রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

নষ্টনটদের কলোনি : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস

 


নষ্টনটদের কলোনি : মলয় রায়চৌধুরীর ম্যাশাপ উপন্যাস

এক

[ ম্যাশাপ কাকে বলে আগে জেনে নিন :For the uninitiated, a ‘mashup’ is when you take several established styles of anything and mix them together to make something completely new and unique. The popularity of the mashup really exploded onto the cultural scene with the advent of postmodern literature. It combines all literary canons and makes fun of it by indirectly attacking the author’s rotting society. Creative artists of all kinds have been doing mashups for quite some time. Ever hear of fusion cuisine? Ate a fusion dish ? Drank fusion liquor ? Heard fusion music ? They’re mashups. A mashup novel or text (also called  “mashed-up text”), is an unauthorised non-canonical (and not even in-universe) work of fiction (often parody) which combines a pre-existing literature text, often work of authors, with another genre,  into a single narrative. Marjorie Kehe of the Christian Science Monitor renders this admixture of classic text as “somewhere between 60 and 85 percent original text, with new plot twists added by contemporary co-authors”. The term appears to have first been coined in a review of Seth Grahame-Smith’s 2009 novel, Pride and Prejudice and Zombies. Initially calling it a ‘parody’ and ‘literary hybrid’, Caroline Kellogg, lead blogger for Jacket Copy, The LA Times‘ book blog, later describes the work as “novel-as-mashup”. As the popularity of the narrative grew and a bidding war commenced over the film rights to the book, the term spread. Subsequent mash-up narratives include Sense and Sensibility and Seamonsters, “Little Women and Werewolves” and Abraham Lincoln, Vampire Hunter (also by Grahame-Smith). তাছাড়া, 1969 সালে, কবি হাওয়ার্ড ডব্লিউ. বার্গারসন এবং জেএ লিন্ডন একটি কাট-আপ কৌশল তৈরি করেন যা শব্দভাণ্ডার ক্লেপ্ট কবিতা নামে পরিচিত , যেখানে একটি বিদ্যমান কবিতার সমস্ত শব্দ নিয়ে তাদের পুনর্বিন্যাস করে, প্রায়শই মাত্রা এবং স্তবকের দৈর্ঘ্য সংরক্ষণ করে একটি কবিতা তৈরি করা হয়। কৌশলটির একটি নজির 1920-এর দশকে একটি দাদাবাদী সমাবেশের সময় ঘটেছিল যেখানে ত্রিস্তান জারা একটি টুপি থেকে এলোমেলোভাবে শব্দ টেনে ঘটনাস্থলে একটি কবিতা তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন । কোলাজ , যা মোটামুটিভাবে পরাবাস্তববাদী আন্দোলনের সাথে সমসাময়িকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল, কখনও কখনও সংবাদপত্র বা ব্রোশারের মতো পাঠ্য অন্তর্ভুক্ত করে। এই ইভেন্টের আগে, টেকনিকটি জারার কবিতায় 391 সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল, দাদা ম্যানিফেস্টো  : দুর্বল প্রেম এবং তিক্ত প্রেমের উপ-শিরোনামে, একটি দাদাইস্ট কবিতা তৈরি করুন 1977 সালে পারফরম্যান্স কবি হেডউইগ গোর্স্কির পাঁচটি কণ্ঠে লেখা একটি নাটক মুদ্রণ প্রকাশের পরিবর্তে শুধুমাত্র অভিনয়ের জন্য কবিতা তৈরির ধারণার উদ্ভব করেছিল। বুবি, মামা শিরোনামের ‘নব পদ্য নাটক’ ! পাবলিক প্লেসে “গেরিলা থিয়েটার” পারফরম্যান্সের জন্য লেখা সংবাদপত্রের কাট-আপগুলির সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল যা অ-পেশাদার অভিনেতাদের একটি দলের জন্য সম্পাদনা এবং কোরিওগ্রাফ করা হয়েছিল। ক্যাথি অ্যাকার , নানা ধরণের ম্যাশাপের ন্যারেটিভ তৈরি করেছিলেন । আমি এখানে যে নাম ব্যবহার করেছি, তা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র । ]

দুই

কলোনি সরকারের বিজ্ঞপ্তি : 

( ‌১ ) দেখুন, আপনাকে যারা চেনে জানে, সেই মুষ্টিমেয় পাঠকেরা এই সমস্ত প্রাসঙ্গিকতার প্রমাণ চায় না, স্যর। বোঝেন তো, বাংলা সাহিত্য-পড়া যুবক-যুবতী প্রতিক্রিয়াশীল খোকা-খুকি সিলেবাস-প্যাঁদানো অভিজ্ঞতায় ভারতচন্দ্র থেকে আরম্ভ করে খুব বেশি দূর এগোতে পারেন নি — বড়োজোর ১ ছটাক বঙ্কিম সাড়ে ৩ সের শরৎ ও ৬০ মন রবীন্দ্রের সঙ্গে পোয়াটাক বিভূতি প্লাস তারাশঙ্করের চাকনা ছিটানো লাবড়া সাপটে এখন নীতিঠাকমার পুণ্য দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করছেন “স্বচ্ছ ভারত”-তুল্য তৎপরতায়। যদিও, আপত্তির মূল কারণ — “মোটা ও মসৃণ তুলতুলে বাহু”-র মধ্যে যে অনাধুনিক আটপৌরে মাধুর্য আছে তা আপনার প্রিয় অথচ “ছোটো বুক” ভাল্লাগে না আপনার। বলিহারি আপনার রুচি। এ ভারি অন্যায়, হ্যাঁ ! ক্রমশ অ্যানোরেক্সিয়া আক্রান্ত বেআক্কেলে ফ্যাশনিস্তার সামনে সত্যি কথা টুসকি মেরে মুখের উপর বললে মুখঝামটা খেতেই হবে সাবেকি মিসোজিনিস্ট হওয়ার অভিযোগে। (আঁচলগোঁজা নারীবাদী জেঠিমারা তেড়ে এলো বলে!)

আরে… মহায়, আলঙ্কারিক আড়ম্বর ছেড়ে সোজা কথার সরল স্বীকারোক্তি যে ডিসফাংশনাল হরমোন-স্রাবী অপরিণত দেহের মেয়েছেলেটার হীনম্মন্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে — এবার থেকে সেটাও খেয়াল রাখবেন মাইরি লিখতে বসার আগে। ব্যঙ্গভূমির ধুমাধাড় সঙোসকিরিতি আপনার ক্ষুধার্ত যুগেও যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। এককথায় যা তা। ঔচিত্যবোধ নিংড়ে যে গেরস্তের পাঁচালি হতে পারে কিন্তু সাহিত্য হতে পারে না — সাহিত্য যে হিতোপদেশের সংকীর্ণ উপত্যকা ছেড়ে সেই ৬০ দশকেই মধ্যবিত্ত ছুঁৎমার্গ ডিঙিয়ে বিশ্বকৃষ্টির বিচিত্র মোহনায় মেশার স্পর্ধা দেখাতে পেরেছিল, অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকতা ভাঙার ঐকান্তিক প্রয়াস একটা ছিল — সে আর ক’জন মনে রেখেছে‽ (গণখোরাকের চিড়বিড়ে পুলকে অস্থির পাঠকবৃন্দ ভাবছে কে এই মলয় মাকড়া? আমি তো ফালগুনী রায়, অরুণেশ ঘোষ, সুবিমল বসাক কাউকে চিনি না; রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবারুণ ভট্টাচার্য পটল তুলেছে তাতে কারোর সামান্যতম ছেঁড়া যায়নি। পেঁয়াজি মারা হচ্ছে, অ্যাঁ, নষ্টনট ?

( ২ ) নষ্টনটদের কলোনিতে তাদেরই পাঠানো হয় যারা অতিবুদ্ধিমান হবার দরুন সরকারের পক্ষে ক্ষতিকর । কেবল পুরুষদের পাঠানো হয় । কলোনি একেবারে নারীবর্জিত । সরকারি আইন অনুযায়ী পালা করে তারা সমকামে লিপ্ত হবার অধিকার পেয়েছে । তাই তাদের কোনো পোশাক দেয়া হয়নি । শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত বসন্ত শরৎ সারা বছর তারা উলঙ্গ থাকে । তাদের খাবার আকাশ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয় । জলের আকাল থাকলেও সেই জল খেতে তারা অভ্যস্ত । কেউ মরে গেলে তার মাংস খাবার অনুষ্ঠান করা হয় । কলোনির অদৃশ্য সরকার তাদের হুকুম দিয়েছে যে তারা সারা বছর অপেক্ষা করবে নানা সমস্যা গড়ে ওঠার জন্য এবং সেগুলো সমাধান করার জন্য আকাশপথে একজন নটবর আবিভূত হবে । 

( ৩ ) এই কলোনিতে যারা আছে তারা কেউ ব্রহ্মার মুখ, বাহু, ঊরু ও পা থেকে জন্মায়নি । তারা ডারউইন সাহেবের কলম থেকে জন্মেছে ।

( ৪ ) নষ্টনট কলোনির নিবাসীরা একে আরেকজনের স্বপ্ন হ্যাক করার ক্ষমতা রাখে । তাই কে কার নাম নিয়ে কী বলছে তা টের পাওয়া কঠিন । তাদের যখন কলোনিতে পাঠানো হয় তখন একটা নাম বাছাই করার সুযোগ দেয়া হয় । কিন্তু কলোনির নিবাসীদের সঙ্গে মেলামেশার দরুন তারা পরস্পরের নাম আর বক্তব্য চুরি করে নিজের বলে চালায় । তারা জানে যে এই পদ্ধতি তাদের অমরত্ব দিয়েছে । 

তিন

দেবদাস : যত্তো সব মাতালের দল । খালাসিটোলা আর বাঙালিটোলার তফাত জানে না ।

গোরা : আমরা পাগলটোলায় জড়ো হয়েছি কেন, কিসের জন্য অপেক্ষা করছি ?

বিনয় : আজকে নটবরের আসবার কথা ।.

মহেন্দ্র : পাগলটোলায় কোনও কাজ হচ্ছে না কেন ?

বিপ্রদাস : পাগলরা কেন আইন প্রণয়ন না করে বসে আছেন? 

মধুসূদন : কারণ নটবর আজকে আসবেন ।.

নলিনাক্ষ : পাগলদের এখন আইন প্রণয়ন করে কী লাভ ?

নক্ষত্র রায় :নটবর একবার এখানে এসে পড়লে তিনিই আইন প্রণয়ন করবেন ।.

গোবিন্দমাণিক্য : আমাদের রাজপুত্তুর এতো ভোরবেলা উঠে পড়লেন কেন ? আর কেনই বা উনি শহরের মাঝখানে সিংহাসনে বসে আছেন ? মাথায় মুকুট পরে, দরবার সাজিয়ে ?.

অমিত রায় : কারণ নটবর আজকে আসবেন ? আর রাজপুত্তুর ওনাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য অপেক্ষা করছেন ।

শশাঙ্ক : তাঁকে দেবার জন্য ওনার হাতে একটা গোটানো কাগজও রয়েছে, নানা খেতাব, গম্ভীর রকমের উপাধির তালিকা ।.

রঞ্জন : আমাদের দুজন খোচর আর কোটনা বাইরে বেরিয়ে এসেছেন কেন ? ওনাদের কারুকাজ করা লাল রঙের পোশাক পরে ?.

মদন : ওরা নীলকান্তমণি-বসানো ব্রেসলেট পরে আছে কেন ? আঙুলে ঝলমলে পান্নার আঙটি ?

অর্জুন : ওদের হাতে ছড়ি রয়েছে কেন, রুপো আর সোনার সুন্দর কাজ করা ?

রহমত : কারণ আজকে নটবর আসছেন, আর ওই ধরণের জিনিসে নটবরের চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।

তারাপদ : আমাদের পাগল-হাউসের বাগ্মীরা রোজকার মতন আসেননি কেন ? বাকতাল্লা দেবার জন্য, যা বলবার তা বলার জন্য ?

নিখিলেশ : কারণ নটবর আজকে আসছেন, আর উনি বাগ্মীতা আর বক্তৃতায় বিরক্ত বোধ করেন। 

চন্দ্রকান্ত : কেন হঠাৎ এই ধন্দ, এই বিভ্রান্তি?

সন্দীপ : রাস্তাগুলো আর চৌমাথা এতো তাড়াতাড়ি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কেন ? সবাই চিন্তায় মশগুল হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে ?

জগমোহন : রাত হতে চলল আর নটবর এখনও এলেন না ।

নীলান্দস্বামী : আর পাগল স্ট্রিট থেকে আমাদের যে লোকজন এসেছে তারা বলছে, নটবর বলে  কিছু নেই ।

আদিত্য : এবার আমাদের কী হবে নটবর না এলে ?

নবকুমার : নটবরই তো ছিলেন সমস্যা-নির্মাণ আর আগুনখেকো  সমাধান ।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । পার্বতী আর চন্দ্রমুখীর তফাত জানে না ।

মাল্যবান : আমাকে একটু আহ্লাদ দাও।

জিতেন দাশগুপ্ত : স্বপ্নের কী জানেন ফ্রয়েড? ভিয়েনা শহরে বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে স্নায়ুরোগীদের স্বপ্ন নিয়ে কোনো স্বপ্নতত্ত্ব বানানো যায় না। চড়কের মাঠে কোনোদিন তো আর যাবেন না ফ্রয়েড সাহেব,স্বপ্নের আর কী বুঝবেন।

কতলু খাঁ : ঐ দেখ ! যেন পদ্মবনে হংসী সমীরণোত্থিত তরঙ্গহিল্লোলে নাচিতেছে; প্রফুল্ল পদ্মমুখী সবে ঘেরিয়া রহিয়াছে। দেখ দেখ, ঐ যে সুন্দরী নীলাম্বরপরিধানা, ঐ যার নীল বাস স্বর্ণতারাবলীতে খচিত, দেখ! ঐ যে দেখিতেছ, সুন্দরী সীমন্তপার্শ্বে হীরকতারা ধারণ করিয়াছে, দেখিয়াছ উহার কি সুন্দর ললাট! প্রশান্ত, প্রশস্ত, পরিষ্কার; এ ললাটে কি বিধাতা বিলাসগৃহ লিখিয়াছিলেন? ঐ যে শ্যামা পুষ্পাভরণা, দেখিয়াছ উহার কেমন পুষ্পাভরণ সাজিয়াছে? নারীদেহ শোভার জন্যই পুষ্প-সৃজন হইয়াছিল। ঐ যে দেখিতেছ সম্পূর্ণ, মৃদুরক্ত, ওষ্ঠাধর যার; যে ওষ্ঠাধর ঈষৎ কুঞ্চিত করিয়া রহিয়াছে, দেখ, উহা সুচিক্কণ নীল বাস ফুটিয়া কেমন বর্ণপ্রভা বাহির হইতেছে; যেন নির্মল নীলাম্বুমধ্যে পূর্ণচন্দ্রালোক দেখা যাইতেছে। এই যে সুন্দরী মরালনিন্দিত গ্রীবাভঙ্গী করিয়া হাসিয়া হাসিয়া কথা কহিতেছে, দেখিয়াছ উহার কেমন কর্ণের কুণ্ডল দুলিতেছে? কে তুমি সুকেশি সুন্দরী? কেন উর:পর্যন্ত কুঞ্চিতালক-রাশি লম্বিত করিয়া দিয়াছ? পদ্মবৃক্ষে কেমন করিয়া কালফণিনী জড়ায়, তাহাই কি দেখাইতেছ? আর, তুমি কে সুন্দরী, যে  সুরা ঢালিতেছ? কে তুমি, যে সকল রাখিয়া তোমার পূর্ণলাবণ্যদেহ আমাপ্রতি  ঘন ঘন সতৃষ্ণ দৃষ্টিপাত করিতেছে? কে তুমি অব্যর্থ কটাক্ষে  হৃদয় ভেদ করিতেছ? ও মধুর কটাক্ষ চিনি; তুমি বিমলা। অত সুরা ঢালিতেছ কেন? ঢাল, ঢাল, আরও ঢাল, বসন মধ্যে ছুরিকা আছে ত? আছে বই কি। তবে অত হাসিতেছ কিরূপে? কে তোমার মুখপানে চাহিতেছে। ও কি? কটাক্ষ! ও কি, আবার কি! ঐ দেখ, সুরাস্বাদপ্রমত্ত যবনকে ক্ষিপ্ত করিলে। এই কৌশলেই বুঝি সকলকে বর্জিত করিয়া আমার প্রেয়সী হইয়া বসিয়াছ? না হবে কেন, যে হাসি, যে অঙ্গভঙ্গী, যে সরস কথারহস্য, যে কটাক্ষ! আবার সরাব!  যে চাহনি চাহিয়া বিমলা হাতে সুরাপাত্র দিতেছে! ও কি ধ্বনি? এ কে গায়? এ কি মানুষের গান, না, সুররমণী গায়? বিমলা গায়িকাদিগের সহিত গায়িতেছে। কি সুর! কি ধ্বনি! কি লয়!  এ কি? মন কোথায় তোমার? কি দেখিতেছ? সমে সমে হাসিয়া কটাক্ষ করিতেছে; ছুরির অধিক তোমার হৃদয়ে বসাইতেছে, তাহাই দেখিতেছ? অমনি কটাক্ষে প্রাণহরণ করে, আবার সঙ্গীতের সন্ধিসম্বন্ধ কটাক্ষ! আরও দেখিয়াছ কটাক্ষের সঙ্গে আবার অল্প মস্তক-দোলন? দেখিয়াছ, সঙ্গে সঙ্গে কেমন কর্ণাভরণ দুলিতেছে? হাঁ। আবার সুরা ঢাল, দে মদ দে, এ কি ! এ কি! বিমলা উঠিয়া নাচিতেছে। কি সুন্দর! কিবা ভঙ্গী! দে মদ! কি অঙ্গ! কি গঠন!  স্থির হও!“

দেবদাস : যত্তো সব মাগিবাজ । ইনডিয়া আর ভারতের তফাত জানে না ।

হেম : যে-সব সাহচর্য তোমাকে ঘিরে থাকে,তারা তোমার চারিত্র্যও কোনো-না কোনো ভাবে কাটে-ছাঁটে; তুমি যে-সমাজে বাস করতে শুরু কর,তার কথ্যভাষার টানটাও তোমার জিভে এসে যায় ।

গফুর : প্রথম যখন আমার খৎনা হলো, তখন আমার বয়স আট বৎসর। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। রোল, একানব্বই। মোট ছাত্র-ছাত্রী বিরানব্বই। পড়াশোনায় ছিলাম ডাব্বা। ভাবলাম, শাস্তি হয়তোবা। একজন ডাক্তার আসলেন স্কুলে। এসে আমার প্যান্ট খুলে বললেন, ‘কই দেখি ছোটপাখি? কিচিরমিচির ডাকি ডাকি..!’ বলে আমার ছোটপাখি বের করে কচ করে কেটে দিলেন অল্প একটু চামড়া। আমি তারস্বরে চিৎকার করে উঠলাম। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে হাসলো। আমি চিৎকার গিলে ফেললাম। বাসায় ফেরার পথে দেখলাম, আমার প্যান্টের জিপারে রক্ত লেগে আছে। রাস্তাঘাটের অনেকেই আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে কুৎসিত কথা বলল। বাসায় ফিরে ছোটপাখি কাটা যাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা সামলে উঠতে সময় লাগল বেশ কিছুদিন। আমি ঘর থেকে বের হতে পারলাম না। হাঁটতে গেলেও লুঙ্গিতে ঘষা খেত আহত পাখি। কিচিরমিচির ডেকে উঠত খুব। ঘাম দিতো শরীর। সেকি যন্ত্রণা! পুরো নয়দিন লাগল যন্ত্রণা দূর হতে। দশদিনের মাথায় আমি পুরোপুরি সুস্থ। ফের খেলতে ছুটলাম, ব্যাগ কাঁধে স্কুল। সব ঠিকঠাক। এক মাস পর রাস্তায় হাঁটছি। হাতে ব্যাট। মাত্রই ক্রিকেট খেলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। ডাক্তার সামনে উপস্থিত। হাতে যন্ত্রপাতি। আমি আশপাশ তাকালাম। আজ কার ছোটপাখি কাটা হবে? ডাক্তার এসে আমার প্যান্ট খুলে আমারই ছোটপাখি বের করে ফের কেটে দিলেন আরেকটুখানি। আমি চিৎকার করে উঠলাম।

‘এক পাখি কয়বার কাটবেন হারামজাদা?’ ‘এক দুই মাস পর পর কাটতে হবে বেটা।’ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আমার বিশ্বাস হলো না। কী বলে এই লোক! দৌড়ে বাড়ি আসলাম। আব্বা লুঙ্গি উঁচু করে বসে বললেন, ‘কী হয়েছে রে তোর?’ ‘আমার ছোটপাখি দুইবার কাটা হয়েছে।’ আব্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমার চারশো একান্নবার।’আব্বার চোখে জল। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম আব্বার বুকে। আব্বা কাঁদো স্বরে বোঝালেন, ‘কিচ্ছু করার নেই বাবা। এটাই আমাদের শরীর। মাসে এক দুইবার করে কাটা যাবে।’ ‘আমাদেরই কেন?’ ‘প্রকৃতি এইভাবেই তৈয়ার করেছে আমাদের।’ ‘তাই বলে মাসের পর মাস?’ ‘তো কী? এখন ডাক্তার কাটতেছে, আরেকটু বড়ো হলে নিজেকেই কাটতে হবে।’ ‘নিজেকে মানে? নিজের পাখি নিজে কী করে কাটবো?’ আমার বয়স এখন একুশ। আজ জোছনা রাত। ছাদে লুঙ্গি খুলে বসে আছি। হাতে কেঁচি। একটু পর যখন চাঁদ উঠবে, সমস্ত ছাদজুড়ে জোছনা থইথই করবে, কুটুস করে আমি আমার ছোটপাখির মাথা কেটে নিবো তখন। তিরানব্বই বারের মতোন। রক্তে ভেসে যাবে ছাদ। অথচ কেউ টের পাবে না। কেউ জানবে না। শহরের ছাদে ছাদে অসংখ্য পাখি কাটা যাবে, রক্তে ভেসে যাবে জোছনা, কারো টু শব্দ থাকবে না। পুরুষের শারীরিক দুঃখ কষ্টগুলো অত্যন্ত গোপন একটা বিষয়। আশপাশের কেউ তার হদিস রাখে না।

দেবদাস :  যত্তো সব  মাতাল । খোসা-ছাড়ানো বাঙালি আর খোসাসুদ্দু বাঙালির তফাত জানে না ।

রাজপুত্র : ওই তো আকাশ থেকে নটবরের ইগলু নামছে, তিনটে প্যারাশুটে বাঁধা।

সওদাগরপুত্র : ওটা ইগলু নয় । মহাকাশযান থেকে কাউকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে । সেই লোকটা ওই ক্যাপসুলে বসে আছে ।

শ্রীকান্ত : আমার মনে হয়, স্বর্গ থেকে মেনকা, উর্বশী, রম্ভা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী, অলম্বুষা, মিশ্রকেশী্, জানপদী,  বিদ্যুৎপর্ণা, অদ্রিকা, পঞ্চচূড়া, সোমা, মরীচি, শুচিকা, অম্বিকা, ক্ষেমা, অসিতা, সুবাহু, সুপ্রিয়া, সুগন্ধা, সুরসা, বিশ্বাচী, পূর্বচিত্তি, প্রম্লোচা, বর্গা, প্রমথিনী, কাম্যা, শারদ্বতী, গুণবরা, ঋতুস্থলা, বুদ্বুদা, সৌরভেয়ী, ইরা, চিত্রাসেনা, সমীচী, চারুনেত্রা, পুঞ্জিকস্থলা, শুচিস্মিতা, বিশালনয়না যে সব অপ্সরারা থাকে তাদের গুমুত আর মাসিকের কাপড় ফেলা হচ্ছে ডাবায় ভরে । দেবরাজ ইন্দ্র প্রায়েই অপ্সরাদের মর্তে পাঠান নেতাদের লোভ দেখিয়ে চুতিয়া বানাবার  জন্য। 

খোকা : যখন আমাকে নেতারা এখানে পাঠাচ্ছিলেন তখনই দেখেছিলুম ওনারা মহাচুতিয়া ।

রাজপুত্র : অপ্সরাদের গুমুত দিয়ে মূর্তি গড়ে আমরা একজন শাসক তৈরি করতে পারি । অবশ্য যদি নটবর এসে পড়েন তাহলে গুয়ের তৈরি শাসকের দরকার নেই ।

অমরনাথ : যে নামছে, তাকে আমরা নটবরের জায়গায় বসাই আর ওকেই অনুরোধ করি আমাদের সমস্যা তৈরি করে তার সমাধান খুঁজে বের করতে ।

শচীন্দ্র : ও কি জানে এটা নষ্টনটদের কলোনি আর আমরা উলঙ্গ, সরকার আমাদের পোশক বরাদ্দের আইন পাশ করেনি, ল্যাংটো করে নষ্টনট কলোনিতে পাঠিয়েছে, সঙ্গে তরতাজা যুবতীদের পাঠায়নি ।

নগেন্দ্র : আমি মোটেই নষ্টনট নই, আমি স্কিৎসোফ্রেনিক ।

মহেন্দ্র : আমিও নষ্টনট নই । আমি মনোরোগে ভুগছি ।

সতীশ : আর সবাই জানে আমি হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হই ।

রমেশ : আগে দেখা যাক যে নামছে সেও নষ্ট কিনা । হয়তো অন্য গ্রহ থেকে ওকে নষ্টনটদের কলোনিতে পাঠানো হয়েছে, আমাদের সঙ্গ দেবার জন্য ।

বেণী ঘোষাল : চল চল চল চল নেমেছে নেমেছে ।

সব্যসাচী : লোকটা নিজে থেকেই বেরোবে না আমরা লাথি মেরে ক্যাপসুলটা খুলবো ?

অপূর্ব : যদি কেউ ভেতরে না থাকে ? যদি অপ্সরাদের গুমুত দিয়ে ভরা থাকে ? 

গফুর : যদি লোকটা পাগল না হয় ?

মহিম : যদি ওর মধ্যে কোনো পাগলি থাকে ?

শশী: পাগলি থাকলে আমি নেবো । সহনশীল হতে হতে এক অত্যাশ্চর্য ঘুণপোকা হবার পর, কুরে খাচ্ছি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মস্তিষ্ক ।

আনন্দ : না আমি নেবো । তোমার তো কুসুম আছে । রোজ শালবনে নিয়ে গিয়ে চোদনকম্মো করতে, মানিক বাঁড়ুজ্জে জানতে পারলে তোমার লিঙ্গ কেটে তোমাকে খাইয়ে দিতো ।

যতীন : পাগলি থাকলে আমরা কি তাকে নটবউ বলব ? 

সদানন্দ : নটবউ হলে তো মুশকিল, আমাদের সমস্যা বেড়ে যাবে । পাগলদের দেশে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিষিদ্ধ । হয়তো তিনি রুপবতী, তিনি গুনবতী, তিনি ভাগ্যবতী। হয়তো তাঁর কপালের সাথে আপনার কপালের একটি মাত্র ঘষায় আপনিও হয়ে উঠতে পারেন বাংলার মুকেশ আম্বানি। হয়তো তিনি বাহিরে গরম, ভিতরে শরম টাইপ মানবী। হয়তো কন্যার হাসি আপনার সালমান খানের  মতন কঠিন হৃদয়ও গলিয়ে ফেলে ভানু বাঁড়ুজ্জের মতো হাসতে হাসাতে শেখাবে। হয়তো কন্যার কথায় আপনি আদানির মতো চানাচুর বেচে তিন দিনে কোটিপতি হওয়ার মতো মোটিভেশান পাবেন। ভাইসব সামনে শীতকাল, যিনি আসছেন সেই কচি এলাচের মতো কোমল হৃদয়ের নারীটির ওপর রহম করেন, বিনিময়ে সে পুরা শীতকাল নোরা ফাতেহির মতো তার শাড়ীর আঁচল কেটে আপনারে ল্যাঙোট পরাবে। তাঁর জন্য একটি শীতকালীন টাটকা প্রেমিক আবশ্যক, তাঁর জন্য একটি জীবন্ত কম্বল জরুরী,পরবর্তীতে তিনি শীতকালীন প্রেমকে গ্রীষ্মকালীন তিন তালাকে রুপান্তর করে দেবেন। অতএব ভাইসব যারা শীতকালীন প্রেমিক হইতে আগ্রহী তারা কন্যারে নক দিয়ে দলে দলে দোজাহানের নেকি হাসিল করুন।

ঠকচাচা : মোর উপর এতনা টিট্‌কারি দিয়া বাত হচ্ছে কেন? মুই তো এ শাদি কর্‌তে বলি —একটা নামজাদা লোকের বেটী না আন্‌লে আদমির কাছে বহুত শরমের বাত, মুই রাতদিন ঠেওরে-ঠেওরে দেখেছি যে, পাগলরা আচ্ছা আদমি —তেনার নামে বাগে গরুতে জল খায় —দাঙ্গা-হাঙ্গামের ওক্তে লেঠেল মেংলে লেঠেল মিল্‌বে —আদালতের বেলকুল আদমি তেনার দন্তের বিচ —আপদ্ পড়্‌লে হাজারো সুরতে মদত্‌ মিলবে। কাঁচড়াপাড়ার রামহরি বাবু সেকন্ত আদ্‌মি —ঘেসাট ঘোসাট করে প্যাট-টালে —তেনার সাথে খেসি কামে কি ফায়দা? 

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । লাবিয়া ম্যাহোরা আর লাবিয়া মাইনরার তফাত না জেনেই প্রেম করতে যায় ।

বিপিন : নটবউ নয়, যারা ক্যাপসুলে বসে নামে তাদের বলে অ্যস্ট্রোনট । 

সত্যচরণ : ধ্যুৎ, পুঁজিবাদীরা বলে অ্যাস্ট্রোনট, আমরা বলি কসমোনট ।

খোকা : আমি তো নষ্টনট হবার আগে শুনেছিলুম ওদের বলে অন্তরীক্ষযাত্রী ।

অপু : না, না, মহাকাশচারী ।

হরিহর : তোরা জানিসনে । ওদের বলে নভচর । নভচর মানেই নটবর। নব ঘোরা দিকি, বেরিয়ে আসুক লোকটা । একটা ছোট্ট নব, সারাবছর যার কোনো ভূমিকা বা গুরুত্বই নেই, এই সময়ে তাকে হিমসিম খেতে হয়। কান মুচড়ে, কান মুচড়ে তাকে একটাই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে–টু বি অর নট টু বি? হ্যাঁ দ্যাট ইজ দ্য প্রশ্ন বটে ! ফ্যান চলবে কি চলবে না? চললেও একে না দুয়ে নাকি তিনে? মিনমিন করে মিন যারা, তারা বলবে, বন্ধই থাক। একে করোনা, তায় হিম। সমস্বরে ওদিক থেকে প্রতিবাদ আসবে। তা কি হয়? ফ্যান চলুক। তালে কততে? আবার কান মুচড়োবে তার.. গলদঘর্ম হয়ে সে গান ধরবে–মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে, এদিন ভরা সাঁঝে..যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ঘোরালে নবখানি ।

নিখিলেশ : আমরা সবাই মার্কামারা নষ্টনট । 

সন্দীপ : ওঙ্কারের মতো ছড়িয়ে যায় কে দাবানল দাবানল খেলে ! প্যালেট জুড়ে অদ্ভুত আঁচড়ে বিধবা রঙের চাঁদ আঁকতে গেলে মর্গের শীতল বায়ু মনে পড়ে। মনে পড়ে কন্ঠনালীতে বসে যাওয়া দাগ এক করুণ বিলাপ, রুদ্ধ চিৎকার, কালচে ক্ষত। জাহাজের সারেং গুছিয়ে নিচ্ছে নোঙরের দড়ি, সেও এক দৃশ্যবাজিকর। কুয়াশা ভেজা আধো আলোতে নগ্ন পথ হেঁটে যেতে যেতে মুছে ফেলতে চাই স্পর্শের সমস্ত আকুলতা। জোছনাদগ্ধ তৃষ্ণাতুর ভেজা চোখ গলে গলে পড়া পীচ জানে ঠিক কী কী অপমানে অট্টহাসিও ক্ষয়ে যায়। মন খারাপের এমন রাতে পৃথিবীর দীর্ঘতম শ্বাস ফেলে আকাশে তাকালে হলুদ হয় চোখ। মৃত্যু ভয় করে না বলে চিলেকোঠা সাজে ফাঁসের দড়িতে। ছেলেবেলার পানকৌড়ির ডুব মনে পড়ে খুব। বিষণ্ণ প্রাণ মুক্তি না পেলে উচ্ছলের ভাব-সম্প্রসারণ হয় না, তাই হারিয়ে যাবার নাম রাখা হোক- একটি নিখোঁজ সংবাদ। এই যে রোদ্দুর নেই, ছায়া নেই, বৃষ্টি নেই। এতোখানি আয়ু নিয়ে কী করে নষ্টনটের দল ?

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । স্বদেশ আর পায়ুদেশের তফাত জানে না ।

চার

ক্যাপসুল মাটিতে নামার পর নষ্টনট কলোনির ল্যাংটো ভাবুকরা লাথি মেরে খুলে দেখতে পায় ভেতরে একজন বসে আছেন, কথা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না । লোকটার মুখের কাছে কান নিয়ে গিয়ে খোকা চেঁচিয়ে উঠলো, ও বলছে ওর নাম রুক-রুককে-করো। 

হরিহর : ওকে কাতুকুতু দে, তাহলে মুখ দিয়ে স্পষ্ট কথা বেরোবে, পুরো নাম বলবে। 

ঠকচাচা : মুই বলি এসব ফেল্‌ত বাতের দরকার কি? ত্যাল খেড়ের বাতেতে কি মোদের প্যাট ভর্‌বে? 

খোকা : বলেছে, বলেছে । ওর নাম রুক্মিণীকুমার ।

নবকুমার : হারুকি মুরাকামি কী লিখছেন, মিলান কুন্দেরা কী লিখেছেন, সেসব দিয়ে আমাদের  বিচার হওয়া উচিত নয়। ওঁরা কোনোকালে মঙ্গলকাব্য পড়েননি, চরিতামৃত পড়েননি, কথামৃত পড়েননি, বিষাদসিন্ধু পড়েননি। ওঁদের চিন্তার জাত  আমাদের  জাতের সঙ্গে মিলতেই পারে না। যদি মিলে যায়, আমাদের কোনো নষ্টনটের নষ্টামির সঙ্গে যদি দেখা যায় ওরহান পামুকের বেশ মিল আছে, মুরাকামির লেখা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর লেখা পড়ে, বুঝতে হবে সেটা ম্লেচ্ছ নষ্টামি। ম্লেচ্ছ নষ্টামি আন্তর্জাতিক নষ্টামি নয়। আন্তর্জাতিক নষ্টামি তখন হবে, যখন আমাদের কোনো নষ্টনট বিশ্বনষ্টামিতে এমন কিছু যোগ করতে পারবেন, যার ফলে পৃথিবী নড়েচড়ে উঠবে। সেটা অনুকরণ, অনুসরণ বা নকলনবিসির দ্বারা হওয়ার নয়। যে নষ্টনট শিবপুরাণ পড়েননি, তাঁকে আমি সন্দেহ করি। ‘কাফকা অন দ্য শোর’ না পড়েও নষ্টামি করা যায়, কিন্তু ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ যে পড়েনি, সে বাঙালি নষ্টনটই নয়, আন্তর্জাতিক নষ্টামি তো দূরের কথা।।

গোবিন্দমাণিক্য : নষ্টনটেরা কতদিন নষ্টনটদের বিরুদ্ধে ছড়ি ঘোরাতে পারে? আমার চোখে দেখা 

কত কঠোর নষ্টনট শিক্ষক রিটায়ার্ড হলেন, কত দক্ষ নষ্টনট প্রশাসক বদলি হলেন, কত বড় বড় নষ্টনট নেতা মন্ত্রী চলে গেলেন, দেশবরেণ্য কত নষ্টনট …আজ আর কেউ বেঁচে নেই ! তারা কত দাপুটে ছিলেন; কাজেই, কি হয় এতসব – সাময়িক ভয়াবহ ভনিতা কঠোরতা কান্ডকারখানা করে? এতকিছু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরেও নষ্টনট কলোনির উন্নতি সেভাবে হলনা ! তুমি তবে কিএমন মারাক্কু মোরব্বা খাওয়াবে? নষ্টনটরা কতদিন নষ্টামির ছড়ি ঘোরাতে পারে? নষ্টনটরা নিজেও সেটা বুঝতে পারেনা; তাই ক্ষমতার মদগর্বে, আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা ভাবতে ভাবতে বড় বেশি সরভাজা খেয়ে ফেলে।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । সরভাজা আর ডিমভাজার তফাত জানে না ।

পাঁচ

রুক্মিনীকুমার বেরিয়ে আসেন । বকরবকর শুরু করে । মহাকাশে মুখ বন্ধ রাখতে হয়েছিল বলে কতো কথা জমে আছে পাকস্হলিতে ।

রুক্মিণীকুমার : আমি কতকগুলো জিনিস বিশ্বাস করি । আপনি হয়তো অদ্ভুত মনে করবেন । আমি বুঝলেন বংশ মর্যাদায় বিশ্বাস করি । আপার ক্লাসে বিশ্বাস করি । আপার ক্লাসের মনটা, তার সেনসিবিলিটি আপার ক্লাসের । আপার ক্লাস বলতে ভারতীয় আপার ক্লাস ।  হঠাৎ কতোগুলো আইডেনটিটি অফ ওয়র্ড উপনিষদ থেকে বললুম সেরকম মিস্টিসিজম হয় না — তার অত্যন্ত একটা, ফলে তার সৌন্দর্যবোধ একটা থাকে যাতে করে টপটপ করে — আজকে ধরুন গ্রিস মরে গেছে, কী করে হল যে ভারতীয় দুম করে উঠে গেল । 

খোকা : এখেনে সবাই ডিক্লাস নটবর সাহেব, মুকখুর ডিম, সবাই সাবঅলটার্নদের চেয়েও তলাকার, দেখছেন তো গায়ে দেবার পৈতেটুকুও নেই ।

সত্যচরণ : কবি লিখেছিলেন, করুণ শঙ্খের মতো স্তন, দুধে আর্দ্র আর কলোনির সরকার লিখলেন: উড্ডীয়মান মনিময়তা ! স্তন এখানে যেন ম্যাক্স আর্নস্তের সবুজ জীবাশ্ম নিসর্গের গুহ্য চোখ, মাইয়ের বোঁটায় যার এমারেলড চাহনি। যদিও এই রূপকল্পটি  সুকুমারীদির স্তনের নয় পার্সি স্টাইলে পরা শাড়ির ঘোমটার পিন অর্থাৎ চমৎকার পান্নার হিরোনডেলের বর্ণনায় দিয়েছেন যার শুধু ডানাদুটি চুনীর, ইহা এক বিশাল ক্লাসিসিজম ! আছে আছে আছে আছে, গল্পটা দশবার পোড়ো।ও কেউ আর লিখতে পারবে না কোনো দিন । ভালো জিনিসকে মডেল করলে জিনিস ভালো হয়… এখানে আমি বিশেষত রাত ভ’রে বৃষ্টি-র অনুষঙ্গে কবিবর বুবু’র এই পদটিকে উজ্জ্বল স্তনের ইমেজ-ব্যঞ্জনা হিসেবে কাজে লাগালাম; কবিবর বুব একটা পাতা শুধু রতিসুখ আপ্লুত ক্লান্ত নিদ্রাতুর মালতীর স্তনের জমকালো পরাবাস্তব নির্জন ভয়াল বিনির্মাণে খরচ করেছেন, ফাদার দ্যতিয়েনের বাংলা গদ্যপরম্পরা দুইতে সংকলিত হওয়ার মতো ইটসেলফ পৃষ্ঠাটিই একটি মাস্টারপিস…

গোবিন্দমাণিক্য : খরচ করলেও, ওসব বেচেবুচে টাকাকড়িও কম করেননি ।

সওদাগরপুত্র : আপনি শেষ কবে স্তন ছুঁয়েছেন ? মনে হয় মায়ের স্তন ছাড়া অন্য কারোর স্তন ছোঁয়া হয়নি জীবনে ।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । স্তন আর মাইয়ের তফাত জানে না ।

রুক্মিণীকুমার : আমি কৌশিক সরকারের ম্যাশাপ পেইনটিঙে দেখেছি, বুকের একদিকে মাই আর অন্য দিকে স্তন ।

চন্দ্রকান্ত : পর্দায় থাকতে হবে, তীব্র গরমে হাত-মোজা, পা-মোজা, মাথায় বাঁধাকপি বেঁধে বেরুতে হবে বাইরে তাও অতিশয় ইমার্জেন্সি না হলে না, নিনজা টারটেলস এর মতন চক্ষু দেখা যাবে কি যাবে না কারণ চক্ষে আবার অপ্সরাদের ব্যাপক তৃষ্ণা ও কাম ঝরঝর করে ঝরে পড়ে, সেইটায় আবার তাগো ঝিরঝিরা এন্টেনায় নেটওয়ার্ক আইসা পড়ে। পড়াশোনা করানোর দরকার নেই ঘরে থাকুক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষ টিচার আছে, সহপাঠী আছে। যদিও পড়াশোনা করেই ফেলেন বিয়ের পর সব বন্ধ। ডাক্তারের ও চাকরির দরকার নেই, পুং ডাক্তার আছে ওখানে। কোন পুং কে রক্ত দেয়া যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি (কারণ এরা তেঁতুঁল)। এরাই আবার এইরকম ও চায়। এখন তাইলে কি করতে হবে? ডেলিভারির আগে মঙ্গল বরাবর দরখাস্ত করবেন জনাব, টুপ করে ঝরে পড়বে ডাক্তার, মহিলা এলিয়েনেরা। আর আপনি সারাজীবন এইরকম খাবি খাওয়া খুব কিউট এবং সমানতালে কনফিউজড ক্যারেক্টার নিয়া দৌড়াইবেন। আপনারে ভালুবাসা । ডাক্তারের চাইতে যখন তার লিঙ্গ(খুবই ফেয়ার অর্থে) বড় হয়ে যায় আরকি, হেহে…ওই যে সিকিৎসার সময়! বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিঁচিঁইঁইঁইঁ…

শ্রীকান্ত : নিশ্বাস ফেলিয়া পাল্‌কিতে উঠিয়া বসিলাম। দেখিলাম, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না—ইহা দূরেও ঠেলিয়া ফেলে। ছোট-খাটো প্রেমের সাধ্যও ছিল না—এই সুখৈশ্বর্য্য-পরিপূর্ণ স্নেহ-স্বর্গ হইতে মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য আমাকে আজ একপদও নড়াইতে পারিত। বাহকেরা পাল্‌কি লইয়া ষ্টেশন-অভিমুখে দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিলাম, লক্ষ্মী, দুঃখ করিয়ো না ভাই, এ ভালই হইল যে, আমি চলিলাম। তোমার ঋণ ইহ-জীবনে শোধ করিবার শক্তি আমার নাই। কিন্তু যে জীবন তুমি দান করিলে, সে জীবনের অপব্যবহার করিয়া আর না তোমার অপমান করি—দূরে থাকিলেও এ সঙ্কল্প আমি চিরদিন অক্ষুণ্ণ রাখিব। 

রুক্মিণীকুমার:  স্তন চোখের থেকেও রহস্যময়, শিল্পী না হলে মর্ম বুঝবে না, ওটা বরিশালের কবির সাবজেকট, স্তনের সফটনেস: স্তনের ভায়োলেন্স: স্তনের কটাক্ষ, পেন্সিলে ছাড়া আঁকা যায় না

স্তনের মনুমেন্টালিটি, ল্যাবিরিন্থ, স্তনের অভ্যুত্থান, স্তব্ধতা ভার্টিগো।

বেণী ঘোষাল : আপনি বোধহয় আফ্রিকার স্তনে টোকে মেরে টনটন শব্দ শোনেননি । এক্কেবারে মেটালিক সাউণ্ড । আপনাকে নটবরের মান্যতা দেয়া বেশ কঠিন । এই নষ্টনট কলোনির পাগলবৃন্দ, আপনারা সমস্যা তৈরি করুন, দেখুন, যদি উনি সমাধান বের করতে পারেন । এর চেয়ে তো অপ্সরাদের গুয়ের ডাবা পড়লে আনন্দ হতো । যাদের লিঙ্গোথ্থানের সমস্যা তার সুরাহা হতো।

গোরা : নষ্টনটদের অনেকের লিঙ্গের দোষ ছিল বলে এই কলোনিতে পাঠানো হয়েছে । কেননা লিঙ্গ-যোনির মিল হয়নি । ফলে ডিভোর্স – যে কোন কারণেই হতে পারে। কিন্তু যে কারণেই হোক, ডিভোর্স লেটারে স্পস্টভাবে প্রতিটায় উল্লেখ থাকে মেয়েটা চরিত্রহীনা। এটা যদি ছেলে নাও দিতে চায় তার ফ্যামিলি এবং লইয়ার ফোর্স করে দেয়ায়। কারণ তাতে নাকি ডিভোর্সের উপযুক্ততা শক্তপোক্ত হয়। আপনি দীর্ঘ সময় প্রেম করে বিয়ে করলেন, বিয়ের পর টিকলো না। হতেই পারে। আপনি বিয়ে করলেন, মোটামুটি পরিচিত, মিলছে না। হতেই পারে। আপনার এক বা দুইটা সন্তান আছে, তবুও সম্ভব হচ্ছে না। হতেই পারে। বা মনে করেন প্রেমের এক পর্যায়ে দুইজন সিদ্ধান্ত নিলো ঠিক আছে আমরা আমরা করে ফেলি পরে ফ্যামিলিকে রাজী করানো যাবে। ফ্যামিলি রাজী হচ্ছে না, হলো না। ফ্যামিলির বাইরে বিয়ে করার সাহস আছে, কিন্তু ফ্যামিলি জানার পর সংসার করার সাহস নেই। সো, ডিভোর্স। মানলাম এটাও হতেই পারে। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় যাবার সাথে সাথে একজন উকিল কী পরিমান বাজে কথা বলবে, একমাত্র এটা প্রমাণের জন্য যে, শুধুমাত্র চরিত্রের দোষে এটা ডিভোর্সে যাচ্ছে।  চরিত্র বলতে আমরা  বুঝি, এই মেয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা পুরুষের সঙ্গে শোয়। সিরিয়াসলি, এটাই চরিত্রের একমাত্র ডেফিনিশন । আর বাকি যে স্বামী তিনি ফুলেল চরিত্রের অধিকারী। বা তার ডিভোর্স পেপারে এটা থাকার বাধ্যকতা নেই। একটা মেয়ে চেষ্টা করে প্রচুর, টেকাতে। অনেক ছেলেও করে৷  জীবনভর বিতৃষ্ণা, মারামারি, কাটাকাটি, ভেতরে মরে যাবার চাইতে ডিভোর্স ভালো। কিন্তু এই ডিভোর্সের সময় মেয়েদের শারীরিক অত্যাচারের প্রমাণ দিতে হয়, না হলে প্রমাণ হয় না সে নির্যাতিত। কোন মেয়েই পারতপক্ষে বাইরে বলে না আঘাতের দাগটা তার স্বামীর মার। সে বলে কোনভাবে আঘাত পেয়েছে। কেন বলে এমন, কারণ সে মানে ওটা তার পরিবার, পরিবারের সম্মান। সে চায় একদিন ঠিক হয়ে যাবে। সে সহ্য করে। কিন্তু ওই পরিবারে সে শুধুমাত্র পরের ঘরের। আপন নয়। সবাই এমন তাও না, আমি ম্যাক্সিমামের কথা বলছি। কেউ চায়না এই প্রমাণ করে বা বলে তার সিচুয়েশনটুকু পরিবারে আরো খারাপ পর্যায়ে যাক। যে পরিবারের সম্মান, স্বামীর সম্মান সে ভেবে এগুলো চেপে যায়, সে পরিবার তাকে কতটুকু ভাবে? এখন সবাই কি প্রমাণ রেখে মারে? সেখানে মেয়ের পরিবারের কেউ উপস্থিত থাকলে মারবে নাকি উপস্থিত করে মারবে। মেয়েটা কি ডাক্তারের কাছে যাবার সুযোগ পাবে? বা গেলেও ওটাই বলবে স্বামী দ্বারা নির্যাতিত? তো এই ব্যাপারগুলো কিভাবে প্রমাণিত হয়? কেন সাক্ষী বা ডাক্তারি সার্টিফিকেট এতো জরুরি। কেউই সেই পর্যায়ে না গেলে অন্তত কোর্ট পর্যন্ত যায় না, অথচ ওখানে একমাত্র মেয়ে ও তার ফ্যামিলি তীর্যক দৃষ্টি, সামাজিক ব্যাভিচার ও অযাচিত অন্যায় অপমানের শিকার হন। আমাদের ল ইয়ারদের কি মনে হয়না তারা অন্যায় করছেন? আমাদের সমাজে যারা ভালো অবস্থানে আছে, তারা পারেন না এইরকম আইন গুলো সংশোধন এর জন্য দুটো কথা বলতে? বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম পরিবারে আমাদের কন্যা, বোন, সুসম্পর্কের আত্মীয় স্বজন এর এই ঘটনা আছে। আমরা মেনে নিয়ে চুপ করে থাকি। একবার ভাবিনা এই একটা কারণে ওই মেয়েটার ভবিষ্যৎ কোথায় চলে যাচ্ছে। একটা পুরুষ এভাবে ভোগে কম।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । ডিভোর্স আর ভেন্ন হবার তফাত জানে না ।

গফুর : নটবর সাহেব! আমি যে বিরাট কাজ্জাব হয়ে যাচ্ছি; আমি আমার ভেতর নাফাকির সমস্ত আলামত দেখতে পাচ্ছি । নটবর সাহেব  আমি বুঝতে পারছি, আমি চিনতে পারছি, মানুষের নানারঙি হিজাবের বাতাস । নটবর সাহেব, আমি যে পাপে ঢুকেই যাচ্ছি, ডুবেই যাচ্ছি, আমাকে উদ্ধারের কোনো পথ আমি পাচ্ছি না যে! নটবর সাহেব ! আপনার  মিঠা-চরিত্র আমি পড়ি, আমি মুক্তি পাই না, আমি নাজাত পাই না । নটবর সাহেব ! আমার সামনে আন্ধারের আয়না কালো আরও কালো হয়ে আছে । আমি ভিতরজ্বলনে দগ্ধ, ভিতরআগুনগ্রস্ত, ভিতরের তলানি আমায় খেয়ে ফেলেছে সবটুকু । নটবর সাহেব,  আমি  দারুণ পীড়িত, রুগ্‌ণ, আমি কী করে আপনাকে বলি! নটবর সাহেব, নষ্টনটদের কলোনিতে আমি তো ডুবে আছি অবিশ্বাসিদের জড়াজড়ি খেলায় ।কী করব বলুন, নষ্টনটেরা যে  পিছনের দিকে গতিশীল । যখন  কেটে নিয়েছিলেন খোসা, আমি তখন বোদলেয়ার র‌্যাঁবো ভেরলেন অতোনা আতো আওড়াই; আমার প্রিয় পরিজন বলে কেউ নাই । নটবর সাহেব ! আপনার সুশীতল হাত আমার মাথার উপর নাই, আমি অধঃপতিত হয়ে গেছি নটবর সাহেব। আমার দেহে দেখা দিয়েছে ছত্রাক, মানে মাশরুম, কিন্তু তা বিক্রি করতে পারছি না, অথচ আমার গালে-মুখে দুধসাদা মুথাঘাস গজিয়েছে, হে নটবর সাহেব, আমি পীড়িত, জ্বলে যাচ্ছে পুরো দেহ, আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি, আমি দপ করে নিভে যাই,আমি জ্বলে উঠি,  আমার মুক্তি আসে না, আমি কবিতা লিখি, জোয়ান বয়সে ঢুকে আমি ঘুরি বিশ্বসাহিত্যের জানলায়, বাতাসে, আমি শব্দকে পাই ওকতাভিও পাজের কথায়, রক্তের আগে, চিন্তারও আগে, নটবর সাহেব, একদিন সালমান রুশডির পাঠানো  প্রিয় দূত জিবরিল বলেছিল চল মাগিবাজি করি, সে কথা যখন আমি শুনি জান্নাতের পথভ্রষ্ট কোনো মানুষের মুখে,কী করে আমি তাকে অগ্রাহ্য করি? যখন ওপথের যাত্রি নষ্টনটরা দিতে পারেন না কোনো সন্তোষ-বাণী  নটবর সাহেব ! গঙ্গাজলে ধোয়া ছিল আপনার হৃদয়,আপনাকে বানানো হয়েছিল, যাতে আপনি কমলকুমার মজুমদার অমিয়ভূষণ মজুমদার বিনয় মজুমদার আওড়ান, হে নটবর, আপনার মতো সুষম কোনো মানুষ-অস্তিত্ব এ জগত দেখেনি,সংসার দেখেনি কোনো এমন অবিশ্বাস্য নট । আপনি বুঝতেন হৃদয়ের অন্ধারের কথা, আপনি কাঁদতেন মাটিচাপা কুসুমকন্যাদের কথা মনে করে, আপনি রক্ত ঝরিয়েছেন আল মাহমুদ পড়ে, আপনার ছিল না কোনো অভিযোগ মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি, নীটশের প্রতি তো আপনি ছিলেন—দেরিদার মুখে, তার হাবিব, হে নটবর, আর যারা নষ্টনট—যেমন জীবনানন্দ : এরা মানুষের প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা খণ্ডন করতে-করতে চঞ্চল থেকেছেন কোনো এক অসাধারণ কারণে কারুবাসনায়, আমি জানি, হে নটবর! আমার মতো না থেকেও তারা আমার মতোই ছিলেন, ছিলেন অস্থিতি আর অস্থিরতার ঝড়ের পতাকা, এরা ক্রমাগত লাফিয়েছেন, আটকে গেছেন, আবার চিৎকার করেছেন, নীরব হয়ে গেছেন, এদের কারো কেটে নেয়া হয়েছে জিভ আর কারো লিঙ্গ আর পাঠানো হয়েছে এই কলোনিতে ! আমি তো তাদের তুলনায় নস্য, ওই মাপকাঠিতে তো আমাকে মাপা যায় না; আমার ভাষা একটাই, আমার অক্ষর অক্ষমতা শুধু এক ভাষাতেই; আমার দৌড়ঝাপ-আর্তনাদ সীমাবদ্ধ ভাষার পরিসীমাতেই । আমি শুধু আপনার উলঙ্গ শরীর দেখতে চেয়েছি, তাও স্বপ্নে, এখন আপনাকে স্বচক্ষে দেখছি, আপনার কপচানো শব্দগুলোর অর্থানুধাবন করি, আমার দু চোখ থেকে বেরিয়ে আসে পিরিতির গরম ধাতুরস; আর আপনার নাম-স্মরণে,  এক লাল মিনারের নিচের জ্বলনে আমার চামড়া পুড়ে-পুড়ে যায়, দেহের ক্ষত থেকে ঝরে পড়তে থাকে অসহ্য সোনারুপোর গলন, হে নটবর, আমি নষ্টনটোত্তম, মিথ্যুক ও অপরাধী, আমি মুখোশধারি, হিপোক্রেট, জায়গাবিশেষে মাস্তান, কামাসক্ত, আপনাকে আমার কী বলার থাকতে পারে! আমার ভিতর-জ্বলন, আমার  কান্না; আমার আশৈশব ল্যাংটো থাকার অভিশাপ;  হায়, নটবর ! আমি শান্তি খুজছি…নটবর,  আমি শক্তি খুজছি…নটবর,  আমি শান্তি খুজছি…

রুক্মিণীকুমার : নাটক কোরো না ; অধঃপতন থেকে ওঠা যায় না । দ্যাখো, সিনেমা বানাতে পারবে না তাই ওসব রয়েসয়ে দেখবে অনেক ভালো ছবি অনেক আছে সব দেখার দরকার নেই ওসব বাজে প্রলোভন। বই পড়ো, তাহলে ভাবতে পারবে, ভাবতে খরচা লাগে না। সিনেমা একটা আউটমোডেড মিডিয়াম যত দিন যাবে তত খারাপ হবে; এটা করপোরেট দুনিয়া রে ভাই পুরো জালি লাইন ওখানে সারভাইভ করতে প্যাখম বেরিয়ে যাবে — নির্জনতা নেই। ভাবো, ভাবো, ভাবার কোনো বিকল্প হয় না। নষ্টামি জিনিসটা, বিজ্ঞানের চেয়েও বড় বিদ্যা, তুখোড় রিগরাস সায়েন্স! ওসব কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে-টাসে বরিশালের কবির আঁতলামি ভুলে যাও; আরে, হৃদয় খুঁড়েই তো আসল মজা মহেঞ্জোদারো — আর্কিওলজি অব নলেজ, হৃদয় না খুঁড়লে প্রুস্তিয়ান প্রজেক্টে ঢুকবে কী করে! বেদনা ছাড়া কিছু নেই; বুদ্ধ এটা জানতে পেরেছিলেন তাই বলেছিলেন জীবন দুঃখময় — সো মাচ দা বেটার! দুঃখ আমার উইজডম। দেরিদা বলেন আই মোর্ন দেয়ারফোর আই অ্যাম: আমি শোকগ্রস্ত, শোকেই আমি সুন্দর ! ধন্যবাদ , মানে একর্ডিং টু হাইডেগার আই উইল থিঙ্ক অব ইউ! নষ্টামি তোমাকে কোনো কিছু ভুলতে দেবে না, মন সব কিছু ছুঁয়ে যাবে, ছুঁয়ে থাকবে, চিরকাল ভাবতে থাকো…

নিখিলেশ : মহাকাশে সিনেমা হলও আছে ? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। ফেলিনির ছবিতে যেমন মার্সেলো মাস্ত্রেওয়ানি, কুরোসাওয়ার সিনেমায় যেমন তোশিরো মিফুনো, চ্যাপলিনের ছবিতে যেমন স্বয়ং চ্যাপলিন, কীটনের সিনেমায় স্বয়ং বাস্টার কীটন, হিচককের সিনেমায় কেরি গ্রান্ট, ঠিক তেমনই সত্যজিতের সৌমিত্র। এ নিয়ে অনেকের অনেক বক্রোক্তি থাকতে পারে, কিন্তু কিছু করার নেই। উত্তমকুমার আর সৌমিত্রর একটা তুলনা প্রায় ৫০ বছর চলছে, কিন্তু সেটারও কোনো ভিত্তি আমি দেখি না। উত্তমের সঙ্গে তুলনা করতে হলে দিলীপ কুমারের করা যায়, যে দিলীপ কুমার ভারতের প্রথম মেথড এক্টর, কিন্তু শেষ বিচারে হয়ত উত্তমকুমার তাঁর চেয়ে বড় অভিনেতা। উত্তমের সঙ্গে তুলনা রাজ কাপুর বা শিবাজি গণেশনের হয় স্টার হিসাবে। কিন্তু সৌমিত্রের জিনিয়াসের সঙ্গে উত্তমের তুলনা হয় না। এ দেশে সৌমিত্রর চেয়ে দক্ষ অভিনেতা একজনও জন্মায়নি। এ দেশ বলতে আমি ভারত বোঝালাম, পশ্চিমবঙ্গ নয়। দক্ষতা দিয়েই শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হয় না। শেষ কথা বলেন জীবন দেবতা। যদি অমিতাভ বচ্চন, বলরাজ সাহানি, মোতিলাল, অশোক কুমার, ছবি বিশ্বাস, নাসিরুদ্দিন, কমল হসন, মোহনলাল, সঞ্জীব কুমার আর বিকাশ রায়ের সঙ্গে সৌমিত্রের তুলনা করতে চান, সেটা একেকটা জ্যোতিষ্কের সঙ্গে আরেকটার তুলনার ব্যাপার হয়ে যাবে। বিচার করবেন জীবন দেবতা।

রুক্মিণীকুমার : না, টাকাকড়ির অভাবে ব্লু ফিল্মও করে উঠতে পারিনি । কৌশিক সরকার অবশ্য বলেছেন যে টাকা যোগাড় করে দেবেন ।

গোবিন্দমাণিক্য : কিছু মানুষ থাকে তারা কোনকিছুতেই সন্তুষ্ট না, তুমি যদি পাঁচ টাকার আইসক্রিম কিনে খাও এবং তুষ্ট হও, তারা পাঁচ হাজার টাকার কুলফি মালাই খেলেও বলবে, ‘ধুর, এটা কিছুই হয়নি, এটা ভালো না, এর থেকে ওটা আরো ভালো।’ এটা না ওটা, ওটা না এটা, এই এটা সেটা করতে করতে, এটা ওটা সেটা করতে গিয়ে এদের ভেতর একটা দ্বিধার সমুদ্র গড়ে ওঠে, আর সেখানে তুমি যদি দ্বন্দ্বের সুরে বেফাঁস কিছু বলো, এমন করে তোমাকে চিরে দেবে, দেবে খোঁটা

তোমার অন্নপ্রাশনের ভাত মুখে উঠে আসবে পুরোটা। তাই এইসব মহান মানুষের থেকে, নিজেকে অন্ততঃ দশ হাত দূরে রাখো, এককথায় এদের এড়িয়ে চলাই ভালো। কথা কম বলো এদের সাথে

এরা মানে এক ভিন্ন প্রজাতির উট কিংবা ঘোড়া, উট যেমন লম্বা গলা দিয়ে উঁচিয়ে সবকিছু দ্যাখে

কিংবা ঘোড়া তার আড়াই চালে কিস্তি মাৎ করতে চায়, এরাও অনেকটা সেরকম। এদের মন পেতে হলে, কোনো তপস্যাই তার জন্য যথেষ্ট নয়, জাস্ট তুমি মৃত্যুর কথা ভেবে নিতে পারো, অথবা সরাসরি মরে যাও, যদিও মরে গেলেও, তুমি এদের মন কিছুতেই জয় করতে পারবে না, এরা এমনই এক ভিন্ন প্রজাতির, অদ্ভুত প্রকৃতির কিছু একটা।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । কোথায় দিলীপ কুমার আর কোথায় শাহরুখ খান ।

ছয়

ঠকচাচা : হা—হা—হা—হা—মকদ্দমা করা কেতাবী লোকের কাম নয়—তেনারা একটা ধাব্‌কাতেই পেলিয়ে যায়। এনার বাত মাফিক কাম করলে মোদের মেটির ভিতর জল্‌দি যেতে হবে—কেয়া খুব! 

গদাধর : খালাসিটোলায় গিয়ে দেখুন । গোকুলের ষাঁড়ের ন্যায় বেড়ায়— যাহা মনে যায় তাই করে— কাহারো কথা শুনে না— কাহাকেও মানে না। হয় তাস—নয় পাশা— নয় ঘুড়ি—পায়রা—নয় বুলবুল, একটা না একটা লইয়া সর্ব্বদা আমোদেই আছে—খাবার অবকাশ নাই—শোবার অবকাশ নাই—বাটীর ভিতর যাইবার জন্য চাকর ডাকিতে আসিলে, অমনি বলে—যা বেটা যা, আমরা যাব না। দাসী আসিয়া বলে, অগো মা-ঠাকুরানী যে শুতে পান্ না—তাহাকেও বলে—দূর হ হারামজাদি! দাসী মধ্যে মধ্যে বলে, আ মরি, কী মিষ্ট কথাই শিখেছ! ক্রমে ক্রমে পাড়ার যত হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া—উনপাঁজুরে—বরাখুরে ছোঁড়ারা জুটিতে আরম্ভ হইল। দিবারাত্রি হট্রগোল—বৈঠকখানায় কাণ পাতা ভার—কেবল হোহো শব্দ— হাসির গর্‌রা ও তামাক-চরস গাঁজার ছর্‌রা, ধোঁয়াতে অন্ধকার হইতে লাগিল…..

বিপিন : এই ধোঁয়া আমাদের পাগল করে রেখেছে । সিনেমা দেখতে দেয় না । নষ্টামির জায়গাটা এখন একরকম স্যাচুরেটেড হয়ে গেছে। যত দুর্দান্ত উপন্যাস কেউ ভাবুক, যত স্বর্গীয় কবিতা কেউ ভাবুক, এখন আর পাঠক অবাক হবে না। সবাই তো একরকম ভাবতে পারে আজকাল। কেউ একটু বেশি ভাল ভাবে, কেউ একটু কম ভাল, কেউ হয়ত বেশ খারাপ। কারও চিন্তার ভুল হয়, কারও হয় না। কেউ নাচতে নাচতে ভাবে, কেউ জানে না। ভাবতে মোটের উপর সবাই পারে। কেউ যদি তার মধ্যে দারুণ কিছু ভেবে ফেলে, অন্যদের তাতে কি সুবিধা হয় কিছু? অসুবিধাই হয়। কারণ স্ট্যান্ডার্ডটা হাই হয়ে যায়। সেটাকে অ্যাচিভ করার জন্য অতিরিক্ত খাটতে হয়, চুরি-টুরিও করতে হতে পারে। শ্রোতা তো নেই। সবাই ভাবুক ।কেউ কেউ হয়ত অলসতার কারণে, বা লোকলজ্জার কারণে ভাবে না, কিন্তু মনে মনে সেও ভাবুক। এমতাবস্থায়, সিরিয়াস ভাবাভাবির খুব সংকট। প্রথম কথা কিছু লোক সিরিয়াস ভাবনাকে আঁতলামি বলে উড়িয়ে দেওয়ার রাস্তাটা চেপে ধরে আছে, আর কিছু লোক সিরিয়াস ভাবনার কাছে গেলেই তাদের ঘুম পেয়ে যায়। সবাই ভাবুক ।কেউ জেগে থাকা ভাবুক, কেউ ঘুমন্ত ভাবুক। তুমি বানচোদ ভাল ভাবছ, তাতে আমার কী? আমার ভাবনাও কি কিছু কম যায়! সেই নষ্টনট আমার ভাবনা শুনে বলেছে একদিন আমিও  পুরস্কার পাবো। আমাকে আর ল্যাংটো থাকতে হবে না ।

রুক্মিণীকুমার : মহাকাশে থাকতে আমিও সেই অপ্সরার সঙ্গে প্রেম করতাম দশ বছর আগে তিনঘণ্টা কথা বলতে হত রোজ এ জন্য ও আমাকে ফোন কিনে দিয়েছিল স্যামসাং গুরু ছোট্ট স্ক্রিন দুজিবি চিপ লাগানো যেত তাতে সাড়ে চারশো গান ভরা ছিল কানে ঠুলি পুরে সারারাত গল্প করতাম ডেডলি ম্যারাথান ইরেকসান না ফেললে নামে না খাড়াই থাকে আর ঠনকায় উজ্জীবিত নীড়ে…

অমরনাথ : চাঁদের কথা বলছেন ? চাঁদনি মাখানো সারা গায়ে ? ইরেকসান হলে কী করতেন মহাকাশে বসে ? শূন্যে ভাসার সময় ইরেকশান হয় ? 

রুক্মিণীকুমার : উপন্যাস ভাববার শেষ দেখতে চাইলে, জেমস জয়েসের ইউলিসিস ভাবো, শখ করে ভাবা যায় না, পৃথিবীর সবচেয়ে বোরিং ভাবনা, আই মিন স্ট্রাকচারালি, ভীষণ বন্ধুর, ভিরমি খেয়ে যাবে, একেকটা চ্যাপটার একেটা কাঠামোয় গড়া, সার্সিই তো একটা ভাবনার চেয়ে বড়, শুধু একটা বর্গ ভাবো, লাইব্রেরি এপিসোড, পেনেলোপে, ইথেকা, পুরো ভাবনা ভাবতে যেও না,মারা পড়ে যাবে। অবশ্য এলেম থাকলে মেঘনাদ বধ কাব্য ভাবতে পারো পারো ।

সব্যসাচী : মহাকাশে শূন্যে ভাসতে-ভাসতে আপনি তো দেখছি মহানট হয়ে গেছেন । তাহলে তো আপনি অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারবেন। 

মহিম : ‘অদ্ভুত রামায়ণ’ থেকে জানা যায়, সীতা নাকি রাবণ ও মন্দদরীর মেয়ে। আবার অন্যত্র বলে রাবণ তার ভ্রাতুষ্পুত্র নলকুবেরের স্ত্রী রম্ভাকে বলপূর্বক ধর্ষণ করেন। এই ধর্ষণের ফলে রাবণের ঔরসে রম্ভার গর্ভে সীতার জন্ম হয়। তাঁর জন্মের আগে গণকরা জনিয়েছিলেন, তিনি নাকি রাবণের ধ্বংসের কারণ হবেন। তাই রাবণ তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ‘আনন্দ রামায়ণ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজা পদ্মাক্ষের কন্যা পদ্মাই নাকি পরবর্তী জন্মে সীতা হন। রাবণ পদ্মার শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি আগুনে আত্মঘাতী হন। পরজন্মে তিনিই সীতা হিসবে অবতীর্ণা হন এবং রাবণের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ান। আর একটি প্রচলিত ধারণা এই— সীতা পূর্বজন্মে ছিলেন বেদবতী নামে এক পুণ্যবতী নারী। রাবণ তাঁর শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি রাবণকে অভিশাপ দেন যে, তিনি পরবর্তী জন্মে রাবণকে হত্যা করবেন। 

সওদাগরপুত্র : ইনি একজন এদেশীয় বাংগালী ‘প্রুষ’। আপাগণ, ইনারে আমার জানা যত গালি আছে স্টকে সব দিসিলাম। সেইম সেইম টেক্সট সে আমার বড় বইনেরেও দিসিলো। আমার বইনে আমার মতন অসভ্য না তাই গাইলায় নাই, আমি কল ও ধরছি, ইচ্ছামতন গাইলাইছিও। এই ‘প্রুষ’ আবার ঢাকার এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ইংলিশের টিচার। দুই বইনে উনার কলের যন্ত্রণায় পাগলায়ে গেসিলাম। হয়তো উনি জানতো না ওইটা আমার বইন। এ হেন গালি শুনলে যে কেউ ঘেন্নায় মইরাই যাইতো। তারপরেও উনি উনার বাল না কামানোর ফ্যান্টাসি বয়ান দেয়। সেই লোক ইদানীং  এক মিউচুয়াল আপারে পটাইতে চাইতেসে দেখলাম। হিন্টস দিয়া দিসি বুঝলে বুঝেন, না বুঝলে মাখায়া মুড়ি ভর্তা খান গিয়া। বাল! ও আইচ্ছা আমার বইনে বিবাহিত এবং বাচ্চার মা। জামাই এবং গ্যাদাবাচ্চা সহ ছবিও ভরপুর। তারেও এইগুলাই কইসে।

রুক্মিণীকুমার: মিকেল্যানজেলোর ভাবনা নিয়ে প্যাটারের আলোচনা আমাকে মাত করে দিল এই মডেলে পরে হোলডারলিনের কেসটা নিয়ে লিখেছেন মরিস ব্লাঁশো ওটাও খুব ফ্যাসিনেটিং আমার ভাবনার কাঠামোয় এ সবই একজনেরই ভাবনা, যে ভাবে সে হ্যাক করে যোগাযোগ বুনোট একটা বিরাট ফ্যাব্রিক সবাই আমরা ওস্তাগর রিফু করছি..

সদানন্দ : মহাকাশে কি সেলাই-ফোঁড়াই হয় ? 

অমিত রায় : আমরা যারা টুকটাক ভাবনা ভাবি, বা গল্প বা উপন্যাস, তারা সবাই জানি মাঝেমাঝে ভাবতে না পারার যন্ত্রণা। এটা সাময়িক হতে পারে বা দীর্ঘ সময়। এই ফাঁকা সময়টা আমরা হয়তো কারোর ল্যাংটো দেহ নিয়ে ফান করি, তার পোঁদে ছবি আঁকি । সাথে আমরা যারা এক্টিভিস্ট তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ভাবনা ভাবি। অনেকের মতন কেবল র‌্যালির‌্যালা ফাটাই না স্বশরীরে আমরা রাস্তাতেও থাকি। আন্দোলনে বা মিছিলে বা অবস্থানে। অথচ ম্যাক্সিমাম লোকজন আমাদের কেবল শরীর সর্বস্ব ভাবেন। স্টোরিতে ছবিতে আপনার রিএকশন থাকে ভাবনার উলটো। ভেবে নেয়া ছবিতে আপনি শালীন, গোপন ভাবনায় আপনার কামভাব ঠিক লালার মতো করে ঝরঝর ঝরিয়ে দেন। এই কাজটাতে আপনি আমার কাছে চরম নীচে নেমে যান, আপনার দু মুখো সাপের মতন চরিত্র আমার কাছে উন্মোচিত হয়ে যায়। মজার ব্যাপার আপনার তাতে কোন মাথাব্যথা নাই। আপনার ধর্ষকামী মনোভাব ও ফুটে ওঠে।  এক ইংরেজী ভাবুক আমাকে বলতো সে আমাকে দেখলে উত্তেজিত হয়। উনি আমাকে বলে যে তার কেশগুচ্ছ ভালোলাগে, তাই বগল এবং এ সংশ্লিষ্ট কেশ বড় বিষয় । উত্তর না পেয়েও উনি ভাবতেই থাকেন।  আচ্ছা আসেন স্তনের কথায়। মেয়ে মাত্রই এটা স্বাভাবিক। আপনার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা সবার আছে। এবং এটা যেভাবেই হোক বোঝা যাবে। সেটা আপনি উন্মুক্ত বা ঢেকে যেভাবেই রাখেন। তেমনি আপনারও তো লিঙ্গ আছে। সেটাও তেমনই ব্যাপার। তো আপনার প্যান্টের ওখানে ফুলে থাকলে তো কোনও মেয়ে গিয়ে খপ করে ধরে বলে না যে এই স্ফীত ভাব দেখে আমার কাম উদ্বেলিত হয়েছে। আপনি কেন তা করেন? আপনি আপনার লোমশ বুক বের করে দেখিয়ে বেড়ান, তা দেখে কোন মেয়ে বলেনি সে উত্তেজিত হয়েছে । আপনি কেন বলবেন বুক দেখে আপনার নেটওয়ার্ক টাওয়ার ফুলে গগনচুম্বী ? কেউ আমরা এমন অশ্লীল ভাবনা ভাবি না । কেবল মুখ দেখেই আপনার দাঁড়িয়ে যায়? টন টনাটন টন ? তাই যদি হয়, আপনি যদি কোন অসহায় মেয়ে বিপদে পড়া অবস্থায় পান তবে তো অঘটন এই আপনিই ঘটাবেন এটাই প্রতীয়মান হয়। আমি জেনেরেলাইজ করছি না, বলছি ম্যাক্সিমাম পুং-মানুষ এমন।

রুক্মিণীকুমার : আমি করি কি ভাবনাটা না ভেবে আগে একটু অ্যাকটিং করে ঝালিয়ে নিই। পরে কাগজে উৎরোই। আগে অভিনয়ের স্পেসটায় সশরীরে ভারবালি ইমপ্রভাইস করি। ঐ যাকে বলে সলিলকি গোছের। কৌশিক সরকার ফুটলাইটের নির্দেশ দিয়েছেন, আলো যাতে কোথাও অবস্কিওর না হয়ে যায়, চরিত্র মঞ্চের কোণে গেলেও জনান্তিকে যেন পায় সঠিক আলোর ইমপেটাস, স্বগতোক্তি। আমিও তার মানে দেখা যাচ্ছে থিয়েটারেরই লোক, আই মিন এসেনসিয়ালি। ফরাসিরা কী করল সব অ্যাকটিং-থিংকিং এ ঢুকে গেল। আঁকলোই না। বলল স্প্যানিশরা এ শতকের দায়িত্ব নিক আমরা সাহিত্য চিত্রকলার রেটরিকে মধ্যে আর নেই। ইমপ্রেসানিজমে অনেক খেটেছি উনবিংশ সিয়েক্লেতে। আর রঙ ভাল্লাগছে না। এবার একটু কালোশাদা অক্ষরের স্পেসে কী করা যায় দেখা যাক। এখন তোমরা প্লাসটিক পরিসরে কিউবিজম করো,তাহেলকা মাচাও, পরে না হয় স্ট্রাকচারালিজমে তাকে আমরা তাত্ত্বিক জায়গায় রিঅ্যাপ্রপ্রিয়েট করে নেব’খন। তারপর তাকেও অক্ষত রাখব না, ডিকন্সট্রাকট করে দেব, কেমন। জটিল ভাবনা সহজ করে ভাবছি, যথাসম্ভব। লাকাঁকে দ্যাখো, কী অ্যাকটিং! পুরো আর্তোর নাটকীয় টেকনিক। ফুকোও তেমনি, অনর্গল। হাসতে হাসতে হেঁচকি উঠে যায়, দেবশিশু এত ইলকয়েন্ট আর লাজুক। সব অভিনেতা। বিদ্যাসাগর বলতেন, কইয়ে বলিয়ে। নিজে ঢিপলে তো তোতলা ছিল।… ভেবে নিলে কিন্তু ভাবনাটা পরে জমে ভালো। ইনভিজিবল অ্যাপলাউজ। আসলে ভাবনা বলে কিছু হয় না, দেখা যাচ্ছে মানেই, ডায়ালগ, ডাবল — যা মূলত প্লেটোনিক। নইলে ঐ হিউজ কনফেসনসের পর ডায়ালগ ভাববে কেন ফের জাঁ জাক হুসো! ফুকোর ভাবনাটা ভেবো । রস পাবে। ও তো দারুণ পাজল সলভ করতে ওস্তাদ। যাদুকর। সব সময় অ্যাকটিং করবে ভাবনায় । বিনা টেরেসকে বিলডিং।

গোবিন্দমাণিক্য : কলেজের ক্যান্টিনে,ঠোঁটে ঠোঁটে সিগারেট ট্রান্সফার হবে, হাতে হাত ধরে থাকবে ওরা টেবিলে ও নীচে, পিঠে ধাক্কা মেরে গল্পে হেসে চলে যাবে, বাইকে সুঁইং ক’রে, একসাথে কতদূর যাবে ওরা কেউ জানেনা, কলেজ খুললে, এতদিনের যমুনার জল,কোথা থেকে কোথায় গড়াবে, তুমি আমি সে তাহারা কেউ, অনুমানের ছিঁটেফোঁটাও করতেই পারিনা, কলেজ এখন থেকে প্রত্যেকদিনই যেতে হবে, কত ভাবনা ভাবা বাকি, কত জ্ঞান আলোচনা অভিজ্ঞতা আয়োজন ভাবনাপর্ব, জীবনের প্রস্তুতি সব এতদিনের জমানো গল্পগাছা উৎকণ্ঠা আর, উল্টোপাল্টা, সব ঠিকঠাক করে নিয়ে, এইবার, এনজয়মেন্ট ফুলফিল করে নিতে হবে, ক্লাশ থেকে ছাদ বারান্দা মাঠ বাগান, লাইব্রেরি ক্যান্টিন ল্যাব রাস্তাঘাট টোটো অটো বাস, রিক্সা সাইকেল মোটরসাইকেল সবখানে শুধু, গিজগিজ গিজগিজ গিজগিজ গিজগিজ…আরে ভাই জরা দেখকে চঢ়ো…

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । গাঁজা আর চরসের তফাত জানে না ।

সাত

ব্র্হ্মচারী সত্যানন্দ : মহেন্দ্র চেয়ে দ্যাখো, , এক অপরূপ সর্বাঙ্গসম্পন্না, সর্বাঙ্গবরণভূষিতা জগদ্ধাত্রী মূর্তি।  ‘‘মা যা ছিলেন’’। দ্যাখো মা কালীর মূর্তি।  ‘‘দেখ, মা যা হইয়াছেন। কালী- অন্ধকারসমাচ্ছন্না, কালিমাময়ী। হৃতসর্বস্বা, এই জন্য নগ্নিকা। আজি দেশের সর্বত্রই শ্মশান তাই মা কঙ্কালমালিনী।’’ দ্যাখো সোনার তৈরী দশভুজা দুর্গা প্রতিমা।  ‘‘এই মা যা হইবেন। দশভুজ দশ দিকে প্রসারিত, তাহাতে নানা আয়ুধরূপে নানা শক্তি শোভিত, পদতলে শত্রু বিমর্দিত, পদাশ্রিত বীরকেশরী শত্রু নিপীড়নে নিযুক্ত, দিগভুজা, নানা প্রহরণধারিণী, শত্রুবিমর্দিনী বীরেন্দ্র পৃষ্ঠবিহারিণী, দক্ষিণে লক্ষ্মী ভাগ্যরুপিণী, বামে বাণী বিদ্যাবিজ্ঞানদায়িনী, সঙ্গে বলরুপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরুপী গণেশ।’’ 

রুক্মিণীকুমার: আপনারা সবাই পাগল না জোম্বি ?

শশী : বুঝতে পারছি, আপনি একজন মহানটবর । তাই আপনাকে এখানে পাঠানো হয়েছে নেতৃত্ব দেবার জন্য । 

রুক্মিণীকুমার : ফরাসিরা আর কবিতা ভাবেনি । টোয়েন্টিয়েথ শতকে আর ছবিও আঁকেনি। ইতিহাসের সন্তান ওরা। হিসটিরিসিটির প্রতিভু। সব উনিশ শতকে ফেলে এসেছে। সত্যিকারের একটা হিংসুটে জাত: জার্মান আইডিয়ালিজমকে সারপাস করতে হবে! অজ্ঞেয় কালেকটিভ প্রতিজ্ঞা, রেজলিউসন। দ্যাখো, হাইডেগারের পর জার্মান উত্যুঙ্গ প্রতিভা আর নেই। স্ট্রেঞ্জ নয়! অথচ ফরাসি মুলুকে একটার পর একটা অগ্নুৎপাত। আমি আবার একটু দেরিদার ভক্ত। ভাবুক মাত্রই ফাঁকিবাজ। সে যে-ই হোক। তার গোটা প্রক্রিয়াটাই একটা মস্ত বুজরুকি। আমি কিংবা ফুকো, নো ম্যাটার কে? যত স্কলারলি লোক তুমি হও না কেন! নোভালিস থেকে মালার্মের সমান্তর টানছে দেরিদা। এ তো আরবিট্রারি ফাইনডিং। তার কিন্তু ইমপ্যাকট ভয়ংকর ডিসকার্সিভ টেক্সচুয়াল পরিসরে। মনে হবে লোকটা সর্বজ্ঞ। সব ভাবে নিয়েছে । তা নয়, ওটা ম্যাজিক। নিছক হাতসাফাই। অশ্রদ্ধা করছি না। ফ্র্যাঙ্কলি, দেবতা মানি। আমার হক আছে। দুইয়ে নিই, নিংড়ে, ছিবড়ে করে ছেড়ে দেব, মাথার মধ্যে আমার বত্রিশ কোটি দাঁত। কিন্তু অল দা সেম দেরিদা পর্যন্ত যথেষ্ট হাইডেগেরিয়ান নয়, প্রভাইডেড হাইডেগার হিমসেল্ফ ওয়াজ পরিপূর্ণ হাইডেগারিয়ান। ল্যাংড়াদা বলেছিল, পুরো স্বামীই বা হব কেন, পুরো বাবাই বা হব কেন — যদি নাই হই, আমি আমার ভাবনাকেই বা পুরো দেব কেন!… বিষ মাল। কিন্তু কত গূঢ় ইনসাইট ভাবো, এই জিজ্ঞাসা, প্রত্যাখ্যান! কী মারাত্মক ভ্যাসাকটমি — নাসবন্দি খেলা! আত্মনপুংসকীকরণ, স্বেচ্ছায় — যে, আমি কাফকা হতে নিজেকে রিফিউজ করছি, এ অন্য লেভেলের কাউন্টার কুরবানি : বস্তুত ল্যাংড়াদা একটা ইভেন্ট, অন্তর্ধান। কিন্তু ওটা তুরীয় অবস্থায় কথিত। ভার্চুয়ালি ভেবে গেছে যত্ত রাবিশ, টাকাকড়ির ধান্দায়, মক্ষিচুষ লোক । আমিও আর ভাবনা ভাবি-টাবি না: স্রেফ থিওরি কপচাই। বাংলা ভাবনার একটা গতি করে যেতে হবে তো…ঋত্বিক ঘটকের হুকুম ।

গফুর : হ্যাঁ নটবর মিয়াঁ । বাংলার একটা গতি করুন । আপনার মধ্যে সেই পাগলামি রয়েছে, যা রামমোহনের, বিদ্যাসাগরের, রবীন্দ্রনাথের, প্রমথ চৌধুরী, কমলকুমার মজুমদারের ছিল ।

রুক্মিণীকুমার : আমিও এরকম শিবের মতো মার দুদুটা ধরে শুয়ে থাকতাম, একদিন লেভ তলস্তয় এসে আমাকে কি বকা দিলে, এই ব্যাটা দামড়া খোকা ওঠ, যা যুদ্ধে যা। আমি বললাম আপনি নেপোলিয়নকে নিয়ে লিখুন এখন আমি হেগেল পড়ছি, নেপোয় মারে দই! আচ্ছা খাজুরাহো না দেখার দুঃখ তো কৌশিক সরকার কোথাও লেখেননি, আরে কেশব সেনকে দেখে কী হবে, খাজুরাহো তো কোরিওগ্রাফিতে গ্রীক ভাস্কর্য আর ব্যালেকেও হার মানায় অবশ্য এটা একাদশ শতকের কর্মকাণ্ড পৃথ্বীশ নিয়োগী আর সত্যজিৎ রায়ের কথোপকথনটা আবার ভাবতে ইচ্ছে করছে।  মন আামি কবে যে প্রমথবাবুর মতো বাঙালি হবো!

বিপিন : সেক্স- এমন একটা শব্দ, আপনি কোন ইস্যুতে কইলেন সেটা ব্যাপার না। এটা জেন্ডার নাকি প্রেম, নাকি রেপ, নাকি হুদাই কিচ্ছু দেখবে না। চোখে সেক্স শব্দ পড়সে মানে সে ভিজুয়ালাইজ করতে শুরু করে আপনি খুব লাগালাগি করে ইয়া বড় পেট একটা নিয়া হাটতেসেন। আপনি সস্তা, ব্যাস টোকা দেয়া শুরু, কারণ ওই শব্দ দেইখাই উনার এন্টেনায় প্রচুর কারেন্ট আসছে এবং নেটওয়ার্ক ফুল হয়া গেসে। মাসিক- এটা সমার্থক বা প্রতিশব্দ বা ইংরেজি শব্দ যেমনেই কন, এইডা একটা অপবিত্র এবং উত্তেজক শব্দ। এই শব্দ দেখলেই উনাদের হাতের আঙুলেও প্রচুর কারেন্ট উৎপাদন হয়, পশ্চাৎদেশে জ্বালাপোড়া হয়। উনারা চোখ বন্ধ কইরা এক সেকেন্ডেই দেখেন সেই মেয়েটার পা বায়া হরেদরে রক্ত গড়ায়া পড়তাসে। ব্যাস আঙ্গুলের কাজ শুরু, টাইপ করবেন, ওয়ালে কমেন্ট অযাচিত আহা এবং উহুউউউ, আর খুব মাখন টাইপ। কেউ কেউ  গালি এমন ভাবে দিবেন যেন গালিতে রতিসুখ, রতিক্রিয়া সম্পন্ন এবং খুব ভরে দিয়ে উনি আপনারে প্র‍্যাগন্যান্ট বানায়া দিসেন। এইগুলা অতি সত্য কথা, অযাচিত কুতর্ক ভাল্লাগবেনা। বালামার!

অমরনাথ : চারদিকের কিছু নতুন গজিয়ে ওঠা বালের মতো ক্যারেক্টার দেখি। যার নতুন ওঠে সে তো পুলকের চোটে বালে হাত বুলায় আর ভাবে আহা কি নরম কোমল মোলায়েম! থাক আর কিছুদিন। ঠিক তখনই এইসব বাল লম্বায় বাড়তে বাড়তে এতো বড় হয় যে বালের মালিক নিজের বালে পেচায়া মইরা যায়। এদেরকে তাল দেয় আবার পুরান পাইকা তামার তার হওয়া বালের মালিক। আরে তোর এতো খাউজানি থাকলে নিজের তামার তারগুলা প্লাইয়ার্স দিয়া কাইটা আঁটি বাইন্ধা বাজারে নিয়া বেইচা দে হারামজাদা গুস্তাখ! ঘটনা হইসে পাকনা বাল গুলারে সবাই চিনে, নতুন বাল ওলারা বুঝেনা এই মুর্শিদ তোরে সুটায়া লাল করে দিবে, ব্যথায় হাঁটতেও পারবি না।

বালামার!

মহিম : আমাদের ছোটবেলায় সর্দিজ্বর হলে ভাত বন্ধ থাকত। অখাদ্য সাবু বা বার্লি গিলতে হত ওই তেতো মুখে। তারপর যেদিন ভাত খাওয়ার নিদেন দিত ডাক্তার, সেদিন হত শিঙ্গি মাছের ঝোল। ভাতের পাতে সবার প্রথমে উচ্ছে ভাজা। তেতোয় তেতো কেটে যায় বলে। এমনিতে তেতো না খাওয়া মুখ, উচ্ছে ভাজা যে অত মধুর হয়, সেদিন বুঝতাম। আর সবশেষে আমলকির আচার। এই সব যত্নগুলো ছিল বলেই বোধহয় জ্বরের দিনগুলো ভুলে যেতাম সহজে। এখন জ্বর হলেও স্নান করা, ভাত খাওয়া আর অ্যান্টিবায়োটিক। আজ খুব ইচ্ছে হল নিজেকে যত্ন করি। তিনদিন সর্দিজ্বরের পর, (যদিও এ ক’দিন ভাতটাত সবই চলেছে) উচ্ছে ভাজা, লালশাক ভাজা, ডাল, তরকারির পর বড়ি দিয়ে জ্যান্ত মাছের পাতলা ঝোল। আর সবশেষে আমলকির আচার। জল খেয়েও মুখ মিষ্টি হয়ে আছেL

নিখিলেশ :জানি না ইউক্যালিপটাস তেল নিয়ে কার কী অভিজ্ঞতা। উটি বেড়াতে গিয়ে প্রথমবার তিনি এসেছিলেন বাড়িতে। আমার ওই বিশ্রী গন্ধ কোনোদিন ভাল লাগেনি। উপকারী না অপকারী তাও জানতাম না। আমার বিরোধী পক্ষ অবশ্য সেই তেলের ফ্যান। দিবারেত্রি ঘিসিং এন ঘিসিং… যাই হোক, এই করোনাকালে সর্দিকাশি হলেই ভয় হয়। ওষুধের পাশাপাশি সেই বিচ্ছিরি তেল ইনহেল করলাম। নাকে, গলায়, কপালে লাগিয়ে দেখলাম, সত্যিই ম্যাজিক! সর্দি বসায় না, বরং তুলে দেয়, মাথা যন্ত্রণা গায়েব। নাক খুল যা সিমসিম! বিরোধী পক্ষকে ধন্যবাদ। যারা সর্দিকাশিতে ভোগেন, অনলাইনে নাহয় আনিয়ে নিন এক শিশি।

রুক্মিণীকুমার :  ভার্জিনিয়া উলফ, আমার অসম্ভব প্রিয় ভাবুক– চল্লিশ বছর ধরে ওঁর ভাবনা ফলো করছি, নকল করিনি, আমি উন্মত্ত জয়েসিয়ান; অধিকন্তু এ মেয়েটা হালকা ডাবল স্ট্যানডারড আছে — লরেন্সের ওপর লিখছে, অদ্ভুত — ততদিনে লরেন্স মরে ভূত  — আরে লেডি চ্যাটার্লি নিয়ে ভাবো, তা না সন্স অ্যানড লাভার এর গুণকীর্তন করতে বসেছে, আজব, জানি মেয়েদের একটু সমস্যা ছিল তখন, বিশেষত ইংলনডে, কিন্তু তোমাকে তো ভাবতে হচ্ছে না, লরেন্স দায়িত্ব নিয়ে ভেবে গেছে, তোমার কাজ শুধু রিয়্যাপ্রপ্রিয়েট করা ক্রিটিকো-তাত্ত্বিক পরিসরে, সেখানেও অ্যামগুইটির গল্প, এতেই শেষ নয় বারবার কোয়াইট অপ্রাসঙ্গিকলি প্রুস্তের সঙ্গে তুলনা টানছে, অথচ হাতের কাছেই জয়েস আছে দেদীপ্যমান দুজন ন্যাংটা সেক্সমেনিয়াকের তুলনা করো; ভয়, মিথ্যাচার, উফ কী বলব! প্রুস্ত একটা সাত্ত্বিক লেখক এক জায়গায় সে বলেওছে জীবনের কার্নাল প্লেজারের স্পেসটা তো পুরো বাদ দেওয়া যায় না — কিন্তু সে আমাদের জয়েস লরেন্সের মতো পোস্ট পর্নোগ্রাফিক নভেলিসট নয় — তার সঙ্গে তুলনার কারণই হচ্ছে একটা বাজে ইনটেনসনালিটি, ঠারেঠোরে জয়েসকে অস্বীকার করা শুধু নয় ভারচুয়ালি ভাবনার ইতিহাস থেকে এলিমিনেট করে দেওয়া, প্রচ্ছন্ন কনসপিরেসি, এসব ভীরু ভাবুক শাক দিয়ে মাছ ঢাকছে সারাক্ষণ, ফ্র্যাঙ্কলি ভাবতে পারে না; সন্ন্যাসিনীর গোপন খবর! এদিকে একটা মরণোত্তর খতিয়ানও না করলেই নয়, চক্ষু লজ্জার খাতিরে, বিবেকেরও জ্বালা: লরেন্সের অন্য ভাবনাকে তো যেমন প্রাসিয়ান অফিসার পর্নোগ্রাফি বলে খারিজই করে দিচ্ছে সরাসরি আর আসল ভাবনার তো নামই মুখে আনেনি এরা ভাবনাকে সব সময় পেছন দিকে টানে ভাগ্যিস ইতিমধ্যে অ্যানাইস নিন সিনে চলে এসেছে হেনরি মিলারের চেয়েও অকপট, সেক্স ছাড়া ভাবনা হয়?

খোকা : আপনি সম্ভবত ফ্যানি হিল বইটা ভাবেননি। ‘ফ্যানি হিল : মেমোয়ার্স অফ আ উওম্যান’ লণ্ডনে প্রথম প্রকাশিত হয় সতেরশো আটচল্লিশ সালে। পরের বছর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় খণ্ড। জন ক্লিল্যান্ড ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী। সতেরশো উনত্রিশ থেকে সতেরশো চল্লিশ, তিনি  বম্বেতে ছিলেন। সতেরশো একচল্লিশে লণ্ডনে ফিরে যান। আরও সাত বছর পরে ফ্যানি হিল প্রকাশিত হয়। সম্ভবত বম্বেতে থাকাকালীন ক্লিল্যান্ড এই ভাবনা ভাবতে শুরু করেছিলেন। বিশ্ব ভাবনার ইতিহাসে ফ্যানি হিলের মতন ভাবনা খুব কম আছে যা এত বার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। উনিশশো সত্তর সালের আগে ভাবনাটির প্রকাশ আইনি স্বীকৃতি পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ব্রিটেন থেকে আমেরিকা,  ফ্রান্স এবং অন্যান্য বহু দেশে ভাবনাটির বেআইনি সংস্করণ ছাপা হয়। প্রথম প্রকাশের ঠিক এক বছর পরে ক্লিল্যাণ্ডকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অশ্লীলতার দায়ে প্রিভি কাউন্সিলের সামনে তাঁকে হাজির হতে হয়। সরকারি ভাবে প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাজার থেকে ভাবনাটি তুলে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব অভিযোগ কাটিয়ে উঠে, ধ্রুপদি ভাবনার মর্যাদায় উত্তীর্ণ হয়ে ফ্যনি হিল। ভাবুক সমাজে ফ্যানি হিলের প্রভাব এত প্রবল ছিল যে লণ্ডনের বিশপ একবার ভূমিকম্পের জন্য বইটিকে দায়ী করেছিলেন। ফ্যানি হিলের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য,  ভাবনার ভাষা সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ , কোনও ভাবেই তার গায়ে সোনাগাছি ভাবনার তকমা দেগে দেওয়া যায় না। অক্ষতযোনি ফ্যানি যখন এক কুৎসিত কামুক বেশ্যাসক্ত ইংরেজকে অনুনয় করছে তাকে রেহাই দেওয়ার জন্য, তখন বিকৃত উত্তেজনার বদলে ভাবুকদের অন্তর ব্যথায় টনটন করে ওঠে।

ঠকচাচা : কেতাবি বাবু সব বাতেতেই ঠোকর মারেন। মালুম হয় এনার দুসরা কোই কাম কাজ নাই। মোর ওমর বহুত হল —নুর বি পেকে গেল —মুই ছোকরাদের সাত হর ঘড়ি তকরার কি কর্‌ব? কেতাবি বাবু কি জানেন এ সাদিতে কেতনা রোপেয়া ঘর ঢুক্‌বে?

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । সোনাগাছি আর সোনাগাজির তফাত জানে না ।

আট

অপু : পূজাপর্বের সূচনায় ছিল রাজবেশের প্রস্তাব। দৈববাণী। মরমে পশিল! প্রথার বাইরে এসব। সমিতি বা সংঘকে অস্বীকার করে সেই প্রেম।চৈতন্যের আকাশে আলোকরশ্মির ক্ষণায়ু তাও মন্দ কি! বেশের আড়ালে সমস্ত ক্ষতই লালন স্বভাবী। সে দেখবে না বলেই দেখেনি।নিমিত্তের স্বার্থ নেই, অশ্রু মানে পুষ্পবৃষ্টি। নিমিত্ত, দর্পণের সিঁদুর। বিসর্জনও। পড়ে রইলো সেই রাজবেশ আর সে শিউলিদের ডেকে জড়ো করল।সেই দৃশ্যে প্রতিটা গাছের সায় ছিল। ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল শাখা-প্রশাখা। ফুলের আভরণে ঢেকে গিয়েছিল মাধুকরীর আলতা পা। ঝড় এসে বেআব্রু করে দিয়েছিল অধিবাস। রাত্রি ভাসিয়ে দিয়েছিল সেই মান্দাস। তারপরে আবার পুজাপর্বের সূচনায় ।

সদানন্দ : পেলাম তাকে সোনার দরে, পান মিশিয়ে একটু ভাঙা গড়া, নাকছাবিতে মোতি’র ঝুটো, আস্কারা রোদ দু-এক মুঠো, বাবুয়ানায় হাজার তানাবানা,রঙ পাঠাল রোশনওয়ালি, ঠোঙায় ভরা শ’হাততালি, খুলতে গিয়েই ফুড়ুৎ পাখির ডানায়,এ ডাল ও ডাল লাফিয়ে খুশি,এমন আলোয় আমিও হঠাৎ কাঙাল,আয়না হাসে আয়না কাঁদে,কাপড় শুকায় তিজন মাঠে,রাত বিরেতে যাত্রা পার্টির বাসে

হাজার মানুষ হুড়োহুড়ি,শ্যাম তোহারি পায়ে পড়ি,দু-হাত কেন এমন করে রাঙাস

রুক্মিণীকুমার : প্রুস্ত রোজ একপাতা ভাবো, গুজবে কান দেবে না, আমি একটা তত্ত্বসিদ্ধ মহাপুরুষ, আমার কথা শোনো, আর কারুর কথা শুনতে হবে না, আমি দশহাজার ভাবনা দশ মাথায় ঘেঁটেছি, আমি রাবণ, ঐ এক পাতাতেই রসার্স এর সব রস আছে মানে প্রতিটা পাতাই বাকি তিনহাজার পাতার পরিপূরক; বড় ভাবুকরা এরকমই ভাবেন কাফকা ফুকো কমলকুমার যে কোনো ভাবনা দ্যাখো — প্রথম ভাবনা থেকে শুরু করতে হবে কথা নেই, শেষ ভাবনা থেকে শুরু করো, নিয়ম সব ভেঙে দাও, পিকাসোর পর কোনো নিয়ম চলে না: ভাঙাটাই নিয়ম! ফৈয়াজ খাঁর মতো, গুঁড়িয়ে গাও, ফতে আলি খানের মতো কণ্ঠ পালক ওড়াও, পোলকের মতো রক্ত পিচকারি আমি বলছি, আমাকে বেদবাক্য জানবে, ফারিশতা রুক্মিণীকুমার, রিশতা বানানো আমার ফার্জ, পাথমেকার, রাস্তা বানাই, তুমি যাবে বলে অরুণোদয়ের পথে! প্রুস্তের পাতাই পতাকা, নিশান ধরে এগিয়ে যাও — আমি আছি….জেনেরাল স্যাম ম্যানেকশ বলেছেন ।

সন্দীপ : যাক আপনি আমাদের সঙ্গে আছেন । আমরা ভাবছিলুম পাগলভূমে এ কোন মগজহীন নভচারী ।

অপূর্ব : প্রাণের লণ্ঠন আজ খেলুড়ির মুখ চিনে তারই রাস্তায় বসে পড়ে, খেলুড়ির বড় বড় চোখের পাতার নীচে যেসব নক্সা খেলা করে, তাজ্ঝিম মাজ্ঝিম লেগে যায়,চন্দ্রাহত দিনে তার ঠোঁটের রেখাটি ধরে সেসব হাঁটায়,সে এক অদ্ভুত ছিল মুদির দোকান,মৌরি লজেন্স দিতো খেলনাবাটির প্রলোভন

তার মুখ আঁকা ছিল আশ্চর্য দিনের হাঁড়িকুঁড়ি,সে যে বিক্রি হয়ে গেছে প্রাণ,আমি তার হাত ধরে মারি মরিয়ার মতো টান,প্রাণের লণ্ঠন তবু খেলুড়ির চোখের আঠাতে,আমাকে চেয়েছে তার গলিতে পাঠাতে, মরা নদী শুয়ে আছে যেখানে রাস্তার বহু নীচে,যমজ সেতুর ‘পরে জ্যোৎসনায় তারা সেথা ক্রিকেট খেলিছে,প্রাণের লণ্ঠন তুমি ধূর্ত মার্জারী হয়ে পদশব্দ থাবায় লুকিয়ো,সুপ্ত মেয়ের চাবি আঁচলের গিঁটে বাঁধা রুপোর ইলিশ এনে দিও,খেলুড়ির রোয়াকের কাছে,আতুর পাগল বেশে, প্রাণের লণ্ঠন বসে আছে….

নবকুমার : ছুটির ডাক দেয়, বলে মার্বেল খেলতে আসবেন? মার্বেলের মধ্যেকার কাঁচের জঙ্গলে ঢুকবেন? চা খেতে ছুটবেন রাত দুপুরে? আর চলুন হাত ধরে কোমল গান্ধারের খড়ের গাদায় ঢুকে যাই, যখন সুপ্রিয়া দেবী সেই জ্বলন্ত চোখের যুবককে প্রস্তাব দিচ্ছেন নিবেদনে, আর ঋত্বিক উপুড় করে দিচ্ছেন ওপার বাংলাদেশ, ছুটির ডাক দিতো, আঁশটে ডাক দিতো না,সোনাগাছির দিকে তাকালে তার চোখ দুর্বারের মতো জ্বলে উঠত, হোটেলের ঘরের দিকে তাকালে তার চোখ আসংস্কার ঘৃণায়, তবু জয় গোঁসাই যখন ফলিডল হাতে মেঘের দিকে চলে যাওয়া, প্রেমিক প্রেমিকার,দাদা বৌদির,তুতো ভাইবোনদের জন্য, আকাশের দালালের কাছে চিঠি লিখছেন, মুঠো পাকাচ্ছেন, আমি স্পষ্ট দেখেছি ওও গাড়িটাকে পাশে দাঁড় করিয়ে সঙ্গ নিয়েছে, তর্জা করেছে রীতিমতো, বুককে তারাবাজির মতো চড়চড় শব্দে না পোড়ালে, দেওয়ানা দিয়ালী হয় না, তারাবাজির মতো মন পুড়ছে, তার জসনে বাহার উঠছে কি উঠছে না কবিতায়, ভগবান জানে,খেলতো, তাই খেলায় ডাক দিতো, এখন খেলা বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকছে কদিন, আমাদের দুজনেরই আওতায় আছে, মৃত খেলার দিনের হাসি, কলকণ্ঠ, লুকোচুরি, রাখা আছে, শুনছি না, খেলার ডাকটি মনে আছে, ছাদের ডাকটি মনে আছে ।

গফুর : পাশে সম্ভবত জহির ছিলো, ক্রপ কইরা ফালায়া দিছি। নারীদের সাথে আমার অন্য কাউরে সহ্যই হয় না। দুম্মম কইরা আর্মি স্টেডিয়ামের কোন কনসার্টে দেখা হইয়া যাবার পর কর্তব্যরত আমারে কিঞ্চিৎ পাত্তা দিতে চাইয়া কবি আসমা অধরা সেল্ফি তুলছিলেন। নিজের খোমা দেইখা মনে হইতেছে বছর কয়েক আগে, সম্ভবত জয় বাংলা কনসার্টে।আসমার কবিতায় একটা অদ্ভুত মায়া আছে, আদর আছে। সহজতা আছে। ওঁর মতোই।এরপর দেখা হইলে, তোমার ভালো ক্যামেরায় ভালো ভালো ছবি তুইলা রাইখো। কবে আর ‘আর দেখা হবে না’ স্টেজে চইলা যাইতে হয়, কে বা আমরা জানি! তার আগ পর্যন্ত, তোমার শক্ত না’গুলি সব হ্যাঁ হয়ে যাক সহজে ।

তারাপদ : তোমার ঘরের টেবিলটা, তোমার ফ্রিজের ম্যাগনেট, আমার ঝাড়ামুছোর আদরের, আমার টুকরো ছুটির স্নেহের, হাতে খাওয়ানো কুকুর, তারা আমার গন্ধ চেনে,আমার স্মৃতিতে ল্যাজ নাড়ে, তোমার ঘরের গ্রিল, গ্রিলের চিলতে আকাশ, আকাশে সরে সরে যাওয়া মেঘ, মেঘের আবড়ালে রামধনু, আমাদের অপ্রাকৃত তারা, আমার তোমার প্রিয় সিনেমার ঘর, তোমার বারান্দায় ঝুঁকে থাকা ল্যাম্পপোস্টটি জিজ্ঞেস করলো সেদিন, সে মেয়েটি কোথায় গেল? এ মেয়েটি কে?, সে মেয়েটি আমাদের কালচার বুঝতো, আমাদের পছন্দ ছিলো, এরকমই কিছু বললো ছাদের উপরদিকে, অব্যবহৃত, চিলেকোঠা ঘরও, আমরা হেসেছি, ধুস এরা সুপ্রাচীন, আমাদের মোহভঙ্গ আমাদের নানা রঙ্গ সহজে বোঝে না, রাত্রে ছাদের ক্যাঁচকোঁচ, কাঠে কাঠে লোহার বরগায়, তোমার অবিশ্বাসী শীৎকারে ভ্রুকুটি করেছে, সে মেয়েটি কই?, কই?, যে কোন শব্দ করতো না?

মহেন্দ্রলাল : আছে সুখ, আছে দুঃখ, আছে অপমান, আছে তাচ্ছিল্য, আছে ঘৃনা , আছে ক্রোধ , আছে লালসা , আছে বিরক্তি , আছে ভালোবাসা ,আছে ব্লা ব্লা ব্লা ….গপপোর শুরু বাংলার স্বাধীন রাজ্য ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের খাসমহল থেকে তারপর গল্পের মোড় ঘুরিয়ে উনি নিয়ে গেলেন জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথের কাছে তারপর জ্যোতিন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী, বঙ্কিম, স্বামী বিবেকানন্দ , জগদীশ চন্দ্র বসু….এভাবে আরো কত চেনাজানা লোকজনদের যে এর মধ্যে আসা যাওয়া হলো তার হিসেব নাই!  যত গভীরে ঢুকবেন ততো জানতে পারবেন অন্দরমহলের ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ কবি কীভাবে হলো, কাদম্বরীর আত্মহননের কারণ, স্বামী বিবেকানন্দর রামকৃষ্ণ পরমহংস নামক এক পাগলা সাধুর সংস্পর্শে এসে ঘোর নাস্তিক থেকে ধর্মানুরাগী হওয়ার কারণ, আরো নানাবিধ ইত্যাদি সিত্যাদি । তাছাড়া সেকালে ভারতে কি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, ব্রিটিশরা কেমন করে আস্তে আস্তে পুরো দেশটাতে জাঁকিয়ে বসছে তার ইতিহাসের একটা ছবি উঠে এসেছে গপপোর মধ্যে। এক কথায়  শুধু দিনের আলো নয় বরং রাতের নিকশ অন্ধকারের কথাও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ৷ যাই হোক একটা মর্মান্তিক কিন্তু চূড়ান্ত রকম হাস্যকর কাহিনি বলার লোভ সামলাতে পারছি না – তখন চাকরি-বাকরির এমন ই অবস্থা যে অনেক বেকার যুবক শ্মশানঘাটগুলোতে গিয়ে সারাদিন কাটায় । কোন পুরুষ মরা এলেই তারা সাগ্রহে গিয়ে জিজ্ঞেস করে , “কোন হৌসে কাজ করতেন ? কেরানি না দারোগা ?” তারপর তারা দরখাস্ত পাঠায় এই বয়ানে – ‘’ স্যার লার্নিং ফ্রম দ্য বার্নিং ঘাট দ্যাট এ পোস্ট ইজ লাইইং ভেকান্ট ইন ইউর অফিস।”

দেবদাস : যত্তো সব মাতালের দল । পশ্চিমবাংলা আর বেঙ্গলের তফাত জানে না ।

রমেশ : কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল থ্রিলার। এখন আর শুধু থ্রিলারে কুলোচ্ছে না। তাই ঐতিহাসিক থ্রিলার(ঐথ্রি)। কাঁঠালের আমসত্ত্ব। এবং প্রকাশিত বা প্রকাশিতব্য সব ঐথ্রি গুলোই বিষয় বৈচিত্রে ভরপুর। শুধু তাই নয়, চরিত্ররা অনালোচিত ও অনালোকিত। এবং এখানেই শেষ নয়! এই সব নব নব ঐথ্রি গুলোর মতো কাজ আর হয়নি আগে। এই বাংলায় এই প্রথমবারের মতো আপনার সামনে এসেছে এরা। এদের জুড়ি মেলা ভার বন্ধুরা। প্রিবুকিং ও বুকিং করে ফেলুন শিগগিরী। বুকিং-এর লম্বা লাইনের প্রথম ২০০ জনের মধ্যে না থাকলে সই সহ কপি পাবেন না। তাতে আপনার মান, ইজ্জত, সম্ভ্রম সব যাবে। ঐথ্রির জয় হউক!

অমরনাথ : আধুনিক সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা অনেক। উত্তর আধুনিকবেত্তার উষ্মার কারণ হলেও সংগীতের বিষয়ে আমরা যুগের সঙ্গে চলতে বাধ্য । যদিও সময় জবাব দেবে তার। আগের সময়েও একটা তুলনামূলক চর্চা চলত। বিষয় একই –আগের গানের মত গান হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিল্পী মান্না দে মহাশয়ের মত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ওঁর কাকা শ্রী কৃষ্ণচন্দ্র দে’র গান স্বকন্ঠে রেকর্ড করার পর। ” ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে” গানের রেকর্ডের কথা বলছি। আমরা কিন্তু একটা মডিউলেশন শুনতে পেয়েছিলাম। আসলে বাংলা গানের প্রণেতাদের গানের ক্ষেত্রে কোনো কপিরাইটের ব্যপার ছিল না বলেই হয়ত আমরা মান্না দে’র গানের ওই অমূল্য সম্পদকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম।‌অন্যদিকে আমরা কিন্তু এখনও মেনে নিতে পারিনি শিল্পী নির্মলা মিশ্রের জনপ্রিয় সেই গানটি অন্য কারো কন্ঠে।এক লাইভে এ বিষয়ে শিল্পী স্বয়ং স্বীকার করেছিলেন। সেই বিশেষ গানটি ” ও তোতা পাখি রে…”। মনে আছে এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী মান্না দে, এ আর রহমানের প্রথম প্রকাশিত চলচ্চিত্র ” রোজা’র” গান শুনে বিরক্ত প্রকাশ করে বলেছিলেন ” হুলিগ্যানের গান”। যদিও ওই ফিল্মের গানগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। হয়ত তখন থেকেই ফিউশনের জন্ম এবং কনফিউশনের। অথচ এর অনেক আগে শ্রাবন্তী মজুমদার বা রাণু মুখার্জি পাশ্চাত্য ভাবধারায় গান করে ফেলেছিলেন। ১) বুসিবল , , কুহেলি রাত ইত্যাদি গান রেডিওতে প্রায়শই বাজত ( রাণু মুখার্জির গান)। অন্যদিকে শ্রাবন্তী মজুমদারের গান ১) মধুপুরে পাশের বাড়িতে তুমি থাকতে ২) আমি একটা ছোট্ট বাগান করেছি ইত্যাদি। ভি. বালসারাজী পাকাপাকি ভাবে চলে এলেন বাংলা গানের দুনিয়ায়। এই সময়ও সম্ভবত পরিচিত এই সব গানের সঙ্গে। এখন গুরুমুখি তালিমে সীমিত শিক্ষার্থী আদি ঘরাণাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এর মহিমা যে কতখানি সেটার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে তারাই বলতে পারবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, গ্রহণযোগ্যতা কোনো পথ্য নয়– রসাস্বাদন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তালিম শব্দটি বদলে নতুন নামকরণ হয়েছে ” ভয়েস ট্রেনিং”।মিউজিক আ্যারেঞ্জারের পারদর্শীতা শিল্পীর থেকেও উচ্চতর আসনে বসে আছে সম্ভবত। কিন্তু আমরা ভুলিনি সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত’র কথা বা নচিকেতা ঘোষ অথবা প্রবীর মজুমদারের কথা অথবা আরও অনেকে। একই ভাবে হিন্দি গানের ক্ষেত্রেও সেই স্বর্ণযুগের অবসান রাহুল দেব বর্মনের গান দিয়ে। পরীক্ষা নিরীক্ষা সব সময় চলেছিল বা এখনও চলছে। এসে গেছেন কবীর সুমন, নচিকেতা আরও অনেকে। মানুষ গ্রহণ করেছেন কারণ শ্রোতারও একটা খিদে থাকে। অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ” মহীনের ঘোড়াগুলি” র মত কতটা কালজয়ী হবে এদের গান সেটাও সময়ের তূল্যমূল্যে। সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজের নাম না করে পারছি না। Bandish Bandits। ফিউশন বনাম কনফিউশনের এক দ্বন্দ্ব এক অদ্ভুত বাতাবরণের সৃষ্টি করেছে। ফিউশনকে যদি blending বলা হয় তবে তার সঙ্গে আন্দাজের দক্ষতা অনিবার্য। জয়পুর ঘরাণার কিছু উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পাশে ফিউশন তাৎক্ষণিক বিনোদনে থেমে গেছে। তখনই একজন শিক্ষার্থীকে আমরা দেখতে পেলাম যে তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে সরস্বতী আরাধনায়। এখান থেকেই কনফিউশনের জন্ম। নিজেকে এবং শ্রোতাকে যাচাই করার সদিচ্ছা হয়ত আরও উন্নততর প্রসাদ আমাদের হাতে তুলে দেবে। হোক না সে নিমিত্ত মাত্র। এই সাধনার ফসল আমাদের উপহার দিয়েছে হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া’র মত এক বংশীবাদক কে, যিনি পন্ডিত রবিশঙ্করের স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর কাছে সঙ্গীত জীবনের মধ্যাহ্নে উপস্থিত হয়েছিলেন। ওঁকে তালিম দিতে প্রথমে রাজি হননি অন্নপূর্ণা দেবী। শেষে এক কঠিন শর্ত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া’কে সম্মত করেছিল তালিম নেওয়ার জন্য। রাতারাতি উনি অন্নপূর্ণা দেবীর নির্দেশে বাঁ হাতে বাঁশি তুলে ধরেন। এক কঠিন অধ্যাবসায়। অবশ্যই প্রশ্ন উঠতে পারে এর কারণ বিষয়ে। অন্নপূর্ণা দেবী চেয়েছিলেন অন্য ঘরাণার ছাপ যেন ওঁর ছাত্রের সুরে ও সুর প্রয়োগে না পড়ে। এই অভিনিবেশ সত্যিই অবাক করে দেবার মত। অবশ্যই একে ছুৎমার্গ বলা চলে না। প্রশ্নটা ছিল সিগনেচারের। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি গানকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। অতীতের অনেক শিল্পীই এখন ট্র্যাকে গান গাওয়ায় অভ্যস্ত অথবা ডাবিংয়ে। আসলে এই সমঝোতা সংগীতের প্রতি ভালোবাসার কারণে। কনফিউশন থাকলে রি– টেকের সুবিধাও রয়েছে। তীর্থের পথ এখন দূর্গম নয় । পথ পরিণত হয়েছে রাস্তায়।

নগেন্দ্র : দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে, আমাদের যে প্রত্যক্ষ ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হয়েছিল— সেই সত্যকে আমরা বাদ দিতে পারি না। ভুলে থাকতে পারি না, পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না। তার পাশাপাশি আবার প্রাক-ঔপনিবেশিক পর্বে ফিরে যাবার চেষ্টা করেও ঔপনিবেশিকতাকে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়। মলয় রায়চৌধুরী তাই তাঁর এই উপন্যাস তিনটিতেই ইউরোপীয় সন্দর্ভগুলিকে এবং সেই সঙ্গে ইউরোপ ও ভারতবর্ষের ক্রিয়া-প্রতিক্রয়ার মধ্যে অবস্হানকারী সুবিধাভোগী অংশের দ্বারা উৎপাটিত সন্দর্ভগত সক্রিয়তাকেও ইন্টারোগেট করেন। সেই সূত্রে তিনি বুঝে নিতে চান, ইউরোপ কেমনভাবে মতাদর্শগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সূত্রে তাদের কোড বা সংকেতগুলিকে আমাদের সামাজিক ব্যবস্হার প্রবহমানতার মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তুতে পেরেছিল, এবং এখনও কেন পারছে। এইভাবে বুঝে নিতে চাইবার পরিণতিতে, আধিপত্যকামী সন্দর্ভের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে, মলয় রায়চৌধুরীকে নির্মাণ করে নিতে হয়েছে বিকল্প সন্দর্ভের এমন এক পরিসর যা ঔপনিবেশিকতার প্রভাবমুক্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক উপাদানের দ্বারা সম্পৃক্ত এক সচল চিন্তাপ্রবাহের দ্বারা নির্ধারিত। এই চিন্তাপ্রবাহের সূত্রেই মলয়ের বিকল্প সন্দর্ভ প্রতিনিয়ত শুষে নিচ্ছে চারপাশের নিরুচ্চার বর্গের জীবন থেকে স্বতোৎসারিত বিভিন্ন জায়মান কোড বা সংকেতগুলিকে, এবং সেই সঙ্গে শিল্পের নিজস্ব পরম্পরা এবং শৃঙ্খলার সূত্রেই তা ক্ষয়িত করে বাংলা উপন্যাসের প্রচলিত আধিপত্যকারী সন্দর্ভকে।

নয়

রুক্মিণীকুমার :  বিদ্যাসাগর এসে হাজির আমাদের ক্রিক রোর বাসায়। বলেন, তুই নাকি দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ করছিস? বললাম খেপেছেন, রোজ দুটো ডিম খাই তবু একটাকে সামলাতে পারছি না, ঢলানি বুকের আঁচল খসিয়ে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রি শো দেয়। তার ওপর দ্বিতীয় বিয়ে করলে শিলাজুৎএও আর সামলাতে পারব না। বিদ্যাসাগর বললেন, তবে কি মদনা ভুল বলল?

— না ঠিকই শুনেছেন।

— তাহলে খবর্দার তুই এ বিয়ে করবি না।

বললাম, শিবনাথও তো দুটো বিয়ে করেছে একটা আবার কচি মেয়ে শীল ভাঙেনি প্রথমটার সঙ্গেই শোয় এক রাত কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না রোজ তিনখেপের কোটা বরাদ্দ, ছোট মেয়েটা কাঁদে পাশের ঘরে শুয়ে খুব সেক্স পায় বেচারার — শিবুকে তো বুকে আগলে রেখেছেন, ওর বাপ পর্যন্ত ওর জন্য সুপারি ফিট করেছে, কবে উড়িয়ে দেয় ঠিক নেই, এ শালা মুঘল মসনদের থেকে খাতারনাক হিন্দুত্ববাদ, ছেলেকে এলিমিনেট করে দিচ্ছে বাপ হয়ে, ভাবা যায়! ওকে বলুন বুড়িটাকে ছেড়ে চিকনা কচিটার সঙ্গে ইলোপ করতে। বিদ্যাসাগর আর দাঁড়ালেন না, চটি খটখটিয়ে সটান হাঁটা দিলেন। জানি এ লোক কোনো দিন আর আমার মুখদর্শন করবেন না। কিন্তু কী করব, রসের টান; আমি ফিওদর পাবলোভিচ কারামাজভ: সব মেয়েকে ভালো লাগে, ইরেকটাইল ডাবল ফাংসানিংএ ভুগি, সারপ্লাস ভ্যালু, সবই লিবিডিনাল ক্যাপিটালের খেলা, পুঁজি শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে নিজের ভিতরে অনবরত পুনরুজ্জীবিত হয়, ইরসান আছে কিন্তু এসেন্সিয়ালি পুঁজির বিনাশ নেই, সে পাল্টে যায় ।

বাঞ্ছারাম : ক্রিক রো ? মহাকাশেও আছে নাকি অমন গলি ? ক্রিক রো-এর নাম পাল্টে স্যার নীলরতন সরকার সরণি হয়েছে I নীলরতন সরণি আমরা কজন বলি, আমার জানা নেই I অন্তত আমি কারো মুখে ক্র্রিক রো কে নীলরতন সরণি বলতে শুনিনি I কিন্তু যদি কোনো দিন ক্রিক রো এই নামটা হারিয়েও যায়, তার ইতিহাস হারিয়ে গেলে খুব দুঃখজনক হবে I ক্রিক রো-এর এককালে নাম ছিল ‘ডিঙ্গাভাঙ্গা’ লেন I কেন? ক্রিক রো ছিল তখন গঙ্গার অংশ I গঙ্গা থেকে একটা শাখা বেরিয়ে এসে পড়েছিল ওয়েলিংটন স্কয়ারে-এ I আর সেখান থেকে সাপের মতন এঁকে বেঁকে গিয়ে শেষ হতো আমাদের এখনকার সল্ট লেক-এ, যেটা তখনকার সময় ছিল জনমানবশূন্য নোনা জলা জমি I ওয়েলিংটন থেকে এই শাখাটির নাম ছিল ক্রিক রো I তখন এই জলের ওপর নৌকা চলাচল করতো I দুপাশের পাড়ে ছিল সবুজের সমারহ I কোনো এক ঝড়ের রাতে এখানে ডুবে গেছিলো কারোর নৌকো, সেই থেকে অনেকে বলেন ডিঙ্গাভাঙ্গা লেন I কালে কালে এই নদীর জল গেল শুকিয়ে, আর ঠিক তখনি আর পাঁচটা রাস্তার মতন এই নদীর খাল বুঝিয়ে তৈরী হলো রাস্তা I ক্রিক রো দিয়ে হেটে গেলে তার দুপাশের বাড়ি গুলো লক্ষ্য করলে এখনো দেখা যাবে সেই নদী তে নামার বাড়ি থেকে সিঁড়ি I তখন হয়তো এই সমস্ত বাড়ির পূর্বপুরুষেরা জল নিতে এই ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে জল আনতেন I 

রুক্মিণীকুমার : যথার্থ বলেছেন । আমি মহাকাশে নৌকো পারাপার করতুম । মঙ্গল থেকে শনি থেকে বৃহস্পতি । আমি যে মহানটবর তা নিজেই জানতুম না ।

হরিহর : ভেবে ফেলেছিলাম এক বড়সড় ঐতিহাসিক ভাবনা । এবার আকার আয়তন, অফ টপিক দেখে প্রকাশক না পাওয়া…ভেবেছিলাম হয়ত উপন্যাসটি আর বই হবে না। তারপর লকডাউন। প্রলম্বিত অপেক্ষা, উদবেগ কাটিয়ে অবশেষে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। সম্পাদনার কাজ চলছে আপাতত। আমিও অবাধ্য, জেদি, নিজের জায়গায় অনড়, সম্পাদকও তেমনই। এইসবের মধ্য দিয়েই ভাবনাটা প্রকাশিত হবে খুব তাড়াতাড়িই মনে হচ্ছে। একটা ভাবনা আর তাকে পুস্তকাকারে পেতে এত বেগ পেতে হয়েছে, এত দীর্ঘ সময় হতাশায় কাটাতে হয়েছে..সেইসব আমার কাছেই থাক। আলো আসুক। একজন ভাবুকের দীর্ঘ পরিশ্রম আর অপেক্ষা দীর্ঘায়িত না হোক, এই কামনা কর নষ্টনট কলোনির নিবাসীরা । আলোকিত হোক বিশ্বভুবন। আশায় বাঁচুক ভাবুকরা । 

রুক্মিণীকুমার : গেল বুধবার কালই তো, রেলগাড়ির কামরায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হঠাৎ দেখা! বললেন এসো  যদি আপত্তি না থাকে তোমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলব, পয়সা দোব বিশ্ব-বা-রথীর অ্যাকাউন্ট থেকে, জানি তুমি অভাবী লোক। তুমি ভায়া এখন আমার চেয়েও বেশি নটরায়টি হাসিল করেছ এত চাপ সামলাও কী করে, আমি তো সমালোচনা পড়া ছেড়েই দিয়েছিলুম। বললাম, আমার সঙ্গে ছবি তুলবেন, আমি কিন্তু আপনার লেখা পড়ি না! রবিবাবু বললেন, দুর! আমি কি তোমাদের মতো ইনটেলকচুয়ালদের জন্য লিখি আমার লেখা অমিয়ভূষণ শঙ্খ সুনীল গাঙ্গুলি পড়বে তোমরা ফুকো পড়বে দেরিদা পড়বে। আমি ওসব কঠিন বই পড়িটড়ি না, আমি মনের খেয়ালে লিখেছি , ওসব হাবিজাবি লোক মুখস্থ করে আওড়ায় আবৃত্তি করে, খেউড় বোঝ! — কিন্তু গুরুদেব ছবি তোলার মুশকিল আছে লোকে ভাববে আমি সুপারইমপোজ করেছি, সত্যিই আপনার সঙ্গে মোলাকাত হয়নি। তখন হো হো করে এমন হাসলেন যে ডেনচার ছিটকে বেরিয়ে এল আমি ঠিক ডাইভ দিয়ে সোলকারের মতো ধরে ফেলেছি গালিতে, ক্যাচ। আপনাদের কারোর দাঁতের পাটি না থাকলে বলবেন; লাগিয়ে দেবো ।

মহীন : মানুষ এক আলোকভুখা পোকা, বিষাদের ঘন উদযাপনে, আমি আজ একটি প্রদীপও জ্বালাই নি, যেমন প্রেমের কাছে আধেক যাওয়া যায় না, তেমনি আলোর কাছেও আধেক যাওয়া যায় না, আমি আজ দীপান্বিতা ভারতকে দূর থেকে দেখি, প্রাণভরে দেখি, ভুলে যেও না মানুষ একটি আলোকভুক পোকা, চড়চড় শব্দে তারাবাজি জ্বলে ওঠে, ছাদে ছুটে যাই, যাদের মুখ নীচে উদ্ভাসিত

যাদের মুখ নীচে উৎসবের দিনে উপচারের অভাবে ম্লান, তাদের বিষাদ আনন্দ সঙ্ঘটনের চাইতে অনেক দূরে, আকাশের দিগন্তে দিগন্তে শব্দহীন আলোয় জ্বলতে থাকা বহুতল বাড়ি, আর নিঃশব্দ সুদূরের গোত্রহীন তারাবাজি, তাদের অপরূপে আমায় মনে করিয়ে দেয়, ব্রহ্মাণ্ডের অন্তহীনতায় আমার যে আত্মচেতনা, স্থায়িত্বের জন্য আমার যে কাঙালপনা, তা ভ্রান্ত, আমি এই ছাদে উঠে প্রত্যেকবার শুধু কষ্ট পেয়েছি, সামনের ঘন সবুজ কবে দালানকোঠার হাতে মারা পড়বে, সন্ধেয় প্রতিবেশী বাড়িগুলোর ফাঁক দিকে হ্রদের বুকে সূর্যের প্রাত্যহিক আত্মহত্যা, কবে তা আর দেখতে পাবো না, এই প্রতি মূহুর্তের হারানোর ভয়, আঁকড়ানোর যাতনা, যুধিষ্ঠির যেমন বলেছেন, পৃথিবীর পরম আশ্চর্য, মৃত্যুর প্রতি নশ্বরের শাশ্বত অবিশ্বাস, শহরের দিগন্তবৃত্তে হঠাৎ জ্বলে ওঠা তারাবাজি

সবুজ, সোনালী, ঘন লাল, অদ্ভুত ফোয়ারার মতো উত্তল, অবনত, ওহে পরিবেশ প্রেমী, সমস্ত বছর গাছ লাগিও বরং, আজ বাদ সেধো না, ভুলে যেও না মানুষ এক আলোকভুক পোকা, যুগ যুগান্ত ধরে সে মণি মাণিক্যে আলো পরিধান করেছে, আলোর উপাসক, আলো থেকে জন্মে, আলো চেয়ে, একদিন প্রবল প্রতিবাদে অন্ধকারে মিশে যাবে, ক্ষনিক তারাবাজি, আমার একটি পয়সা খরচ না করে চুরি করে দেখা শহর ময় আলো, আমার সুন্দর তারাবাজি, আমি আলোর কাছে আর প্রেমের কাছে ফিরে যাবো, ক্ষণিক হলেও সম্পূর্ণে যাবো, পূর্ণতায় যাবো, 

অপু : বিরক্তকর লোকটি খোয়াবের মধ্যে খুবই জ্বালাচ্ছে,ঘুমাতে দেয়না; বলছেঃ ধানের সাথে, ভাতের, ক্ষুধার এবং কৃষিঋণের সম্পর্ক;লাঙ্গলের সাথে মাটির আর কৃষ্ণ কৃষকের এবং মশালের সাথে আগুনের খেলা! স্বপ্নের মধ্যে সে সন্ত্রাসী, তার গায়ে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি-আর্মি গন্ধ, ওস্কে দিতে দিতে উর্দূতে বলছেঃ -“তোমার জন্ম তো পূর্ব পাকিস্তান, পাক সার জমিন সাদ বাদ, গেয়ে গেয়ে…তুমি বেড়ে উঠেছো, বড় হয়েছো। খাজনা দাও”। -“কেনো এতো ‘নাও নাও’ করো! কি কারণে এতো নদীমার্তৃক? “কাঠ আর লোহার পেরেকে সেলাই করা নৌকার, সাথে নৌকাডুবির সম্পর্ক”!, ঘুমের মধ্যে ঘিন্না, ঘুমের মধ্য জিন্না, এবং ঘুমের মধ্যেই তাকে কীভাবে যেনো খুন করলাম।, জেগে দেখি, আমার হাতে শয়তানের শাদা রক্ত!, .

মাল্যবান : কোনোদিন ফুরুবে না শীত,রাত আমাদের ঘুম? ফুরুবে না।ফুরুবে না। কোনোদিন ফুরুবে না শীত, রাত,আমাদের ঘুম? না,না,ফুরুবে না। কোনোদিন ফুরুবে না শীত,রাত,আমাদের ঘুম? ফুরুবে না।ফুরুবে না।কোনোদিন…

সন্দীপ : আরে মশাই মাল্যবান, আপনি তো ডায়রিতে সাংকেতিক ভাষায় লিখেছিলেন যে আপনার বউটা মরে গেলেই ভালো । তাহলে খোলা মনে লিখতে পারবেন । আপনাকে নষ্টনটদের কলোনিতে না পাঠিয়ে বদনটদের কলোনিতে পাঠানো উচিত ছিল ।

মুরারী শীল : মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে, মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি; আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি। জেগেই দেখি কৈশোর আমাকে ঘিরে ধরেছে। যেন বালিশে মাথা রাখতে চায় না এ বালক, যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে মশারি, মাতৃস্তনের পাশে দু’চোখ কচলে উঠে দাঁড়াবে এখুনি; বাইরে তার ঘোড়া অস্থির, বাতাসে কেশর কাঁপছে। আর সময়ের গতির ওপর লাফিয়ে উঠেছে সে। না, এখনও সে শিশু। মা তাকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনায়। বলে, বালিশে মাথা রাখো তো বেটা। শোনো, বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে।

আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি, হাতে নাংগা তলোয়ার। মায়ের ছড়াগানে কৌতূহলী কানপাতে বালিশে, নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।, সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড়। বলে, কে মা বখতিয়ার?, আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো।, মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন, আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা।, যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা, আর মানুষ করে , মানুষের পূজা, সেখানেই আসেন তিনি। খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি। দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে, দ্যাখো, দ্যাখো।, মায়ের কেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে বালক, তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার, নিশেন ওড়ায়।, কোথায় সে বালক?, আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা

মনে হয় রক্তেই ফয়সালা।, বারুদই বিচারক। আর, স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা।

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । অন্তর্ঘাত আর পোঁদে আঘাতের তফাত জানে না ।

দশ

নিখিলেশ : ভাতের ফেনা ফুটতে থাকে টগবগ, জুঁই ফুলের মতন ঘুরতে থাকে ভেতরে, কেমন এক মাতাল করা সুবাস ভেসে বেড়ায়। আমার তোমাকে মনে পড়ে। ভেতরে অমন তীব্র বলক ওঠা মন নিয়ে আমি ভাতের মাড় ঝরাই, হাত বেয়ে লাভার মতন মাড় পড়তে থাকে। আমি ধরেই থাকি, আমার তোমাকে মনে পড়ে। এমন সওয়ার হলে, ডাকিনী যোগিনী পালিয়ে যায় দূরে। ভাঁপে পোড়া হাত নিয়ে ভাবি সালুন থাক আজকে, খানিক আগুন ঝাল ভর্তা বানানো যাক, ঝালের আড়াল হয়েও খানিক যদি ঝরে যাও তুমি। লইল্লা ইচা খোলাতে হালকা থেকে গাঢ় লাল হয়। আমার তোমাকে আরো বেশি মনে পড়ে। নিজেকে সীমার বাইরে বধীর করে নেবার পর, বুকের ভেতর আস্ত কামারশালার হাপর জ্বলে যায় মুখাভিনয় বন্ধ থাকেনা, চোখের পিউপিল বদলে যায় ধীরে। এই মনে না করার প্র‍্যাকটিসে পারদর্শী হবার পর অন্তত এ ভারী অন্যায়! নিবিষ্ট মনে পেঁয়াজ টেলে নিয়ে গরম তেলে শুকনো মরিচের সাথে মন টাও ভাজতে থাকি বেশ উল্টেপাল্টে। সেখান থেকে তীব্র ঝাঝালো তোমার গন্ধ ভেসে আসে। পোড়া মন আর ঝালের রঙ ততোধিক কালচে লাল হয়, থেঁতো পেঁয়াজের সাথে তাকে মাখাচ্ছি বেশ, লাল কমছে না তো!

রুক্মিণীকুমার : এখন প্রুস্ত ভাবছি । বারগোতের মৃত্যু। ভারমিয়েরের একটা হলুদ দেওয়ালের প্যাচ। প্রাক বার্থিয়ান অলৌকিক পাংকটাম। এ নিয়ে প্রুস্ত যা করল, এ যে কী অবস্কিওরানটিস্ট পরম্পরা, ফ্লোবেয়ারে শুরু, তারপর প্রুস্ত তারপর নাতালি সারোত রিখিয়ার লেখক। সুহাসিনীর পোমেটম এ একটা জীর্ণ দেওয়ালের এমন বিবরণ আছে যে, ওটাই ক্রুসিফিকস এরোটো ধর্ষকাম, বেশ্যার মতো হলহলা ফুটো। ঢোলকা পেরেকের গর্ত। বালি খসছে। বরিশালের কবি যেমন জল খসাত। যেন সাই টমলের ক্যানভাস, নাথিংনেসের গ্রাফিজম। বারগোৎ এগজিবিশানে অই হলুদ প্যাচওয়ার্ক দেখে ভাবল আমার এরকমই ভাবা উচিত। আমার শেষ বইগুলো বড্ড বিশুষ্ক, রস চাই! ভাবতে ভাবতে সে অক্কা পেল। সটান পটল ড্যাঙায়, পাড়ি। এ তো ফ্লোবেয়ারের অ্যামবিসান! যা সারোত প্ল্যানেটরিয়াম এ আনজাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে: কে কোথা থেকে কী নিয়েছে সব জানি। আমি প্রুস্তের মতোই একজন শার্লক হোমস। সাহিত্য পুরোটাই — যত সিরিয়াসই হোক — ডসটয়েভস্কি জয়েস লরেন্স স্টার্ন, নিছক ডিটেকটিভ গল্প, আমরা সবাই জাসুস, এতে লজ্জার কিছু নেই, খোঁজ নিয়ে চলেছি সন্ন্যাসিনীর গোপন খবর; ইনকিওরিবল ফ্রয়েডিয়ান, স্বপ্নে পর্যন্ত হানা দিই…ইউলিসিস ডিসাইফার করতে হবে না, শুধু রিদমটা ধরো। স্বগত ছন্দ, স্বর ও নিশ্বাসের বিন্যাস; মন্থর শব্দ উদগিরণ; যা দেখছে তাই বলছে: ভিতর বাহির জাকসটাপজিসন। স্মৃতি আর চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা। অবলোকন ও স্পেকুলেসন। আর একটার পর রাস্তা পার হয়ে যাওয়া, অন্তহীন পথনামচা। কলকাতা রোডম্যাপ খুলে ভাবা যায় এ ভাবনা । খুব সোজা। অলিগলির নাম ইতস্তত ঢুকিয়ে দিলেই পাঠক হ্যালু খেয়ে যাবে। গল্প একটা ডিসকনটিনিউয়াস প্রসেস, তুমি আরবিট্রারি শব্দ টপকাও আমি মানে করে নেব । না নিয়ে উপায় নেই আমার। ভাবুকই অরগ্যানিক হোল। ভাবুক নৈরাজ্য, কেঅসমস। যা খুশি ভাবুক ভেবে খালাস। বিপন্ন কৌশিক সরকার ওসব সাজাতে বাধ্য হয়। ও ব্যাটা বিশৃঙ্খলতার মধ্যে বাস করতে পারে না…

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । কবে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ? ২০১৪ সালে না ১৯৪৭ সালে ?

হুতোম : আজকাল বাঙ্গালী ভাষা কৌশিক সরকারের মত মূৰ্ত্তিমান কবিদলের অনেকেরই উপজীব্য হয়েছে। বেওয়ারিশ লুচীর ময়দা বা তইরি কাদা পেলে যেমন নিষ্কৰ্ম্মা ছেলেমাত্রেই একটা না একটা পুতুল তইরি করে খ্যালা করে, তেমনি বেওয়ারিস বাঙ্গালী ভাষাতে অনেকে যা মনে যায় কচ্চেন; যদি এর কেউ ওয়ারিসান থাকৃত, তা হলে স্কুলবয় ও অসিদের মত গাধাদের দ্বারা নাস্তানাবুদ হতে পেতে না-তা হলে হয়ত এত দিন কত গ্রন্থকার ফাঁসী যেতেন, কেউ বা কয়েদ থাকতেন, সুতরাং এই নজিরেই আমাদের বাঙ্গালী ভাষা দখল করা হয়। কিন্তু এমন নতুন জিনিস নাই যে, আমরা তাতেই লাগি—সকলেই সকল রকম নিয়ে জুড়ে বসেছেন বেশীর ভাগ অ্যাকচেটে, কাজে কাজেই এই নক্সাই অবলম্বন হয়ে পড়লো। কথায় বলে, এক জন বড়মানুষ, তারে প্রত্যহ নতুন নতুন মঙ্করামে দ্যাখাবার জন্য, এক জন ভড় চাকর রেখেছিলেন; সে প্রত্যহ নতুন নতুন ভাঁড়ামো করে বড়মানুষ মহাশয়ের মনোরঞ্জন কত্তো, কিছু দিন যায়, অ্যাকদিন আর সে নতুন ভাঁড়ামো খুঁজে পায় না; শেষে ঠাউরে ঠাউরে এক ঝাঁকা-মুটে ভাড়া করে বড়মানুষ বাবুর কাছে উপস্থিত। বড়মানুষ বাবু তার ভাঁড়কে ঝাঁকা-মুটের ওপর বসে আসতে দ্যাখে কুলন,—“ভাড়, এ কি হে?” ভাঁড় বলে, “ধৰ্মাবতার। আজকের এই এক নতুন !”

ঠকচাচা : কাল রাতে কোন কবিতা ভাবছিলাম! এই দেখো, না লিখে খুব ভুল হয়ে গেল! তোমার নাম শুনলে কোন গন্ধ আমার মনে পড়ে! তোমাকে সবুজ ভেবে ব্যক্তিগত করে রাখি, আমি ছাড়া অন্য কোথাও তোমার আনন্দ হলে আমার দুঃখ লাগে, আমি কি কালার ব্লাইণ্ড! তা না হলে কেন খালি সবুজের কথা বলি! সমস্ত ধূসর কেন সবুজের ভিতর দিয়ে দেখি! কাকের কথার দিকে গেলে কলস আর পাথরের কথা ভাবি, আমি ত অর্থ জানি না, একটা শব্দ লিখে তারপর অভিধান দেখি, কী আশ্চর্য! অজ্ঞাত শব্দ তবু দরদের সম্ভাবনার দিকে কদম ফেলে রাখে, আমি ত লিরিক্যাল নই, তবু কেন লিরিক্যাল বাতাস চারদিকে, কখনো ডালডার কথা মনে হয়, কখনো তালমাখনার কথা

আর থেকে থেকে ইতিহাসের নানা গুড়াগাড়া খাবারের উপাদানের কথা মনে পড়ে, স্বামীর সন্দেহের মতো তোমাকে আলগোছে দেখি, সদকার প্রশান্তিমতো তোমার সাথে কথা বলা, আমার কালো অস্মিতার ভিতর হলুদ ওড়না উড়ে যায়, আমি কালো ও হলুদকে ভালোবেসেছি, হলুদ খাতার ভিতর নিজস্ব ফার্ম গড়ে তুলেছি, প্লাস্টিক চেয়ার কালো হাতলের ইমেজ সেখানে গড়ে ফেলে, এক নির্জন চেয়ার কোথাও আমার জন্য কাদে, রাগ করে কোনোদিন ভাত না খেয়ে থেকে যেতে ভয় লাগে,

যেদিন থেকেছি সেদিন খুব করে কেউ ডাকেনি, এ এমন দিন, দেজা ভ্যুর ভিতরে হেজে গিয়ে, যেন উঠে বসি আশ্চর্য বিদাশে, যেন একটা দিন যাবে চুপিসারে আর কিছু নয়, কোথাও কোনো প্রাণ একটুও বড় হবে না ।

মাল্যবান : ওপরের ঘরের বাথরুমে  স্নান করতে দেয় না আমার বউ ।  স্নান করতে হবে বাড়ির অন্য মহিলাদের নজরের সামনে নীচের চৌবাচ্চায়। এক-গা লোম নিয়ে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে বৌ-ঝিদের আনাগোনা চোখ-মারা মুখ-টেপার ভেতর স্নান করতে ঠিক জুত লাগছে না আমার । যেন শিবলিঙ্গের কাক-স্নান হচ্ছে । উত্তরে বউ বলে, তা হলে তুমি কি বলতে চাও দরজা জানলা বন্ধ ক’রে এক-হাত ঘোমটা টেনে তুমি ওপরের বাথরুমে গিয়ে ঢুকবে, আর মেয়েমানুষ হয়ে আমি নিচের চৌব্বাচায় যাব–ওপরের বারান্দায় ভিড় জমিয়ে দিয়ে ওদের মিনসেগুলোকে কামিখ্যে দেখিয়ে দিতে?

বিপিন : আপনাদের রাধেশ্যাম গড়াইয়ের গল্প বলি…কয়লাখনি অঞ্চল রানিগঞ্জ থেকে জাতীয় সড়ক ধরে সিউড়ির দিকে কিমি দশেক গেলে চিচুরিয়া মোড়…সেখান থেকে আরও কিমি পাঁচেক গেলে আলিনগর গ্রাম। ১৯৮৯ সাল থেকে এই গ্রাম ও লাগোয়া এলাকায় গাছ পুঁতে এসেছেন রাধেশ্যাম.. .৩২ বছরে কতগুলি গাছ বসিয়েছেন তিনি? পাঁচ লক্ষ (ঠিকই পড়লেন, সংখ্যাটা পাঁচ লক্ষ) …. এলাকাটি পুরোদস্তুর বনভূমির চেহারা নিয়েছে এখন…আপনি গুগল ম্যাপ দেখুন, জঙ্গলটা ভালো করে বুঝতে পারবেন…একটা মানুষ সম্পূর্ণ একার হাতে এই জঙ্গল তৈরি করেছেন কোনও সরকারি, বেসরকারি দাক্ষিণ্য ছাড়া…পরে অবশ্য তাঁর ছেলে তাঁকে সাহায্য করতেন…কেন এই জঙ্গল বানালেন রাধেশ্যাম? খনি এলাকার রুক্ষ পাথুরে জমি গ্রীষ্মে তেতে ওঠে…হাঁটাচলাই দায়…চড়া রোদে তালু ফেটে যায় যেন…রাধেশ্যাম ভাবলেন, এই সব পতিত জমিতে যদি গাছ বসানো যায় তবে মানুষ একটু ছায়া পাবে, অত কষ্ট হবে না…সেই শুরু…প্রতিদিন সকালে লুঙ্গি পরে একচিলতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তেন রাধেশ্যাম…বউ গামছায় মুড়ি আর শসা কিংবা গুড় বেঁধে দিতেন…সারাদিন গাছ বসিয়ে অক্লান্ত রাধেশ্যাম সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পরদিনের পরিকল্পনা করতেন…জঙ্গলের ভিতরে একটি জলাশয় তৈরি করে, তাতে কটা মাছও ছাড়লেন…এভাবেই একদিন তাঁর স্বপ্নের অরণ্য তৈরি হয়ে গেল…এই যে জঙ্গলের ছবিটা দেখছেন, এটা ওঁর হাতে তৈরি…ভাবতে পারছেন, একটা মানুষ একার হাতে এই পতিত জমিতে অরণ্যের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন !! পুরস্কার, সম্মান এসব কিছু পেয়েছেন?

হ্যাঁ… একবার বন দপ্তরের কিছু কর্তা বনভূমি দেখে খুব প্রশংসা করে উপহার তুলে দিয়েছিলেন রাধেশ্যামের হাতে…কী উপহার? একটি লুঙ্গি আর একটি গামছা…বলা যেতে পারে শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার…

বাঞ্ছারাম : একদিন স্মৃতির ভিতর বিকট শব্দ তুলে একটি ট্রেন ঢুকে এল, কালো ধোঁয়া, অমনোযোগী বিকেল আর সাদাকালো ভিক্ষাপাত্র সমেত, এই রেল ঝমঝম করছে ব্রিজের উপর। নীচে অনন্ত খাদ, তোমার জানুর মতো উপত্যকাগুলি কেঁপে উঠল একবার, হে প্রলয়, দেখো বিস্ময় কেমন স্থির হয়ে আছে গাছের বয়সের কাছে, এই যে ভ্রমণে লেগে গেল অকারণ রমণ তাকে নিয়ে তুমি হো হো হেসে ওঠো, ওই জলোচ্ছ্বাসের মতো ঠোঁট এবার ডুবিয়ে মারবে ভ্রমণে ভ্রমণে, এই সামান্য করতল আমার, তাতে লেগে গেছে যে বিষণ্ণ ছায়া তাকে তুমি তাচ্ছিল্য করেছ। হে প্রলয়, হে ব্যাভিচার, তুমি অসহায় মানুষের গায়ে চালিয়ে দিয়েছ দুরন্ত রেল, গবগব করে ধোঁয়া উঠছে, ঢেকে যাচ্ছে আকাশের গা, ভিতরে নিভে এল গান, রাত্রি ছুঁয়েছিল রেলের চাকায় ছিটিয়ে যাওয়া শব্দের পরাগ, এইমাত্র স্মৃতিখানি ভেঙে গিয়ে ছায়ারিক্ত হয়ে এল ভ্রমণ, সামান্য ঠোঁট আর চোখের পলক পথে পথে ফেলে গেছে রক্তাভ রমণ….

অমিত রায় : বাপের বিষয় পেতে আর ধুমধামের পরিসীমা ছিল না। যখন যা মনে আসে তাই করেন। কখন হোটেলের খানা আনিয়ে আমোদ আহ্লাদ কচ্চেন, কখন তেলেভাজা ফুলরি বেগ্‌নির সহ রকমারি নিয়ে ইয়ারকি দিচ্চেন। আজ স্যাম্‌পেন ঢালোয়া — কাল ব্রাণ্ডির মোচ্ছব — পরশু পাঁচ রকম মদ দিয়ে পঞ্চ্‌ কচ্চেন। বাঁদি নেসা না হলে কখন বা মদের সঙ্গে, লডেনম্‌, ও মরফিয়া মিশাচ্চেন। পাঁচ ইয়ারির দল হলেই পাঁচ রকম লোক এসে যোটে। কোথাও ভটচাজ্জির টিকি কেটে সন্দেশের সঙ্গে ফ্যান্সি বিষকুট দিয়ে খাওয়াচ্চেন। কোথায় কাহাকে ডাবের জলে এমিটিক দিয়ে খাওয়াচ্চেন। কোথায় কেহ নেশায় অচেতন হয়ে পোড়ে আছে। কোথায় কেহ হাত পা আছড়াচ্চে, কোথাও কেহ গড়াগড়ি দিচ্চে, কোথাও কেহ বমি কোচ্চে, কোথাও কেহ দুটো হাত তুলে ইংরাজী লেকচার দিচ্চে, কোথাও কেহ বাঙ্গালায় বক্তৃতা কোচ্চে।”

দেবদাস : যত্তো সব মাতাল । হুইস্কির বোতলে কটা পেগ আর চুল্লুতে কটা ভাঁড় তার তফাত জানে না ।

এগারো

মেঘের ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে জাম্বোজেট উড়োজাহাজের সবকয়টা পায়খানা একসঙ্গে খুলে দেবার ফলে নষ্টনটদের মাথার ওপর ঝরে পড়তে লাগলো গুমুত বৃষ্টির ফুল । তারা তো আহ্লাদে কুচুরমুচুর। রুক্মিণীকুমারকে নিয়ে নাচা আরম্ভ করে দিলে ; উদ্ধারকারী নটবর এসে ওদের পাগলামি সারিয়ে দিয়েছে, তাই, আকাশ থেকে গুমুতপুষ্প বৃষ্টি সৃষ্টি করতে পেরেছে, কলোনিবাসীদের মাথায় হাওয়া ভরে দিতে পেরেছে ।  তারা নাচতে নাচতে গাইতে থাকে…”মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ। তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে, তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥ হাসিকান্না হীরাপান্না দোলে ভালে, কাঁপে ছন্দে ভালোমন্দ তালে তালে, নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ। কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ, দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ–সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ॥ সে কী অপরূপ দৃশ্য ! কয়েক হাজার উলঙ্গ মানুষ দুহাত ওপরে তুলে নাচছে । 

সন্দীপ : ক্ষুদ্র কীট যেমন পুপসহবাসে দেবশিরে আরোহণ করে, আমরা বাস্তবতাকে মুছে ফেলতে পারি, যদিও এতে ভয়ের কিছু নেই, যেহেতু ঐ বস্তু তার অনপনেয় দাগ রেখে যায়।

নিখিলেশ : দিন কতক ভাবিনি।  রাজ্যের ডিফিকাল্ট ভাবনা। এমনকি ভিটগেনস্টাইন। তবে মুখ্যত ফুকো। কৌশিক সরকারকে বললাম, ফুকোকে রিয়্যাপ্রপ্রিয়েট করতে যে আরো কত বছর লাগবে ভাবলে ভিরমি খেতে হয়। অথচ ওর প্রতিভা ডিসকোর্স আকস্মিক নয়। প্রাকৃতিক ইতিহাস যখন জীববিজ্ঞান হল সেই ট্রানজিশনাল জাঙ্কচারটা ও খুলে দেখালো, এ কবিতার চেয়ে হাজার গুণ কঠিন প্রভোকেটিভ ফ্যাসিসিনেটিং উদঘাটন; বোকারা কবিতা পড়ে, কবিতা লেখে: ফুকো পড়ো যদি কবিতার প্রকসিমিটিতে বসত করতে চাও, কবিতা কবিতায় নেই, কবিতা উত্তর দার্শনিক ডিসকোর্সে আছে। সন্ধ্যেবেলা কল করল কুন্তল। এরম সময় করে না। আমি ভাবলাম, উন্মেষ। যে, আসব? অর্থাৎ পাঁইট নিয়ে। গতদিন বাদামমাখাটা আনেনি। যে বাদাম আনল সেটা আপ টু দা মার্ক নয়। ফার ফ্রম ইট। সড়া হুয়া। সাপোজ পচা বাদাম একটা আগার মুখে পড়ল — পড়েওছিল — থুকিয়ে, সে গ্লানি, অবমাননা হিউমিলিয়েসন আমি এমনকি বলব কনসপিরেসি থেকে শত কুলকুচো চতুর্দিকে করেও নিস্তার নেই। উন্মেষ হলে কী বলব ভাবলাম। ফোন রিসিভ করার আগে এমনকি কার কল দেখার আগেও উপন্যাসোপম বিদ্যুৎ-লেখা অকল্পনীয় ডিফেন্স মেকানিজম টেক্সটুয়ালি তৈরি প্রুফ কারেকসান সমেত ঝটিতি প্রিন্ট আউট হয়ে যায়, সার্কুলেট করে, সর্বত্র। অথচ গরজ ওর একার নয়। মেয়েকে লুকিয়ে কিচেনে ছাপ্পারে খাওয়ার গিল্ট এড়াতে এখানে আসে। কী বলব: হ্যাঁ-হ্যাঁ চলে আয়! নাকি আজকের দিনটা স্কিপ করে যাই চল, কাল শনিচার, কাল আায়! সাত্যকি হলে বলত, আজকের দিনটা কাটিয়ে দিন। অনেকদিন আবার সাত্যকির কোনো সাড়াশব্দ নেই। আমি কল করি না। ও খুব মুডি ছেলে। পরম বন্ধু। বয়সে অনেক ছোট। পরম বন্ধু কিন্তু কথার কথা নয়। ফ্র্যাকসানস অব সেকেন্ড। তার মধ্যে কত সংঘর্ষ, চিন্তা সিদ্ধান্ত। লেখা শুধু স্পনটেনিয়াস নয় অসম্ভব ক্রিটিকাল। একটা শব্দও আরবিট্রারি নয়। রাইটিং পিকুলিয়ার রেসপনসিবিলিটি। সাত্যকির সঙ্গে অদ্ভুত সম্পর্ক। ইউনিক। এরকম পৃথিবীর কারুর সাথে কারুর নেই। ও আমার পাঠক। দেবতাজ্ঞান করে। খুবই এমব্যারাসিং ব্যাপার। ছিল সন্দীপনের ভক্ত, আমি হ্যাক করে নিয়েছি। ও আমার ইঁউহি তুড়িতে, চুটকিসে। এসব ফেরেব্বাজি আমার খুব ভালো আসে। পাঠক ফুসলানো। তা বলে ভেব না ও ধুর! বস্তুত সবচেয়ে সিরিয়াস, রোম্যান্টিক, একগুঁয়ে পাঠক। ওকে আমি কোনো দিন ফিলজফি পড়াতে পারব না। ও কেরুয়াকের ভক্ত। আমার সব কেরুয়াক ওর কাছে। ওর সব কুন্দেরা আমার কাছে। এরকম হয়। কুন্দেরা আমি মাস্টারবেট করার জন্যও পড়ি না। ট্রিসট ট্রপিক আমার জান। ওটাও ও রেখে গেছে, ক্লোদ লেভি-স্ট্রোস। রোজ একটা প্যারা পড়লেই হল। একেকটা সম্পর্ক কত গভীরে চলে যায়, পরস্পরের। পাঁচ বছর বাদে দেখা হয়। তেরো বছর বললে লোকে বিশ্বাস করবে না, উঞ্ছ সন্দীপন বলেছিল। প্রথম পৃষ্ঠায় কেউ এসব লেখে! বলে একাধিক বার ব’লে দেখেছি, কেউ বিশ্বাস করেনি। অর্থাৎ সূর্যোদয় দ্যাখেনি। খসড়া, ছাপার আগে, আমাকে পড়ালে, বকা দিতাম। ওটা কেটে দাও সন্দীপন। অত এগজিস্টেন্সিয়ালিস্ট অ্যাবসার্ডিস্ট হতে হবে না। মরুগ্গে যাক। সাত্যকির সঙ্গে যত কমই দেখা হোক না কেন রোজ আমরা পরস্পরকে ভাবি, আমার ধারণা। এটাই সম্পর্ক। খারাপ ভাবি না। অনেক রিলেসান আছে খারাপ না ভেবে উপায় নেই। ওসব কুচুটে লোক। বৌ আরো কুচুটে। কত সম্পর্ক শুরুটা ভালো ছিল। বিষিয়ে গেল। টেঁকেনি। অনিমেষ, কেটে পড়ল, না বলে, আমার লাইফ থেকে। সাদমা। আমার অহংকার, আমার বলে নয়, যে কারুর — যাকে বলে, সেলফ এসটিমেসান, হুবহু পিকাসোর মতো, অবিকল — এসব বলতে আমার মুখে আটকায় না, যে জিলোকে বলেছিল: আমাকে কেউ ছেড়ে যায় না! এই আস্ফালন টুকু না করলেই হয়ত জিলো থেকে যেত। অন্য ভাবে বলতে পারত, মত যা, গোরী! যে যাবার সে অবশ্য যাবেই। হাতেপায়ে ধরেও আটকানো যাবে না। সেলিনের অন্য উত্তর আছে, কুইকার দ্যান দা বস্। মালিক তোমায় স্যাক করার আগে তুমি রেজিগনেশন লেটার দাখিল করো। কুন্তল জিগেস করল, ফারনান্দো পেশোয়া কি সুইসাইড করেছিলেন? জানি না। তবে বায়োগ্রাফি নিয়ে বেশি কালক্ষেপ কোরো না। অভয়ের কথা পড়বে। ক্ষেত্রও খুব সম্ভব খুদখুশি করেছিলেন। ত্রিবেদী ইঙ্গিত দিলেও রাজ খুলাসা করেননি। এত বড় ঘটনা, মিসতিরি, মোহিতলাল কেন আলোচনা করলেন না আই ওয়ানডার। সেলিনও, ইন অল প্রব্যাবিলিটি। বলতেনও, নিজেকে আমি শেষ করে দেব। পারসিকিউসন মেনিয়া, আমরা ভাবতাম। আমার ধারণা সে লেথাল বড়ি গিলে ঘুমিয়ে পড়ল। কেননা নর্থ লিখছিল সেদিন লুসেতকে ডেকে বলল, লেখা শেষ, গালিমারকে এত্তেলা করো। সেদিন সন্ধ্যবেলায় সেলিন চোখ বুঁজলেন। ইনসমনিয়াক। এর আগে কোনো দিন ঘুমোননি। মাথায় বিস্ফোরণের শব্দ হত, বিরামহীন….

গোবিন্দমাণিক্য : সুনসান নীরবতা। অশোক-এর পাতা নীরবে কাঁপছিল। মৃদু-ভূ কম্পনের লক্ষণ।

বাতাসে ভর করেছিল ভয়। নারীরা সিঁদুর মুছে ফেলেছে। পায়ের নকশা অ্যারাবিক কৌশল হয়ে গেছে ততক্ষণে। পালিয়েছে হনুমানজি। শস্য আর সূর্যী দেবী ছেড়ে গেছে পূজারী। এমনটা আগে কখনও, চারিদিকে খাজুরাহো ভাঙা পাথর। খচ্চরের সেনাবাহিনী পিঠ ঠেসে দিয়েছে মাটিতে। হে বখতিয়ারের খচ্চর তুমি কি সু-সংবাদ এনেছো? নাকি দানব দাঁত কেলাচ্ছে নাঙ্গা খঞ্জর হাতে? নিরীহকে অধিগ্রহণ নেশায় মত্ত একদল নষ্টনট। যোনী নাকি পায়ু থেকে জন্মেছিলে ?  একটা অধ্যায় আবার, ভ্রুণ হয়ে ঢুকে গেছে জঠরে। আসো শান্তির ছায়া তলে। আসো, নিজে থেকেই হয়ে যাও। ওই যে সিন্দুক। সেখানে রাখবো তোমায়। তুমি গাধা হয়ে যাও। হে বখতিয়ারের গাধা তুমি আর কি এনেছো? এই বাংলা ভূখণ্ডে। সেদিন তুমি আর যা এনেছিলে তার নাম আরোপিত বিশ্বাস।  আরও একটা ভাইরাস।

রাজপুত্র : আপনার বক্তিমে শেষ করেন ।

রাজপুত্তুর রুক্মিনীকুমারকে নিয়ে গিয়ে প্লাস্টিকের সিংহাসনে বসিয়ে গোটানো কাগজ থেকে খেতাবগুলো পড়তে শুরু করল ।

রাজপুত্র : মহামান্য নটবর, আজ থেকে আপনার পরিচয় সান্দ্রোকোত্তোস-এ-আজম আন্দ্রাকোত্তাস, আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন বাহাদুর আলমগীর  বাদশা গাজী, সর্বদক্ষিণাপথরাজ, উদায়িভদ্দক, নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী, সালভাদোর ডোমিঙ্গো ফেলিপি জেসিন্তো দালি ই দোমেনেখ, ১ম মার্কুইস দ্য দালি দ্য পুবোল, পাবলো, দিয়েগো, হোসে, ফ্রান্সিসকো ডি পাওলা, হুয়ান নেপোমুসিনো, মারিয়া ডি লস রেমিডিওস, সিপিয়ানো ডে লা সান্তিসিমা ত্রিনিদাদ, রুইজ পিকাসো, মাসাচ্চিও, ব্রুনেলেস্কি, গিবারটি, পিয়েরো ডেলা ফ্রান্সেসকা, ডোনাটেল্লো, ও মাইকেলোতসো, ভিনসেন্ট ভ্যান গখ, পল সেজান, পল গোগাঁ, জর্জ সেরাট এবং অঁরি দ্য তুলুজলোত্রেক,  হেনরি মাতিস, জর্জ ব্রেক, আন্দ্রে ডারেন, রৌল ডিফী, জ্যান মেটজিংগার,মরিস ডি ভ্যালমিনক, আবুল মোজাফ্ফর সাহিব উদ্দীন মোহাম্মদ সাহিব-ই কিরান শাহজাহান বাদশা গাজি, কুতুব উদ্দিন মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম শাহ আলম, দ্য অর্ডার অফ লেনিন, আসফ জাহ  মীর আকবর আলী খান সিকান্দার জাহ, দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার, নাইট ইন দি অর্ডার অব দি আর্টস অ্যান্ড লিটারেচার, সেজোং দা গ্রেইট, গ্র্যান্ড প্রিন্স  আইভান ভেসিলিভিখ দ্য টেরিবল….

সওদাগরপুত্র : থাক, থাক, অতো বড়ো গোটানো কাগজে মুড়ে ওনাকে এবার মহাশূন্যে পাঠানো হোক, ওই যে একটা ক্যাপসুল আসছে ওনাকে নিতে ।

নিখিলেশ : না না, আরেক কিস্তি গুমুতপুষ্প বৃষ্টি করতে আসছে ।

বারো

কাগজে মোড়া রুক্মিনীকুমার চিৎকার করতে থাকেন বাঁচাও,  বিশ্বরূপ দে সরকার বাঁচাও শিগগির এসো, বাঁচাও এই নষ্টনট কলোনির পাগলদের হাত থেকে । সব কটা ল্যাংটো পোঁদে আমার সঙ্গে যা-তা করতে চাইছে, বিশ্বরূপ দে সরকার, আকাশ থেকে নেমে এসো, অপ্সরাদের কোল থেকে নেমে এসো, ইন্দ্রের বাকল ছেড়ে বেরিয়ে এসো ।দেবদাস : যত্তো সব মাতাল ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন