ্গটায় সুখ নেই, অঙ্গের চৈতন্যে পুরো সুখ

বুক রেখে পড়ে থাকি, রঙমহলে ঢুকি, রিপুকে দমন করে নদীর রক্তমুখ

ডোমনি, তুইই দয়াল, মন বলতে যা বোঝায় তা ওই দেহযজ্ঞখেলা

উরু তুলে পড়ে থাকি, দেহমাতাল হই, মানবিক দেহযজ্ঞে ফারাক করিনে

ডোমনি, তুইই দয়াল, শরীরে রসের ভিয়েন, কামেই কাম নিবারণ

সারাদিন স্বভাবঘোরে ঠেকায় সুরবাঁধা, গাধার পরজন্ম হয়, আমার তো নেই

ডোমনি, তুইই দয়াল, দেহরস উর্ধগামী করাই সাধনা, অন্ত্যমিলে কোনো মিল নেই

স্হানের অর্চক আমি, ডুবতে চেষ্টা করি, মাংস ছেড়ে প্রেমের স্বদেশ নেই কোনো

ডোমনি, তুইই দয়াল, ফাটলের গান না বেরোলে বহু কষ্টে রাতদিন কাটে

যতো ঝড় সব খামোশ তোর ও-তল্লাটে, চাতক প্রায় অহর্নিশি, চরণদাস আমি

ডোমনি, তুইই দয়াল, লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে দিয়েছিলি সেই ষাটের দশকে

তেকোনা মানবঘর আজব কারখানা, বন্ধুরা শত্রু হল শাঁখ-গেঁড়ি-শামুকের চেলা

ডোমনি, তুইই দয়াল, মলয়দাস ভণে, শুনো গাণ্ডুগণ, কয়লাঅঙ্গ কালোলাল

চাপান-ওতোর চলে, বিরল তিমিরজালে, মশকগৃহিণী বসে শত্রুদের নিতম্বপরে

ডোমনি, তুইই দয়াল, কৌশলে সাড়া দিস, বীজরস শুষে নিস, যেন চোরাবালি

অনল-হিল্লোল-ধারা, মাথাথুয়ে বর্ত্মফাঁকে, বিচিত্র আলোকোদয়ে চাটি রসমধু

ডোমনি, তুইই দয়াল, অলক্ষ্মী অলকায় যাক, অলক্ষ্মী অমরায় যায় যাক

মাংসের ছটায় মজে, কালো পদ্মফুলে সেজে, চটচটে মাত্রাবৃত্তে অন্ধকার হবি

ডোমনি, তুইই দয়াল, ঢুলু-ঢুলু দুই চোখে, ছটফটাস বেওকুফ মাস্তানের ঢঙে

হাঁফাস আর বলে উঠিস, করুক্ষেত্র কোথাকার, ভেতরে ফেলিস না কেন

ডোমনি, তুইই দয়াল, আমি তো বাউলক্ষ্যাপা, ওরে এটাই আসল শিক্ষে

মলয়হাংরি বলেছেন জোয়ার ভাটায় চলে ফেরে সাগর কিন্তু শুকায় না রে

ডোমনি, তুইই দয়াল, কী করিতে কিবা করি, বীর্যে বোঝাই তরি

ছিলুম কোথা এলুম হেথা যাবো কোথায় কার সনে প্রেমের উর্ধলোকে

ডোমনি, তুইই দয়াল, মনের মানুষ বলে কিছু নেই, সবই দেহের মানুষী

আদিশক্তি পরম যুবতী আমার দেহ চালাস তুই মানুষ আড়তরসিক

ডোমনি, তুইই দয়াল, সাধনসঙ্গিনী, বিরল তিমিরজালে ফাঁসালি আমাকে

বাবা বলে কেন ডাকিস, আমার আলজিভ নেই, গানের কন্ঠস্বর নেই

ডোমনি, তুইই দয়াল, তুই কালচেদেহ, ডাগর দু'চোখ, চেরিফল বুক

মা বলে ডাকতে পারি না তোকে, মনে হয় ইনসেসচুয়াস এই বাউলসম্পর্ক

ডোমনি, তুইই দয়াল, আলোজ্বলা এ-সম্পর্ক, ক্ষ্যাপাহাংরি সহ্য করে বেমালুম

মাবুদ মজুদ তুই এই শরীরে থাকিস, তোকেই ভজনা করি আমার কবিতায়

ডোমনি, তুইই দয়াল, মলয়দাস বলে মিছে গণ্ডোগোল ভবে এসে শুনতে পাই

এই যে বীজ বা বীর্য, এর কী আলাদা কিছু আছে ? চাঁদ সবায়ের এক, চাঁদের আলোও

ডোমনি, তুইই দয়াল, মানুষের বীজে হয় না ঘোড়া, ঘোড়ার বীজে হয়না প্রজাপতি

হিন্দু শিয়া-সুন্নি মুসলমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ জৈন শিখ আহমেদিয়া ইহুদি অনাস্তিক

ডোমনি, তুইই দয়াল, খাজাবাবা খাজাবাবা মারহাবা মারহাবা, মস্ত কলন্দর ওরে

ইশকের গাঁজা ফুঁকলে হয় রুহ তরতাজা যেন নৌকা চরস টেনে চলেছে মাতাল

ডোমনি, তুইই দয়াল, সুকুমার চৌধুরীকে বল দেখি আশেক হলে মাশুক মিলবে ওর

পড়ে থাকুক জিভ ঠোঁট মুখ গাল বুক ঠ্যাঙ হাত দিয়ে মন্দাক্রান্তা আমিষাশি বীর্যকবিতায়…


মরে গেলি , অরুণেশ ?

উৎসর্গ : পাপড়ি গুহ নিয়োগী

মরে গেলি ? সত্যিই মরে গেলি নাকি অরুণেশ ? 

রূপসী বাংলার খোঁজে আসঙ্গ উন্মুখ শীতে বেপাড়া-ওপাড়া ঘেঁটে

শেষমেশ জিলের সবুজ ঝাঁঝরিতে ডুব দিলি ! যবাক্ষারযানে কালো

বিষগানে আধভেজা উলুপীর সাপ-রক্ত মিঠেল শীৎকারে

হৃদযন্ত্রে দামামা বাজতেই বুক খামচে জলে নেমে গেলি

বাড়িতো পিছনে ছিল, সেদিকে গেলি না কেন ? ডাঙার গেঁজেল হায়নারা

যৌবনে ভালবাসা পেয়েছিল তোর, যখন অতৃপ্ত ছিলি ? কী খাচ্ছিল

কে খাচ্ছিল নৌকোর পালে আঁকা তোর রাগি নমস্কার ? দেখেছিলি

মোমে-জোড়া ডানা গলে ইকারাস সমুদ্রের আঁশটে ঘূর্ণীতে নেমে গেছে

নিরিবিলি ওফেলিয়া পিরানহা মাছেদের বন্দনা মেশানো ঝাঁকে

ড্রাগন উৎসবের ডিঙি থেকে ঝাঁপ দিলেন সৌম্য কুউয়ান

ফেনার ওপরে লেখা কীটসের নশ্বর অক্ষরমাংস ঠোকরায় চিল

হয়তো কাঁকড়ারা বুজকুড়ি কেটে-কেটে লি পোর কবিতা পোড়ে

শোনাচ্ছে নাটালি উডের লাশে ভাসমান কাক গৃহিনীকে

হার্ট ক্রেনও আছে নাকি তোর পাশে শুয়ে কিংবা ঠোঁটে

চুমু কি দিচ্ছেন ওর নগ্ন আলিঙ্গনে টেনে ভার্জিনিয়া উলফ ?

বউ ফেলে ষোড়শী মেরিকে নিয়ে কাটলেন পিসি বিসি শেলি

দেখলি ডন হুয়ান নয় ; তিন দশকে ফ্র্যাংকেনস্টাইন খুড়ো

জলে-পচা রাসপুতিন ছিঁড়ে খেলো তোর প্রিয় রূপসী বাংলাকে

স্বপ্নের নীল নদে, টাইবার নদীতে, রাইনে, লিমমাতে, তিস্তায়

অ্যামস্টারডামের খাল যার দুই ধারে রোজ বেশ্যা প্রেমিকারা

রক্তাক্ত আলোয় বসে উলঙ্গ গোলাপি খুলে সন্ধ্যা ফেঁদেছেন

পরমহংসের শোক শিখেছিলি রেঁবোর আবসাঁথ পান করে

অথচ ঠান্ডা রক্তে জড়িয়ে ধরল জল ভালবেসে তোকে

উকুন ও ছারপোকার কামড়ের মাঝে তৃপ্ত ঘুম ছেড়ে হ্যাঁ রে

নেমে গেলি অমৃতমন্হনের ডাকে-- কোন দিকে যাবি তুই

বুঝতে না পেরে অসুর ও দেবতার মাঝে পিষে গেলি, আজীবন

পিষে গেলি...পিষে গেলি...পিষে গেলি...পিষে গেলি...পিষে…

বিষবাউলের গান

উৎসর্গ : মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ

মলয় মলয় মলয় মলয় মলয় মলয়

শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে

এই নাম আর দেয়া যাবে না ছেলেকে নাতিকে

নামের ভেতর কোনো নরম নদীর নারী নেই

জোনাকি মালায় ওর হরিণীরা সঁপেনাকো গলা

শীতের হাওয়ায় নেই আমলোকি-পাতাদের নাচ

কী রেখেছে তাহলে ছাইপাঁশ ?

বানভাসি-ফেলে-যাওয়া ধানখেতে হাঁটু-ডোবা বালি...

আঁস্তাকুড়ে ফেলে-যাওয়া ভ্রুণ...

শুয়োরের পচা মাংস তেবাষ্টে হাঙরের নোনামাছ...


ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে যাচ্ছে এ-শহর ছেড়ে

৩৮৯৭ টি কবিতার বই বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল

নেবার জন্য পাওয়া গেল না কাউকে

কবিতার বই রাখবে না কোনো গ্রন্হাগার

পাঠক নেই দেখভালে খরচ কে দেবে

জাতীয় গ্রন্হাগার কপিরাইট আইনে বই পায়

রাজ্য গ্রন্হাগার রাখে পার্টির লোকেদের বই

কারোর বাসায় অত জায়গা নেই তরুণ কবিদের

অতি ভালবাসা-মাখা কবিতার বই রাখবার তাক

মলাট বাদ দিয়ে কিলো দরে কিনতে রাজি

পোরোনো কাগজঅলা...প্রেম হাসি ক্রোধ সংবেদন

শতশত উপহার নেবার জন্য কোনো লোক নেই

পত্র-পত্রিকা জুড়ে হাজার হাজার সমালোচনার ঝাঁক

সবই ফালতু বুঝি ? মগজ ধোঁয়াটে হয়ে ওঠে

এত বই এত এত পত্রিকা কোথায় যাচ্ছে চলে ?

তিরিশের পর থেকে ? দুই বাংলা জুড়ে !

বাংলার টিচার ঠিক বাতলেছিলেন ক্লাসে:

টেকার জন্যে চাই কুখ্যাতি-দুর্নাম-বিষবাউলের গান

এ-সময় সে-সময় নয় : সে-সব বাউল আজ মৃত।


কাহার কুর্মি ডোম দুসাধের ছোটোলোক পাড়া

শৈশব কি গ্রন্হহীন ছিল ? কবির রহিম দাদু

তুকারাম থিরুভাল্লুভার রামচরিতের ছেঁড়া পাতা ?

এতটা আসার পর পিছন ফিরলে দ্যাখে

সেদিকে কিচ্ছু নেই, দিগন্তবিহীন পচা-ছেঁড়া-ছাতাপড়া

দশ-বিশ-হাজার টাকা নোটের দুর্গন্ধে টেকা দায়

কী হবে তাহলে ? সযত্নে আদরে রাখা কাব্যগ্রন্হগুলো ?

বাড়ি তো বিক্রি হবে চারদিন পর নতুন মালিক

বলেছেন: না না ওসব বই ফই গতি করুন

কারা পড়ে মশায় রবিঠাকুরই তো শুধু সাজেগোজে

তো আপনাদের এই বেআফিমি কারেস্তানি নেশা...

ওই তো মিউনিসিপালিটির জঞ্জালের ভ্যাট

কাগজকুড়ানিরা আসে দলবেঁধে সকালবেলায়

ক্যানিঙের ট্রেনে ভাড়া লাগে না কারোর


বাবা বারণ করতে পারতেন মা বারণ করতে পারতেন

শিক্ষক বলেছিলেন ওহে ঠাঁই নেই ছোটতরীর মানে

নরম নদীর নারী সোনাগাছি নিয়নে থাকুন

নদী থাক গলাটেপা বাঁধের বেড়ায় বাঁধা

হরিণ ঝুলতে থাক শিকারীর রঙিন দেয়ালে শিং তুলে

জোনাকিরা চলে যাক ফিনফিনে এনডোসালফিনে

আমলোকি গলে যাক রামদেব-আশ্রমের চিমচিমি-মোড়কে

শহরে আর আঁস্তাকুড়েরও জায়গা নেই

বলেনিকো কেউ ? কবির রহিম দাদু কৃত্তিবাস

কাশিরামদাস ময়মনসিংহী গান লেখকেরা ?

এত কবিতার বই এত কবিদের লেখা শ্বাস-প্রশ্বাস


ওরই নামের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে থাকবে আঁস্তাকুড়

কলেজ স্ট্রিটের পথে ডাস্টবিনে ফেলে-দেয়া ভ্রুণ

থাকবে ধাপার মাঠ শহরের জঞ্জালের বিরাট পাহাড়

নামের ভেতর মৃদু হাওয়া নয় নশ্বর অবিশ্রাম ঝড়...


৬৫টি হাইকু

উৎসর্গ : লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি

অঙ্কের দোষ

সাধক কবিও লেখে

মাত্রা গুনে গুনে

ফেসবুক আছে

অরকুট টুইটার আছে

তবু থাকে একাকীত্ব

ভূমাধ্যাকর্ষণ

আলো ও ক্যালকুলাস---

নারীদেহ ছোঁননি নিউটন

 ৪

বসন্তে মৌমাছি

আফিমের ফুল থেকে

মাদক পেল না

শীতকাল--

কোথায় পোশাক রাখল

স্বপ্নের নগ্ন যুবতী

 ৬

সকলেই জানে টাকমাথা

কবিটি মিথ্যাচারী এবং অসৎ

তাই বলে ওনার গবেষকও


ব্যায়াম ব্রেকফাস্ট ভিড়

অফিস ভিড় বাড়ি টিভি সঙ্গম

মাসে লাখ টাকা

শুধু শোনো

বন্ধ রাখো মুখ

কমরেডগণ

ক্যাটরিনা কাইফ

জানেন সুন্দরী নিজে

চোখের নকল পাতা কেন

 ৯

কটা বেজেছে

জানতে চায় লোকটা

এক মুহূর্ত থেমে যায় পৃথিবী

১০

খরার খেতের মাঠ--

হাজার হাঁ-মুখ খুলে রূপসী বাংলা

নিঃশব্দে হাসছেন অট্টহাসি

১১

মলে ও মার্কেটে

দল বেঁধে ঘোরে যুবতীরা

স্বপ্নে শুধুই একজন

১২

মরা গাছ

নিজেকে নিয়েই সুখী

বৃষ্টি বাদলায়

১৩

সেলফোন--

রঙিন নানান গেমখেলা

বিদেশী নারীর কন্ঠ

১৪

এক দশক বন্দুকে

আঁকাআঁকি কবিতায় আরেকটি

ব্যবসার পাট কবে হবে

১৫

চরসের ধোঁয়া---

স্মৃতি থেকে অতীত ও বর্তমান

মুছে ফেলল কাশ্মিরী বালক

১৬

যে কবিরা

রাজনেতাদের সাথে ঘোরে

সংসারেও রাজনীতি করে

১৭

নগ্ন নারীদেহ

কতবার দেখেছে ফেরারি

ধারাবাহিক হত্যা করে তবু

১৮

শোপ্যাঁ...শোপ্যাঁ...

ডানা বাজাচ্ছে ঝিঁঝিঁ

শ্রাবণ সন্ধ্যায়

১৯

একা থাকে

কথা কইতে চায় না

খারাপ হবে কেন

২০

আওয়াজ...

বাজির আলো

জড়িয়ে ধরার সুযোগ

২১

পাকা বটফল টুপটাপ

মাটি থেকে তুলে নিলেন গৌতমবুদ্ধ

অসুস্থ কাঠবিড়ালি

২২

ওপারে তাজমহল

শাজাহান দেখছেন দূষণে নোংরা মার্বেলপাথর

কালো তাজমহল এলো

২৩

পাক খেয়ে উঠছে শাড়ি

নারী অঙ্গের বাঁকে নেচে উঠছে

মরা পলুপোকা

২৪

চিনিমুখে পিঁপড়েরা

আখগাছের গোড়ায় সুখের বাসা পিঁপড়ের

চাষির কাস্তে

২৫

ঘুণপোকার উন্নতি

ভালো বা খারাপ সময়টা যারই হোক যাই হোক

মহামহিম মহামহিম

২৬

লোডশেডিঙের গ্রীষ্ম

এমনকী দেশি পোষা কুকুররাও ডাকছে

ঝরঝরে তুষার

২৭

পুরুষ শাঁখ: কে বেশি সুন্দরী?

মাদি শাঁখ নাকি শাঁখা-রুলি পরা বউটি!

কলম হারিয়েছে

২৮

বালিতে জুতোর দাগ

বর্ষা এলে বাঁকবদল চায়নি নদী

শরতের খরা

২৯

পথে পায়রার ঝাঁক

থলে থেকে গম উপুড় করে গেছেন ব্যবসায়ী

ভিখারির কাশি

৩০

আমাদের শান্তি....নিকেতন

ফুল ও শাড়ির রঙে বসন্তের নাচ

ওপচানো ট্রেন

৩১

পাতালপুরীতে ফাল্গুন

দরজায় কড়া নাড়ছে মৌরলাঝাঁক

মেয়েটির ভাসমান লাশ

৩৩

যতটুকু ঝুঁকে দেখা

বাতাসে ছড়ানো আকাশ

ল্যাজের রক্তাভ আলো

৩৪

কোমরে হাত মেয়েটি

সম্রাট অশোক কাঁদছেন

কালো ঠান্ডা পাথর

৩৫

মেঠোপথে লাশ

লেবু পাতায় সবুজ টুপটাপ

স্যাঁতসেঁতে ঘাসফড়িং

৩৬

সুন্দরী পাতার রস

রক্তাক্ত হাত ছেলেটির

মৌয়ালিরা ফিরছে মধু নিয়ে

৩৭

শ্মশানে ধোঁয়ার কুন্ডলী

জলে চিংড়ি মাছের ঝাঁক

গৌতমবুদ্ধ হেঁটে গেলেন

৩৮

হাসছে বুড়ো লোকটির ভুঁড়ি

আমের গাছে লাল-হলুদ

কেউ একজন চুমু খেল

৩৯

শিমুলগাছে কোকিলের গান

আঁস্তাকুড়ে ভিড় বাড়ছে

কবিরদাস দোহা গাইতে-গাইতে গেলেন

৪০

বর্ষার প্রথম সকাল

বারান্দায় বাবার চটিজোড়া

ডাকপিওনের হাঁক

৪১

মুম্বাইয়ের তিরিশতলায়

নাকতলার গলি

কুকুরের পেছনে ছোঁড়ারা

৪২

ছাদে কাপড় মেলছে বউটি

দড়িতে ঘুড়ি আটক

দুপুরের গান

৪৩

দ্রুতিমেদুর শ্বেতাঙ্গিনীরা

অকেজো কমপিউটার

মেকানিকের মুঠোয় তিনগুণিতক

৪৪

আকাশে ২৩৮ প্রার্থনায়

পিছলে গেলেন ইষ্টদেবরা

পেট্রলগন্ধী দাউ-দাউ

৪৫

দিশি বন্দুকের ফটকা

আলকুশির রোঁয়া

উড়ছে। গোলা পায়রার ঝাঁক

৪৬

শিশির ভেজা ঘাসে

আজ সবুজ পায়ের দাগ

বৈরাগির দোতারায় সন্ধ্যা

৪৭

খুপরির অন্ধকার দিকটিতে

পিছন ফিরে পূর্ণিমা

ভিখারিণীর নোয়া

৪৮

জ্বলন্ত শহরের ছাইয়ে

গ্রিক সেনাপতি মিনান্ডার। পাটুলিপুত্রে

নাগার্জুন ধুলো মাখছেন

৪৯

কুয়াপুজোয় নাচছে হিজড়েরা

রাধেশ্যাম রাধেশ্যাম

কেঁদে উঠলো নতুন মানুষ

৫০

আঙিনায় থই-থই

ঝলমলে খিচুড়ির অমলতাস

প্রগাঢ় চোখমুখ

৫১

গোধুলি লগ্নের পানের বরজে

অশ্রুসজল রুমাল

বিসমিল্লা খান

৫২

জুজুধান ঝড়ে বনজ

মণিপদ্মে গোণ্ড-মুর্মু-ওঁরাও; উনি

অশথ্থ গাছের তলায় চোখ বুজলেন

৫৩

একটি মৃতদেহ

সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে আছে

পুরুষ মাকড়সা

৫৪

দুরুদুরু শ্মশান

সাজানো কাঠের ওপর চোখ বুজে

ছানাসহ কুকুর

৫৫

শ্রাবণের দ্বৈরথে ফ্ল্যাটবাড়ি

দেড়শো বছর লড়ে পড়ে গেল

পায়রারা পথে

৫৬

চোরেদের স্মৃতি

রবীন্দ্রনাথের চটি রয়েছে শোকেসে

মাপে বড্ডো বড়

৫৭

রক্তাক্ত কৃষক

ঝুঁকে আছে ধানের শীষ

অস্থির মাঠে

৫৮

মহাষ্টমী

গরদ-নোলক গৃহিনী

হাতে ব্ল্যাকবেরি

৫৯

রূপোলি টাকা

সিঁদুর মাখা

বৃষ্টির অপেক্ষায়

৬০

তৃতীয় বউকে নিয়ে

প্রথম ট্রামে

মৌলভি যুবক

৬১

চৈত্রের বাতাস

নিখুঁত চাঞ্চল্য

যুবতীর আঁচলে

৬২

পাকা আম

পাড়তে বারণ করছে

গ্রীষ্মের লুবাতাস

৬৩

সোজা গিয়ে বাঁদিকে

কানা গলির শেষে

প্রেমিকার শ্বশুরবাড়ি

৬৪

মাইকে বলিউডি গান

পোস্টারে মার্কস

বিশ্বকর্মা পুজো

৬৫

ওনার বিড়াল

আমার বাড়ির মাছ

তাঁর আনন্দ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন